You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলার শরণার্থীদের ত্রাণ সাহায্য জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রণীত ইউ.এন.এইচ.সি. আর প্রতিবেদনের উপর আলোচনার সারাংশ জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৮-১৯ নভেম্বর, ১৯৭১

জাতিসংঘের তৃতীয় সাধারণ অধিবেশনে পুর্ব বাংলার শরনার্থীদের সাহায্যের জন্যইউ.এন.এইচ.সি.আর. এর দ্বারা উপস্থাপিত রিপোর্টের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
১৮ ও ১৯ নভেম্বর ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সমস্যার ব্যাপারে১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর তৃতীয় কমিটিতেএকটি বিতর্কের আয়োজন করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানসহ উক্ত বিতর্কে প্রায় ৩১টি দেশ অংশগ্রহণ করে। ইউ.কে., ফ্রান্স, তিউনিসিয়া ও ভারত দুইবার করে বক্তব্য প্রকাশ করে। প্রতিনিধিদলগুলোর গঠনমূলক বিতর্কের চুম্বক অংশ নিচে দেয়া হলঃ
১. ইউ.এস.এ.-রাষ্ট্রদূত ডব্লিউ. ট্যাপলি বেনেট:শরণার্থীদের ক্ষেত্রে আমরা স্বীকার করি যে ভারতের উপর আসলেই একটু বেশি চাপ যাচ্ছে। এই বিবেচনা করে,
প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবএবং অপ্রত্যাশিত জরুরী অবস্থার মোকাবিলা করা সহ এই বিশাল চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে, ভারতীয়রা যেভাবে শরনার্থীদের সাহায্য করে যাচ্ছে, সেটা আসলেই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এই শরণার্থীদের কারনেভারতের বর্তমানঅর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর গুরুতর প্রভাব পরবে সে ব্যাপারে আমরা সচেতন।বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে যে, ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য অর্থ ব্যয় করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে,সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই খরচ মেটানোর জন্যভারতকে সাহায্য করা। সচেতনতা এবং বিবেকবোধই সকলকে এই কাজ করতে প্ররোচিত করবে। শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সাহায্যের জন্য ২ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের যোগান দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকংগ্রেসকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের এই মানবিক প্রয়োজনের সময় অবশ্যই আমার দেশকে অনুপস্থিত পাওয়া যাবে না।আমরা এই বিষয়ে একমত যে, প্রয়োজনের তুলনায় সাহায্যের পরিমান হতাশাজনক।শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করাপর্যন্তআন্তর্জাতিক সাহায্য থেকে পাওয়া আর্থিক এবং অন্যান্য সাহায্যের কোন অভাব হবে না। শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের ২৫ টি বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন এবং শরনার্থীদের সেখানে খাদ্য, বস্র ও পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করার ব্যাপারটিও আমরা নোট করেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর জন্য ইউএনইপিআরও এর কার্যকলাপগুলো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই কার্যকলাপগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্য সাধারণ সচিবের আরও অনেক সাহায্যের প্রয়োজন।শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করাই হচ্ছেএই মানবিক সমস্যাটির সমাধান। আমরা আশা করি শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত অবশ্যই সম্ভব হবে। যেকোনো একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানোর আগে, আমার প্রতিনিধিদল ভারত ও পাকিস্তান সরকারের কাছে ভারত ও পাকিস্তানে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের ভূমিকা সহজতর করার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।এই দুর্ভাগা শরণার্থীদের মাধ্যমে আমরা সমগ্র পৃথিবীতে মানবতার চরম অবক্ষয়ের সাক্ষী হলাম।

