You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.13 | জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি (পাকিস্তান) | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি (পাকিস্তান) জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১

জনাব আগা শাহী(পাকিস্তান) কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ
অক্টোবর ১৩, ১৯৭১
সাধারণ বিতর্কের সময় আমরা এখানে যুক্তিতর্ক মেলানো এবং বিতর্কের পয়েন্ট স্কোর না করার জন্য আসার ফলে আমার প্রতিনিধিদল বেশ কয়েকবার চাপের মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমান ভারত-পাকিস্থান পরিস্থিতিকে খুব গুরুতর হিসেবে আমরা বিবেচনা করি এবং শান্তির অপরিহার্যতা এতোটাই বাধ্যতামূলক যে বিতর্কে অনুশীলন করতে বাধ্য করেছে ।
গতকালের আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিনিধি দ্বারা প্রতিতক্রিয়ায় বেশ কিছু ভুল বক্তব্য দেয়া হয়েছে এবং পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে খন্ডিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, এই পরিষদের এমন কোন ব্যক্তি নেই যে উত্তর-প্রত্যুত্তরের স্রোত উপভোগ করবে যা শান্তির উদ্দেশ্য অর্জনের পথ বাধাগ্রস্থ করে কিংবা একটি স্পষ্ট বোধগম্য অবস্থা নিয়ে আসতে ব্যর্থ করে যাতে শান্তি মধ্যস্থতা জড়িত। তবুও, ভারতের প্রতিনিধির দ্বারা পূর্ববর্তী হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে, তিনি যে চিত্র চিত্রিত করেছেন সেটা সংশোধন করার জন্য আমি আমার সরকারের কাছে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব দ্বারা একটি যুক্তিসঙ্গত ও নিরপেক্ষ উপস্থাপনা করতে বাধ্য।

প্রথমত, ভারতের প্রতিনিধি ক্ষুব্ধ এই জন্য যে, আমি আমার জবাব দেয়ার অধিকারের ব্যবহার করেছি, যা আমাদের বিরুদ্ধে তার ভারতের অভিযোগ বিবৃতির সাত দিন পরে। আমি তাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা সবসময় একটি বিরতি গ্রহণ এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগের উপর প্রতিফলনে বিশ্বাসী, যার ফলে আমরা কোনো আবেগপূর্ণ জবাব না দিতে পারি, যাতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি না হয় বরং এই সাধারণ পরিষদকে আলোকিত করা। এটি এই কারণে যে, এক মুহূর্ত আগে ভারতের প্রতিনিধির কাছে যে ধরনের বিবৃতি শুনেছি, তার জবাবে আমরা চিন্তা করেছিলাম বরং আমরা অবশ্যই একটি বিবেচিত উত্তর উপস্থাপন করবো। আমি ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছি যখন ভারতের প্রতিনিধি বলেন যে, ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে আমি যে সব পয়েন্ট উত্থাপন করেছি সেসব আফগানিস্তানের প্রতিনিধি উড়িয়ে দিয়েছেন।
আমরা গণনাতীত সময় শুনেছি যে ভারত সরকার পাকিস্থানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না তবুও ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উপর একটি সুদীর্ঘ বক্তৃতা চালু করেছেন। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সংবিধানের প্রকৃতির ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের উদ্ধৃত করেন। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সাংবিধানিক উন্নয়নের মন্তব্য একটি রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র এখতিয়ার নয় কি?
