You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.05 | জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (পাকিস্তানী বিবৃতির জবাব দানে তাঁর অধিকার প্রয়োগে) জাতিসংঘ নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (পাকিস্তানী বিবৃতির জবাব দানে তাঁর অধিকার প্রয়োগে) জাতিসংঘ নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (পাকিস্তানী বিবৃতির জবাব দানে তাঁর অধিকার প্রয়োগে) জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব সমর সেনের বিবৃতি
অক্টোবর,১৯৭১

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, যখন আমরা আমাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারতাম, এক্ষেত্রে পাকিস্তান কিছুই বলেনি বরং ভারতকে নতুন আরেকটি একটি সমস্যায় জড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে আমরা আমাদের অধিকার প্রয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছি পরিষদ এই ব্যাপার নিয়ে সম্পূর্ণরূপে পরিচিত যা লাখ লাখ মানুষের জীবন প্রভাবিত করেছে যা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ, মতামত সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি না যে একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি কোন প্রকার দায়ী বা সহায়ক হয়।পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল পাকিস্তানের অসুবিধা এবং দুর্দশার সব জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। আমি পরিষদকে আশ্বাস দিয়ে বলতে পারি, পাকিস্তান তার সমস্যার সমাধান করতে কোনো ধরণের স্বদিচ্ছা বা অকটপতা প্রদর্শন করেনি।
তবে আমি চাই, দুই বা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমাদের অবস্থানের ব্যাপারে পরিষদে জানাতে । কাশ্মীর প্রসঙ্গে আমরা বারবার বলেছি যে একমাত্র সমস্যা কাশ্মীরের দখলকৃত অংশ থেকে পাকিস্তানের প্রত্যাহার প্রশ্ন এবং আমরা সর্বদা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যেমন ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে শুধুমাত্র অনেক আলোচনা ও প্রযুক্তিগত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু যখন আমরা কিছু চুক্তির জন্য অনুসন্ধান করেছি, পূর্ববাংলায় উন্নয়নের জন্য এই আলোচনার বন্ধ করা হয়েছে। যাইহোক, এটা এখন পুরো পরিষ্কার যে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে পাকিস্তান যে চিৎকার তা শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানে ভারতবিরোধী অনুভূতি উৎসাহিত করার ছিল এবং এই নীতিটি খুব কাজের হয়ে উঠেনি। আমরা অস্বীকার করছি না যে, আমাদের দেশে আইন-শৃংখলা নিয়ে সমস্যা আছে , কিন্তু আমরা তা গণহত্যা চালিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করিনি।
অনেক উত্তেজনাপূর্ণ বিবরণ সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে দেয়া হয়েছে। আজ সকালে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য প্রেস কনফারেন্স ডেকেছে। তখন আমার কাছে সম্পূর্ন বিস্তারিত ছিলনা, কিন্তু আমি দিল্লীতে টেলিগ্রাম পাঠাই এবং তাঁরা উত্তর পাঠায়।
এই টেলিগ্রাম লেখা আছে: ” ২৯ সেপ্টেম্বর এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।এটা পশ্চিম পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর কাজ যারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের অঞ্চলের উপর গোলাবর্ষণ করেছে এবং অনেক নিহত ও আহত হয়েছে। এই অভিযোগ মাহমুদ আলী কর্তৃক প্রণীত এবং স্পষ্টত আমাদের অঞ্চলে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ দিয়ে ভারতের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সর্বাধিক সংযত রেখেছে। এটি সারা বিশ্বে প্রশংসা করা হয়েছে। পাকিস্তানকে বলা হয় যে পূর্ব বাংলার জনগণের উপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে।“

অপরপক্ষে, আমি পরিষদে জানাই যে আমাদের পূর্ব সীমান্তে ৪০০টির ও বেশি আইন লঙ্ঘন পাকিস্তান করেছে। আমি এটা জানাতেও আগ্রহী যে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরের কার্যকলাপ সম্বন্ধে কোন কিছু বিস্তারিত জানাতে আগ্রহ বা সাহস কোনটিই ছিলনা।

