You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.27 | জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে মিঃ মাহমুদ আলীর (পাকিস্তান) বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে মিঃ মাহমুদ আলীর (পাকিস্তান) বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দাওয়া একটি বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি পয়েন্ট অফ অর্ডার ইস্যু করতে আমার প্রতিনিধিদল আজ বাধ্য হয়েছে। তার বক্তব্যের বেশিরভাগই ছিল আমার দেশের নিতান্ত অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থা কেন্দ্রিক। পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয়ে এভাবে খোলা হস্তক্ষেপ এর বিষয়ে আমার প্রতিনিধিদল যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা জাতিসংঘ প্রণীত সংবিধান ৭ নং অনুচ্ছেদ এর আরটিকেল ২ এর আওতাধীন। যেখানে বলা হয়েছে যে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। এই নীতিটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহন করা হয়েছে এবং একি ধরনের নীতি গৃহীত হয়েছে অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি, যুক্তরাষ্ট্রিয় সংস্থাগুলো, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাতেও যেমন নন-এলাইন্ড কনফারেন্স বা অ্যাফ্রো-এশিয়ান কনফারেন্স। আমরা মনে করি এই নীতি মেনে চলা হোক- তার কারন এই নয় যে পাকিস্তান কিছু গোপন করতে চায়- যেভাবে ভারতীয় মন্ত্রী তার বক্তব্যে ইঙ্গিত করেছেন, বরং এই নীতি মেনে চলা দরকার কারন যে নজির আজ ভারতের প্রতিনিধি স্থাপন করলেন তাতে নিয়মতান্ত্রিক ও কার্যকরীভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মেনে চলা কঠিন হয়ে পরবে। ভারতের পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ হস্তক্ষেপ সকল আন্তর্জাতিক ব্যবহারবিধি, আন্তর্জাতিক আইন বা জাতিসঙ্ঘ সংবিধানের আইন লঙ্ঘন করছে, কেননা সবখানেই কঠোরভাবে নির্দেশিত আছে যে অন্য দেশের বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে হবে। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে একটি নীতিমালা গ্রহন করা হয়, যার শিরোনাম ছিল- কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় ও তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হস্তক্ষেপের অগ্রহনযোগ্যতা- এবং মাত্র একটি ভোট এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল, বাকি সকলেই এর পক্ষ সমর্থন করেছে।
এর প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
কোন রাষ্ট্র, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, যেকোন কারনেই হোক না কেন, অন্য কোন দেশের আভ্যন্তরীন বা বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। একিরকমভাবে, কোন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক উপাদান বা এর বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে হুমকি প্রদান, সশস্ত্র আক্রমন বা যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপ ও গ্রহনযোগ্য নয়।
২য় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
কোন রাষ্ট্র দ্বারা অন্য রাষ্ট্রের সরকার উৎখাতের কোন সন্ত্রাসী বা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র বা গণআন্দোলনে লিপ্ত হওয়া, সহযোগিতা করা, প্ররোচনা দেয়া, অর্থায়ন করা, ঘটনার উদ্রেক বা ঘটনার প্রতি সহনশীলতা গ্রহনযোগ্য হবেনা।
সর্বশেষ এই অনুচ্ছেদ বলছে-
৪। এই নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রতিপালন প্রতিটি দেশের পারস্পরিক শান্তি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কেননা, কোন ধরনের হস্তক্ষেপ শুধু জাতিসংঘের এই নীতিমালাকে লঙ্ঘন ই করেনা, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে এই নীতিমালা গ্রহনের সময় ভারত ও কমিটির সদস্য ছিল। আমি নিশ্চিত যে এখানে উপস্থিত সকল প্রতিনিধিই বর্তমান জটিলতা সম্পর্কে অবগত আছেন পাকিস্তানে যার একটি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। দেশের ভিতরে এধরনের আর্থিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা অঞ্চলভিত্তিক বিরোধের সুরাহা করা পাকিস্তানের জন্য নতুন কিছু নয়। সকল বহুভাষী, বহুসাংস্কৃতিক ও বহুজাতিক রাষ্ট্রেই এধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এধরনের সমস্যা ভারতেও কম নয়। তারপরও সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলাকে যথার্থ ভাবেন। ভারতে কি হচ্ছে তা নিয়ে অনেক কিছু বলার থাকলেও, আমি এখানে সেসব আলোচনা করবো না। আমরা জানি, সারা পৃথিবী জানে নাগা ও মিজোরামে কি হচ্ছে। আমরা জানি পশ্চিম বাংলার মানুষের বিদ্বেষ ও সেখানের টালমাটাল পরিস্থিতির কথা যেখানে গত চার বছর ধরে কোন গনতান্ত্রিক সরকার কার্যকরীভাবে শাসন করতে পারছেনা। আমরা জানি দক্ষিন ভারত ও পাঞ্জাব তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু, এসব বিষয়ে জড়ানোর আমার কোন ইচ্ছে নেই এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতন আমি এই অগাস্টের ফোরামে পরিষদের সামনে কোন প্রচারনাও চালাবোনা এই বিষয়ে। পাকিস্তানে এই জটিলতার কারন কি, তার মুল বিষয়গুলো এখানে উপস্থিত সকলেই জানেন। যদিও নানা ধরনের প্রচারনায় ও কটুবাক্যে তা অস্পষ্ট হয়ে পরছে, যেমন একটি আজ সকালেই আমরা শুনলাম।
মুল বিষয়টি হচ্ছে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গোটা পাকিস্তানেই। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার এর ভিত্তিতেই এই নির্বাচন দেয়া হয়। এর পর যা হয়েছে তা হলো একটি আইনসঙ্গত গনমানুশের আন্দোলন যার মুলে ছিল একটি গনতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের দাবী, যার ফলে দেশের দুই অংশ দুটি সাতবশাসিত রাজ্যে পরিনত হবে, সেই আন্দোলনটি ক্রমশ দুটি রাজ্যকে আলাদা দুইটি দেশে বিভক্ত করার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। পূর্ব বাংলার সর্বত্র সহিংসতা ও অরাজকতা ছড়িয়ে পরছিল এবং সেইসব জনগন, যারা এই বিভেদ চান না, তাদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এ সমস্যার সমাধানে নির্বাচনে জয়ী দলটির সাথে আলোচনা চালিয়ে এসেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, যারা আসলে সংসদে অংশগ্রহন করতে নেয়, বরং এদেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, যার প্রিষ্ঠপোশকতায় এই নির্বাচন অনুষঠিত হয়, তিনি দেশে অখন্ডতাকে অক্ষুন্ন রাখতে সেনাবাহিনীকে তার দায়িত্ব পালন করার ও এই সহিংসতা দমন করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হন। আমরা দেখলাম যে এই বিষয়ে ভারত তাখনিক প্রতিক্রিয়া জানালো। সেসময়ে ভারতের কোন শরণার্থী বিষয়ক সমস্যা ছিলনা, যা আজকে সকালে সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এধরনের হস্তক্ষেপের মুল কারন হিসাবে বিবৃত করেছেন। সেসময়েই ভারতের সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহন করা হয় যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত বাংলাদেশকে সমর্থন জানান। কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সুবিস্তৃত ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রচারনা চালানো হয়, আর মুলে ছিল মিথ্যাচার, অর্ধসত্য কথা এবং মনগড়া ঘটনা। বিভিন্ন দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হবার গুজব ছরানো হয়। গনহত্যা ও নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ড কারযকরের গল্প বলা হয়। বলা হয়েছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বুদ্ধজিবিদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের সামনেই হত্যা করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে কসাইখানা বানানো হয়েছে। এবিষয়ে ভারতীয় একটি পত্রিকার বক্তব্য আমি উল্লেখ করছি-
গত ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে দিল্লীর স্টেটসম্যান পত্রিকা যা লিখেছে তাতে বেশিরভাগ ঘটনাই অতিরঞ্জিত, যদি তারা একথা বানিয়ে না বলে থাকে, তবে এটা বলা যে কারো জন্যই অসম্ভব হয়ে পরবে যে এই ঘটনাগুলো ঠিক কখন ঘটেছিল। এবিষয়ে আমাদের কাছে যেসব প্রতিবেদন এসেছে, তাতে দেখা যায় এসবের অনেকটাই ইচ্ছাকৃত চিন্তার প্রকাশ, তাদের যারা এসব অভিযোগ করেছেন এবং তাদের যারা বিনা প্রতিবাদে এসব কথা মেনে নিয়েছেন। আর্মিদের অভিযানের এক সপ্তাহেরও কসময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশবিদ্যালয়, যা বিরোধিদের ঘাটি ছিল, তা দেশের বাইরে থেকে পাওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংরক্ষন করার অন্যতম স্থান ছিল, তা এখনও অক্ষত আছে এবং ভালভাবেই চলছে। যেসকল বুদ্ধিজীবীদের ভারতের মিডিয়া মৃত বলছে, তারা এখনও জীবিত এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে, যেরকমটি কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কের একটি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল।
