You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি
ডিসেম্বর, ১৯৭১
আমি মনে করি যে গতকাল রাতে মুলতবির পর যে নির্দিষ্ট উন্নতি হয়েছে তা আমি পরিষদের কাছে রিপোর্ট করতে বাধ্য। ঐ মুলতবির প্রায় দেড় ঘন্টা পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী নয়া দিল্লীতে আমাদের সংসদে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। ভারতীয় সংসদে প্রদান করা তার বিবৃতি পড়ে শোনানোই আমি সবচেয়ে ভাল মনে করি। তিনি বলেছেনঃ
“ভয়ঙ্কর সংঘাতের মুখে বাংলাদেশের মানুষের সাহসী সংগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। পূর্বে, তাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছে, এবং এমনকি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিও শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকারের কথা স্বীকার করেছে। আমরা কখনোই জানব না কী তার এই বদান্য মেজাজ ও বাস্তব ঘেষা পথ (যদি তা আসলেই থেকে থাকে) ধ্বংস এবং উন্মুক্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও নিপিড়নে পরিবর্তন করেছে।”
“আমাদেরকে বলা হয়েছে যে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের বিরোদ্ধে অহিংস আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু অসতর্কাবস্থায় ও নিঃষ্ঠুর মিলিটারি হামলায় ধর-পাকড় করা হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষনা বাদে আর কোন বিকল্প তাদের ছিলনা। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রথমে মুক্তি ফৌজ এবং পরবর্তীতে মুক্তি বাহিনী হয়েছে, যাতে যোগ দিয়েছে হাজার হাজার পূর্ব বাঙ্গালি যুবক যারা তাদের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎ গড়ায় নিজেকে উৎসর্গ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। ঐক্য, সঙ্কল্প, এবং সাহস যা সাথে নিয়ে পুরো বাংলাদেশের মানুষ লড়ছে তা বিশ্ব সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। এইসব ঘটনা আমাদের দোরগোড়ায়, এবং ফলস্বরুপ আমাদের দেশে উদ্বাস্তুদের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, আমাদের দেশে সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এটা স্বাভাবিক যে আমাদের সহানুভূতি বাংলাদেশের মানুষের সাথে তাদের সংগ্রামে থাকা উচিত, কিন্তু দ্রুততার সাথে স্বীকৃতির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেইনি। আমাদের সিদ্ধান্তসমূহ কেবলই আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয় না বরং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাস্তবতা মূল্যায়নেও হয়। বাংলাদেশের সব মানুষের সর্বসম্মত বিদ্রোহ এবং সংগ্রামের সাফল্যের দ্বারা এটা ক্রমাগতই স্পষ্ট হয়েছে যে তথাকথিত মাতৃভূমি পাকিস্তান রাষ্ট্র, বাংলাদেশের জনগণকে তার নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোপুরি অক্ষম। বাংলাদেশ সরকারের বৈধতার জন্য, পুরো বিশ্ব এখন সচেতন যে এটা অভিভূতকারী সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রতিফলন যা খুব বেশি সরকারই উত্থাপনের দাবি করতে পারবেনা। গভর্নর মরিসের প্রতি জেফারসনের বিখ্যাত কথার মত, বাংলাদেশ সরকার পুরো জাতির প্রকাশিত ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।’
“এই মানদন্ড প্রয়োগ করে, পাকিস্তানে সামরিক শাসন, যাদের উপর কিছু দেশ বিশ্বাস স্থাপনে উদ্বিগ্ন, এটি জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার না এমনকি যুদ্ধটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হলেও। আমাদের পক্ষ থেকে কিছুই না করার ইতস্ততা যা আসতে পারে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে, অথবা যাকে হস্তক্ষেপ রূপেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, এই ইতস্ততা তার গুরুত্ব হারিয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ তাদের মৌলিক অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করছে এবং ভারতের জনগণ আগ্রাসনকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে এখন তাদেরকে একই কারণের পক্ষালম্বীরূপে পায়। আমি সংসদকে অবহিত করতে পেরে আনন্দিত যে বর্তমান অবস্থার আলোকে এবং বাংলাদেশ সরকারের পৌনঃপৌনিক অনুরোধের প্রেক্ষিতে, শান্তিপূর্ন বিবেচনার পর ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এটা আমাদের আশা যে সময়ের পরিক্রমায় আরো অনেক দেশ স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং শীঘ্রই বাংলাদেশ জাতিগুলোর পরিবারভুক্ত হবে।
“এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা নতুন রাষ্ট্রের জনক, শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। আমি নিশ্চিত যে সংসদ চায় তাদের মহত্ব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের সহকর্মীদের প্রতি জ্ঞাপন করতে, আমাদের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন। আমি সংসদের টেবিলে উপস্থাপন করছি, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে যেসব যোগাযোগ পেয়েছি তার কপিসমূহ। সম্মানিত সদস্যরা জেনে আনন্দিত হবে যে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে তাদের রাষ্ট্রের মৌলিক নীতিসমূহ হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরেপক্ষতা এবং সাম্যবাদের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করবে যেখানে বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ অথবা ধর্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কোন বৈষম্য হবে না। পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সকল প্রকাশনায় জোট নিরেপক্ষতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ এবং সামন্তবাদের বিরোধিতার নীতি অনুসরণের প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছে। এই আদর্শসমূহে ভারতও নিবেদিত। যেসব নাগরিক ভারতে সাময়িক আশ্রয় গ্রহন করেছে তাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন এবং তাদের জমিজমা ও সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করার ব্যাপারেও বাংলাদেশ সরকার তাদের শঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের উচিত এই আয়োজন সমূহে সব উপায়ে তাদের সহযোগিতা করা। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, ভবিষ্যতে, ভারত ও বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যারা এক আদর্শ ও ত্যাগ ভাগ করে তারা প্রত্যেকে একে অপরের সার্বভৌমত্য ও ভূমির অখন্ডতা, অভন্ত্যরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সাম্যতা ও পারস্পরিক লাভের প্রতি সম্মানের উপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক নির্মান করবে। এভাবে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য একসাথে কাজ করে, আমরা ভাল প্রতিবেশির দৃষ্টান্ত স্থাপন করব যা একাই এই অঞ্চলের শান্তি, স্থীতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।”
এখন, আমি এই বিবৃতি পুরোটা পড়েছি কারন আম বিশ্বাস করি এটার পুরোটাই নথিভুক্ত হওয়ার জন্য এবং মানুষের শোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশের এই স্বীকৃতি ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে সম্পুর্ণ ভিন্ন আইনগত, রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক ক্ষেত্রে আনয়ন করেছে; এবং আমি পরিষদকে অনুরোধ করব কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে এই নতুন উন্নয়ন অনুধাবন করতে।
যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছি, আমি মনে করি ইতিহাসের দিকে বেশি নয় খুব সামান্য ফিরে তাকানোর জন্য আমার পরিষদের কয়েক মিনিট সময় নেয়া উচিত। এটা বলা হয়ে থেকে যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়া স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন খুব দ্রুতই স্বাধীনতার আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়, এবং এটি পাকিস্তানের বিচ্ছন্নতা আনতে পারে। আমি শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ৬-দফা আন্দোলন যা স্বায়ত্তশাসনের ফর্মুলা এর ছোট অনুচ্ছেদ পড়তে পারি। তিনি যা বলেছেন তা হল এইঃ