২. ইউএসএসআর রাষ্ট্রদূত, এস স্যাফরনচকঃ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যাবে না।সীমান্তে শরণার্থীদের প্রবাহের কারণে ভারতে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যারসৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে এই নিপীড়ন বন্ধ করা উচিত এবং সকল জনগণের স্বার্থে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া উচিত।পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার প্রধানের মধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়া উচিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে শরণার্থীরা ফিরে আসতে পারবেন। আমরা আশাবাদী যে এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রন বজায় থাকবে এবং সশস্ত্র সংঘাতের ফলে ঐ অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে না। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই সোভিয়েত ইউনিয়ন করবে।
৩. ইউ.কে.-গওরির আর্ল: দুবার বক্তব্য রেখেছেন:এইরূপ মানবিক বিষয়গুলোর দায়ভার স্পষ্টতই তৃতীয় কমিটির, যদিও আমরা সকলেই এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির পিছনের কারণগুলোর ব্যাপারে সম্পুর্নরূপে জ্ঞাত। স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রতাবর্তন এবং ক্ষুধা ও দুর্ভোগহ্রাস করে শরণার্থীদের সকল সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান খোজা উচিত। কিন্তু এই রাজনৈতিক সমাধানটি কীভাবে অর্জন করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবা এই কমিটির কাজ নাতাই, আমার বক্তব্য নির্দেশিত হচ্ছে মানবতার দিকে।বর্তমানে নিরপরাধ মানুষগুলো বিপদে আছে এবং কমিটি তাদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে। যুক্তরাজ্যভারতে অবস্থানরতপূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সহায়তার জন্য১৪.৭৫মিলিয়ন ইউরো এবং পূর্ব পাকিস্তানে সাহায্যের জন্য২ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছিল। সাহায্যের প্রয়োজন ছিল প্রচুর এবং সে তুলনায় সাহায্য ছিল অপ্রতুল। পুর্ব পাকিস্তানের এইরূপ বিধ্বস্ত জীবনব্যাবস্থ্যার সাথে মোকাবিলা করার জন্য ইউএনইপিআরও এর প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা পেশ করছি। সীমান্ত এলাকার মত সংবেদনশীল এলাকায় জনসাধারণের জন্য ত্রাণের ব্যাপারটি গুরুত্তপূর্ন ছিলো। আমার সরকার ঘোষণা দিচ্ছে যে, ইউএনইপিআরও কে তার কাজে সম্পুর্ন সাহায্য সহযোগীতা দেয়া হবে।

৪. ফ্রান্স-মুন. জে. কস্কিউস্কো মরি, এমপিঃ দুবার বক্তব্য রেখেছেন: ভারতের উপর পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে ভারতের উপর যে অসহনশীল বোঝা চেপে বসেছে, সেজন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ভারতে অবস্থিত পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদেরকে মানবিক সাহায্যের জন্য আপিল করার আহ্বান জানান।পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যার সহায়তার বিষয়ে, এটি দুর্ভাগ্যজনক ছিল যে ইউএনইপিআরওসহায়তা প্রদানের সময় অনেক সমস্যা এবং এমনকি বিপদেরও সম্মুখীন হয়েছিলো। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, সেখানে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে, যার ফলে জনগণকে সাহায্য করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি ঘোষণা করেন যে ভবিষ্যৎ বিপদসংকুলএবং আমাদেরকে অবশ্যই সতর্কবানীটিকে গুরুত্তের সাথে নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সহানুভূতিশীল, কিন্তু তবু অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্যের পরিমান থাকবে সীমিত। এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে একটি শান্তিপূর্ণ ও উদার সমাধান দেয়ার জন্য তাদের নিকট আপিল করেন।

৫. পোল্যান্ড-জনাব. ডব্লিউ. নেনম্যান:একটি নাটকীয় মানবিক সমস্যা তৈরি করা হয়েছে।বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে হয়ত সমস্যাগুলোর সাময়িক একটি সমাধান করা যাবে কিন্তু কেবলমাত্র উদ্বাস্তুদের সফলভাবে প্রত্যাবর্তন করাতে পারলেই সমস্যাটির সম্পূর্ণ সমাধান হবে। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান হচ্ছে উদ্বাস্তুদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার মাধ্যমে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা আশা করি পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদেরকে পূর্ব পাকিস্তানেফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাবে। এটাই হবে শান্তির জন্য শ্রেষ্ঠ পন্থা।

