You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ ডিসেম্বর, ১১৯৭১

ভারতের প্রতিনিধি জনাব সমর সেনের বিবৃতি
ডিসেম্বর, ১৯৭১

আমি কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এই গুরুত্বপূর্ন আলোচনায় ভারতকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য, কিন্তু তার আগে আমাকে একটা বিষয় পরিষ্কার জানানো উচিৎ যে আমরা চার্টারের আর্টিকেল ৩১ ধারায় এখানে উপস্থিত হইনি। আমরা এখানে উপস্থিত ধারা নং ৩৭ এবং ৩৮ অনুযায়ী। এই বিষয়টি আমাদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পর্কে আমি কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।

২১ নভেম্বরের উপরে পাকিস্তানি রাস্ট্রদূতের দীর্ঘ বক্তব্য আমরা শুনেছি, এবং আমার মনে হয়েছে তিনি পূর্বের অনেক ঘটনায় বাদ দিয়ে গিয়েছেন। আমরা কোন সামরিক জান্তার প্রতিনিধিত্ব করছি না এবং কোন সামরিক খুঁটিনাটিতেও যেতে চাই না এই মুহূর্তে। কিন্তু তারপরেও আমি বলতে চাই যে আমাদের কোন নির্দিষ্ট তারিখের ঘটনা থেকে আলোচনা আরম্ভ করা উচিৎ নয়। বিয়োগান্তক এই ঘটনার পেছনের ইতিহাস বহুজনের মাধ্যমে জেনেছি আমরা কিন্তু আমি আজকের এজেন্ডায় থাকা সেক্রেটারি জেনারেলের রিপোর্ট থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি করতে চাই চাই। সেক্রেটারী জেনারেল বলেনঃ

“৭. এই কারনে আমি সচরাচরের বাইরে গিয়ে সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করছি এমন একটি ব্যাপারে যা কাউন্সিলের এজেন্ডায় উপস্থিত নয়। বিষয়টির রাজনৈতিক ভাবে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী যে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সকল সদস্য উক্ত ব্যাপারে অবগত হবার আগে সেক্রেটারী জেনারেল কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ সুপারিশ করতে সক্ষম নন। আমি বিশ্বাস করি জাতিসংঘের দীর্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার আলোকে যত দ্রুত সম্ভব ঘটে যাওয়া এই মানবিকতা বিবর্জিত ঘটনা নিরসন এবং ভবিষ্যতে অবস্থার অধঃপতন থেকে পরিত্রানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ।” (এস ১ ১)

অতএব, শুরুতেই আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা হলো আজকের আলোচ্য পরিস্থিতি কিংবা ঘটনার পিছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক এবং বাংলাদেশের জনগনের মধ্যের ইতিহাস। তাই বাংলাদেশের জনগনের প্রতিনিধি ব্যাতীত এই সমস্যার সম্যক ধারনা পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এই মানুষদের হয় শরনার্থী অথবা বিদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করেছেন যেগুলোর কোনটাই তারা নয়। তারা ৭৫ মিলিয়ন মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধি। পূর্ব পাকিস্তানে কোন স্বাভাবিক অবস্থা কিংবা শান্তি কোনটাই বিদ্যমান নয় যার ফলশ্রুতি আমরা দেখতে পেয়েছি আগ্রাসনের পর আগ্রাসন। কাউন্সিল এবং উক্ত দেশের নেতৃবৃন্দ সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি সমাধানে আসতে হলে বাংলাদেশের প্রতিনিধির এখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ২১ নভেম্বর থেকে তার বক্তব্যের গল্প শুরু করেছেন। আমার হাতে কিছুক্ষন আগেই এসে সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডকুমেন্ট এস/১০৪১২ এসে পৌঁছেছে যেটার অনুচ্ছেদ ৪ এ বলা হয়েছেঃ

