You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জবাব জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৬ নভেম্বর  ১৯৭১

২০ অক্টোবরের আপনার প্রেরিত পত্রটি আমার দীর্ঘ সফরের ২ দিন আগে আমার ডিপার্টমেন্ট এ গ্রহণ করা হয় সেকারণে আমার দিল্লী ফেরত আসার আগে আর কোন জবাব দেয়া সম্ভব হয় নাই । আমার সফরে আমি এই সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব নেতাদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ হয় ।
আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাথে কোন ধরনের সঙ্কটে পতিত হবার মত পদক্ষেপ থেকে দূরে থেকেছি । আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে আপনি আমাদের ইস্যু বুঝতে পেরেছেন কারণ পাকিস্তানী মিলিটারি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনচেতা জনগনের দাবিকে পরোয়া না করে অত্যাচার চালাচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষকে আমাদের দেশে তাড়াচ্ছে। জার ফলে আমাদের উপর প্রচণ্ড সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে । যদিও তারা ঘোষণা করেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং সবাইকে ফিরে আসার কথা বলছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৌলিক চাহিদাগুলো মানুসের পূরণ হবার মত পরিস্থিতি নেই পূর্ব পাকিস্তানে । পাকিস্তানী সামরিক জান্তার এই কার্যক্রম আমাদের দেশের উপর সঙ্কট ঘনীভূত করছে ।
পাকিস্তানী সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতা না দেয়ার জন্যে বারবার এই সম্পূর্ণ ঘটনাকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বিরোধ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করছে । যার উদাহরণ হোল সীমান্তে তাদের সৈন্য ও গোলাবারুদ মোতায়েন এবং যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করা । তাদের কার্যক্রম এর কারনে আমাদেরকে বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হচ্ছে ।
আপনাকে আমি এটুকু বলতে পারব যে আমরা কোন ধরনের সশস্ত্র অভিযান এ যেতে চাই না । আমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যেই সব পদক্ষেপ নিচ্ছি কারণ পাকিস্তানীরা আক্রমণ করার সব পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে । তারা সৈন্য মোতায়েন করছে সীমান্তে যদিও তাদের ক্যান্টনমেন্ট সীমান্ত থেকে কয়েক ঘণ্টার দুরুত্ত্বে যেখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট কয়েক দিনের দূরত্বে । আমরা যথেষ্ট সময় ধৈর্য ধরেছি আমাদের সৈন্য মোতায়েনের পূর্বে ।
এই সমস্ত সঙ্কটের মূল হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের ৭.৫ কোটি মানুসের ভাগ্য এবং তাদের মানবাধিকার যা আমাদের এখন অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে । আসল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে যদি ইন্দো-পাক সমস্যায় এটাকে রুপান্তর করি তবে ফলাফল শান্তি আসবেনা ।
এমতবস্থায় আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি এবং বারবার বলছি এই সমস্যার সমাধান পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে । এর প্রথম পদক্ষেপ হছে জনতার দাবি মোতাবেক শেখ মুজিবর রহমান কে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া । কিন্তু তার বদলে আরেকটি ছায়া সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে জেকাহ্নে ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন । এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোন সমাধান বয়ে আনবে না শুধুই তিক্ততা বাড়াবে ।
যদি পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তা তাদের কার্যক্রম এভাবে অব্বাহত রাখে তবে কোন সমস্যার সমাধান হবেনা এবং রাজনৈতিক সমাধান ও আসবেনা । বিশ্ব নেতারাও রাজনৈতিক ভাবে একটা সমাধান প্রত্যাশা করেন এই সঙ্কট দূর করার জন্যে । আপনি নিজেও এরকম প্রত্যাশা করেন বলে ব্যাক্ত করেছেন বেশ কয়েকবার । দুঃখের বিষয় পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বারবার কর্ণপাত করেন নি এই ব্যাপারে । আপনার পদক্ষেপ এই সমস্যার সমাধান করতে অনেক উপযোগী হবে আমরা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আপনার সাথে দেখা হওয়াটা আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের বিষয়। আপনি পূর্ব পাকিস্তানের এই সঙ্কট সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্যে সব ধরনের সাহায্যই আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে ।
আমি আমার চিন্তা ভাবনা মুক্তমনে আপনাকে জানালাম এবং আশা করছি আপ্নিও সেভাবেই করেছেন । কারণ আমি জানি আপনি পূর্ব বাংলার এই সঙ্কটের ব্যাপারে ব্যাথিত এবং চিন্তিত । আমি আপানের সাথে নিউইয়র্ক এই কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার অসুস্থতার খবর শুনে চিন্তিত হয়েছিলাম । আমি আশা করছি এখন আপনি সুস্থ আছেন ।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!