“ষষ্ঠত, নম্রভাবে আমার পশ্চিম পাকিস্তানি ভাই ও বোনদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে যখন আমরা বাংলাকে পাকিস্তানের দুই রাষ্ট্রভাষার একটি করার দাবি করি আপনারা নিন্দা করেছিলেন যে এটি পাকিস্তানকে বিভক্ত করার পদক্ষেপ। আবার যখন আমরা যুক্ত নির্বাচনের দাবি করেছিলাম, বিশেষ করে আপনাদের উপস্থাপিত দাবিতে সমতার ক্ষেত্রে, আপনারা নিন্দা করেছিলেন যে এই দাবি সীমান্তের বাহির থেকে উৎসাহিত হয়েছে। এই উভয় দাবি এখন গৃহিত হয়েছে, কিন্তু এখানে এগুলোর গ্রহনের কারণে পাকিস্তানকে বিভক্ত করা হচ্ছে না। এটা কি আপনাদের লজ্জায় ফেলেনা যে পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেকটি যৌক্তিক দাবি আপনাদের তুমুল সমালোচনা ও তিক্ত সংগ্রামের পর নিরাপদ হতে হয়, যেন অনিচ্ছুক বৈদেশিক শাসকের অনিচ্ছুক অনুমোদন ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে? এটা কি আপনাদের কোন সম্মান দেয়? দয়া করে এই অভিভক্তি চূড়ান্তরুপে বন্ধ করেন। দয়া করে শাসকের বদলে ভাই হোন।”
এখন, সামরিক কঠোর পদক্ষেপের পর, গতকাল আমি যা তুলে ধরেছি, স্বাধীনতা হঠাৎ করে ঘোষণা করা হয়েছে। এবং নতুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে যা বলার আছে তা হলঃ
“পাকিস্তান এখন মৃত এবং লাশের পাহাড়ের নিচে শায়িত আছে। বাংলাদেশে সেনাবাহীনির দ্বারা শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে লোকের খুন পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মাঝে দূর্ভেদ্য বাধা হিসেবে কাজ করবে। পূর্ব পরিকল্পিত গণহত্যা সংগঠনের দ্বারা, ইয়াহিয়ার জেনে রাখা উচিত সে পাকিস্তানের কবর খুড়ছিল। তার আদেশে পরবর্তীতে বাছবিচারহীন হত্যা, তার অনুমোদিত হত্যাকারিদের দ্বারা, জাতির ঐক্য রক্ষার জন্য যাদের প্রস্তুত করা হয়নি। এগুলো ছিল জাতিগত ঘৃণা ও ধর্ষকামের কার্য, মানবতার উপাদান শূন্য। পেশাদার যোদ্ধারা, আদেশের মাধ্যমে, সামরিক সম্মানের নিয়মাবলী ভঙ্গ করেছে এবং শিকারী পশুর মত দেখা যায় যারা খুন, ধর্ষন, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসে তৃপ্ত হয়, সভ্যতার ইতিহাসে যা বিরল। এই কাজসমূহ ইঙ্গিত করে যে দুই দেশের ধারণা ইয়াহিয়া ও তার সহযোগীদের মনে গভীরভাবে পোতা যারা নিজেদের অঞ্চলে এইধরণের নিষ্ঠুর কাজ সংগঠিত করার সাহস করবে না। ইয়াহিয়ার গণহত্যা তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন। এটি পাকিস্তানের ভয়ানক ইতিহাসে শুধুমাত্র শেষ কার্য হিসেবেই বিবেচিত হবে যা ইয়াহিয়া বাংলার মানুষের রক্তদ্বারা লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্দেশ্য হল গণহত্যা ও দগ্ধ করা, তার সৈন্যদল তুলে নেওয়া বা ধ্বংস হওয়ার পূর্বেই। এই সময়ে, সে আশা করে আমাদের শিল্প এবং গণ সুযোগ সুবিধা ধ্বংস করতে সকল রাজনোইতিক নেতৃত্ব, বুদ্ধিজীবী, এবং প্রশাসন শেষ করে দেওয়ার। এবং, চুড়ান্ত কাজ স্বরুপ, সে চায় আমাদের শহরসমূহ মাটিতে মিশিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে, তার অধিকারভুক্ত সেনাদল, এই উদ্দেশ্যে অর্থপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ ৫০ বছর পিছিয়ে যাবে যা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঐসব মানুষের প্রতি বিচ্ছেদ উপহার যাদের তারা নিজেদের লাভের জন্য ২৩ বছর শোষণ করেছে।
এই ঘোষণা ১৭ এপ্রল, ১৯৭১ সালে দেওয়া হয়েছে।
এই ক্ষেত্রে, আমার একটি নিবন্ধ পড়া উচিত যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সদস্য হয়ত তা পড়েছেন, সম্ভবত যারা ইংরেজভাষী নন তারা পড়েননি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের ইচ্ছার মর্যাদায়, আমি এই নিবন্ধের সকল সূত্র নিক্সন প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিব, রাষ্ট্রপতির প্রতি, এবং অন্যান্য। আমি আশা করি, যাইহোক, সে আমাকে তৃপ্ত করবে যদি আমি আমাদের আমার পাঠে আমাদের নিজের সরকার সূত্র অন্তর্ভূক্ত করি এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর, যতই তা সঙ্কটপূর্ণ হোক। যা বলা হয়েছে তা হল এইঃ
“ধারণা করুন যে ব্রিটেন, ১৯৩০ সালে, হিটলারের বর্বরতায় প্রশমনের বদলে পূর্বে হুমকি ও সামরিক শক্তি ব্যাবহার করে সাড়া দিয়েছে….”
