You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
সোভিয়েত প্রতিনিধি মিঃ জ্যাকব মালিকের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জনাব জ্যাকব মালিকের বিবৃতি, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি
ডিসেম্বর _, ১৯৭১
আজকের সভায় পরিষদের সামনে যে সমস্যাটি রয়েছে এবং যেটি এর সবচেয়ে গুরুতর বিষয়, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ না করে পারি না। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এই দুটি দেশের সঙ্গেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গঠন করেছি, করছি এবং করে যাবো, যে দেশগুলো সকল মর্যাদার যোগ্য। আমরা গর্বিত যে, এটা সোভিয়েত ইউনিয়নই ছিলো যে, কিছুদিন আগে যখন আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এই দুইটি দেশের মাঝে একটি গুরুতর সংঘর্ষ তৈরি হওয়ার পর ইন্দো-পাকিস্তানি উপমহাদেশে একটি সংঘাতের হুমকি উত্থিত হয়, তখন ছিল এর মধ্যস্থতাকারী। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সোভিয়েত সরকার প্রধানই ছিলো যারা এমনটি দেখার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছিলো যে, তাসখন্ডে এই দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে সে সময় ভারতীয় উপমহাদেশকে গুরুতর যুদ্ধের হুমকি থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব।
এ ঘটনায় আমরা গর্বিত যে তাসখন্ড স্পিরিট ইতিহাসে গিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের, সোভিয়েতের জনগণের, সোভিয়েত সরকারের এমন তীব্র মতানৈক্যের মীমাংসায় সাহায্য করার মহান প্রচেষ্টা হিসেবে যা ভারতীয় উপমহাদেশের এই দুই দেশের মধ্যে দেখা দিয়েছিলো, যেটি যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারতো।
সে সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে কোন অনর্থক বচন শুধুমাত্র সাম্রাজ্যবাদীদেরই হাতে বেজে ওঠে। এটা অবশ্যই সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে অনর্থক বচন, বুলি আওড়ানো ও বাগ্মীতা যেটি সামাজ্যবাদ ও এর আগ্রাসনের নীতিকে সমর্থন দেয় যা সামরিক আগ্রাসী জোট প্রতিষ্ঠা ও তার মাঝে পাকিস্তানসহ অনেক দেশকে টেনে আনাকে সমর্থন দেয়। এটি সামরিক একনায়কতন্ত্র, ত্রাস ও উৎপীড়নকে সমর্থন যোগায়।
এটি গণতন্ত্রের এবং গণতন্ত্রের ক্ষমতার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়াকে সমর্থন দেয়। এটি তাদেরকে সহায়তা করে যারা জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের বিপক্ষে লড়াই করে যাচ্ছে।
ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বের শান্তি ও সম্প্রীতি চেয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বস্তুনিষ্ঠভাবে ও নিরপেক্ষভাবে যে পরিস্থিতি সেখানে সৃষ্টি হয়েছে তার বিবেচনাগুলোকে অতিক্রম করেছে। এ পরিস্থিতিটির কারণ কী, যেমনটা আমি ইতোমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছিলাম, যেগুলো নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্যের দ্বারা পরিস্থিতির অবনতির জন্য স্বীকৃত হয়েছে? এর মাঝে কে এতোটা উগ্র হবে যে বলবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিলো শুধুমাত্র ডিসেম্বরের ৩ তারিখেই, এবং তার আগে সবকিছু ভালো এবং অগ্রসরমান ছিলো? আমি ধরে নেই যে, আজকে এখানে উপস্থিত সকলের মাঝে একজনও ঠিক এমনটিই বলার মত অতটা দূর্বিনীত হবেন না।
এ কারণেই, কিছু নির্দিস্ট বক্তার অতীতের প্রতি তাদের চোখ বন্ধ করে রাখার প্রচেষ্টা, যেটা এ বছরের শুরু থেকেই হয়ে আসছে, বিশেষ করে এ বছরের মার্চ মাস থেকে, এটা হলো উটপাখির নীতি, বাস্তবের প্রতি চোখ বুজে থাকার নীতি, একজনের মাথা বালুর মাঝে লুকিয়ে রাখার নীতি। আমরা এমন নীতির বিপক্ষে।