তিনি আমার দেশে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার চর্চায় পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক নেতা কি বলেছেন তার জন্য পাকিস্তান প্রেসের উদ্ধৃতি দিলেও আমার সরকারকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মতামত, শুধুমাত্র সমালোচনামূলক নয় বরং জোরালোভাবে সমালোচনামূলক মতামত প্রকাশ করার জন্য কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তিনি এখনও আমার দেশে বিদ্যমান অবস্থার অস্বীকার করেন এবং বলেন যে, আমরা জানি না যে তাঁরা এসব বলেছেন কারণ পাকিস্তানে সেন্সরশিপ আছে। যদি সেখানে সেন্সরশিপ থাকত, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নেতাদের মন্তব্য দিনের আলো দেখতে পারত না।
ভারতের প্রতিনিধি আমার ও ওয়াশিংটনের পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কের কথা সাধারণ অধিবেশনে বলে ভালোই করেছেন এবং রাষ্ট্রদূত হিলালি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন কিভাবে বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অস্ত্র সংগ্রহ করেছে- সেখানে থেকে উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ও ২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থার কথা বলছিলেন যখন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানী রেজিমেন্টের বিরাট অংশ আনুগত্য ধ্বংস করে।
আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং অস্ত্রভান্ডার ও অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির দোকান লুট করতে প্রণোদিত করা হয়েছে। স্বভাবতই, আধা-সামরিক বাহিনী এবং পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সদস্য হওয়ার ফলে অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল এবং তারা যখন পক্ষ ত্যাগ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে, তারা এই অস্ত্রগুলো সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কিন্তু ঘটনার শেষ এখানেই নয়। দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারতের সংগ্রহ করছে এবং ভারতই যে পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে এটা এখন সাধারণ জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে ভারতীয় কর্মকর্তা কর্তৃক গেরিলাদের যে তারাই অস্ত্রে সজ্জিত ও সরবরাহ করছে এ ব্যাপারে অস্বীকার করার কোন প্রয়াস দেখা যায় নি। নিউইয়র্ক টাইমসের ভারতীয় প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবারগ শুধুমাত্র আজকেরই নিউইয়র্ক টাইমসে চালানের খবর পেয়েছি যেখানে বলা হয়েছে ট্রেনের পর ট্রেন বোঝাই করে অস্ত্র কলকাতায় বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে যাতে তারা পূর্ব পাকিস্তানে তাদের অভিযান আরো জোরদার করতে পারে।

আমি ২৫ মার্চ থেকে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন পত্রিকা- দি টাইমস অফ লন্ডন, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্য পত্রিকার সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করতে পারবো যারা তাদের সম্পাদকদের তারবার্তার মাধ্যমে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ও সমর্থনে বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষণ এবং ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপ্তি সম্পর্কে বার্তা প্রেরণ করেছেন।
আমরা ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রায়ই মূলনীতি ও সনদের উদ্দেশ্য কঠোরভাবে নজরে রাখার প্রয়োজনীয়তা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার করার নীতি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতির ঘোষণা, আগ্রাসনকে সংজ্ঞায়িত করার নীতি সম্পর্কে শুনতে পাই এবং আমরা জানি যে ভারতীয় প্রতিনিধিরা আগ্রাসনের সংজ্ঞা প্রণয়নে সক্রিয় অংশ নিয়েছে, আন্তর্জাতিক আচরণের সংজ্ঞা প্রণয়নে নয়, অস্ত্রে সজ্জিত করা ও গেরিলাদের উস্কে দেয়া এবং তাদেরকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে অভিযান ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে পাঠানো- আগ্রাসনের সংজ্ঞানুযায়ী ইহাই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড, কিন্তু তারা পাকিস্তানের ব্যাপারে ঠিক এটাই করছে, কিন্তু তারা এখনো বলে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নয়।
