You dont have javascript enabled! Please enable it!

এনায়েতুল্লাহ খানের নিজস্ব প্রতিবেদন | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৩ আগস্ট ১৯৭৬ 

শেখ মুজিবের উত্থান ও পতন

১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঈদ সংখ্যা বিচিত্রায় জনাব এনায়েতুল্লাহ খানের এই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল। শেখ মুজিবের পতন ঘটেছে এক বছর হল এর মধ্যে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তনের অনেক ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েছি আমরা ৭ ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবী প্রতিরোধ এমনই এক অসামান্য ঘটনা। ফারাক্কা বাঁধ থেকে শুরু করে সীমান্তে সংঘর্ষ ও অভ্যন্তরীণ দুষ্কৃতিকারীদের কার্যক্রম পর্যন্ত দেশের ভেতরে-বাইরে সেই একই শক্তির চক্রান্ত ধারা অব্যাহত আছে এখনো। জনাব এনায়েতুল্লাহ গানের লেখাটির প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন হবে আশায় আমরা আবার এটি প্রকাশ করছি।

শেখ মুজিবুর রহমানের অকাল পতন আমাকে অবাক করেছে একথা বললে অত্যুক্তি হবে। ঘটনার আকস্মিকতায় হয়তোবা আপাত বিস্ময়ে চমকিত হয়েছি। কিন্তু এসবই নিছক রাজনৈতিক ভাবনা, মধ্যবিত্ত মানসের স্বভাবগত প্রক্রিয়া। তাই মুহূর্তের বিমূঢ়তা পরক্ষণে স্বস্তির আশ্বাসে উচ্চকিত হয়েছে, কালান্তরের ঘণ্টাধ্বনি শৃঙ্খলিত চেতনাকে উজ্জীবিত করেছে।

কথাগুলো অপ্রিয়-প্রকারান্তরে নিষ্ঠুর কিন্তু নিদারুণ সত্যও বটে। যেমন সত্য নিয়মিত অমোঘ বিধান কিংবা ইতিহাসের নির্মম বিচার। এ দুয়ের তফাৎ মৌল। প্রথমটি সংস্কার দ্বিতীয়টি বিজ্ঞান। কেউ বলেন ভবিতব্য, কেউ বলেন ডায়ালেকটিকস। কিন্তু উভয়েরই পরিনাম অবশ্যম্ভাবীতায়।শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তার অধিষ্ঠান এবং পরিশেষে “স্বর্গ হইতে বিদায়” এই অবশ্যম্ভাবিতারই বিয়োগান্ত আলেখ্য ।

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড একদিকে নাটকীয় চমকপ্রদ, অন্যদিকে বৈধতায় খন্ডিত। তার ক্ষমতারোহনের অভিযাত্রা বিগত এক দশকে অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছিল। অগণিত আত্মদান এবং এক ঝুড়ি রূপকথা মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল তার স্বর্গের সিঁড়ি। ব্যক্তিত্বের অপরিমিত শৌয ও অনুকূল ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল তার রাজকাহিনী। তিনি ছিলেন রাজা। সত্তিকারের মুকুটের বার্তায় তিনি বুঝতে পারেননি। উপরন্তু সেই ভারে ন্যুব্জ হয়েছেন। রক্ত কবরীর আত্ম বিমোহিত রাজার মতো দুঃশাসনের অচলায়তন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যারা প্রাণ দিলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে পদাঘাত করে নির্দ্বিধায় অস্ত্র তুলে নিল, যারা দেশপ্রেমের সুমহান অঙ্গীকারে রক্ত দিয়ে মাতৃভূমির ঋণশোধ করলো তাদেরই রক্ত মাংস হাড় এর বিনিময়ে তিনি গড়তে চেয়ে ছিলেন এক অলৌকিক ক্ষমতার দেউল। সেখানে দেবতা একক কিন্তু পূজারী নেই। মানুষকে বাদ দিয়ে শুরু হলো বিগ্রহের রাজনীতি পুতুলের খেলা। পরদেশী পটায়ার হাতে সৃষ্টি হলো পুতুলের রাজা শেখ মুজিবুর রহমান।