আমাদের সবার কাছেই এটি পরিষ্কার যে, যেমনটা অনেকবারই চিহ্নিত করা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার বিষয় হলো পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদেরকে বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে, এবং যা যেমন ঘটেছে তাকে তেমনই বলতে হবে। আমাদের তেমনটি করার অধিকার রয়েছে। ইতিহাসের দ্বারাই এ অধিকারটিকে নিশ্চিত করা হয়েছে, যখন আমরা এ দুই পক্ষের মধ্যে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কথা বলেছিলাম, এমন এক মধ্যস্থতাকারী যারা এই দুই উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ দেশ ও তাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের আরও উন্নতি অর্জন করতে সংগ্রাম করেছে, করে এবং করতে থাকবে।
নিশ্চিতভাবেই এটা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিপক্ষে বাহিনী ও ভীতি সঞ্চারের পরিণতিস্বরূপ- এবং এটা ভারতের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সেনের দ্বারা বেশ দৃঢ়ভাবেই পরিষদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে- যে, মিলিয়ন মিলিয়ন জনগণকে তাদের বসতভিটা ত্যাগ করতে, তাদের সম্পত্তি ও ভূমি পরিত্যাগ করতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যেতে, এবং রাজনৈতিক শরণার্থীতে পরিণত হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এটাই বাস্তবতা। এগুলোই সত্য। বাস্তবতার প্রতি যে-ই চোখ বুজে থাকতে চাইবে, তার কাছে অমন একটা পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার পথ আবিস্কার করাটা বেশ কঠিন মনে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে এই উত্তেজনার তীব্রতা এবং সেখানকার ঘটনাগুলো সবারই জানা। সেখানেই ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট ঘটেছিলো। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উপায়ে সে সংকটের সময়োচিত অপসারণ উপমহাদেশটিতে এও জটিলতার অপসারণ করে দিতো।
জানা গেছে যে অনেক আগেই ১৯৭০ সালে দেশটির উন্নয়নের ইতিহাসে প্রথমবারের মত পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের জন্য সার্বজনীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তানের যে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়েছিলো, তার মধ্যে ছিলো আওয়ামী লীগ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমার, যার কথা এতোমধ্যে বারতীয় প্রতিনিধির বিবৃতিতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গিয়েছিলো এমন একটি স্লোগানের সাথে যেটি ছয় দফার একটি কর্মসূচীর বাস্তবায়ন দাবি করে, যার সারমর্ম ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের কনটেক্সট বা অবকাঠামোর ভেতরেই সেই দেশের সেই প্রদেশটিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা এবং আমি গুরুত্বারোপ করতে চাইঃ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অবকাঠামোর ভেতরে। কর্মসূচীটি আরও সামনের দিকে পাকিস্তানে প্রগতিশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের বাস্তবায়ন দাবি করে। সেই লীগের পররাষ্ট্র নীতির যে প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সকল দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতি সাধনের জন্য। কার্যক্রমটি প্রদান করা হয়েছিলো সেন্টো ও সিয়াটোর সামরিক ও আগ্রাসী জোট থেকে পাকিস্তানকে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের জন্য। এটাই সমস্যার মূল। এটা এমন কিছু যা নিরাপত্তা পরিষদের কোন সদস্যই এড়িয়ে যেতে পারে না, এমন কী তারাও, যারা এর ওপর থেকে মনোযোগ অন্যত্র ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে।
নির্বাচনে সেই দল নিশ্চিতভাবেই বেশি সংখ্যক আসন লাভ করে- যা এরই মধ্যে ভারতীয় প্রতিনিধির দ্বারা তার বক্তব্যে নিশ্চিত করা হয়েছে- ৩১৩ আসনের ভেতর ১৬৭ আসন।
