You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | পাকিস্তানী প্রতিনিধি মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
                 শিরোনাম                        সূত্র                       তারিখ
পাকিস্তানী প্রতিনিধি মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস             ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পাকিস্তানী প্রতিনিধি মিঃ আগশাহীর বিবৃতি
৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
অভিপ্রায় ছিল না আবার বক্তব্য দেয়ার, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত আমাকে উদ্দেশ্য করে একটা প্রশ্ন করেছেন যা ডকুমেন্ট S/10428 এ খসড়া সমাধানের বাইরে থেকে উত্থাপিত হয়েছে। প্রশ্নটি ছিল, আপনারা কেন পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশের ব্যাপারে ভীত। আমি বিশ্বাস করি তিনি একটা জবাব পাওয়ার অধিকার রাখেন এবং তাকে আমি একট যথাযথ দেব। কিন্তু তার পূর্বে, আমি তার বর্ণিত খসড়া সমাধান পরিকল্পনার দুটি বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই।
আমি প্রথমে এই বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, যখন সোভিয়েত পরিকল্পনাকে পন্ঞ্চশক্তি খসড়া সমাধানের ডকুমেন্ট S/10425 এর প্রস্তাবসমূহের সাথে মেলানোর চেষ্টা চলছে, এটা পূর্বেকার খসড়া সমাধানকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, পন্ঞ্চশক্তির দেয়া খসড়া সমাধানের প্রথম প্যারার সাথে সোভিয়েত প্রস্তাবের প্রথম প্যারার তুলনা করা যায়। পন্ঞ্চশক্তি দেয়া খসড়া অনুযায়ী, ‘সকল সম্পর্কিত সরকারকে অবিলম্বে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যুদ্ধবিরতি দেয়া’। অন্যদিকে সোভিয়েত প্রস্তাবে আছে সকল সম্পর্কিত দলের অবিলম্বে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অস্ত্রবিরতি দেয়া এবং সকল যুদ্ধবিগ্রহের অবসান’। এটি একটি মৌলিক পরিবর্তন কারণ একটি প্রস্তাবনা সম্পর্কিত সরকারসমূহ নিয়ে কিন্তু অপরটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলা হয়েছিল। যেহেতু আমরা জানি যে, ভারতীয় আক্রমণকারী বাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদী দলকে সঙ্গ দিচ্ছে, সোভিয়েত খসড়ায় তাদের প্রথমে একটা দল হিসেবে ধরা হবে এবং তাদের সাথে মীমাংসায় যেতে বাধ্য করা হবে।অন্যকথায় এটা স্বীকারোক্তির পথ পরিষ।কার করবে। দলসমূহের একটি হিসেবে এটি আমাদের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রস্তাবিত সবচেয়ে মৌলিক পরিবর্তন।
আমি এখন রাষ্ট্রদূত মালিকের করা খসড়াটি চালিয়ে যেতে দেব এবং এটিই গ্রহণযোগ্য। সোভিয়েত সমাধান পরিকল্পনায়য় একটি অন্তর্নিহিত অসঙ্গতি আছে। কার্যকরী প্যারা ১ সহায়ক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিসমূহ এবং তাদের সাথে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে একত্রে একটি দল ঘোষনা করার ম্যধ্যমে তাদের মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করে। সোভিয়েত খসড়ার কার্যকরী প্যারা ২ একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানায় – ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রকাশিত পূর্ব পাকিস্তানী জনগণের ইচ্ছার তড়িৎ স্বীকৃতি প্রদান। বাস্তব তথ্য হলো, ভারতীয় বাহিনী এবং সহায়ক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ভোটারদের হুকুমকে অস্বীকার করছে। তারা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্থাপন করতে চায় যেটি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের প্রতিফলিত ইচ্ছা নয়। এখান বর্তমান চাওয়ার সাথে একটু গুণগত পার্থক্য আছে। অতএব, সোভিয়েত খসড়া একদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দান করে যারা স্বাধীনতাকামী এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের দেয়া আদেশকে লঙ্ঘন করেছে এবং অন্যদিকে বলছে যে তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছাকে সমর্থন করবে। এই খসড়া অনুযায়ী সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী দলকে একটি নিষ্পত্তির ডাক দেয়া হবে। আমি এই অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতিটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমি পূর্বেই সোভিয়েত সংশোধনীর ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছি, অস্ত্রবিরতিমূলক নিষ্পত্তির সথে যুক্ত যে বিষয়গুলোর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলাম সেগুলোও এখন সংশোধনীর অংশ। রাষ্ট্রদূত মালিক ব্যাখ্যা করলেন যে এদের মধ্যে একটা সুসম্বন্ধ সম্পর্ক আছে। আর সেটা হল, যতক্ষণ পর্যন্ত না নিষ্পত্তি হবে, শত্রুতা অবশ্যই থাকবে এবং যুদ্ধ চলবে।
এখন পাকিস্তান সরকারের আক্রমণকারী ভারতীয় বাহিনীর হুমকিজনক উপস্থিতির কারণে রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে আসতে হচ্ছে। এমন সব পরিস্থিতিতে ফেলে আমাদের নিষ্পত্তির জন্য ডাকা হয়েছে যা নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘেও নতুন।
জনমতের মুখপাত্র, কলামলেখক ও বুদ্ধিজীবীরা অনেককিছুই বলতে পারে। তাদের অনেকেই জাতিসংঘ সম্পর্কে উঁচু ধারণা পোষণ করে না-য়দিও অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন যারা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট নন। কিন্তু আমরা এখানে জাতিসংঘ সনদের নিয়ম-নীতির কাঠামোর মধ্যে থেকেই কাজ করছি এবং আমাদের এই মূলনীতি মেনেই কাজ করতে হবে।বুদ্ধিজীবী এবং সংবাদপত্রেরর কলামলেখক ও সম্পাদকরা নিজেদের শ্রেয় ভাবে এবং জনমত গঠনে জাতিসংঘের আইনকে অগ্রাহ্য করে। কিন্তু আামাদের অবশ্যই সনদ অনুযায়ী চলতে হবে।
অতএব, এমন একটি নীতি যে যখন কোন দেশ বহিরাক্রান্ত ও দখলকৃত অবস্থায় থাকে তখন সেখানকার কোন সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান দেয়া যাবে না। আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি এটা দেখতে পেয়ে যে এই নীতিটি একটি জাতিসংঘের নীতি যেটিকে সোভিয়েত খসড়া প্রস্তাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
এছাড়াও আমি আরও দেখাতে চাই সব খসড়া সমাধানেই আছে যেটা জাতিসংঘ বিবেচনা করেছে, এটা একটি অলঙ্ঘনীয় tractice যুদ্ধবিরতির সাথে অপসারণ সংযুক্ত করা। আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের নীতিগত অবস্থানের প্রশংসা করছি কারণ তারা সবসময় অপসারণ ও যুদ্ধবিরতির মধ্যকার সাংগঠনিক যে সম্পর্ক তা বজায় রেখেছে।কিন্তু, দুঃখজনকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা তাদের কাছ থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ অগ্রগতি পাই নি।
আমি যেমনটা বলেছি যে, পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের একটি স্বীকৃত অংশ সদস্যদেশসমূহ দ্বারাও। ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সামরিক হামলা ও আক্রমণ সমন্বিত পাকিস্তানের উপর সম্মিলিত সামরিক হামলা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি অভিযোগ এনেছেন পাকিস্তানই এটি শুরু করেছিল ৩ ডিসেম্বর এর হামলার মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের একটু পূর্বে ফিরে যেতে হবে। আমি এটাই বলতে চাই যে হামলাটি শুরু হয়েছিল ২১ নভেম্বর, যা হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেটি একটি একক রাষ্ট্র।