আমার একথা নিষ্করুণ জানি, কিন্তু ইতিহাস আরো বেশি নির্মম। এবং তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ ১৫ ই আগস্ট। হঠাৎ দ্রিম দ্রিম শব্দে বিদীর্ণ হল নিস্তব্ধ প্রভাত। এক ঝাঁক আগ্নেয় শীসের লক্ষ-কোটি মানুষের নিবীর্ষরসের আকস্মিক বিস্ফোরণের মত নিপাত করল পুতুলের রাজত্ব।

এই পুতুল নাচের ইতিকথা রাজনীতি বা ইতিহাস বিষয়ভুক্ত নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোত্রীয় ক্ষমতার অভিলাষ এবং সাম্রাজ্যবাদী, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনার ইতিবৃত্ত। সে এক বিচিত্র কাহিনী সাড়ে সাত কোটি মানুষ যখন একাত্তরে চরমতম জাতিগত নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল তখনও পর্দার আড়ালে চলছিল আপোষের জুয়া খেলা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের গণপ্রতিরোধকে নিবৃত্ত করার জন্য শুরু হয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। কিন্তু ইতিহাসতো স্থবির নয় যে জাতকের ইচ্ছের উপর তার গতিধারা নিয়ন্ত্রণ হবে। তাই জাতির মুক্তির বিভ্রম সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও স্বতঃস্ফূর্ত হয়েছিল গণবিদ্রোহ। একাত্তরের ২৫ শে মার্চ সেই সর্বব্যাপী গণবিদ্রোহকে বিধ্বংস করার রক্তক্ষয়ী প্রচেষ্টা মাত্র।

সেই আত্মদান বাংলার মানুষের ব্যক্তির নয় দল-মত নির্বিশেষে সর্বশ্রেণীর দেশপ্রেমিকদের গোষ্ঠীর নয়। পক্ষান্তরে সেই ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ক্ষমতার রাজনীতির ষুপকাষ্টে লক্ষ্য আবাল বৃদ্ধ বনিতাকে বলি দিয়েছে, পলাতক রাজনীতির প্রচ্ছায়ায় গণবিপ্লব ও প্রতিরোধকে ঠেকাতে চেয়েছে। সেবারও চট্টগ্রামের অবরোধ জয়দেবপুরের সেনাবিদ্রোহ পাবনার বৈপ্লবিক সমাবেশ কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক প্রতিরোধ তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ভবনের গোপন আলাপনীকে নস্যাত করে গণবিদ্রোহের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু আপসকামী নেতৃত্ব জনগণের বীরোচিত রক্তদানকে অর্ণবীকার করে গোলটেবিলে বিশেষভাজনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায় ও তাই মনস্থির করতে পারেননি। তার শেষ আহব্বান ছিল ২৭ শে মার্চের হরতাল স্বাধীনতাযুদ্ধের নয় সেই সঙ্কটকালে ও এগিয়ে এসেছিল সামরিক বাহিনী এবং বিপ্লবী চেতনায় উদ্ভুদ্ধ তরুণ ও যুবাদের দল।

তবুও সে যুদ্ধ গণযুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারিনি। কেননা বৈদেশিক চক্র এই সংগ্রামকে নিজ খাতে প্রবাহিত করার জন্য বন্ধ পরিকর ছিল। মুক্তিবাহিনীর প্রতি চরম অবিশ্বাসের সৃষ্টি হলো তথাকথিত মুজিব বাহিনী। জনযুদ্ধের অভিযাত্রাকে রুখবার জন্য করা হলো সামরিক হস্তক্ষেপ।

এই চক্রান্তের ইতিহাস সুদীর্ঘ যখন মুক্তিবাহিনীর বীর সেনানীর গেরিলাবাহিনীর তরুণেরা এবং দেশের অভ্যন্তরে বিপ্লবী যোদ্ধারা জনযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জাতীয় মুক্তির অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধ করেছিল,তখনই মুজিবনগরের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এই চক্রান্ত দানা বেঁধে ওঠে। এই চক্রান্ত মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করার চক্রান্ত, পরিভৃত নেতৃত্বকে ক্ষমতায় অভিযুক্ত করার চক্রান্ত। যারাই তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদের কপালে জুটেছে অপপ্রচারণা ও রাজনৈতিক নিগ্রহ। পরলোকগত দুর্গাপ্রসাদ ধরের (ডিপি ধর) অঙ্গলি হেলনে পরিচালিত মুজিবনগর সরকারের বংশবদ নেতৃত্ব ও প্রশাসন এবং সম্প্রসারণবাদের মুজিব বাহিনীর প্রতিবিপ্লবী কার্যক্রম একাত্তরের সংগ্রামের সবচাইতে মসীলিপ্ত অধ্যায়। ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেবে জাতীয় মুক্তির প্রত্যাশী এবং সামাজিক সম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ বিরোধী লক্ষ-কোটি দেশপ্রেমিক জনগণ।