আসলে এটা ভারত নয় যার পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল কিন্তু পাকিস্তানীরা নিজেরাই নিজেদের গঠিত নীতি পশ্চাদ্ধাবন করেছে। তারা তাদের নিজেদের লোকদের কাছে অনেক অঙ্গীকার পালন করতে ব্যর্থ এবং তাঁরা বিভিন্ন পরিণতির সম্মুখীন হচ্ছে । ভারতকে এখানে দোষারোপ করার কোন দরকার নেই।

আমরা সবসময় পাকিস্তানের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষীয় সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। গত বছর এবং অনেক বছর থেকে পাকিস্তানের অনেক দ্বিপাক্ষিক বিষয় আছে কিন্তু আমরা যখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে চেয়েছি তখন কোন সাড়া ছিল না। আজ পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য অনুরোধ করে যা ন্যায়ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্যা এবং যা সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের নিজের তৈরি। আমরা এ সমস্যার মধ্যে আসতে চাই না। আমরা আসতে পারিনা এবং আমাদের আসা উচিত নয়। যারা বিশ্বাস স্থাপন করে যে এই ক্ষেত্রে ভারতীয় সহযোগিতার প্রয়োজন, তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, যখন একটি প্রতিবেশীর সঙ্গে অন্যের সহযোগিতা সবসময় স্বাগত জানায়,কিন্তু পাকিস্তানের গণহত্যা অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার বিলুপ্ত করা, আত্মনিয়ন্ত্রণের বিদ্রুপ করা ব্যাপক নৃশংসতায় সাধনের মধ্যে দিয়ে এসবে কেউ ভারতের থেকে সহযোগীতা প্রত্যাশা করতে পারেনা।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল আজ এখানে বলেছেন শরনার্থীদের বাড়ি ফিরতে,যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদিন ভারতে যে ৩৩,০০০ শরনার্থী যাচ্ছে তাদের থামাতে। কিছুই না, এটা একটা ভুয়া উদ্বেগ তাদের নাগরিকদের জন্য যারা নৃশংস পদ্ধতিতে দশ লাখেরও বেশি হত্যা করেছে। এই উদ্বেগ তাদের সঙ্গে দেখানো সংগতিপূর্ণ যারা গত বছর পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছেন। এই নির্মমতা অনেকের মনে আছে যে পাকিস্তান মৌলিক অধিকার ও মান এর উপর প্রচার চালিয়ে প্রতারিত করার চেষ্টা করেছে।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র কিছু বিশেষ দাবি করেছে কারন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের থেকে আসা। আমিও জন্মগ্রহণ ও বড় হয়েছি পূর্ব পাকিস্তানে । শুধুমাত্র আমি না, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লোক তাঁর এই তথ্য ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে অসম্মতি জানাবে। যাইহোক, আমি মনে করি এটা তার বিবেকের কাছে ছেড়ে দেয়া উচিত।

জনাব প্রেসিডেন্ট, এটি রাজনীতি বা বিতর্কের বিষয় নয়। আমদের এই বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্কে প্রবেশ করার কোন ইচ্ছা নেই। এটি বিশাল মাত্রার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এমনকি পাকিস্তান এটির সমাধান শুরুতে শুরু করতে চায় তাহলে, প্রথম ধাপ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হতে হবে। আমাদের মতে, পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক উপাদানের বিভক্ত করার কোন প্রয়াস যদি নেয়া হয় তবে তা শুধুমাত্র স্ব-পরাজয় হবেনা বরং আরো অনেক কঠিন সমস্যার সৃষ্টি করবে। অত্যাচারকারীদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা যে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে এজন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল ভারতকে দায়ি করছে। প্রতিরোধের বিষয় হল পূর্ব পাকিস্তানিরা নিজেরাই সংগঠিত হয় এবং তাঁরা তাদের বেঁচে থাকা , মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। ভারত সরকার এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারবে না। একমাত্র উপা্যে এ পরিবর্তন করা যাবে যদি অত্যাচারী এবং নিপীড়িতদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হয়। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এমন কোন উৎসাহ দেখতে পাইনি।