৬. নেদারল্যান্ডস-রাষ্ট্রদূত আর. ফাকঃ আমরা বুঝতে পারছি যে ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের অবস্থান নেয়ার ফলে সমগ্র বিশ্ব একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং লাখো জনগণের দুর্দশা বেড়েই চলছে। আমি আজকে ঘোষণা করছি যে, আমার সরকার ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের জন্য১০ মিলিয়ন গিল্ডার (প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার) এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্যআরও ১০ মিলিয়ন গিল্ডার (যার অর্ধেক খাদ্য সহায়তা দিতে ব্যাবহার করা হবে) উপহার হিসেবেদেয়া হল। বিশ্বের সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য কমিটি এবং সাধারণ পরিষদ যা করতে পারে তা হল, সমস্যাটি সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে বা সমাধানের উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে যা ভারতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে এবং একই সাথে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।এত দ্রুত এবং এরূপ উদার প্রতিক্রিয়ার জন্য ভারত সরকার প্রশংসার দাবী রাখে।শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন করাই যে এই সমস্যাটির একমাত্র সমাধান, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেয়া সমাধানটি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই মেনে নেয়। যেহেতু বড় আকারের প্রত্যাবর্তন কোন লক্ষণ নেই, সেহেতুবিশ্ব সম্প্রদায় দুটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। সমস্যা দুটি হচ্ছে, প্রথমত পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত এবং ভারতে অবস্থানরতপূর্ব পাকিস্তানী শরনার্থীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা এবং দ্বিতীয়ত, স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন মাধ্যমে একটি তাৎক্ষনিক সমাধান। কমিটির উচিত বড় পরিমান সাহায্য সহযোগীতার জন্য পূর্বের করা আপিলের ক্ষমতা পুনরায় ব্যাবহার করা। এরই সাথে সাথে কমিটির আরও মাথায় রাখতে হবে যে, সমাধানটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কারণ বিশ্বে নির্দিষ্ট কিছু শরণার্থী সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে সকলেরই আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু যদি অনেকদিন ধরেও কোন সমাধান না পাওয়া যায়, তাহলে তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে ওঠে এবং তাদের নিছক উপস্থিতি একটি আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়। অতএব, কমিটি এবং সচিব মিলে শরণার্থীদের স্বার্থে এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত মতামতের ভিত্তিতে, একই সময়ে প্রশ্নের দুটি দিক মোকাবেলা করে।পরিশেষে নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধিদল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিদল একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।উপমহাদেশের এই দুঃখজনক ঘটনাটির মূল কারণ হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক ভয়। সম্ভবত কারণগুলো অযৌক্তিক, কিন্তু তবুও মূল কারণটি হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক ভয়। অন্যরা এই খসড়াটিকে সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক বলে বিবেচনা করে।দুই সরকারের প্রতি এই আপিলগুলো ঘোষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী কঠোরভাবে পালন হয়।