” ৪. ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ জাতিসংঘ কর্তৃক নিযুক্ত সামরিক প্রদর্শকদের প্রধানের রিপোর্ট অনুযায়ী(পশ্চিম পাকিস্তানের লোকাল সময় অনুযায়ী)-
” (ক) ৩ ডিসেম্বর সামরিক সময় ১৭৪৫ শ্রীনগর বিমান ঘাঁটিতে বোমাবর্ষন।
(খ) পুঞ্চে অবস্থিত জাতিসংঘের সামরিক পরিদর্শকদের ২০২০ এ পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৯১০ এ ওই এলাকার সিজ ফায়ার লাইন অতিক্রম করেছে। ২১৪৫ এ পুনরায় পাঠানো রিপোর্টে পাকিস্তানি অংশে ভারতীয় বোমাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে, এবং ২২৫৬ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে পুঞ্চ এলাকায় পাকিস্তানি আর্টিলারির বোমা বর্ষন করছে।
(গ) ফিল্ড স্টেশন কোটলি থেকে ২১৪৫ এ পাঠানো রিপোর্টে পাকিস্তান থেকে ভারতের দিকে হাল্কা গুলি বর্ষনের খবর পাওয়া গেছে যা তখনও চলছিল।
(ঘ) জম্মুতে অবস্থিত ফিল্ড স্টেশনের ২২৪৫ এ পাঠানো রিপোর্টে দুই পক্ষ হতেই ২২১৫ থেকে অনবরত ভারি গোলাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে।
(ঙ) শিয়ালকোট ফিল্ড স্টেশনের ২২৫০ এর রিপোর্টে আসেপাশেই বোমাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে।
(চ) রাজৌরিতে অবস্থিত ফিল্ড স্টেশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে পুঞ্চ থেকে নওশেরা সিজ ফায়ার লাইনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
(ছ) প্রধান সামরিক পরিদর্শক সিজ ফায়ার লাইনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে ধারনা করছেন এবং পরিদর্শকদের তাদের স্ব-স্ব ফিল্ড স্টেশনে অবস্থানের নির্দেশনা দিয়েছেন।”

অতএব বলা যেতে পারে যে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের দেয়া তথ্য পুরোপুরিভাবেই মিলিটারি অ্যাকশনের জন্য বানানো। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন অধিক শক্তিশালী এবং অধিক জনবহুল ভারতের বিপক্ষে সামরিক ব্যাবস্থা গ্রহন পাকিস্তানের জন্য কেন প্রয়োজনীয়? উক্ত প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। গত ২৩ বছরে একবারের জন্যও পাকিস্তান ভারতের মাধ্যমে কোনভাবেই আক্রান্ত হয়নি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের জনগনকে যেভাবে খুশি শাসন করেছে এবং যখন সেই জনগন তারা কিধরনের সরকার চায় তার পক্ষে মনোভাব প্রকাশ করেছে তখন সেই সামরিক জান্তা জনগনের দাবিয়ে রাখার জন্য সামরিক অপারেশন আরম্ভ করেছে। তাই বলা যেতে পারে, ভারত কোনভাবেই পাকিস্তানকে বিভক্ত করছে না, পাকিস্তানই পাকিস্তানকে বিভক্ত করছে এবং তারই পরিক্রমায় আমাদেরকেও আক্রমন করছে।

সমস্যা প্রথম ধাপ ছিল যখন পাকিস্তানের গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচন করেন, তখন এমনকি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের কাছ থেকেও একটা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারা ছয় দফা মেনে নিয়েছিল এবং সেই অনুসারেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এবং ভোট গননার পর যখন জানা গেল শেখ মুজিবুর রহমানের দল ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভ করেছে তখন পাকিস্তানের সামরিক জান্তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তারা তখন সর্বাত্মকভাবে নেগোশিয়েট করার চেষ্টা করে গেছে। এই সমঝোতা চেষ্টার ব্যাপারে কিছুই জানত না বহির্বিশ্ব যতক্ষন না ভুট্টো তাঁর বই প্রকাশ না করেন, যা এখন “দ্যা গ্রেট ট্রাজেডি” নামেই পরিচিত।