এরই ফলশ্রুতিতে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ৩০ লক্ষ প্রাণ ও আকাঙ্ক্ষিত জাতীয় মুক্তির পরিবর্তে দেশবাসী পেল এক পুতুল সরকার এবং সংক্ষেপে এটাই হচ্ছে পুতুল নাচের ইতিকথা।

শেখ মুজিবুর রহমান এই ইতিকথার নেপথ্য নায়ক। আগরতলার কুখ্যাত ষড়যন্ত্র মামলা এবং ৭১ সালে মুজিব বাহিনীর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরঞ্চ বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলনের পর্যায়ক্রমিক ঘটনাপঞ্জি। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ এবং সম্প্রসারণবাদ বিরোধী সংগ্রামের সঙ্গে এর মৌলিক তফাৎ রয়েছে। প্রথমটি বাঙালি বুর্জোয়ার সবচাইতে ঘৃণ্য ও মেরুদন্ড বিহীন অংশের ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত এবং দ্বিতীয়টি বাঙালি জাতিয়, বুর্জোয়ার দেশপ্রেমিক’ বংশ সহ সকল শ্রেণীর মানুষের জাতীয় ও অর্থনৈতিক মুক্তির চূড়ান্ত সংগ্রাম। আমার বেদনা বোধ হয় এইজন্য যে শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন সত্বেও তার সংকীর্ণ শ্রেণি চেতনা বিদেশে প্রভুর দায়বদ্ধ রাজনীতির শৃংখল মোচন করতে পারেননি। বরঞ্চ পুতুলের মত হয়তোবা অনিচ্ছুক পুতুলের মত প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে তার দ্বৈত ভূমিকা পালন করে গেছেন।

তিনি ছিলেন দক্ষ নট। অভিনয়ের চাতুর্যে প্রতিটি নাটকীয় মুহূর্তে দর্শকবৃন্দের তুমুল করতালি কুড়িয়েছেন, বাম্পিতার সম্মেহন বিভ্রমের মায়াজাল রচনা করেছেন। জাতীয় স্বাধীনতার মহানায়কের শিরোপা পরিধান করেছেন। কিন্তু বারবার ষড়যন্ত্রের ঋণ শুধাতে গিয়ে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন সেখানেই তাঁর ট্রাজেডি।

শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে কাহিনীতে ছেদ পাড়েনি।সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট প্রতিবিপ্লবী মুজিব বাহিনী ৭১ সালে তার পক্ষ হয়ে প্রতিনায়কের ভূমিকা পালন করেছে।এই বিকল্প বাহিনী সেই ষড়যন্ত্রী রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার। মুজিববাদের তথাকথিত ভাবদর্শন, তত্ত্ব ভাষ ওগণ তান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসের নির্লজ্জ বিকৃতি এই একই পরিকল্পনার অংশ বিশেষ।

মুজিববাদ ও মুজিববাহিনীর কাহিনী আজও ইতিহাসে অনু লিখিত। এই প্রতিবিপ্লবী তত্ত্ব ও সংগঠন শুধুমাত্র ব্যক্তির শাসন কায়েম করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সমর্থনপুষ্ট সম্প্রসারণবাদী অধিপত্যকে নিরঙ্কুশ করার জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালের রক্ষাবাহিনী মুজিব বাহিনীরই সংগঠনিক রূপ।