৭. নিউজিল্যান্ড-রাষ্ট্রদূত জে. স্কটঃ শরনার্থীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ক্রমাগত ভারতে আসার কারনে শরণার্থী সমস্যা আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের এবং জনগণের জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তারা দেখতে চান যে, ইসিওএসওসি পরবর্তীতে এই পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছে। ভারত অনির্দিষ্ট কাল ধরেউদ্বাস্তুদের ভার বহন করতে পারেনা। সমস্যাটির একমাত্র সমাধান হচ্ছে উদ্বাস্তুদেরকে যথেষ্ট নিরাপত্তা এবং আস্থাসহ তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো। পূর্ব পাকিস্তানের এমন কিছু শর্ত দেয়া প্রয়োজন ছিল, যাতে করে শরণার্থীরা তাদের নিজের দেশে ফিরে দেশটির উন্নয়নে অংশ নিতে উৎসাহ পায়। এটিই ছিলএকটি স্থিতিশীল সমাধান অর্জন করার একমাত্র উপায়।এখন পর্যন্ত, অপেক্ষাকৃত কম শরণার্থীই তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছেএবং গত কয়েক সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সীমান্ত সংঘর্ষ আরও ঘনঘন হয়ে গিয়েছিল এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি কঠিন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিজস্ব বিষয়গুলির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই ছিল সমস্যাটির মূল কারণ। এই সমস্যাটি কেবলমাত্র পাকিস্তান সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার দ্বারা সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই অবস্থায় প্রয়োজনীয় সম্পদের তুলনায় সরবরাহকৃত সম্পদের পরিমান ছিল অনেক কম। মজুদকৃত সম্পদের পরিমান ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সাধারণ পরিষদ সমস্যাটিকে একটি মানবিক সমস্যারূপে তুলে ধরে এবং প্রতিনিধি দল সমস্যাটির একটি খসড়া প্রকাশ করে। খসড়াটির উদ্দেশ্য ছিল মানবিক। এর ফলে সমস্যাটির সাথে আরও গভীর উদ্বেগ যুক্ত হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে উত্থানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশাকে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে লক্ষ্যে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হবে।

৮. যুগোস্লাভিয়া-মিস্টারবি. অসোলনিক, এম পি:আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল বস্তুগত সহায়তার জন্য তাদের সম্পৃক্ততা কমাতে পারে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য শরণার্থীদেরকে শীঘ্রই স্বদেশেপ্রত্যাবর্তনের জন্য তৈরি করা আবশ্যক।এটি স্পষ্ট ছিল যে শরণার্থীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সহায়তা করা সম্ভব হবে না।প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করা আবশ্যক ছিল।
৯. সুইডেন-রাষ্ট্রদূত ও. বাইডব্যাক:বর্তমানে ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা, ইউএন এর বেশীরভাগ সদস্য রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার তুলনায় বেশি।গুণগত এবং পরিমাণগত উভয়ভাবে, শরণার্থী সমস্যাটি আরও বিপদজনক রূপ নিচ্ছে। প্রত্যেক দেশের উচিত তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ কাজে সাহায্য করা। আমরা ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণের দ্বারাশরণার্থীদের দুর্দশার পরিমান কমানোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।আগে কখনও একটি দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশ এমন একটি বিশাল কর্মের মুখোমুখি হয়নি, যাতে করে সে দেশের অভ্যন্তরীণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর গুরুতর প্রভাব পরতে পারে। তখন মানবিক পরিস্থিতির অবস্থা ছিল অনেক বাজে। এটা শুধুমাত্র সমাধান করা যেতে পারে যদি শর্তগুলি তৈরি হয় যা শরণার্থীদের সম্ভাব্য স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন প্রদান করে।২৮ শে সেপ্টেম্বর সুইডেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত বলেন “পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতার অবসান ঘটানোর জন্য সুইডিশ সরকার তাদের সাথে যোগ দেয় এবং পাকিস্তান সরকারকে সামঞ্জস্য ও ধৈর্য দেখানোর জন্য আবেদন করে।মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও জনগণের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে কেবল একটি রাজনৈতিক সমাধান ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাটির সমাধান করতে পারে।”আমরা আজ একই কাজ করছি। আমরা তাই নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিদের উদ্যোগকে সমর্থন করছি এবং তাদেরকে খসড়া প্রস্তাবের একটি সহ-পৃষ্ঠপোষক হসেবে খসড়া টি প্রকাশ করেছি।