আমি এখন বইটি পড়ে কাউন্সিলকে ক্লান্ত হতে বলব না, তবে বইটি দেখাতে সক্ষম পূর্ব পাকিস্তানকে জোড়পূর্বক বশে রাখতে কি কি করা হয়েছিল। আমরা বারংবার জাতিসংঘের সদস্যদের দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বিভিন্ন জাতিসংঘের ফোরামে বলেছি যে ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা সম্বব না। তখন কি কেউ শুনেছিল?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে কাউন্সিল উদ্বেগ প্রকাশ করায় আমরা কৃতজ্ঞ; কিন্তু অগুনতি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু নির্দয় ভাবে যখন হত্যা এবং ধর্ষন করা হয়েছে তখন কেউ কোণ পদক্ষেপ গ্রহন করেনি সেটাই অত্যন্ত বিস্ময়কর এবং গভীর পরিতাপের বিষয়। আলোচ্য সমস্যার সঠিক সমধান করতে চাইলে আমরা পেছনের ঘটনা কোনভাবেই ভুলে যেতে পারি না।

নির্বাচনের পরে যে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলা হচ্ছিল তিনি আজ জেলে পঁচছেন। কেউ জানেনা তাঁর বর্তমানে কি অবস্থা। আমার সাথে এমন একজন পুরুষ-মহিলা কিংবা শিশুর দেখা হয়নি যে কিনা এখানে এসে বলতে পারবে, “আমি মুজিবুর রহমানকে স্বশরীরে দেখেছি।” তারপরে সামরিক বাহিনী এমনভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে যা সমগ্র মানবজাতির বিবেককে ধাক্কা দিতে বাদ্ধ। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, খুন হয়েছে শিশু-ধর্ষিত হয়েছে নারী। যারা এই ঘটনাবলীর ভিডিও দেখেছেন তারা সাক্ষ্য দিতে সক্ষম এগুলোর।

পাকিস্তান অনেক বড় ট্রাজেডির সম্মুখীন হয়েছে বলে কেবল সমব্যাথী হয়ে এবং পরবর্তীতে ভুলে গেলে চলবে না। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং যার ফলশ্রুতিতে ১০ মিলিয়ন মানুষ ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।

এটা কি আগ্রাসন নয়? যদি অন্য দেশের প্রতি আগ্রাসনের মানে হয় সেটা সেই দেশের সামাজিক সাম্যাবস্থায় আঘাত করে, অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে, শরনার্থীদের যায়গা দেয়ার জন্য নিজেদের যায়গা ছেড়ে দিতে হয়, স্কুল-হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়, সরকারী কার্যক্রম থেমে যায় তাহলে সেই আগ্রাসন আর যুদ্ধ ঘোষনা করে আগ্রাসনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত বলেছেন আমরা ২১ নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্তানী টেরিটোরিতে প্রবেশ করেছি। হ্যা করেছি, আমি অস্বীকার করব না।

আমরা প্রবেশ করেছি কারন আমাদের আর কোন উপায় ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের কামান ফ্রন্টলাইনে স্থাপন করে আমাদের বেসামরিক গ্রামে বোমাবর্ষন শুরু করে। তারা তাদের নিজেদের মানুষ হত্যা করে অভ্যস্ত যা আমার মতে একটি বর্বরোচিত ব্যাপার। নিজেদের জনগন হত্যা করার পর তারা এখন আমাদের দিকে বন্দুক তাক করেছে। ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮৯০ বর্ডার ভায়োলেশনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলোর জবাব কি দিয়েছে তারা? সব অভিযোগই প্রত্যাখান করেছে তারা। তারা আমাদের গ্রামে বোমাবর্ষন চালিয়ে গিয়েছে, হত্যা করেছে আমাদের বেসামরিক জনগন। প্রতিকার হিসেবে আমাদের হাতে কি ছিল? তাদের গ্রামের উপর বোমা বর্ষন অথবা সৈন্য পাঠিয়ে তাদের কামান ধ্বংস করা? আমরা বেসামরিক জনগনকে রক্ষা করতে দ্বিতীয়টি বেছে নেই।