ভারতের এই উৎকণ্ঠার কারন এখন সকলে কাছেই পরিষ্কার এবং তারা নিজেরাই তা স্বীকার করেছে। ২রা এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বলেন- যা প্রতিবেদনে আসেনি, তা হল এটি একটি মানসিক যুদ্ধ। মিঃ ব্রুনো ডি হ্যামেল নামক একজন বিদেশী পরিদর্শক ১৭ি এপ্রিল লন্ডন টাইমসে লিখেন, মনে হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া সকল দায়িত্বজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তাদের পত্রিকাগুলোতে এখন খবর বলে কিছু নেই, সবি পাগলের প্রলাপ আর গুজব। তারা যা বলছে, তা দশভাগের মধ্যে নয় ভাগই মিথ্যে, অনিশ্চিত এবং পরস্পরবিরোধী। তারা যেসব মর্মস্পর্শী অরাজকতার কথা বলছে, তা নিঃসন্দেহে বানোয়াট এবং প্রমানহীন।
সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বললেন যে তার দেশ পাকিস্তানি শরণার্থীদের ভরন পোষণের দায় বহন করছে। তিনি বলেছেন যে সংখ্যাটি প্রায় ৯০ লক্ষ। এবং তিনি বলেছেন যে এখনও সীমান্তের ওপার থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছেন। আগামী ৬ মাস এদের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রায় ৮০ লক্ষ ডলার দাবী করেছেন তিনি। যদি আমি ভুল না বলে থাকি, তবে তার বলা ৯০ লক্ষ শরনারথীর সংখ্যা যথেস্টই অবাস্তব বলা যায়, সেই সাথে দাবীক্রিত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ও। ভারতে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ আছেন, যাদের জন্য ভারত সরকার এবছর ৪০০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছে।
ভারতে যে সকল মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে এবং এই মুহূর্তে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা এবং ফিরিয়ে আনা অবশ্যই পাকিস্তানের জন্য অবস্যকরনীয়। আমার সরকার তাদের সংখ্যা গননার কারয সম্পন্ন করেছে, এবং ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত তাদের সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২,০০২,৬২৩ জনে। আমরা বলছিনা, আমাদের সংখ্যাটাই আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে। বরং আমরা বলব, জাতিসংঘ যেন একটি নিরপেক্ষ দলকে এই সংখ্যাটি যাচাই করার জন্য নিযুক্ত করে। আমরা এধরনের কোন দলকে সরেজমিনে পরিদরশন করার সুবিধাও দিতে প্রস্তুত আছি। আমি আশা করবো, এধরনের আশ্বাস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকারের পক্ষ থেকে দিবেন। এই নিরপেক্ষ দল তাহলেও এটাও দেখতে পারবেন যে আসলেই হাজার হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে প্রতিদিন সীমান্ত পার হচ্ছে কি না, বা এরকম কোন ঘটনা আদৌ ঘটেছে কিনা। এধরনের একটি স্বাধীন যাচাই করার প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে আমার উদ্দেশ্য কোনভাবেই এই বিশালাকারের মানবিক সমস্যার গুরুত্বকে ছোট করা নয়। এটি দুক্ষজনক, কিন্তু কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না যে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি অসংখ্য মানুষকে তাদের জান মালের নিরাপত্তা সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলেছে এবং তারা নিজেদের রক্ষা করতে ঘর ছেড়েছেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং জনমনে যে আতংক স্রিষ্টি করা হয়েছে সে অনুযায়ী এই উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিরুপন করা হয়েছে। এধরনের আতংক তখনি তোইরি করা সম্ভব যখন তাদের বারবার বলা হচ্ছে যে তারা একটি পরিকল্পিত গনহত্যার স্বীকার হতে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এরুপ প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিয়েছেন, কিন্ত তখন তিনি বললেন- আমি এই শরণার্থীদের মরতে যেতে দিতে পারিনা।