১০. সাইপ্রাস-জনাব. সি পিপ্যাডাস:এই কমিটি উদ্বাস্তুদের মানবিক দুঃখজনক ব্যাপারগুলো নিরসনের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং মনবটাকে কর্মে পরিণত করার অবশ্যই কোন না কোন উপায় সেখানে ছিল। শরণার্থী তাদের জীবনরক্ষার ভয়ে ভারত পালিয়েছে।শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৯ মিলিয়নে পৌঁছেছে এবং এই পরিমাণটি যেকোনো দেশের জন্যই নিজের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। তাঁর দেশ ভারত ও তার জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল, কারণ এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেয়ার মত একটি মহৎ কাজ করছে। এটি কেবলমাত্র একটি মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা যেটি কিনা অনেক বড় সমসসায় পরিনত হয়েছে।

১২। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির সভাপতিঃ
আমি একজন কানাডিয়ান ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলকে ভারত ও পাকিস্তানে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং তার প্রভাব ছিল গভীর ও অন্ধকারাচ্ছন্ন । পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে লাখ লাখ শরণার্থী বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপমহাদেশে শরণার্থীদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা স্পষ্ট যে খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ভারত এর প্রচেষ্টা সম্পূরক অংশ ।
উদ্বাস্তুদের যত্ন ভারত এর সীমিত সম্পদ উপর একটি গুরুতর বোঝা হয়েছে এবং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন জন্য তার নিজস্ব পরিকল্পনা সাধন পতনের হুমকি হয়েছিল । স্পষ্টতই, উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় ফেরত আসা চূড়ান্ত সমাধান ছিল । কানাডিয়ান সরকার অনুরোধ করে ভারত ও পাকিস্তানকে এই সমস্যার সমাধান করতে এবং দুশ্চিন্তা কমাতে, এই যুক্তিতে বলা হয় যে যুদ্ধে অশোভন শারীরিক ধ্বংস এবং এইসব দেশের অর্থনীতির ব্যাপক অবনতি ঘটবে ।

১৩। জাপান- মিস সি সানোঃ
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, গ্রেট এশীয় দেশগুলি ইউএনএইচসিআর অফিসের মাধ্যমে একটি চুক্তি করবে ।

১৪। মিশর- জনাব এ. এম. মুসাঃ
শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া পর্যন্ত শরণার্থী প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত সহায়তা এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। হাইকমিশনার কর্তৃক স্বীকৃত, যা ভারত ও পাকিস্তানের সহযোগিতায় একমত যে শরণার্থীদের প্রবাহ ভারতে ভারসাম্য বজায় রেখেছে , তার সরকার কর্তৃক প্রশংসিত হয়। মিশরীয় রাষ্ট্রদূতদের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি পাকিস্তানের সমাধানের আহ্বান জানান যা তার ঐক্য রক্ষা করবে ।

১৫। উগান্ডা- জনাব পি. জে. ওকিয়াঃ
এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে এশিয়া মহাদেশের প্রায় ৮ মিলিয়ন লোকের মধ্যে শরণার্থীর পরিমাণ বিশাল পরিসরে ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় জনগণ এবং ভারত সরকার উদ্বাস্তুদের ইতিহাসে অপ্রতুল একটি বোঝা বহন করেছে। আমরা আশা করি এই উদ্বাস্তুদের একটি প্রাথমিক প্রত্যাবাসন দ্বারা ভারত সরকারের এই ভারী বোঝা উচ্ছেদ করা হবে ।
আমার প্রতিনিধিদল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলির মধ্যে প্রবেশ করতে চায় না, যা এই অকথিত দুঃখকষ্ট সৃষ্টি করেছে । আমরা মনে করি এই একটি সমস্যা ভারত ও পাকিস্তান দ্বারা নিষ্পত্তি করা যায়, কিন্তু দ্রুত সমাধানের জন্য দুই দেশের পার্থক্যগুলি সমাধান করার জন্য অনুরোধ করতে আমরা থামতে পারিনা । পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে, এবং মধ্যপ্রাচ্যে, আমরা আশা করি যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তি হবে ।

১৬। হাঙ্গেরি- জনাব জি. বদিঃ
তাঁর প্রতিনিধিদল বিশ্বাস করতেন যে মনুষ্য প্রজ্ঞা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের জন্য এগিয়ে আসবে ।