মুজিব বর্ষ মুজিব বাহিনী সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ছিল এিবিধঃ (ক) মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান শক্তি ও অধিপত্যকে খর্ব করা, (খ) গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট দেশ প্রেমিক বিপ্লবের সামাজিক শক্তির মোকাবেলা করা এবং (গ) প্রয়োজনবোধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে রাষ্ট্রীক্ষমতা দখল করা। প্রথম দুটো কারণের জন্য মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে মুজিব বাহিনীর তীব্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল এবং তৃতীয় কারণের জন্য সম্প্রসারণবাদ এর বংশ মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ও প্রশাসনের সঙ্গে ও সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল।

একটি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই “এলিট ফোর্স” সৃষ্টির ইতিহাস আরে বিচিত্র। মুজিব বাহিনীর নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লিখিত পত্রের উপর ভিত্তি করে এবং তারই নির্বাচিত উত্তরাধিকারীদের (?) নেতৃত্বে এই রাজনৈতিক বাহিনী গঠন করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে দেরাদুনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বিশেষ প্রতি বিপ্লবী সংগঠন জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিবাহিনী এমনকি তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত মুজিবনগর সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনেরাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাংগঠনিক কাঠামো এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে ছিল না। জনৈক ভারতীয় সেনাপতির প্রত্যক্ষ পরিচালনায় সংগঠিত তথাকথিত মুজিব বাহিনীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাংগঠনিক কাঠামো এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের সংগঠন এই বাহিনীর মৌলিক বিরোধ ছিল। ভারতের সম্ভাব্য কারণ আমি আগেই উল্লেখ করেছি।

যদি শেখ মুজিবুর রহমানের পত্রের কথা সত্যি হয়ে থাকে তবে একথাও প্রতীয়মান হয় যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উদ্দেশ্য সঙ্গে মুজিব বাহিনীর গভীর যোগসুত্র রয়েছে। দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, শেখ মুজিবুর রহমানের পদান্তে দলের ভূমিকা পূর্ব নির্ধারিত ছিল। মন্ত্র সফল নায়ক এর মতো তিনি নেপথ্যের কুশলী পরিচালকের ইঙ্গিত প্রতিপদে পালন করে গেছেন। তিনি ছিলেন ভাগ্যের বরপুত্র। কিন্তু এচিলিসের গোড়ালীর মত তার অজেয় ভাগ্য ১৫ ই আগস্ট মুহূর্তের যন্ত্রণায় নিষ্ঠুর নিঃশেষিত হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মুজিবনগর সরকার ও প্রশাসন, মুজিব বাহিনী এবং তথাকথিত কাদেরিয়া বাহিনীর মধ্যকার দ্বন্দ্বের সঙ্গে বাঙালির জাতীয় দ্বন্দ্বের কোন সম্পর্ক ছিল না। এই দ্বন্দ্ব আন্ত স্বার্থের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ক্ষমতার প্রসাদ প্রার্থীর লড়াই একাত্তরের যুদ্ধের অনিশ্চয়তা দীর্ঘসূত্রিতা আশঙ্কা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ উপরোক্ত দ্বন্দ্বকে তীব্রতর করে তোলে। কিন্তু তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে এর পরিসমাপ্তি ঘটে কেননা সব পুতুলের মাঝে তিনি পুতুলের রাজা। রূপকের মাধ্যমে সৃষ্ট তার ভাবমূর্তি চারণার স্পর্শ মনিতে উদ্দীপ্ত তার আত্মদানের রূপকাহিনী এবং সর্বোপতি তার ব্যক্তিত্বের অপরিমিত শ্বৌর্য্য ও ঐতিহাসিক নিবন্ধ জাতীয় স্বাধীনতার বিভ্রম সৃষ্টিতে অনেক বেশী কার্যকর। জনগণের বিমুর্ত ভালোবাসার বর্ণচ্ছটায় আলোকিত ভাবমূর্তি তার শ্রেণীর চিত্রের রঙ্গিন প্রচ্ছদ মাত্র। বাঙালি বুর্জোয়ার নিকৃষ্টতম ও মেরুদন্ড বিহীন মুৎসুরদী শ্রেণীর তিনি ছিলেন যোগ্যতম শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধি।