পাকিস্তান তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি বলে? পাকিস্তান ভারতের অনেক আগেই তাদের সৈন্য ফ্রন্টিয়ারে পাঠিয়েছে। আমরা জবাব দিয়েছে আমাদের সৈন্য ফ্রন্টিয়ারে পাঠিয়ে। ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ এ পাকিস্তান জরুরী অবস্থা ঘোষনা করে, যেটা ভারত ঘোষনা করে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ। পাকিস্তান পুরপুরি “ভারত দখল” মনোভাব নিয়ে যুদ্ধংদেহী ক্যাম্পেইন চালু করে। জবাব হিসেবে আমরা বলেছি আমরা যুদ্ধে যাব না, আমরা যুদ্ধ করব না; কিন্তু যদি কেউ যুদ্ধ শুরু করে আমরা প্রতিরক্ষা করব।

প্রশ্ন হচ্ছেঃ পাকিস্তান এগুলো কি উদ্দেশ্যে করছে? আমি আগেও বলেছি, উত্তর খুবই সরল; কিন্তু আমাকে ছোট পটভূমির অবতারনা করতে হবে সেজন্য। তাদের ভাষায় বাঙ্গালী বিদ্রোহ, যেটাকে আমরা বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধ বলে থাকি, দমন করতে পুরপুরি ব্যার্থ হওয়ার পর সংকটকে ন্যায্যতা দিতে তারা এই নাটকের অবতারনা করেছে। এমনকি তারা ভারতের সাহায্যও চেয়েছে বাঙ্গালীদের দমন করার জন্য। অন্যভাবে বললে আমাদেরকে তাদের অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে তাদের বর্বরোচিত কর্মকান্ডের। অবশ্যই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি, আমরা এখনো প্রত্যাখ্যান করছি।

তারপর থেকে অনেক চিৎকার চেচামেচি হয়েছে এই সমস্যাকে আন্তর্জাতিকিকরণের জন্যঃ অনেক কূটনৈতিক পদক্ষেপ, জাতিসংঘের ভেতরে অনেক কিছু, পরিদর্শকের প্রস্তাব প্রদানের মাধ্যমে ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ হিসেবে চালানোর জন্য। যেই মুহূর্তে এই দ্বন্ধ ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ হিসেবে রূপ পাবে, সেই মুহূর্তে সবাই ভুলে যাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে কি করছে। তারা গ্রাম জ্বালানো, ধর্ষন সবকিছুই চালিয়ে যাবে আর সবাই বলবে এটা একটা ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ। বিষয়টা খুবই অস্বাভাবাবিক যে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপে গ্রহন যখন খুবই জরুরী তখন তার পটভূমিই সবাই ভুলে গেছে।

আমাদের এখানে তিন-চারটি প্রধান ফ্যাক্টর আছে যেগুলোর কোনটাই নিরাপত্তা কাউন্সিল বিবেচনায় নেয় নি। গনহত্যার ব্যাপার্টিতে কি হল? জাতিসংঘ কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছে সে ব্যাপারে। গনতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিলোপের ব্যাপারে জাতিসংঘ কিভাবে জবাব দিয়েছে? লক্ষ লক্ষ গৃহ থেকে বিতাড়িত শরনার্থী যারা এখন ভারতের বোঝা তাদের কি হবে? কোন সমাধান কি বের হয়েছে? এই অবস্থায় পৌঁছানোর পরে অসংখ্য আপিল করা হয়েছে। “স্বাভাবিক” পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করার জন্য তাদের প্রতি অস্বাভাবিক সব বিবৃতি দেয়া হয়। স্বাভাবিক অবস্থা কতটুকু ফিরে এসেছে সেটা বোঝার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের রিলিফ প্রোগ্রামের দিকে তাকালেই হবে। বারংবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে রিলিফের ট্রাক-নৌকা কোন যানবাহনই আর্মি ব্যাবহার করবে না। কিন্তু বারবার একই ঘটনা ঘটেছে, যাদের জন্য রিলিফ প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল তাদের কাছেই ত্রান পৌছাতে পারেনা। কয়েকদিন আগেই জনাব পল-মার্ক হেনরি তৃতীয় কমিটির কাছে ব্যাখ্যা করেছেন ত্রান কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব সে ব্যাপারে। অতএব বলা যেতে সেখানে কোন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না, বিরাজ করছে কেবল হত্যাযজ্ঞ। এই হত্যাযজ্ঞের ফলশ্রুতি আমাদের দেশে আরো মানুষ আসছে।