এই সময়ে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় জটিলতা। পাকিস্তান বদ্ধপরিকর যে যারা যেকোন কারনেই হোক না কেন ঘর ছেড়েছেন তারা অতিসত্বর নিজ দেশে এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল করা আবেদনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, “আমার এই আবেদন সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রতি। যেসকল সংখ্যালঘু মানুষ ঘর ছেরেছেন, তারা বিনা দ্বিধায় পূর্ব পাকিস্তানে তাদের গ্রিহে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন। তাদের সকল সুবিধা এবং পূর্ণ সুরক্ষা দেয়া হবে। তারাও পাকিস্তানের নাগরিক এবং কোন ধরনের বৈষম্য করার কোন প্রশ্নই আসেনা। আমি তাদের বলবো বাইরের দেশ থেকে আসা কোন অপপ্রচারে প্রভাবিত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে। যেসকল শরণার্থীরা গ্রিহে ফিরে আসবেন, তাদের জন্য পাকিস্তান সরকার সীমান্তে প্রায় ২১টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে যেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ, যানবাহন ও রসদ সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানি সেনাও সকল স্তরের মানুষের নিশ্চিতি প্রদানের লক্ষ্যে অভিযান বিরতি ঘোষণা করেছে, এমনকি পালিয়ে যাওয়া সৈন্য ও দেশদ্রোহী সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে”।
তার ২৮ জুন দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন আমরা শরণার্থীদের ঘরে ফিরে আসার সহায়তায় জাতিসংঘের সহায়তা আনন্দের সাথে গ্রহন করবো। একি সাথে পাকিস্তান জাতিসংঘের মহাসচিব ও সেদেশের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারদের শরণার্থীদের গ্রিহে ফিরিয়ে আনার সকল কার্যক্রমে পূর্ণ সহায়তা করে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো যারা এবিষয়ে কাজ করছেন তাদের সাহায্য করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য সীমান্তের দুই প্রান্তেই প্রতিনিধি দল প্রেরনের যে প্রস্তাব ১৯শে জুলাই দিয়েছিল, তা পাকিস্তান সাথে সাথেই গ্রহন করেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন যে ভারত এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ত্রাণ পরিচালনা ও পুনর্বাসন কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের একটি দলকে পূর্ব পাকিস্তানে আনার প্রস্তাবেও সম্মত হয়েছে পাকিস্তান সরকার। আমাদের নাগরিকগন যারা এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল ব্যবস্থাই গ্রহন করেছি। উল্লেখ্য যে শরণার্থীরাও এসকল উদ্যোগের কথা জানতে পেরেছে এবং এখন তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। আমাদের শেষ গননা অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ লোক ফিরে এসেছে। যদি ভারত আমাদের জরুরী সহায়তা দেয় তবে এই শনরথীদের প্রত্যাবর্তন আরো দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হবে।
পাকিস্তান সরকার এসকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষীয় ব্যাক্তিদের একটি সম্মেলনের আহবান জানিয়েছে যেন এই কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার উপায় বের করা যায়। এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং তিনি যেকোন দিন ও যেকোন সময় বসতে প্রস্তুত আছেন। যাই হোক, এখন পর্যন্ত ভারত কোন ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং তা শুধু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে নয়, কোন নিরপেক্ষ জোটকেও তারা সাহায্য করছেনা। যেমনটি আমি বলেছি, যে জাতিসঙ্ঘ সচিব সীমান্তের দুই পারেই শরণার্থীদের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে, ঠিক যেভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান এসকল সমস্যা সুরাহা করতে প্রতিরক্ষা পরিষদের একটি কমিটি পাঠানোর যে প্রস্তাব পাকিস্তান করেছিল, সেটিও প্রত্যাখ্যান করে। তারা কোন ইসলামিক সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধিকে পশ্চিম বাংলার শরণার্থী শিবিরে যেতে বাধা দিচ্ছে, এবং আমার সরকারের কোন প্রতিনিধির সাথে যেকোন ধরনের আলোচনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করছে।
এখন এবিষয়ে আমরা সন্দিহান যে ভারতীয় প্রতিনিধি শরণার্থীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে আদৌ আমাদের সহমর্মিতা জাগাতে এই ফোরামের সামনে কথা বলেন কিনা। এই সংস্থা সেসব নিষ্পাপ মানুষগুলোর সাহায্য করার জন্য যা যা সম্ভাব্য প্রস্তাব করেছে, ভারত তার সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করেছে। কেন, ভারত সরকার মনে করছে যে তাদের সীমান্তে জাতিসংঘের পরিদর্শক কোন দল থাকতে পারবেনা, যেখানে পাকিস্তান, যাদের উপর মানুষের উপর ভয়াবহ রকমের অত্যাচার চালানোর দারুন সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই দেশটি তার সীমান্ত এলাকায় জাতিসংঘের পরিদর্শক দলকে আসতে দিতে কোন আপত্তি করছে না?