১৭। গ্রীস- মিসেস ই. এ. ডায়েসঃ
আমরা শেষ ইসিওএসওসি (ECOSOC) বৈঠকে পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে বক্তব্য রাখলাম এবং আশা প্রকাশ করেছিলাম যে এটি একটি অস্থায়ী সময়ের জন্য হবে । তারপর থেকে, আমাদের জানানো হয়েছে যে সবচেয়ে দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের লাখ লাখ শরণার্থী নিজেদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং ভারতে পালিয়ে গেছে এবং সম্প্রতি এই সংখ্যা না কমে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে । আমার প্রতিনিধিরা মানবিক কারনে ভারতে যারা শরনার্থী হিসেবে ছিলেন তাদের দুঃখকষ্টের অবসান ঘটাতে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন ।

১৮। তিউনিসিয়া- রাষ্ট্রদূত আর. ড্রিসঃ
নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডের খসড়া প্রস্তাবটি ভারত ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের মধ্যে একটি অসম্মানজনক নির্বাচন উপস্থাপন করে, যখন গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি ছিল দুই দেশের মধ্যে পুনর্মিলন বা সন্ধি করা ।

বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করে আপিল আহ্বান করার জন্য পরিষদের সভাপতিকে একটি সুপারিশ করা উচিত এবং যা কেবল উত্তেজনাকে হ্রাস করতে পারে, এবং তারা বিশ্বাসের জলবায়ু স্থাপনের প্রচেষ্টাকে আরো জোরালো করবে এবং উদ্বাস্তুরা স্বেচ্ছায় ফেরত আসবে । আবার বলছি, রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে তিনি তার সুপারিশে কোনও ভোট গ্রহণ করবেন না, বরং আসন্ন একটি ঐক্যমত্যের সাথে পুনঃমতামত তুলে ধরবেন ।

তিনি ইউ.এন ডেলিভারির সম্মুখীন সমস্যাটির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন একটি চুক্তিতে পৌঁছান এবং একত্রীকরণের উপাদান পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, এবং কোনও মুখোমুখি হতে হবে না । এখানে সমাধান শব্দটি পাওয়া যায় নি । সেক্রেটারি জেনারেলের আপিল একমাত্র বিদ্যমান দলিল ছিল । ইসিওএসওসি’র (ECOSOC) সভাপতি উভয় পক্ষকে বোঝানো কঠিন বলে মনে করেন যে, এটি তাদের স্বার্থে ছিল যে ডকুমেন্টটি মানবতার দিকের সমস্যাগুলির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারবে। এখন এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর নির্ভর করে তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে। এই শেষ পর্যন্ত, তিনি তিনটি কো-স্পন্সরদের এই আহ্বান প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান যাতে সবাইকে একসাথে মানবতার মনোভাব ও সহযোগিতার সুপারিশ করতে পারে ।

১৯। বুরুণ্ডি- জনাব এ. ন্যানকিয়েঃ ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত ব্যক্তিদের প্রতি তার দেশ সহানুভূতিশীল ছিল, এটি শরণার্থী পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা ছিল । তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভারত ও পাকিস্তান শান্তিচুক্তি মোকাবেলা করবে। একটি রাজনৈতিক সমাধান দুটি সরকারের মধ্যে সম্ভব, এবং তারা পারস্পরিক আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য ধীরে ধীরে প্রচেষ্টা করতে হবে। “আসুন আমরা এই দুর্যোগের উৎস সন্ধান না করে কেবলমাত্র অসহায়দের সাহায্য করি ।”

২০। অস্ট্রিয়া- জনাব এস. এরমাকোরাঃ
সমস্যা শুধুমাত্র একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ মধ্যে সমাধান করা যাবে না কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এটি রাজনৈতিক ঘটনার সাথে জড়িত ছিল । তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কেবল মানব সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে । যে বিতর্ক বিতর্কিত হওয়া উচিত নয়, তবে তিনি মনে করেন যে তিউনিশীয় উদ্যোগটি একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে ।