শরনার্থীদের ফেরত নেবার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। কৌতুহলদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে যদি পাকিস্তানে স্বাভাবিক, স্বররগীয় অবস্থাই বিরাজ করে তাহলে কেন এখনো শরনার্থী আসছে ভারতে? তারা আসছে কারন তাদেরকে সেখানে হত্যা করা হচ্ছে। এবং আমাদের পক্ষে আরো শরনার্থী গ্রহন করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক কম্যুনিটিকি বারবার বলেছি যে আমরা আমাদের ক্ষমতার প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। প্রতিদিন শরনার্থীদের পিছনে ৩ মিলিয়ন খরচ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারপরেও তারা আসছে- এমন না যে এটা ভেবে যে আমরা তাদের খুব ভালো দেখভাল করছি ; বরং আমাদের সীমিত সম্পদের মাধ্যমে আমরা তাদের বলতে গেলে দেখভালই করতে পারছি না। শরনার্থী ক্যাম্পের পয়ঃনিষ্কাশন এবং অন্যান্য সুবিধাদি অপ্রতুল, শরনার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতকিছুর পরেও তারা আসছে। কেউই তার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে এধরনের অবস্থায় থাকতে চায় না যদি বাধ্য না হয়। এবং সেই কারন হচ্ছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা, ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মানবিক অধিকার অস্বীকার করা , এবং ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে একটি কলোনিয়াল শাষনের অধিনে রাখা যা পাকিস্তানি শোষকরা রেখে এসেছে গত ২৩ বছর ধরে। আমার কাছে সব তথ্য-উপাত্ত আছে এখানে। আমি একটি পরিপুর্ন রিপোর্ট দাখিল করব সেগুলোর উপর ভিত্তি করে। পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা হচ্ছে পরিপূর্ণ অধীনতা, পরিপূর্ন সামরিক বর্বরতা এবং এসবের বিরুদ্ধেই জনগন প্রতিবাদ করেছে।

একটি বৈপ্লবিক মতবাদের ব্যাপারে আমরা অনেক কিছুই শুনে থাকিঃ জনতার অধিকার। আমার জানা নেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর, এবং যেটা বাংলাদেশ অবশ্যই হবে এই বিপ্লব কিরূপ থাকবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই, ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে সেই কারনে নয়- বাংলাদেশ স্বাধীন হবে কারন ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পাকিস্তান সরকরা সবকিছুই চেষ্টা করেছে। তারা সামরিক ভাবে চেষ্টা করেছে, চেষ্টা করেছে কল্পিত প্রশাসন। এমনকি তারা ভুতূড়ে নির্বাচনও করেছে। বুলেটিন, ঘোষনা কোনকিছুতেই কোন কাজ হয়নি।

এখন সিকিউরিটি কাউন্সিলের মিটিং এ আমাদের গেলানো হচ্ছে পাকিস্তান ভাঙ্গা ভারতেরই দুরভিসন্ধি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। যেই স্বার্থ হচ্ছে নিজেরা পরাশক্তিতে পরিনত হওয়া। তারা নিজেরাই নিজেদের ভাঙ্গনের জন্য দায়ী এবং ফলাফল ভোগ করছি আমরা।