ভারতের এরকম অসহযোগিতা করাটাই স্বাভাবিক। ভারত বিশ্বের কাছে এবিষয়টি গোপন রাখতে চায় যে তার কারযকলাপে বিশ্বের এ প্রান্তে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ পরিস্থিতির সুত্রপাত হয়েছে। মানবিক সাহায্যের আড়ালে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রদান করে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে, প্রশিক্ষন দিচ্ছে এবং তাদেরকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য সম্ভাব্ব্য সকল রকমের সাহায্য করছে। এই আপাতবিরোধী পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে এখানে আমি আরো একজন ভারতীয়ের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। ১৯৭১ এর ১৮ ই সেপ্টেম্বর, মাত্র এক সপ্তাহ আগে স্বয়ং ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একটি সভায় বলেন- “শরণার্থীরা তখনি তাদের দেশে ফিরতে পারবে, যখন সেটি একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হবে”। তিনি আরো বলেন যে- ‘এটা বিশ্বাস করা কষ্ট যে পাকিস্তান কখনো বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিবেনা, কিন্তু আমাদের এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে যেন তার কাছে আর কোন উপায় না থাকে’।
আজ সকালে পাকিস্তানের এই সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান বলতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি বুঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও যদি কারো প্রশ্ন থাকে, তবে তার সহকর্মীর এই বক্তব্যই উত্তর হিসেবে যথেষ্ট।

আমার দেশের তরফ থেকে আমি বলতে চাই, কাউকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দ্বিধায় ফেলার সুযোগ দেয়ার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। আজকে সকালে যেরকমটি আমরা শুনলাম, সেরকম আক্রমনের হুমকিই শুধু নয়, বরং আমার দেশকে বিভক্ত করার একটি পরিকল্পিত সেনা অভিযানেরো মোকাবেলা আমাদের করতে হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলার আসাম সীমান্তে প্রতিদিন বোমা হামলা হচ্ছে। একাধিকবার ওই এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে, এমনকি এই পরিস্থিতির আগে থেকেই, এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০০,০০০ উন্নীত হয়েছে এখন, তথাকথিত মুক্তি বাহিনীকেও ভারত সরকার প্রশিক্ষন, অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিস সরবরাহ এবং পারিশ্রমিক দিচ্ছে।
টাইমস পত্রিকায় গত ২৯শে এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছে, “ কোলকাতা থেকে উত্তর দিকে ভারতীয় যেসকল রাস্তা সীমান্তের দিকে এগিয়েছে, সেগুলো দেখলে মনে হয় যেন মালামাল সরবরাহের রাস্তা। ভারতীয় শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত বাঙ্গালীদের ট্রাক চলাচল করছে তাজা খাবার সরবরাহ যোগান, খালি তেলের ড্রামগুলো পূর্ণ করা বা গোলাবারুদের বাক্স পরিবহন করার জন্য। ভারতের সীমান্ত পোস্টের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে সম্প্রতি ভারত এবং পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত গুলিবিনিময়ের মত ঘটনা ঘটছে।
পশ্চিম বাংলার রাজধানী কোলকাতায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এইসকল সহযোগিতা নিয়ে নানারকমের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন ভারতীয় অস্ত্র কারখানাগুলোতে অস্ত্র এবং গোলা নির্মিত হচ্ছে ভারতের প্রতীক ছাড়াই। আরেকটি প্রতিবেদন বলছে গত সপ্তাহে বেশ বড় একটি গেরিলা বাহিনীর সাথে ভারতীয় আর্মিরাও পাকিস্তানি আর্মিদের একটি ঘাটিতে আক্রমন চালানোর জন্য যোগ দেয়।
আমি জানিনা, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এইসকল অভিযোগ অস্বীকার করতে কখন এই মঞ্চে আবার দাড়াবেন। তিনি নিজেই গত ২০ জুলাই ভারতীয় সংসদে বলেন-“মুক্তিবাহিনীদের সহযোগিতা করতে ভারত যথাসম্ভবপর চেষ্টা করছে’। এরপর এখনও তিনি সকালবেলায় বক্তব্য দিচ্ছেন যে ভারত তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রের কোন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেনা এবং তাদের সকল কাজ কেবলি মহৎ উদ্দ্যেশ্য ও উন্নতি সাধনের লক্ষে। তিনি ভারতকে নিষ্পাপ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার শিকার হিসেবে দেখিয়েছেন সবাইকে।