পুতুলনাচের ইতিকথার পরের কথা তাই বিচিত্রতর। এই উৎপাদন বিমুখ লুন্ঠন প্রিয় পরভৃত শ্রেণি স্বাভাবিকভাবেই সাম্রাজ্যবাদ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের উপর নির্ভরশীল হবে।ঐতিহাসিক কারণে এবং উপমহাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে উপরোক্ত তিন শক্তি ত্রয়ের সমন্বয় ও দ্বন্দ্ব পৌনঃপুনিক ভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মুৎসুরদী বুর্জোয়ার আন্তর্জাতিক নির্ভরতর নিক্তিকে প্রভাবিত করেছে। বিগত সাড়ে তিন বছর পরও মুখতার মূল স্তম্ভ ছিল সামাজিক সম্রাজ্যবাদের সমর্থনপুষ্ট ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তাদেরই নির্দেশে নির্মিত হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক গণসচেতনতাকে পায়ে মাড়িয়ে সার্বভৌমত্বের জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সার্থক কে ধ্বংস করে এবং সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে এই শক্তি জোটের স্বার্থে অবনমিত করে শুরু হয়েছিল পরিকল্পনার দ্বিতীয় অধ্যায়। এই ফলশ্রুতি একদল এক নেতা এক দেশ। এরে পরিনাম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য। এরে অবশেষ লুণ্ঠিত লাঞ্চিত মৃত্যুকীর্ণ বাংলাদেশ।

শেখ মুজিবুর রহমান এই নাটকের নিরুপায় ক্রীড়নক। তার অসহায়ত্ব আমি স্বচক্ষে দেখেছি দেখেছি দায়বদ্ধ মানুষের নিষ্ফল ইচ্ছের বিলোপ। এখানেই ছিল তার সততা জেনেছিলেন কিংবদন্তির নায়ক তার রাজনীতির প্রক্রিয়া দিচরণে অতুল্য। কিন্তু ঋণগ্রস্ততার দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বার বার চক্রবৃদ্ধি হারে তিনি মূল্যের কড়ি গুনে ছিলেন। তার প্রাপ্য ছিল শুধুমাত্র ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন।

আমি এ প্রসঙ্গে র্দীর্ঘ অবতারণা করেছি শুধুমাত্র এ কথা বলার জন্য যে বাংলাদেশের সমাজ বিন্যাস, সামাজিক স্তর এবং ঐতিহাসিক পটভূমির প্রেক্ষিতে বা ব্যক্তিদৌর্বল্য কিংবা ব্যক্তি দুঃশাসন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক স্থবিরতা শেখ মুজিবুর রহমানের অকাল পতনের প্রধান কারণ হতে পারে না। কেননা রাজনীতি ও ইতিহাস নিজস্ব গতিবেগে এগিয়ে চলে। সেখানে ব্যক্তি জ্ঞানী মূর্খ শুধু ঘটনাপ্রবাহ ডায়নামিকস। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান এবং প্রথম প্রথম এই ঘটনা প্রবাহের মধ্যে নিহিত ছিল তার সম্রাটের স্বপ্ন উপজাতীয় গোষ্ঠী প্রিয়ত, আকাশচুম্বী, অহম এবং আত্মবিমোহন তারই দায়বদ্ধ আত্ম ও শ্রেণীসঞ্জত অপূর্তির আগ্রাসী অভিব্যক্তি। যে তাই তিনি আদালতের বাঁধনে জড়িয়ে গেছেন তাতেও বৃদ্ধি পেয়েছে তার বিভ্রম ইংরেজিতে যাকে বলা হয় পারা নাইয়া।

আমার কারামুক্তির পর ২৯ শে জুলাই তার সাথে দেখা হয়েছিল বিক্ষিপ্ত পদচারণায় অস্থির শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ঃ “Perhaps the whole thing was a sabotage. I am sorry for what happened to you. But my hands were tied.”তার রাজনীতির দিচারণ সত্ত্বেও আমি তার অসহায়তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। কেননা আমি জানি পুতুলের রাজনীতি নিষ্করণ যে সেখানে রাজা সাজা যায় কিন্তু ইচ্ছামত রাজ্য শাসন করা যায় না। নিপুন ক্রীড়া তাকে গরিমা দিয়েছিল কিন্তু প্রাণ দেয়নি, পোশাকি বৈভবে বিভূষিত করেছিল কিন্তু স্বাধীনতা দেয়নি। এক নেতা এক দল ঃএই প্যান্টোমাইম প্রদর্শনীর সর্বশেষ পর্ব।