এরপর আসি আমার মন্তব্যের ব্যাপারে, আমাদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট সম্পর্কে যা বলেছি তা আমাকে স্পষ্ট করতে দিন। আমাদের একটি অভ্যন্তরীণ সঙ্কট আছে, যেটি একটি রাজনৈতিক সঙ্কট। এই রাজনৈতিক সমস্যাটি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আন্তজার্তিক দৃষ্টিকোণ এই সঙ্কটটি হচ্ছেঃ প্রথমত মানবিক দৃষ্টিকোণ-প্রকৃত মানবিকণ দৃষ্টিকোণ-এবং আরেকটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ আছে যা ভারতের ধ্বংসলীলা থেকে উদ্ভুত, পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহে উৎসাহ দান এবং অপসারণ, এবং পরিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের আক্রমণ। আমি একবারই সকলের জন্য স্পষ্ট করছি কোন কোন জিনিস গুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং কোনগুলো আন্তর্জাতিক, তাহলে এখানে কোন ভুল ধারণা থাকবে না।
এখন এই প্রশ্নে আসছি যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছার প্রকাশে ভীত কিনা, উত্তর হলো না। এটি একটি শোকাবহ বিষয় যে জাতীয় সংসদে এই ইচ্ছার রাজনৈতিক প্রতিফলন ঘটে নি, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতবিভেদ দূর হতে পারত। কিন্তু স্বল্প সময়ের মুলতবিঅবস্থা জারিকরণের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বিদ্রোহ শুরু করে সরকারকে ট্যাক্স দেয়া অস্বীকার করার মাধ্যমে, সরকারের কর্তৃত্বের প্রকাশ্য অবাধ্যতা করে, ১৮,০০০ অপরাধীর জেলমুক্তির মাধ্যমে, যারা ছিল সশস্ত্র এবং নির্বিচারে গণহত্যা সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এটাই আসল সত্য, যদি কারও প্রমাণ দরকার হয় তাহলে তার শুধু সঙ্কটকালীন-জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসএবং ২৫ শে মার্চ সময়কার পূর্ব পাকিস্থানে প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলো পর্যালোচনা করে দেখলেই হবে। এটি একটি সর্বজনবিদিত বিষয়, যেটি শুধু জাতিসংঘের সদস্যরাই জানেন না। সশস্ত্র অপরাধী গোষ্ঠীর হাজার হাজার জনকে অস্ত্রে সজ্জিত করে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল গণহত্যা চালানোর জন্য; এবং অনুশোচনার বিষয় এই যে কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও এই অপরাধকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। সংসদের কোনও সদস্যকেই তার রাজনৈতিক বিরোধিতা বা রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হন নি।
আমি বিস্তারিতে যেতে চাচ্ছি না, কিন্তু কসাইখানা গঠনের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং যারা দায়ী তাদের সামনে এসে অভিযোগের দায় খন্ডন করতে বলা হয়েছে। এখন এই অবস্থায়, যখন রাজনৈতিক অপরাধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়েছে তখন আন্তর্জাতিক মহল এই ক্ষমা যারা হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিল তাদের জন্যও দিতে চায়?
সুতরাং সোভিয়েত খসড়া পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি এটিই বলতে চাই যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা যদি একটি দলের মাধ্যমে সংসদে নির্দেশনা দান এবং পদক্ষেপ নিত কেবল তখনই সেখানে পূর্ব পাকিস্থানের জনগণের ইচ্ছার স্বীকৃতি দানের ব্যাপারটি থাকত। যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী তাদের বিচ্ছিন্নতামূলক মনোভাব পরিহার করত এবং নির্বাচনে প্রতিফলিত পূর্ব পাকিস্থানের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী চলত, তাহলে হয়ত আমরা এই কালো রাত এবং চারপাশ ঘিরে রাখা তিমির থেকে মুক্তি পেতে পারতাম। এটি একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন যেটি নিরাপত্তা পরিষদের প্রত্যেক সদস্যের সোভিয়েত খসড়ার পক্ষে তাদের ভোটটি দেয়ার পূর্বে অবশ্যই নিজেকে জিজ্ঞাসা করে নেয়া উচিত।