আমি সাহস করে বলতে চাই যে জাতিসংঘের এই কক্ষে এমন প্রচারনা চলেছে বার বার। আমাকে বলতে দিলে আমি বলবো ভারত ও তার এই সাধুতার প্রচ্ছন্ন বলয় আমাদের সবার মাথার উপরেই ঘুরছিল আজ পর্যন্ত, যতক্ষন পর্যন্ত না বর্তমান সময়ে তার আসল চরিত্র সকলের সামনে না চলে আসতো। ভারতী প্রতিনিধিগণ বা প্রচারদল গত চার মাস ধরে সারা প্রিথিবীতে শরণার্থীদের মানবিক স্বার্থে ঘুরছে না। তারা আসলে তাদের দীর্ঘকালীন, অপূর্ণ সেই আশাটা পুরন করতে চায়, আর তা হল পাকিস্তান জাতিকে শেষ করে দেয়া আর নাহলে দুর্বল করে ফেলা। ভারতের প্রতিরক্ষা সংস্থার মিঃ কে সুব্রামানিয়াম অবশ্য এত কায়দা করে কথা বলার মধ্যে যাননি। তিনি বলেছেনঃ “ভারতের এখনি উপলব্ধি করা প্রয়োজন পাকিস্তান বিভক্ত হলে আমাদেরই লাভ এবং এমন সুযোগ আর কখনোই আসবে না। যদি পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়, এবং আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, তবে তা ভারতের প্রতিরক্ষা সমস্যার সমাধান করতে পারে”।
আরেকজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ পাকিস্তানের বিভক্তিকে ভারতের এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে পরিণত হবার পথ হিসেবে দেখছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে শরণার্থীদের আগমনে সেদেশের অর্থনীতি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সে কথা বলছিলেন। পাকিস্তানের তরফ থেকে আমি তাকে নিশ্চিত করছি যে পাকিস্তান তার প্রতিটি নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে বিপুল উৎসাহী ও সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছে। যদি ভারত এই দায়, তাদের ব্যবস্থাপনার ঝামেলা থেকে মুক্তি নিতে ইচ্ছুক হয়, তবে তারা যেন এর শেষপর্যন্ত আমাদের উদার সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।
আমার সরকার বলেছে যে তারা সবচেয়ে উত্তম উপায়ে শরণার্থীদের কিভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে এখনি ভারতের সাথে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। আমার সরকার প্রতিরক্ষা পরিষদকে বলেছে এ বিষয়ে তারা যেন বিশেষভাবে মনোনীত কল্যান দপ্তরের কমিটিকে সকল সহযোগিতা করে। যদি ভারত যেকোন কারনেই হোক পাকিস্তানের সাথে এক টেবিলে বসতে রাজি না হয়, তবে তারা প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের কল্যান দপ্তরের সাথেই আলোচনায় বসুক।
যেমনটি আমি আগেই বলেছি, পাকিস্তান সরকার এই শরণার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে আনা ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার এই বিষয়েও অবগত যে এই শরণার্থী ও বাকি পাকিস্তানের নাগরিকদের ভালো থাকার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক পরযায়ে নিয়ে আসতে হবে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গত ২৮শে জুন জাতির উদ্দেশ্যে তার দেয়া ভাষনে বলেছেন যে গনমানুষের অংশগ্রহন ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেয়া সম্ভব হবে না। তিনি সরকারদলে গনমানুশের প্রতিনিধি উপস্থাপনের কাজেও বেশ ভাল অগ্রগতি অর্জন করেছেন। এর প্রথম ধাপ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে একটি বেসামরিক প্রশাসন কার্যকর করা হবে যার প্রধান থাকবেন পূর্ব পাকিস্তানেরই একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি এবং এই প্রশাসনে প্রাক্তন আওয়ামীলীগ এর স্থায়ী সদস্যরাও নিযুক্ত হবেন। নির্বাচনে জয়ী যেসব প্রতিনিধির উপর দেশদ্রোহিতা ও অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের নির্বাচন এলাকায় আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা নভেম্বর মাসে করা হবে বলে নির্ধারিত হয়েছে। একটি শর্তাধীন সংবিধান ও প্রণীত হবে যা মুলত প্রধান দুইটি উদ্দেশ্য পুরন করবেঃ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন এবং দুই অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা। একটি সহজ প্রক্রিয়া সংরক্ষিত হবে শুধুমাত্র জাতীয় সংসদের কাছে, যার মাধ্যমে সংসদ এই সংবিধানের বাতিল করতে পারবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসকল উদ্যোগকে সকলের চোখে ধুলা দেয়া স্বরূপ বলে উল্লেখ করেছে।