মৃত্যুর ভয়াবহ গাণিতিক হিসাব বা হতাহতের সংখ্যা হিসাবে যেকেনো যুক্তিতে প্রবেশ করা সবসময় বেদনাদায়ক।ভারতের প্রতিনিধি হতাহতের সংখ্যা “আড়াই লাখ থেকে ২০ লাখ” বলে অনবরত বিবৃতি দিচ্ছে। এখন, এটা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় যখন তারা আড়াই লাখ থেকে ২০ লাখের একটি মার্জিন তৈরি করার স্বাধীনতা নেয়, যেন তারা শুধু একটা পরিসংখ্যান বা প্রাণহীন একক, এবং জীবিত মানুষ নন? আমরা যদি আমাদের নিজের দেশের আইন বিবেচনা করি, তাহলে প্রতিটি মৃত্যু সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হয়, এবং একটি দেশ সবচেয়ে উদ্বিগ্ন এবং এমনকি একটি হতাহতের ব্যাপারেও বেশ কর্তৃত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি এখানে আসে এবং পাকিস্তান কর্তৃক বিচ্ছিন্নবাদীদের বিরুদ্ধে গৃহীত ফেডারেল অ্যাকশনের মাধ্যমে আড়াই লাখ থেকে বিশ লাখ নারী, শিশু ও পুরুষ হত্যায় অভিযুক্ত করে। এ ধরনের অভিযোগের জন্য সত্যনিষ্ঠা এবং স্পষ্টতার কতটুকু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা কি কেউ বলতে পারে? ওই পরিসংখ্যান যেগুলো ভারত দ্বারা উদ্ধৃত এবং বিশ্ব মাধ্যমে উদ্ধৃত হচ্ছে সবগুলোই বিদ্রোহীদের ভারতীয় মাধ্যম হতে উদ্বৃত্ত যা গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। সদস্যবৃন্দরা গত নভেম্বরের সাইক্লোন সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। সেই সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন করে যার ফলে বন্যায় বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য পাকিস্তান সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে সব সম্পদ সংগঠিত করতে পারে নি। সেইসব রাজনৈতিক দলগুলো যারা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, মানবতা ও তাদের নিজের আত্নীয়-স্বজনদের ত্রাণের জন্য দলের কোনো কর্মীকে পরিবর্তন করে নি। তারা নির্বাচনী প্রচারণা, ভোট ভিক্ষা এবং মিছিল বের করার কাজে ব্যস্ত ছিল, তারপরেও তারা দায়িত্বের জন্য পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারকে অভিযুক্ত করে। এবং আমি এই সাধারণ পরিষদকে বলতে চাই তারা পাকিস্তান সরকারকে গণহত্যার দায়িত্বে অভিযুক্ত করেছে। স্পষ্টত, বাক্যবাণের এই যুদ্ধে মানুষ বাস্তবতার জ্ঞান হারিয়েছে, শব্দ তাদের অর্থ হারিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বেঁচে থাকা কোন মানুষ অবহেলার কারণে মারা যায় নি। বন্যার কারণেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সবই ঘূর্ণিঝড়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটেছে। তারপরেও পাকিস্তান সরকার ওই রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযুক্তের শিকার হয়েছে যারা পরবর্তীতে গণহত্যার তাদের বিচ্ছিন্নবাদীর রঙকে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
আমি পরিষদকে আরও বলতে চাই যে, ২রা থেকে ২৫শে মার্চ, আওয়ামীলীগ একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করে এবং প্রতিষ্ঠিত সরকারের কর্তৃককে অস্বীকার করে। তারা সরকারি কর্মচারীদের অফিসে যোগ না দেয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করে, তারা বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে, তারা আদালত এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়। তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্যাক্স না দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় এবং তারাই, বিচ্ছিন্নতাবাদী, নির্দোষ নাগরিকদের হত্যা করা শুরু করে। ওই ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত না হওয়ার জন্য যখন সশস্ত্র বাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল, যারা হত্যাকান্ড দমনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত ছিল এবং তাদের একশনের ফলস্বরূপ অনধিক দুই বা তিন ডজনের মানুষ নিহত হয়, তারা গণহত্যার জন্য দায়ী ছিল। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার আর্তনাত ২৫শে মার্চের আগেই শুরু করেছিল যখন সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষ যারা বিচ্ছিন্নবাদীদের সাথে একই রাজনৈতিক মতামত বহন করে না, তাদের হত্যার দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সেগুলো হচ্ছে রেকর্ড করা এবং নথিভুক্ত তথ্য, তারপরেও বলা হয় সেখানে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। ঐ তথ্য বিশ্বের প্রেসের কাছে এখনো পৌঁছায় নি। তবুও পাকিস্তান সরকার সেন্সরশীপ ও দমনের অভিযোগে অভিযুক্ত। যাই হোক, আমি আপনাদের বলছি ভারতের প্রতিনিধি মৃত্যুর পরিসংখ্যানের যে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন তা ভারতীয় সূত্র হতে উদ্ধৃত। সেই প্রতিনিধিদের এই গল্প শোনানো হচ্ছে। আমি চাই না এটির আরও বিস্তার ঘটুক কিন্তু আমি যদি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই তাহলে আপনাদের সামনে আরও প্রমাণ উপস্থাপন করতে প্রস্তুত আছি। আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি যে, বিদ্রোহীরা এবং সরকার অপসারণের সমর্থকরা – আমাদের সশস্ত্র ও আধা-সামরিক বাহিনীর ঐসব লোকজন যারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র চুরি করেছে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ দোকান লুট করেছে তাদের থেকে ভিন্ন – যাদের অস্ত্র সরবরাহ ও এতে সুসজ্জিত করেছে এবং আজকে আমি আজকের নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রবন্ধে পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ভারতের