যুক্তি অনুসারে, এটির একটি সরকার গঠনের অধিকার রয়েছে। এটি হয় নি। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ নানান ছুতায় সরকারের ভেতর লীগের অংশগ্রহণকে আটকে দেয়। অধিকন্তু, দেশের স্বার্থের সঙ্গে প্রতারণা করার দায়ে রহমানকে আটক করা হয়; তার সমন্বয়কারী, এবং সে অঞ্চলের জনগণ উড়োজাহাজ, ট্যাংক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে গণহারে নিপীড়নের শিকার হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের ভৌগলিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, সামরিক কর্তৃপক্ষের নিপীড়নের ফলানুসারে পূর্ব পাকিস্তানে একটি সংকট উত্থিত হয়, এবং যখন এটি সামনে এগুলো, এটি সম্পূর্ণ উপমহাদেশেই একটি উত্তেজনার উৎসে পরিণত হলো। পূর্ব পাকিস্তানে এই গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের উত্থানের এবং এর পরবর্তী মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর একেবারে শুরু থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানে যে সংকট উত্থিত হয়েছে, রাজনৈতিক উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে, জোর না খাটিয়ে সেগুলোর অপসারণের জন্য নকশা করা সংগতিপূর্ণ একটি নীতি বজায় রেখেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এর সরকার অনেক উপলক্ষেই পাকিস্তানের সরকারের নিকট আবেদন করেছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে চালানো নিপীড়নের একটি পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য এবং এর পরের যে কোন জটিলতা ও পরিস্থিতির তীব্রতা এড়ানোর সবচেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। পূর্ব পাকিস্তানে দমন কার্যক্রম ও রক্তপাতের ধারাবাহিকতা, যেমনটা হবার কথা ছিলো তেমনভাবেই, সেখানে যেটির সূত্রপাত হয়েছে সে সমস্যার সমাধানকে কেবলমাত্র জটিল করে তুলেছে ও আরও কঠিন করে দিয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রী পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি জনাব পোডোগোর্নি এ বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে সম্বোধন করে “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর পরিচালিত রক্তপাত ও নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য সবচেয়ে জরুরী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মীমাংসার দিকে বরং ফিরে তাকাতে আন্তরিক আবেদন” জানান। সেই একই চিঠি বলেছিলোঃ
“আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী যে এটি হবে পাকিস্তানের সকল জনগণের স্বার্থ অনুযায়ী; এটি সে অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার উপায়গুলোকে প্ররোচিত করবে এবং এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান বয়ে নিয়ে আসবে। এটিকে সোভিয়েতের সমস্ত জনগণের দ্বারা সন্তুষ্টির সাথে স্বাগত জানানো হবে।”
যাই হোক, দূর্ভাগ্যজনকভাবে, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাগুলো একেবারেই ভিন্ন মোড় নেয়।
ভারতীয় সরকার এর অংশ হিসেবে একইভাবে নানান উপলক্ষে পূর্ব বাংলার সমস্যা দূর করার জন্য গ্রহণ করা উচিৎ এমন কিছু পদক্ষেপ বিবেচনা করে বেশ কিছু আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এবং বিশ্বের নানান দেশের কাছে উপস্থাপন করেছিলো। তবে এমন আবেদনের পরেও সমস্যাটি সমাধানের জন্য কোন পদক্ষেপই নেয়া হয় নি। এর বিপরীতে, পাকিস্তান সামরিক জোটের কতিপয় মিত্র পাকিস্তান এবং ভারতকে একই অবস্থানে রাখার এবং তাদেরকে একই আলোকে দেখার ওপর জোর দেয়, যে দেশে অভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দিয়েছে এবং ফলস্বরূপ যেটি সে সংকটের ভুক্তভোগী হয়েছে তাদের ওপর সমান দায় আরোপের ওপর জোর দেয়।

(Therein lies the root-cause of the fact that on appropriate measures were undertaken.) এটা আসলে তারাই ছিলো যারা সমস্যাটিকে এমন একটা অবস্থান থেকে পেশ করেছে যা যথাকালীন এবং ন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং ঘটনাগুলোকে পেছনের দিকে ধরে রেখেছে।