“তাই পাকিস্তানের সাথে ভারতের শত্রুতার নিয়ে সপ্তাহান্তে দোষারোপ করার উপর আমেরিকার বিবৃতির পর মানুষের চিন্তা করা উচিত। পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের নামে কিছু কথা বলা হয়েছে যা খুবই অশোভন। স্বরাষ্ট্র বিভাগের নাম গোপন করা কর্মকর্তা যিনি মন্তব্য করেছেন যা উরিয়াহ হিপের সাথে মিলে যায়। “-আমি এই ভদ্রলোককে চিনি না-” অবস্থার তথ্যসমূহ ও আমাদের নিজস্ব নৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ন তৈলাক্ত অসূয়ার মত”।
“প্রথমে বিবেচনা করুন এই বিবাদের তাৎক্ষণিক উৎসসমূহ। এগুলো ব্যতিক্রম্ভাবে সম্পূর্ণ পরিষ্কার যেভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যায়।”
আমি কি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোচনা করতে পারি? এই সংগঠন ও তার এজেন্সি সমূহের বিশিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের লিখিত প্রচুর প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নয়মাস ধরে পেয়েছে। যদি এমনকি পরিষদ পদ্ধতিগত ও অন্যন্য রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনতে রাজি না হয়, যা আমি বুঝতে পারিনি এবং যা আমার প্রস্তাবের বিপরীত, অবশ্যই এই প্রতিবেদনসমূহ সহজলভ্য করা যায়। কিন্তু না, এটি এই বিতর্কে যে ফলাফল থাকুক না কেন তার ক্ষতি করবে। এখন আমি উদ্ধৃতি প্রদান চালিয়ে যাইঃ
“প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের শাসক সামরিক জান্তা একটি নির্বাচন আয়োজন করে। গণতান্ত্রিকভাবে বিশাল সংখ্যক আসনে একটি বাঙ্গালী দল জয়লাভ করে যা পূর্ব পাকিস্তানে কার্যকর স্বায়ত্তশাসনের সুবিধা প্রদান করে। তার কারণে ইয়াহিয়া এই নির্বাচনের ফলাফল শক্তি দিয়ে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।”
এখন, এই পয়েন্ট মনে রাখতে আমি ঐ সকল লোকের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই যারা এখনও গণতন্ত্র প্রচার করেন। আমি নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে পড়ে যাচ্ছিঃ
“গত মার্চে, বড় অংকের পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদল পূর্বে যায় এবং নৃশংস হত্যার নীতি শুরু করে। তারা বাছাই করা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবী হত্যা করে তারপর গণহারে সাধারণ লোক হত্যা করে। তারা গ্রামসমূহ পুড়িয়ে দেয়। তারা গণ খোজাকরণ অনুষ্ঠিত করে।
“ইয়াহিয়া খানকে হিটলারের সাথে তুলনা করা ঠিক নয়। ইয়াহিয়ার বর্ণবাদী মিশন নেই কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বিদেশাতঙ্ক শক্তির একজন মুখপাত্র। কিন্তু ফলাফল অনুযায়ী, মানুষ হত্যায়, বর্বরতায়, উচ্ছেদকরণ অনুযায়ী- ইয়াহিয়ার রেকর্ডসমূহ তুলনামূলকভাবে হিটলারের প্রাথমিক বছরসমূহের সাথে মিলে যায়।
“পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুর্বে কয়েকশত হাজার লোক হত্যা করে, এবং দশ মিলিয়ন লোক ভারতে পালিয়ে যায়। অত্যাচার-নিগ্রহসমূহ বিশেষভাবে বর্ণ ও ধর্মের ধারায় হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা হল বাঙ্গালি অথবা হিন্দু, চেক বা পোলিশ বা ইহুদী নয় এবং সম্ভবত একারণে পশ্চিমে আমাদের কাছে কম অর্থপূর্ণ। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে এই অপরাধ একই।