প্রতিনিধির এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং এর উত্তরে আমি বলতে চাই আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সংবাদ আইটেমে বিবৃতি দেয়া হয়েছে যে, পাকিস্তান মিশন থেকে দলত্যাগী একজন কূটনৈতিক পাকিস্তান মিশন হতে বের হওয়ার আগেই বিদেশে অবস্থিত পাকিস্তান মিশনগুলোতে দেয়া হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই বিবৃতি তৈরি করেছে। আমি এখানে একটি শ্রেণীগত বিবৃতি করতে চাইঃ শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের ব্যাপারে না আমার মিশন বা অন্য কোন ধরনের মিশন আমার সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকম তথ্য গ্রহণ করে নি। অতএব, এই মিশন থেকে যেকোনো দলত্যাগী যে প্রেসের সামনে বিবৃতি দেয় যে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর হয়েছে, সে মোটেও সত্য কথা বলছে না এবং আমি কামনা করি ভারতের প্রতিনিধি আমাদের মাঝে এই অভিযোগ নিক্ষেপ করার আগেই যথেষ্ট সাবধানতা ও যত্নশীলতা অবলম্বন করেছেন।
আমি এই পরিষদকে আরও বলবো যে, নির্দিষ্ট দলত্যাগী কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু সম্পর্কে চিঠি ও মেমোরোন্ডা প্রচার করছে। কি উদ্দেশ্যে ভুল বিবৃতি এবং মিথ্যাচার করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে, কিন্তু, অন্তত, আমরা আশা করি যে, সার্বভৌম দেশের প্রতিনিধিরা অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও কটাক্ষের ব্যাপারে চটি লেখক (!!) ও প্রচারক-এর চেয়ে বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করবে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমি আমার জবাব প্রদান করতে চাই, যা আপনাদের মতন আমার কাছেও বেদনাদায়ক এবং বেশ গঠনমূলকও বটে। বর্তমান ভারত-পাকিস্তান অবস্থার অবনতি থামাতে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফেরত আসার জন্য সহায়ক আত্মবিশ্বাসপূর্ণ একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে আমি নিজেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান সরকারের নিবেদন আবার নতুন করে উপস্থাপন করতে চাই।
আমাদের অফার(নিবেদন) নিম্নরূপঃ
প্রথমত, মানুষের সংখ্যা, একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা যারা পূর্বপাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভারতে চলে গিয়েছে – এর সংখ্যা নির্ণীত করতে হবে যাতে পূর্বপাকিস্তান হতে চলে যাওয়া উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আমাদের দ্বারা গণনাকৃত সংখ্যা এবং ভারতের কথিত সংখ্যার মধ্যে ব্যাপক অসমতা রয়েছে যা কেবলমাত্র একটি নিরপেক্ষ সংস্থা মূল্যায়ন করতে পারে এবং যা হবে চ্যালেঞ্জের চেয়েও কঠিন।
দ্বিতীয়ত, আমরা অফার করি যে, বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহজ পুনর্বাসন ও ফিরে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড নেশন্স হাই কমিশনার ফর রিফুজিস’এর প্রতিনিধিদের জন্য পূর্বপাকিস্তান এবং ভারতের সীমান্তের উভয় পার্শ্বে স্টেশন স্থাপন করার জন্য আমরা অফার করছি। এই প্রস্তাব জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক উপস্থাপিত হয়েছিল এবং এটা স্পষ্ট যে, এই ধরনের পদক্ষেপ অবস্থার উন্নতি এবং আস্থা প্রতিষ্ঠায় একটি দীর্ঘ পথ যেতে সাহায্য করবে। পূর্বপাকিস্তানের শরণার্থীরা যেসব এলাকায় ফিরে এসেছে এবং তাদের সাথে জাতিসংঘের হাই কমিশনারের প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করার জন্য আমার সরকার সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে। তবে, সীমান্তের ওপারে পর্দা টানা হয়েছে যা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ব্যাহত করছে।
তৃতীয়ত, নিরাপত্তা পরিষদের ভালো অফিসের কমিটিকে ভারত ও পাকিস্তানের উভয় সরকারের সাথে কিভাবে দুই দেশের বর্তমান চাপা উত্তেজনাকে অপসারিত করা যায় এবং পূর্ণ নিরাপত্তার মাধ্যমে ভারত থেকে স্থানচ্যুত পূর্ব পাকিস্তানিদের ফেরত আনা যেতে পারে – এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
চতুর্থত, আমরা ভারতের সাথে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে এবং সশস্ত্র সংঘাতের হুমকি নিবৃত করার জন্য যে কোন ধরনের ও স্তরের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
আমরা আশা করি লম্বা লম্বা তর্কযুদ্ধের পরিবর্তে যা শুধু শুধু তিক্ততা বাড়ায় ভারত সরকার এসব অফার প্রত্যাখ্যান করবে না। আমি জানি তারা বলতে পারেন, “তারা আগেও এসব অফার করেছে এবং আমরা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি”, কিন্তু আমরা তাদের প্রত্যাখান পুনর্বিবেচনার জন্য আপীল করছি কারন সেগুলো গঠনমূলক অফার এবং বর্তমান অবস্থার একটি প্রকৃত উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা মানবিক নীতি এবং শান্তি কর্তৃক দাবীকৃত লক্ষ্যের প্রশমন করতে পারি এবং আমি ভারতের প্রতিনিধিকে আবারও আপীল জানাই এই অফারগুলোকে সামান্যভাবে না নিতে।