যে সমস্যা পূর্ব পাকিস্তানে উত্থিত হয়েছে, অনুরূপভাবে তার সমাধানে পাকিস্তানের সরকার তার পক্ষ থেকেও কোন ধরণের কোন পদক্ষেপ নেয় নি। ফলস্বরূপ, পূর্ব পাকিস্তানের জনগন নির্যাতিত হতেই থেকেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভীতি আর অনিশ্চয়তার একটি জীবন-যাপন করতেই থেকেছে। ভারতে পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীর অবিরাম ঢলের মাঝেই এটি দেখা যায়। এই সভার শুরুতে, আমি পরিষদের সদস্যদের সুবিধার জন্য এটির ওপর মনোযোগ প্রদান করতে বলেছিলাম। চলুন আমাদের প্রত্যেকেই ভারতের অবস্থানটিকে দৃষ্টিগোচর করি, যেটির অঞ্চলের ওপরেই ভীনদেশীদের এই বন্যা বয়ে গেছে- ১০ মিলিয়ন মানুষ। দশ মিলিয়ন মানুষ একটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্র। এ জনসংখ্যাটি একটি রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছে বড় একটি মাত্রায়। আসলে একটি সমগ্র রাষ্ট্র এভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমি কেন একে একটি রাষ্ট্রের মাপে একে তুলনা করছি? জাতিসংঘের কথাই ধরা যাক। এর সদস্য হিসেবে ১৩১টি রাষ্ট্র এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে। কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ৮৮টি রাষ্ট্রে ১০ মিলিয়নের কম জনসংখ্যা রয়েছে। এখানেই, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যগণ, রয়েছে পূর্ণ বাস্তবতাঃ জাতিসংঘের ৮৮টি সদস্য দেশে যে জনসংখ্যা রয়েছে সেটি সংখ্যাগত দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতীয় অঞ্চলে অবগত কিছু কারণে শরণার্থী হিসেবে যতজন স্থানান্তরিত হয়েছে তার চেয়ে কম। আমি নিশ্চিত যে এখানে এই টেবিলের কোন একজন প্রতিনিধিও চাইবে না এমন একটি ক্লেশ তার নিজের দেশে হোক, এমন একটি ক্লেশ যেটিতে ১০ মিলিয়ন বিদেশী চলে আসবে এবং এর অঞ্চলে স্থায়ী হবে। এটাই বাস্তবতা, এগুলোই ঘটনা। অথবা এটি কি সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ?
পাকিস্তানে গুরুতর আভ্যন্তরীন সংকটের উপস্থিতির কথাটি আমাদের বন্ধু পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জনাব শাহীর দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে। তিনি এটির স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তিনি এখানে তার বক্তব্যে বলেছেন যে, পাকিস্তানে একটি গুরুতর অভ্যন্তরীণ সংকট রয়েছে। এটা ছিলো প্রথম পয়েন্ট।
দ্বিতীয়ত, তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন যে, সেই সংকটটি একটি আন্তর্জাতিক আঁকার ধারণ করেছে। এভাবে, পাকিস্তানের স্বীকৃত প্রতিনিধি নিরাপত্তা পরিষদে তার বক্তব্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনাটির এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত দিককে স্বীকৃতি দিয়েছেঃ প্রথম এটা যে, তার দেশে গুরুতর গৃহ সংকট রয়েছে, এবং দ্বিতীয় এটা যে, সে সংকট আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করেছে।
এটা সত্য যে রাষ্ট্রদূত শাহী সম্পূর্ণ অবিচলিত ছিলেন না যখন তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে এই ব্যাপারটি অনুমেয় কিনা যে নিরাপত্তা পরিষদের এ সংকটটির মূল কারণগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।তিনি বলেছেন এটি হবে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে চার্টারের অধীনে নিরাপত্তা পরিষদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উত্থানের কারণ পরীক্ষা করে দেখা, যা কিনা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকি প্রদান করে। একইভাবে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকার রয়েছে একটি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমূহকে সংশ্লিষ্ট কারণগুলোর অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের, এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির জন্য অবনতিকর এবং সরাসরি স্মরিক দ্বন্দ্বের হুমকিতে পরিণত হওয়া এ ধরণের ঘটনাকে প্রতিহত করতে উপায় গ্রহণ করার আহ্বান জানানোর।
নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্যের চিঠিতে পরিস্থিতির এই অধঃপতন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু তুমি যখন একবার ‘এ’ বলেই ফেলেছো, তোমাকে ‘বি’ বলতেই হবে। তারা এটা করেছে, এবং তারা পরিস্থিতির অবনতির ব্যাপারটিকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তারা কারণের কথাগুলো বলে নিঃ এবং তাদের প্রস্তাবনায়, তাদের বিবৃতিতে এবং তাদের খসড়া রেজুলেশনে আমরা দেখি সিয়াটো ও সেন্টো টেনে আনা হয়েছে, সম্ভবত ন্যাটোও, যে দেশে সমস্যার উৎপত্তি এবং যে দেশটি সেই সংকটের ও পরিস্থিতির অবক্ষয়ের ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়েছে দুই পক্ষেই সমান পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার একটি ধারণা।
কিছু নির্দিস্ট দেশের পক্ষ থেকে এই বিতর্কটি অনেক উপলক্ষেই ব্যবহার করা হয়েছে, যখন নিরাপত্তা পরিষদে কিছু বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছিলো। তবুও, পরিষদের পদক্ষেপ গ্রহণের এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণ হওয়া বিষয়গুলো বর্জনের জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানানোর অধিকার সোজা চার্টারের আর্টিকেল ৩৯, ২০ এবং ৪১ থেকেই আসে। আর্টিকেল ৪০ বিশেষভাবে বলে যে নিরাপত্তা পরিষদ, “পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এমন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা মেনে চলতে আহ্বান জানাতে পারে যখন একে প্রয়োজনীয় ও আকাঙ্ক্ষিত মনে হয়।”

অন্যভাবে বললে , নিরাপত্তা পরিষদের হাতেই বিবেচনা, অর্থাৎ একটি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ক্ষয় রোধ সীমাহীন সম্ভাবনা বেছে নেবার সুযোগ। সুতরাং পরিস্থিতির এরকম উত্থান এবং অবনতি সময়ে কাউন্সিলের এভাবে তার চোখ বুজে থাকা ঠিক নয়। পূর্ব পাকিস্তানের যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে সেগুলো এমন ঘটনা যা জাতীয় কাঠামোর বাইরে চলে গেছে এবং
সেগুলো ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে এবং যার ফলে এগুলো একটি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে, এবং পাকিস্তান প্রতিনিধি বিবৃতির ভিত্তিতে এটা এখন আমাদের সকলের অঙ্গীকার ও স্বীকৃত লাভ করেছে।

পাকিস্তান ও তার অভিভাবকদের অভিযোগের পূর্ণ অসঙ্গতি যে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বিরুদ্ধে সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট। মোটের ওপর এটা পুরোপুরি স্পষ্ট যে উদ্বাস্তু প্রবাহ ভারত বা তার ষড়যন্ত্র দ্বারা আনা হয়নি। ভারত কেন ষড়যন্ত্রে করে ১০ মিলিয়ন বিদেশীদের উত্তরাধিকারী হবে এবং তাদের নিয়ে এত অসুবিধা পোহাবে? ভারতকে তাদের খাবার এবং কাপড় দিতে হয়েছে ঠান্ডার বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং বৃষ্টি বিরুদ্ধে আশ্রয় দিতে হয়েছে। আমি আবারো এই জোর দিয়ে এটা বলবো। প্রতিটি প্রতিনিধিই নিজের দেশ এমন অবস্থানে ভেবে দেখুক। কেন ভারত এমনটা করবে এবং পরিণামে নিজেই উপর এমন একটি দুর্যোগ ডেকে আনবে? এটা একটা বিপদ। ভারত তাদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে এমন অবস্থা তৈরি করেছে এটা গল্প মাত্র। আসলে, সেখানে যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে সেটাই এর প্রধান কারণ। এটা অব্যাহত রয়েছে এবং এটা বৃহদাকারে হচ্ছে। এর ফলেই ভারত সীমানায় এখন ১০ মিলিয়ন পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তু এবং আমরা সবচেয়ে গুরুতর একটি সমস্যার উত্থান দেখছি, নিহতদের সংখ্যা বিবেচনায় যার কোন তুলনা হয় না। আমার হাতে কোনো তথ্য নেই, কিন্তু হিটলারের আগ্রাসনও হঠাৎ এত লাখ লাখ মানুষের পরিবর্তন ডেকে আনেনি। লক্ষ লক্ষ লোক দেশ ছেড়েছে , লক্ষ লক্ষ মারা গেছে কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক লোকের এই ধরনের আকস্মিক স্থানান্তরণের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও হয়নি। সুতরাং, কিভাবে আমরা এই বাস্তবতা এবং এই রাষ্ট্রিয় অবস্থার থেকে চোখ ফিরিয়ে থাকি?