“এই নথি বিশ্বের কাছে গোপন ছিল না।
এজন্যেই আমি জাতিসংঘের কাছে ইতিমধ্যে যে প্রতিবেদন আছে তা উল্লেখ করেছি, কিন্তু যা, কিছু কারণে, দিনের আলো দেখেনি।
আমি পড়ে শোনানো চালিয়ে যাইঃ
“.. . ভারতে থাকা শরণার্থীদের করুণাময় দূর্দশা চিত্রিত হওয়া উচিত।”
আমি তারপর একটি বাক্য বাদ দেই, এবং চালিয়ে যাইঃ

“আধুনিক কালের সবচেয়ে আতঙ্কজনক শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে একটিও শব্দ নয়, নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত কূটনীতি চলছিল, ইয়াহিয়ার উপর আমেরিকার চাপের দৃশ্যমান কোন চিহ্ন ছিল না যা বাঙ্গালিদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে পারার একমাত্র পদক্ষেপ।
“পাকিস্তানের যুক্তি ছিল এটা পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। হ্যাঁ, জার্মান ইহুদীদের সাথে নাৎসীদের ব্যবহারের মত। কিন্তু এমনকি যদি একজন গ্রহন করে, যেহেতু একজনের গ্রহণ করা আবশ্যক, যে পাকিস্তানের অবশ্যই ভূমির অখন্ডতা রক্ষা করতে বাধ্য, তবুও এই ব্যাপারটি তার সীমানা ছাড়িয়েছে। ভারতে শরণার্থী প্রভাব খুব শীঘ্রই এটা পরিষ্কার করে যে পুরো উপমহাদেশের শান্তি হুমকির মুখে আছে।
“এটা হল এমন যে নিউ ইয়র্ক সিটির সব মানুষকে নিউ জার্সিতে শুধুমাত্র খাওয়া-পড়াতে হুট করে খালাস করা হয়েছে যা বিদ্যমান সম্পদ অনুযায়ী সীমাহীন খারাপ। এরপরেও ইন্ধিরা গান্ধী পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধান আয়োজন করতে পশ্চিমের রাজধানীতে গিয়ে কিছুই পাননি।
“ভারতীয়রা ভন্ডামিপূর্ণ হতে পারে”
আমি আমার দেশ, আমার সরকার অথবা, আমার প্রধানমন্ত্রীর বিপরীতে প্রসিদ্ধ পত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি প্রদানে কিছু মনে করি না।
-“মিসেস গান্ধী রাজনৈতিক কারণের জন্য কাজ করেন, হৃদয় থেকে অথবা হৃদয়ের বিশুদ্ধতার জন্য নয়। ভারত বাংলদেশের গেরিলাদের সাহায্য করেছে এবং, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, পূর্ব পাকিস্তানের উপর উত্তেজক চাপ প্রদান করেছে। সব সত্যি। কিন্তু তার প্রদত্ত আগ্রহের ব্যাপ্তি ও অসহনীয় চাপ অনুযায়ী ভারত মহান সংযম দেখিয়েছে।
“মোটের উপর, ভারত তার সীমান্ত থেকে হাজার মাইল দূরের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেনি।
আমি অনুচ্ছেদের বাকি অংশ এড়িয়ে যাব।
ভারত উপমহাদেশে আমেরিকার নীতি তার কার্যকর সাধারণ জ্ঞানের মান অনুযায়ী যেমন বিপর্যয়কর তেমনি তার সহানুভূতি অনুযায়ীও। ভারত বিরক্তিকর ও শক্ত হতে পারে, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার ধারণা অনুযায়ী ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বর রাষ্ট্র। অবস্থান ও জনসংখ্যা অনুযায়ী চীন বাদে ভারত বিশাল ব্যাবধানে এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এরপরেও ভারতকে শত্রুভাবাপন্ন করতে, তার রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা শিথিল করতে এই নীতি তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা উপেক্ষা করে।”