২১। লিবিয়া- জনাব আই. বাবাঃ
শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্য ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধার মাধ্যমে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন বাস্তবিক হতে পারে । তিনি তিউনিশিয়ার প্রস্তাবিত প্রস্তাবের সমর্থন করবেন ।

২২। নাইজিরিয়া- জনাব এ. মোহাম্মদঃ
তিনি শরণার্থী সমস্যা সম্পূর্ণভাবে এবং একেবারে মানবিক ভাবে দেখেছেন এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যে বিষয়গুলি বিবেচনায় নেওয়া উচিত সেগুলি তুলে ধরা উচিত ছিল পাকিস্তান সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল । এছাড়াও ভারতের শরণার্থী সমস্যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে খারাপ ছিল । “আমরা এই সমস্যার কোনও রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে পারিনি কারণ এটি চার্টারের অধ্যায় ৬ এর অধীনে নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা পরিচালিত ছিল ।

আমরা সুপারিশ করি যে সমস্ত দেশকে ভারতকে আরও বেশি অবদান রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত, তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যাগুলির মধ্যে আমাদের কোনও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই । দুই দেশের মধ্যে সমস্যা শরণার্থীদের দ্বারা সৃষ্ট হয়নি কিন্তু তা ভারত বিভাগের সাথে সাথে শুরু হয়েছিল । এমনকি যদি জাতিসংঘ শরণার্থী সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা যেমন ধর্মীয়, হায়দ্রাবাদ, সিন্ধু, কাশ্মীর, জুনাগড় প্রভৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বজায় থাকবে। যতদিন আমরা কোনও দেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি , এর মধ্যে সব অভ্যন্তরীণ সমস্যা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের বিষয় নয় ।”

তিনি প্রস্তাব করেন যে-
(ক) কমিটি সমস্যাটির কথা আলোচনা করে এবং কোনও রেকর্ড রাখবে না, যথা, কোন সংকলন;
(খ) চেয়ারম্যানের ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত;
(গ) তিউনিশিয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা উচিত; এবং
(ঘ) তিনটি পাওয়ার ড্রাফট রেসোলিউশন সংশোধিত করে যাতে অনুচ্ছেদ ৩ মুছে ফেলা উচিত যা অত্যন্ত রাজনৈতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। অনুচ্ছেদ ৪ সংশোধনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সরকারকে একটি অবস্থায় উন্নীত করা উচিৎ যাতে শরনার্থীরা তাদের বাড়িতে দ্রুত ফেরত আসতে পারে ।

২৩। আয়ারল্যান্ড- জনাব টি. কোরকরানঃ
তাঁর সরকার প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ, নারী ও শিশুদের (ইয়ারের জনসংখ্যার তুলনায়) ক্ষুধা, রোগ এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হতাশাজনক দূর্দশার আক্রান্ত হয়েছিল । এটি এই শতাব্দীতে ঘটিত সর্বোচ্চ মানব বিপর্যয়ের মধ্যে অন্যতম এবং এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের গভীর সহানুভূতি জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হতে পারে; যে সহানুভূতি ছিল তা যথেষ্ট ছিল না । পুনর্মিলন উপর ভিত্তি করে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে যা উপলব্ধিযোগ্য । তাঁর প্রতিনিধিদল তিনটি পাওয়ার ড্রাফট রেজোলিউশনকে সমর্থন করে ।

২৪। আলজেরিয়া- মিস এস. সেনামিঃ
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি দ্রুত দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে এবং শত্রুতা ও সন্দেহের কারণে সব সংশ্লিষ্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উভয় সরকারের সঙ্গে তার দেশের বন্ধুত্বের ফলে শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন, পাকিস্তানের মধ্যে কার্যকরী মানবিক সাহায্য এবং জাতীয় পুনর্মিলন আশা করা হতো। তিনি তিউনিশিয়ার সুপারিশটি সমর্থন করেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে ।