এখন একমাত্র প্রশ্ন হচ্ছেঃ কিভাবে আমরা এই সমস্যার সমাধান করব? আমরা আজ পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্য শুনিনি, আমরা শুনেছি অর্ধেক-পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্য। অপর অংশের প্রতিনিধিরা কোথাও অপেক্ষা করছে ডাক পাওয়ার জন্য। যদি সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটা না করে তাহলে অবস্থার উন্নতিতো হবেই না বরং আরো অবনতি হবে।

যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। আমি কয়েকটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে চোখ বুলিয়েছি। কাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি? আমাদের কি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ছেড়ে দেয়া উচিৎ যাতে তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য যায়গায় বেসামরিক মানুষদের হত্যা করতে পারে? এইধরনের যুদ্ধবিরতিই কি আমরা আশা করছি? সৈনিকদের কি তাদের বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে যুদ্ধ এবং মৃত্যুবরণ করা উচিৎ, হোক সেটা মানবসভ্যতার জন্য কিংবা অন্ধকারের জন্য নাকি তাদেরকে এই বিশেষ কাজের প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয়া উচিৎ যে প্রতিজ্ঞায় তাদেরকে ১৯, ১৭, ১৫, ১৩, ১১ এমনকি এর থেকেও কমবয়সী মেয়েদের হত্যা ও ধর্ষন করতে যেতে বলে?

আমি গ্যালারী থেকে বেশ কিছু হাস্যকর মন্তব্য শুনতে পেয়েছি। হয়তো আমাদের অনেকেরই এটাকে কৌতুককর লাগতে পারে, কিন্তু এখানে কৌতুকের কিছুই নেই। হয়তো এর পেছনে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের হাত রয়েছে, ধন্যবাদ।

নারীদের ধর্ষনের মধ্যে আমি কৌতুকের কিছুই দেখি না। এবং সেই ধর্ষন লালসা থেকে নয়, বরং এই ধর্ষন মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেবারই একটি প্রচেষ্টা। আমাদের অঞ্চলে একজন ধর্ষিতা নারীর অনেক ধরনের সামাজিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, নাটকীয়ভাবে বললে বলা যায় যে ধর্ষনের থেকে মৃত্যুবরনই শ্রেয়। পাকিস্তানি আর্মি সেটা জানে এবং এই ধর্ষন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনোবল গুঁড়িয়ে দেবার জন্য একটি পরিকল্পিত পন্থা পাকিস্তান আর্মির।

পাকিস্তান নিজেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কি? এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ভারতকে জড়ানো, যা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। প্রথমে শরনার্থীদের সমস্যার মাধ্যমে এবং পরবর্তী সামরিক আগ্রাসনের দ্বারা। পাকিস্তানের দ্বারা আমরা চারবার আক্রান্ত হয়েছি এবং আমরা আর সহ্য করব না। আমি সিকিউরিটি কাউন্সিলকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই আমরা এমন কোন সমাধানের অংশ হব না যার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন নিপীড়িত হবে, তা সে যেপ্রকার সমাধানই হোক না কেন। আমাদের মধ্যে যতক্ষন পর্যন্ত সভ্যতার আলো বিদ্যমান আমাদের উচিৎ তাদের রক্ষা করা। আমরা তাদের যুদ্ধ করব না, অন্যের যুদ্ধ কেউ নিজে করতে পারনা। এই টেবিলেই অনেক পরাশক্তি বিদ্যমান যারা নিজেদের মাধ্যমেই আবিষ্কার করেছেন যে অন্যের যুদ্ধ করা সম্ভব নয়, নিজেদের যুদ্ধ নিজেদেরকেই করতে হয়। কিন্তু আমাদের পক্ষে যেধরনের সাহায্য করা সম্ভব হোক সেটা শরনার্থীদের সাহায্য কিংবা চিকিৎসাসেবা বা অন্যকোনভাবে আমরা সেটা চালিয়ে যাবো। দ্বিতীয়ত আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সবকিছুই করব। পাকিস্তান যদি মনে করে তারা আমাদের গ্রামে বোমা বর্ষন করবে, অভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাকগলানোর অভিযোগ আনবে অথবা ফ্রন্টলাইন অতিক্রম করে যাবে এবং আমরা চুপ করে থাকবো তাহলে তাদের উচিৎ দ্বিতীয়বার চিন্তা করা। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা আমাদের জীবনযাত্রার নিরাপত্তায় হানিকারক কোনকিছুকেই বরদাস্ত করব না এই ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই।