পত্রিকা ও অন্যান্য কিছু থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করা আমার অভ্যাস নয়, কিন্তু যেহেতুঃ আমরা বিতর্কের সমাপ্তিতে আসছি, আমি ভেবেছি আমার উচিত অন্যান্য ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করা এবং শুধুমাত্র আমার নিজস্ব বিবৃতি ও সিদ্ধান্তের উপর নয়।
এই হল সিনেটর চার্চ, যিনি মাত্র ভারত থেকে ফিরে এসেছেন। আমি তার পুরো বক্তব্য পাঠ করব না- যা তিনি মাত্র এই সকালে তৈরি করেছেন- কারণ এটা বরং অনেক বেশি সময় নিবে, কিন্তু আমি সমাপ্তিসূচক সংক্ষিপ্ত দুই অনুচ্ছেদ পড়বঃ
আমার বুঝতে অস্বাভাবিক লাগে যে আমেরিকার নীতিতে কেন এত পাকিস্তানপন্থী। যুদ্ধে ভারতের অবস্থান, যা এখন পুনরায় প্রকাশ পেয়েছে, তা শুধুমাত্র তার স্বীকৃত আদর্শসমূহের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং এই অবস্থান খুব সম্ভবত অব্যাহত থাকবে। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি এই পক্ষপাতীত্ব দেখিয়ে, আমরা সম্ভাব্য পরাজিতদের পক্ষ নিয়েছি, এবং
আমরা পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধাদের শুভ ইচ্ছাকে ত্যাগ করি, পাশাপাশি ভারতের জনগণেরও।
“যদি না একজন বিশ্বাস করে যে পশ্চিম পাকিস্তান হল উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ তরঙ্গ, ইয়াহিয়া সরকারের প্রতি এই সরকারের পক্ষপাতিত্বের সাথে এই স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সামঞ্জস্যবিধান করা অসম্ভব।”
অবশ্যই, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ব্যাপারে আগ্রহী নই, অথবা এমনকি উদ্বিগ্নও নই। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পথে তার স্বার্থের দেখাশোনা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। আমি মনে করি সম্প্রতি গতকাল ভারতকে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করা অন্যতম একটি পথ, কিন্তু আমরা এর সাথে চলতে পারি। আমরা কোন হুমকি বা কর্তন নিয়ে ভীত নই। কিন্তু আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে আমাদের কী করা উচিত।
পরিষদ ভোট আরম্ভ করার আগে আমি মনে করি বিভিন্ন সমাধানের কয়েকটি ব্যাখ্যা বর্ণনা করার, এবং এই মুহূর্তে পরিষদের সামনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের আরেকটি সুযোগ আমি সম্বভত পাব। সমাধানটি নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর আমি কয়েকটি মন্তব্য করব।
প্রথমত, আমাদের সবকথা বলার পর, শুধুমাত্র এখন নয় বরং গত কয়েক মাস, আআমরা আশা করতে পারি না যে যে কোন সমাধান বা সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন যুক্তিবাদী মানুষ ভারতের সাথে পাকিস্তানের তুলনা করতে পারে। আমরা এটা আশা করি না, এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই এটা গ্রহণ করি না, আমরা আশা করি না কোন যুক্তিপূর্ণ মানুষ এটা করে, এবং যদি সে করে আমরা এটা গ্রহণ করতে পারব না। আমরা পাকিস্তানের সাথে কই শ্রেনীর নই। যদি, মিঃ প্রেসিডেন্ট আমাকে ব্যাখ্যা করতে বলেন তবে আমি ব্যাখ্যা করতে পারব; কিন্তু আমি মনে করি সঠিক বিষয়টি ইতিমধ্যেই সুপরিচিত।