বিগত সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশের দুঃখী জনগণ এই অবাক প্রদর্শনীর মৌন দর্শক ছিলেন। তাদের নিঃশব্দ আর্তিতে ধ্বনিত হচ্ছিল কতিপয় লুটেরার অট্টরোল। আর তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কারী চক্র যার সমাজতন্ত্রের ছলে মৈত্রীর ছদ্মবেশে এবং আন্তর্জাতিকতারদের আবডালে বাংলাদেশকে বৈদেশিক স্বার্থের অবারিত লীলা ক্ষেত্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। অন্যদিকে বাঙালি বুর্জোয়ার নিকৃষ্টতম মেরুদণ্ডহীন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি কে ধ্বংসকল্পে পরদেশী বাণিজ্যিক পুঁজি সেবাদাসের ভূমিকায় নিয়োজিত ছিল। এরই সাংগঠনিক রূপ ছিল দেশ প্রেমিক (?) দের ত্রিদলীয় ঐক্যজোট। এই ঐক্য জোটের নীলনকশা পরিশেষে একদলীয় শাসন প্রবর্তনের মাধ্যমে রূপায়িত হয।

ফলতঃ একদিকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাববলয়ে আপতিত হয় এবং অন্যদিকে পূর্ব ভারতের ধ্বংসামুক শিল্প কেন্দ্রের পায় ঔপনিবেশিক পশ্চাৎ ভূমিতে পরিণত হয়। দেশের উৎপাদিকা শক্তিকে সুপরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করার ইতিহাস বিংশ শতাব্দীতে বিরল। অষ্টাদশ শতকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলার লুটেরা বাণিজ্যিক পুঁজির অবাধ লুন্ঠনের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সাদৃশ্য লক্ষণীয়।

এই দৈতচক্র কখনো এককভাবে, কখনো যুগ্মভাবে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কায়েম করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিধারা নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় স্বাধীনতা কে বৈদেশিক প্রভুদের স্বার্থে নস্যাৎ করার জন্য এই চক্র জোট পৌত্তলিকতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে, মুজিববাদের ফ্যাসিবাদী দর্শনকে নিপীড়নমূলক পৌত্তলিক রাজনীতির তত্ত্বগত ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আর তার যোগান দিয়েছে দেশপ্রেমিকদের ঐক্যজোটের উপর দুটো রাজনীতি ও বৈদেশিক শক্তি দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক দল।

এক নেতা এক দল শেখ মুজিবুর রহমানের একক আত্মচিন্তা নয়। এক নেতা এক দল শেখ মুজিবুর এক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের একক আত্মচিন্তা নয়। বিগত সাড়ে তিন বছরের দেশপ্রেমী বিরহিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি। আর সেজন্যই দরপতন শুধুমাত্র অবাধ দুর্নীতি, লুণ্ঠন, দুঃশাসন, গোষ্ঠীপ্রিয়তা ও পারিবারিক শাসন প্রতিষ্ঠার কারণ জড়িত নয়। এর মূল কারণ পূর্বে উল্লেখিত রাজনীতি ও ইতিহাসের মধ্যে নিহিত।

আমি বারবার একই কথায় ফিরে আসছে কারন আমার দৃষ্টিতে রাজনীতি মুখ্য, ব্যক্তি নয়, ইতিহাস প্রধান, ঐতিহাসিক চরিত্র নয়। শেখ মুজিবুর রহমান জুডাসেয় সিংহ নন অথবা দেববংশোম্ভব কুল নায়ক নন। তিনি বাংলাদেশের সমাজ বিন্যাস ও পরিমণ্ডলে লালিত একজন নবর মানুষ।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশ্লেষণই অর্থনৈতিক এবং ভ্রমাত্মক বলে আমি মনে করি। তিনি ছিলেন মাধ্যম এবং তারই নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল আমল মুৎসুন্দী শ্রেণীর অসার রাজত্ব। সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তির সর্বোদয় এই ধরনের মেরুদণ্ডহীন শ্রেণীর ওপর ভিত্তি করে তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করে। আর সে জন্যই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছিল বাঙালি বুর্জোয়াদের হীনতম অংশ প্রশাসনযন্ত্রে প্রধান ছিল বাঙালি ব্যুরো ক্রেসির সবচাইতে দুর্নীতি পরায়ন ও তবেদর অংশ এবং অর্থনীতিতে ক্ষমতাবান ছিল পরদেশী লুটেরা পুঁজির দেশীয় দেবদাস। একদলীয় শাসন সেই ঘৃণ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জোটকে কায়েম করার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছিল।