আমি আরো একটা ব্যাপার পরিষ্কার করতে চাই, সামরিক এই আক্রমনের সাথে অদ্ভুত কিছু বিবৃতিও প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তান এখন এসে বলছে হাতে হাত মিলিয়ে বন্ধু হয়ে যেতে। তারপরেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্যারিসের ল্যে মনেতে ভাষনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামে অকথ্য সব কথা বলেছেন, যার কোনটাই আমি মুখে আনতে অক্ষম। এইসব মানুষদের সাথেই আমরা আলোচনা করছি যাদের না আছে কোন সভ্য ব্যাবহার না আছে কোন রাজনৈতীক জ্ঞান।

পাকিস্তান বলছে, “আমরা পরিদর্শক চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছি, আমরা সৈন্য সরাবার প্রস্তাব দিয়েছি” ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রথমেই কেন এই সমস্যা তৈরী করা হল এবং তারপরেই কেন এসব প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে? কিন্তু যে ব্যাপারে তারা কিছু করতে পারত সে ব্যাপারে তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। তারা নির্বাচিত নেতাদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে পারত যা হত শান্তিপূর্ন। কিন্তু না, সেটা তারা করেনি। আমাদের বন্ধুরা বলছেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উপর রাজনৈতিক সমঝোতাত জন্য বিভিন্ন রকম প্রেশার তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু তার ফলাফল কি? শূন্য, একেবারেই শূন্য। সম্ভবত জেনারেল সাহেব অন্য জেনারেলদের কথায় কান দেন না।

পাকিস্তানের হাতে এই মুহূর্তে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, যেটা তারা করছে ইতোমধ্যে। প্রথমে পূর্বফ্রন্টে আমাদের আমাদের গ্রামগুলোতে বোমাবর্ষন করে এবং পরবর্তীতে পশ্চিমফ্রন্টে আমাদের শহরগুলোতে বিমান আক্রমন করে দ্বিতীয় রাতের মধ্যেই। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বলেছেন তারা কেবল ফ্রন্টিয়ারের কাছাকাছি কয়েকটা শহর এবং গ্রামে বোমা বর্ষন করেছেন। কিন্তু তারা ৩০০ মাইল ভিতরে আগ্রা পর্যন্ত আক্রমন করেছে।

এটা কি ভারতের উপরে করা পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আক্রমন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন কলকাতায় গিয়েছিলেন শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে, তখন কি তিনি পাকিস্তান আক্রমনের পরিকল্পনা করেছিলেন? যদি সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটা বিশ্বাস করে, তাহলে সেটা তারা বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু আমি আবারো হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে নিজেদের এলাকা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং মানবিকতা রক্ষার্থে কোনকিছুই আমাদের বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না।

আশা করছি খুব বেশি সময় না নিয়ে পাকিস্তানি রাষ্টদূতের বক্তব্যের প্রতিউত্তর দিতে সক্ষম হব, এবং আশা করছি জানতে পারব সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং অন্যদের কি বলার আছে আমি আগামীবার হাজির হবার আগে। আমার মূখ্য উদ্দেশ্য সবাইকে জানানো যে সামরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক যেকোন প্রকার দ্বন্ধে অবতীর্ন দুই দল হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান-পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ যারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল সামরিক বাহিনীর পরিপূর্ন সম্মতিতেই।

বিস্ময়করভাবে জনাব ভুট্টো বলেন সামরিক বাহিনীর পূর্ন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তৈরীর পর তারা সাহস করতে পারেনি সংবিধান বাতিলের। যদি এধরনের কোন অনুরোধ হয়েও থাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পক্ষে সেটা প্রত্যাখ্যান করা অত্যন্ত কঠিন।