স্বাভাবিকভাবেই, প্রশ্ন দেখা দেয় সংশ্লিষ্টরা যারা চোখ বন্ধ করে থাকতে চায়: কাউন্সিলের কি সমস্যার এই দিকটি বিবেচনা এবং এই নিয়ে আলোচনা করার অধিকার রয়েছে,যে কারণে এমন একটি গুরুতর এবং বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অথবা এটাকে সমস্যা অংশ মাত্র ধরে নিতে হবে, শুরুটা, ধরলাম, গতকালের তারিখ থেকে? প্রশ্নটা বাস্তবতা এভাবেই তুলে ধরেছে। আমরা সবাই জানি উদ্বাস্তু প্রবাহের ফলে ভারত সরকারের কি কি অসুবিধা হয়েছিল। এটি ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে নির্দিষ্ট কিছু দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছেএবং এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি যা দেশটি বর্ণনা করেছে তা বাস্তবায়নের অসুবিধার তৈরি করেছে।এই সূত্রে, এখানে যে বলা রয়েছে ভারত পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে কিছু সেনা স্থানান্তরিত করেছিলেনসেটার উল্লেখ না করে পারবো না। কোন আত্মসচেতন রাজ্য যে তার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন এমন অঞ্চলে নিজের সশস্ত্র বাহিনীর অংশ পাঠাবে না যেখানে ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তু ভীর করেছে? এমন একটি সরকারের নিজের প্রাথমিক দায়িত্বই উপেক্ষা করছে মনে হবে। এই ১০ মিলিয়ন বিদেশী রাজ্যটিতে কি করতে পারে কোন ধারনা নেই, তাই উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা আবশ্যক। ভারতকে নিজের সশস্ত্র বাহিনীর অংশবিশেষ যেখানে ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তু রয়েছে সেখানে স্থানান্তরের কারনে অভিযুক্ত করা, কম করে বললেও , ভারতে অভিযুক্ত করার কারন বানানো।

সাধারণ পরিষদের বর্তমান অধিবেশনে, তৃতীয় কমিটির পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী প্রসঙ্গে আলোচনার সময়, অনেক দেশের প্রতিনিধিরা ভারতের উদ্বাস্তুদের সমস্যায় এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। উদ্বাস্তু প্রবাহের ফলে সে দেশে যেসব অসুবিধার দেখা দিয়েছে তারা সেটা নিয়ে সহমর্মিতা দেখান। সঙ্গে সংলগ্নতা যে দেশের জন্য আবির্ভূত হয়েছে এর। ভারতীয় দিক একাধিক বার এই শরণার্থীদের প্রতি তাদের শুভাকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছে। তারা ভারতে এদের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবার এবং ভারতীয় ভূখণ্ডের চলে আসা সকল উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে দ্রুত ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার সংকল্প বিবৃত করেছে। ভারত সরকারের নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারত নিজ ভূখণ্ডের থাকা পূর্ব পাকিস্তানি লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বহন করতে পারবে না এবং তাদের দ্রুত নিজের দেশে আহবান জানিয়েছে, যেখানে উদ্বাস্তু নিশ্চিত ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। বাস্তবস্মমত তথ্য অবশ্য ইঙ্গিত দেয় যে, পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ ক্ষমার কথা বিস্তৃতভাবে প্রচারিত হলেও, আন্তর্জাতিক সংবাদ অনুযায়ী, শুধুমাত্র মানুষের সীমিত সংখ্যক মানুষকেই জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভার সক্রিয় নেতা ও সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগই জেলখানায় ধুকছে, এবং রহমানের বিচার চলেছে। এই পরিস্থিতিতে, পূর্ব পাকিস্তানের সীমানায়, সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা তাদের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করছে, সবচেয়ে প্রাথমিক অধিকারও তাদের দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। এগুলো বাস্তব, এবং এই আলোকে, যেই এই গড়ে ওঠা পরিস্থিতি দায়িত্ব পাকিস্তান ও ভারতের ওপর সমান ভাবে অর্পণ করবে, সে একটি বড় ভুল করছে। এটি সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট যে যদি পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন যদি পাকিস্তানে মানুষের বৈধ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা বিঘ্নিত না করতো এবং তার গণ নির্যাতন না চালাতো, নিরাপত্তা পরিষদ এবং বিশ্ব সম্প্রদায় তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের ঘরোয়া সংকট এবং তার