দ্বিতীয়ত, আমরা ভাবি এটা ভুল, অযৌক্তিক, অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্যোগপূর্ণ, এমনকি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় না নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রধান দলের প্রতিনিধিগণ এই পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। যাইহোক্‌ এইবারই প্রথম নয় যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোন অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধুমাত্র এটা বুঝানোর জন্য যে এটা আছে, জীবিত ও কাজ করতে পারে। আমরা পরিষদকে অধঃমুখী করছি না। যথেষ্ট যৌক্তিক। আমরা সবাই জাতিসংঘের বিশ্বাসী সদস্য এবং আমাদের উচিত তার সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা। কিন্তু চলুন আমরা না বলি যে পুরোপুরি অবাস্তব সমাধান পাশ করিয়ে আমাদের নিজেদের সান্ত্বনা দেওয়া বাদে অন্যকিছু করেছি। এটা নিজে এত খারাপ নয়, কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর বিশ্বকে মিথ্যা আশা দেয় তবে আমি মনে করি এটা ভয়ানক হবে।
তৃতীয়ত, কোন বিষয়ের মূল কারণে না যায় না এমন কোন সিদ্ধান্ত আমরা নিব না, নিতে পারি না এবং আমাদের অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত না। এটা ভাল কথা নয় যে আমরা মনে করি কোন জীবন বাচাতে এখানে সেখানে ডানা কাটা উচিত। এই ব্যাপারটির প্রকৃত ঘটনা হল যে এই শরীরটি নয়মাস ধরে পচছে এবং কেউই কোন মনোযোগ দেয়নি। এখন, এতগুলো বছর পর, যখন আমরা পরিষদের অসাধারণ অধিবেশনে এসে, মূল কারণে না যাওয়া হল অন্য একটি শিবোলেট বা বাগাড়ম্বর যার উপর আমরা কঠিন ভিত্তি বানাতে পারি। আমরা এখানে একটি অসাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছি এবং এটা কত অসাধারণ। পাকিস্তান আগ্রাসন ও অন্যান্য কিছু নিয়ে চিৎকার ও চেঁচামেচি করছে, এবং এরপরে সে পরিষদের বৈঠক চায়নি। সম্ভবত তাদের চিন্তা করতে হয় না। সম্ভবত তারা জানে। গত নয়মাসে, পরিষদ ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংগঠনের কাছে কতবার এই প্রশ্নটি তোলার চেষ্টা করা হয়েছে? সবগুলো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
আমার মনে হয়, আমার বন্ধু ও সহকর্মী, ইতালির প্রতিনিধি, আগস্ট মাসে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০শে জুলাই মহাসচিব তার স্বারকলিপি পাঠান, কেন এটি এখনও কার্যকর হয়নি? আমরা সবাই জানি কেন হয়নি। জুলাই মাসে, পাকিস্তানের প্রতিনিধি জেনেভা থেকে নিউ ইয়র্কে উড়েছে এখানে কোন আলোচনা বন্ধ করতে, সেখানে কোন আলোচনা বন্ধ করতে; এবং এই চেষ্টাগুলো কয়েকমাস ধরে চলেছে। প্রতিবেদনসমূহ গোপন করা হয়েছে; আলোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এটার উপর সম্পুর্ণ নিরবতা ও গোপনীয়তার পর্দা ফেলা হয়েছে। তারপর, হঠাৎ করে, আমরা হাজির হই এবং বলি, “পৃথিবী আগুনে পুড়ছে। আমাদের অবশ্যই কিছু করা উচিত। কিন্তু কোন প্রধান সমস্যা বিবেচনা করা আমাদের উচিত না।”… এই হল একটি পথ যেটায় আমরা সম্পূর্ণভাবে দুঃখ প্রকাশ করি এবং নিশ্চিতভাবে নিন্দা করি।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!