এই চক্র জোটের এক বৎসর প্রতিভূ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের ঋণশোধ করেছিলেন। গণতন্ত্র হরণ, নির্মম নিপিরণ কণ্ঠ রোধ এবং হত্যা এই প্রক্রিয়ায় অন্যতম পর্যায়। আজও ৬২ হাজার রাজনৈতিক কর্মী বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজিবুর কর্তিক কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় দিন গুনছেন। আর সেই শ্রক্রিয়কে পরম উল্লাসে উস্কানি দিয়েছে কম্যুনিস্ট নামধেও একদল সখলিত পরজীবী। কেননা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী শক্তিকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারত না। শেখ মুজিবুর রহমানের তিন বছরের দুঃশাসন সহস্র জননীর বুক ভেঙে দিয়েছে, শত শত বীর দেশপ্রেমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, দেশীয় সম্পদ পাচারের নয়া ইতিহাস রচনা করেছে, মনন ও সংস্কৃতিকে হত্যা করেছে এবং সর্বোপরি সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়েছে।

অর্থনীতির আর কানাকড়িও অবশিষ্ট নেই অতএব কাল স্তরের এই সন্ধিক্ষণে যদি আমরা সেই রাজনীতিকে পরাস্ত না করতে পারি, শেকল ভাঙার সংগ্রামে অবতীর্ণ না হতে পারি এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, জাতীয় বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও কৃষক শ্রমিকের ঐক্য জোট না গড়তে পারি তবে আবার পুতুল রাজ কায়েম হবে। পুতুলের রাজাকে যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তবে আবার পরদেশী পটুয়া নতুন আদলে পুতুল গড়বে। পরিশেষে তবুও বলবো শেখ মুজিবুর রহমান আমার চোখে গ্রিক ট্রাজেডির এক করুণ চিত্র শ্রেণী চেতনায় সকীর্ণ, ঈর্ষায় বিদ্ধিষ্ট, ভালোবাসায় অকৃত্রিম কিন্তু দুর্বলতায় আকীর্ণ একজন নবর মানুষ। ক্ষমতার আগুনে তাঁর সদম্ভ পদচারণা কখনো ভীতি, কখনো করুনার সৃষ্টি করেছে। সত্য ভাষণে তিনি ভ্রুকুটি করেছেন, প্রতিবাদীকে রোষানলে ভস্ম করতে চেয়েছেন এবং মিথ্যা ভাষণে তুষ্ট হয়েছেন। দেশকে ভালোবাসতে গিয়ে ও তিনি দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। জীবন দিয়ে তাকে সেই মূল্য শোধ করতে হয়েছে। বাংলাদেশ অমর হোক, স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক।

এই চক্র জোটের এক বৎসর প্রতিভূ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের ঋণশোধ করেছিলেন। গণতন্ত্র হরণ, নির্মম নিপিরণ কণ্ঠ রোধ এবং হত্যা এই প্রক্রিয়ায় অন্যতম পর্যায়। আজও ৬২ হাজার রাজনৈতিক কর্মী বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজিবুর কর্তিক কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় দিন গুনছেন। আর সেই শ্রক্রিয়কে পরম উল্লাসে উস্কানি দিয়েছে কম্যুনিস্ট নামধেও একদল সখলিত পরজীবী। কেননা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী শক্তিকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারত না। শেখ মুজিবুর রহমানের তিন বছরের দুঃশাসন সহস্র জননীর বুক ভেঙে দিয়েছে, শত শত বীর দেশপ্রেমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, দেশীয় সম্পদ পাচারের নয়া ইতিহাস রচনা করেছে, মনন ও সংস্কৃতিকে হত্যা করেছে এবং সর্বোপরি সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়েছে।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1976.08.13-bichitra.pdf” title=”1976.08.13 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!