আন্তর্জাতিক পরিণতির প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাতো না। সামরিক কাজটি কে শুরু করেছে সে সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে, এবং পরিষ্কারভাবে দোষী পক্ষের ওপর থেকে দোষ সরিয়ে নির্দোষ পক্ষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা করা হয়েছিল। মহাসচিবের ৩’রা ডিসেম্বর (এস / ১০৪১২) এর রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত অফিসিয়াল যোগাযোগ কেউ কেউ উপেক্ষা করেছে। দৃশ্যত, কারো কারো কাছে এই কাগজপত্র পড়া কিংবা এর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ অসুবিধাজনক। অথচ এখানে, পৃষ্ঠা ৪, অনুচ্ছেদ ৪(বি) তে রাশিয়ান ভাষায় স্পষ্ট বলা আছে যে:

‘ফিল্ড স্টেশনে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষকগণ, পুঞ্চ ২০২০ ঘন্টার রিপোর্ট করে যে পাকিস্তান সেনারা ১৯১০ ঘণ্টায় পুঞ্চ ক্রসিং পয়েন্টে (এনআর ৫৬৭) যুদ্ধবিরতি লাইন অতিক্রম করেছে।২১৪০ ঘণ্টায়, স্টেশন রিপোর্ট করে যে লাইনের ভারতীয় দিক থেকে গোলাবর্ষণ আরম্ভ হয়েছে” – (এস / ১০৪১২) অন্য ভাবে বললে, পাকিস্তানের সৈন্য যুদ্ধবিরতি লাইন অতিক্রম করার পর।
এটি অবজারভারে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন থেকে। কেউ এটা বিশ্বাস করতে না চাইলে প্রত্যাখ্যান করতে পারে বা অন্যান্য প্রমাণ সরবরাহহ করতে পারে। এটাও ভারতের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন।
এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী, ম্যাডাম ইন্দিরা গান্ধী ৪’ঠা ডিসেম্বর সংসদে বিবৃতি দেন। সে বিবৃতিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো রয়েছে: “আজ সকালে (অর্থাৎ, ৪ তারিখ), পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার আমাদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত সন্ধ্যায় পশ্চিম পাকিস্তান বিমানবাহিনী আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে আমাদের বহু বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। “
এটা বলা যেতে পারে যে বিবৃতিটি শুধুমাত্র এক দিকের; কিন্তু এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে একটি সরকারী নথিতে, মহাসচিবের রিপোর্ট, যাতে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টের রেফারেন্স রয়েছে। এসব আসল তথ্য; এই হচ্ছে বাস্তবতা।
ভারতীয় উপমহাদেশের বিপজ্জনক ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত একটি রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জনের আহ্বান করে যেটা এর জনগণের ইছছা ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং তার জনসংখ্যার বৈধ স্বার্থের পরিপন্থ। এমন একটি রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জন প্রয়োজন কারন এটি একটি নিরাপদ পরিস্থিতিতে উৎপন্ন করবে যাতে শরণার্থীরা তাদের ঘরবাড়ি এবং বাসস্থানে ফিরতে পারে, এবং এটা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত করবে যে উদ্বাস্তুরা অত্যাচারিত হবে না, যে তাদের পূর্ব পাকিস্তান থাকার এবং কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে, শান্তি ও নিরাপত্তাপূর্ণ একটি পরিবেশে।
সোভিয়েত প্রতিনিধিদল খুব সাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বিবৃতি শুনেছে। বিবৃতিটি শুনলে প্রথমেই যেটা মনে হয় তা হল ভাল হতো যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কর্তৃক প্রণীত এই শুভাকাঙ্খা এবং প্রস্তাবের পুরোটা, বা অন্তত অংশবিশেষ, সৈন্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের বিষয়ে সর্বাগ্রে ইন্দো-চীনের মধ্যে প্রয়োগ করা যেতো। সোভিয়েত ডেলিগেশনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলিগেশনের দ্বারা প্রবর্তিত খসড়া রেজল্যুশন দেখছে আমি শুরুতে যে কথা বলেছি সে দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা আমাদের মতামত জানানোর সুযোগ পাবো , কিন্তু আমাদের প্রথমেই মনে হয়েছে এটি একটি এক- একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য ড্রাফট, যার পদ্ধতি, যারা দায়িত্ব অপরাধীর কাঁধ থেকে নামিয়ে নির্দোষের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে তাদের মতো।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!