যদি পাকিস্তানের পরিস্থিতি তার দেয়া বর্ণনার মত থাক্তো, তবে আমরা পত্রিকার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতাম না। বিদেশী পরিসদরশক, জাতিসংঘের করমকরতাব্রিন্দ, রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যদের পূর্ব পাকিস্তানে আসার অনুমোদন দিতাম না। সহিংসতা এখনও চলার মুল কারন ভারত এর পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ষরযন্ত্রে সহযোগিতা করা এবং উতসাহ প্রদান। সীমান্তে এখনও অস্থিরতা বজায় আছে এবং সীমান্তে ভারত থেকে শেলিং আর মরটারের আক্রমন এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।
রাজ্যসমুহের সম্পর্ক বজায় রাখার এই নিতীমালার মুল উদ্দেশ্য হল রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা এবং একে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। ভারত তার বর্তমান কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সকল নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এখানে উপস্থিত কোন রাষ্ট্রটি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের একটি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ মেনে নিবে? এই পরিষদের কোন রাষ্ট্রটি নিজ দেশের অঙ্গরাজ্যকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র কার্যক্রম দেখেও কিছু বলবে না? ভারত নিজে কি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এধরনের হস্তক্ষেপ মেনে নিবে? তবে কি বলা যায় যে দেশের ভিতরে বিভক্তি কেবল দেশেই বিদ্রোহ বলে গন্য হয় আর দেশের বাইরে তা জাতিগত নিয়ন্ত্রন বলে গন্য হয়?
আমি আমার পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে খুব স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিতে চাই যে আমরা প্রতিটি নাগরিককে আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনবো। আমরা এক জাতি হিসেবে, অভিন্ন ও স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু, পাকিস্তান এই বিষয়েও সোচ্চার যে অন্য কোন রাষ্ট্র তার প্রদেশ বা জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবে না।
যদি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্ঘাত এড়াতে হয়, তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে ভারতের নীতিমালার এহেন গুরুতর প্রভাব নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং তাদের এসব নীতিমালা পরিহার করতে বলতে হবে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, গত ২২ শে সেপ্টেম্বর একটি প্রেস কনফারেন্সে আপনি বলেছেন- “এই শরণার্থী সমস্যাটি একটি মানবিক সমস্যা। আমাদের অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে। সারা বিশ্বকে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রাজনৈতিক দ্রিষ্টিকোন থেকে এ বিষয়টি দেখেন, তবে দেখবেন এ নিয়ে বিতর্ক আছে, এবং তার কোন শেষ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কি করে দ্রুত এর সমাধান করা যায়। এই জন্যই, আমার ধারনা এক্ষেত্রে আমাদের নেপথ্যে আলোচনা করা দরকার। আমাদের অবশ্যই পাকিস্তান এবং ভারতকে একসাথে করতে হবে এবং দেখতে হবে যে কিভাবে তাদের মধ্যকার রাজনৈতিক কোন্দলগুলোকে কমিয়ে নিয়ে আসা যায়।
আমার সরকার সহযোগিতার যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, তাতে এটা খুব স্পষ্ট করেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান সমস্যাগুলো কমিয়ে আনতে ইচ্ছুক এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবসনের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনাদের সাথে একমত। আমার সরকারের তরফ থেকে আমি জানাতে চাই, পাকিস্তান শরণার্থী সমস্যা সমাধানে সকল যৌক্তিক উপদেশ গ্রহন করতে প্রস্তুত আছে।