অতএব দ্বন্ধ ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা ছিল না। এবং কিভাবে সেটা গ্রহন করা হয়েছিল? ঢাকায় আপসের জন্য যখন আলোচনা চলছিল সেই মুহুর্তেই পাকিস্তান আর্মি তাদের শক্তিবৃদ্ধি করছিল পূর্ব পাকিস্তানে। আজকে আমাদের বলা হয়েছে যে বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছিল সেটি করেছিল ভারতীয় এজেন্টরা। যদি ভারতীয় এজেন্টরাই বিমানটি হাইজ্যাক করে থাকে তাহলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমান, লাহোরের রাস্তায় প্যারেড কি উদ্দেশ্যে হয়েছিল দেশব্যাপী সম্প্রচার হয়েছিল যেন এটা কোন সভ্য সমাজের গর্বিত হবার মত ঘটনা? যদি কেউ পাকিস্তানকে চিনে থাকে এবং আমি অল্পবিস্তর চিনি, তাহলে বলতে হবে সরকারী মদত ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব না।

আমাদেরকে বলা হচ্ছে গনহত্যা জরুরী ছিল কারন ২৫ মার্চের আগে কিছু একটা ঘটেছিল। যদি কিছু ঘটেই থাকে তাহলে পৃথিবী সে সম্পর্কে জানেনা। পঁয়ত্রিশজন বিদেশী সংবাদদাতাকে ২৮ তারিখ রাতে জড়ো করা হয় লাহোর এবং ঢাকার হোটেলগুলো থেকে। তারা সেখানে থেকে কিছুই লিখতে পারেননি। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিহিংসার ভয় পাননি। আসলে এধরনের কিছুই হয়নি। এধরনের অনেক প্রোপাগান্ডাই পাকিস্তান তৈরী করেছে গত নয়মাসে।

গত নয় মাস ধরে পূর্ব বাংলার অস্ত্রহীন প্রতিরক্ষাহীন মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তান প্রত্যক্ষভাবে এজন্য দায়ী নয়, এজন্য দায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং গুজব আছে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগন অল্পবিস্তর যে খবর পাচ্ছে তাতে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের এসব বিশ্বাসের ইচ্ছা খুব বেশি নেই, তারা ভদ্রলোক। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে সেনাবাহিনী নিয়ে তারা এত গর্বিত সেই সেনাবাহিনী গনহত্যা, ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে দমন করার মত বর্বরোচিত নীচ কাজ করতে সক্ষম।

জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলি অনুযায়ী কখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে স্বশাসিত হিসেবে স্বীকার করা যাবেনা তার কিছু নির্দিষ্ট নির্নায়ক রয়েছে। আমরা যদি সেই নির্ণায়কগুলি গ্রহন করি এবং আমাদের যদি আরেকটি বেশি নৈতিকতা থাকে তাহলে আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে অস্বশাসিত এলাকা হিসেবে ঘোষনা করতে পারি। আমরা খুশি যে এই ব্যাপারটিতে আমাদের পূর্ব বাংলার জনগনকে তাদের দুর্দশা থেকে মুক্ত করা ব্যাতীত আর কোন উদ্দেশ্য নেই। যদি সেটা অপরাধ হয় তবে সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটার বিচার করতে পারে। কিন্তু আজকের প্রস্তাবগুলো অনুযায়ী যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ভারতকে সেই অন্যায়ের সহযোগী হতে বলা হয় তাহলে আমরা একবাক্যে বলব “না”। আমাদের সংকল্প থেকে আমাদের কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না এইসব উপদেশ আর সমাধানের প্রস্তাব করে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রশ্ন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে না যেটা আমি আগেও বলেছি, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হওয়া উচিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে। অতএব বিতর্কের আরো গভীরে যাওয়ার আগে আমাদের উচিৎ তাদের কি বলার আছে সেটা শোনা।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!