২৫। ঘানা- জনাব কে. সেকাইয়ামাঃ
ভারতের পরিস্থিতি শরণার্থী প্রবাহের আকস্মিকতা ও মাত্রা দ্বারা আবর্তিত হয়েছে । পাকিস্তানী বা ভারতীয় পরিসংখ্যানে গৃহীত হোক না হোক, পরিস্থিতি কম ভয়ানক বা বিরক্তিকর নয় । আমরা দৃঢ় সমর্থন করছি যা স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে এবং এই স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসন উন্নীত করে একটি সামাজিক পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য দুটি সরকারকে আহ্বান জানায় ।

২৬। ইতালি- জনাব ডি. বার্নার্ডোঃ
বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নতির কোন লক্ষণ এবং সামাজিক ও মানবিক প্রাক-পেশা দেখানো হয়নি যা তিন ড্রাফট রেজ্যুলেশন প্রস্তাবের বিরোধিতার মতামতকে প্রতিফলিত করেছিল যে শরণার্থীদের তাদের ঘরে ফিরে আসার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত । লক্ষ লক্ষ লোকের দুর্দশাকে দূর করার জন্য এবং শরণার্থী প্রত্যাবর্তন বাড়ানোর জন্য যেকোনো উদ্যোগ অতি দ্রুততার সাথে নেওয়া উচিত ।

২৭। মরোক্কো- মিসেস এইচ. ওয়ারা এইঃ
রাজনৈতিক উপাদানগুলির বর্জন করে কমিটির ইতিবাচক প্রস্তাব প্রণয়ন করা উচিত যা সর্বসম্মত সমর্থন অর্জন করতে পারে । তিন ড্রাফট রেজ্যুলেশন প্রস্তাবের মধ্যে কিছু মৌলিক রাজনৈতিক উপাদান রয়েছে যা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাছেই এটি গ্রহণযোগ্য নয় । মানবিক সমাধান খুঁজে পাওয়া উচিত, তবে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বিভিন্ন সূত্রগুলি তৃতীয় কমিটিতে স্থান পায়নি, যা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের শর্তাবলী তৈরির প্রয়োজনে পাকিস্তানের মনোযোগ আকর্ষণের কোন প্রয়োজন নেই ।

২৮। কুয়েত জনাব কে. আল বাবতিনঃ
উল্লেখ্য যে, উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন হিসাবে পাকিস্তান নিশ্চয়তা প্রদান করেছে । সমস্যাটির মোকাবেলা করার জন্য ভারত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল । দুঃখের অবসান অবশ্যই অত্যাবশ্যক ছিল, কিন্তু এই শরণার্থীদের প্রত্যাশা দেবার জন্য একটি প্রণয়ন আবশ্যক ।

২৯। অস্ট্রেলীয়- আর.এই পিইচিঃ
জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা এতটা অবাক করার মতো ছিল যে মাঝে মাঝে তাদের লক্ষ লক্ষ লোকের পরিবর্তে জনসাধারণের মত মনে করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে । শরণার্থীরা যা সব কিছে ছেড়ে চলে এসেছিল যেমন তাদের পরিবার এবং তাদের বন্ধুদের , তাদের বাড়ি এবং সমাজে ফিরে যেতে যা দরকার তা বিনামূল্যে হতে হবে । দুঃখজনক অবস্থার মুখোমুখি দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্বকে প্রত্যাখ্যান করে, এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রারম্ভিক সমাধান সম্পর্কে শ্রমসাধ্য/ উৎসাহী প্রচেষ্টা করা হবে ।

৩০। ফিলিপাইন- জনাব এইচ. জে. প্রিলিইয়াটসঃ
এই বিষয়টিতে রাজনীতির একটি উপাদান প্রাণবন্ত ছিল যা অমঙ্গলজনক । তিন ড্রাফট রেজল্যুশন প্রত্যাহার করা উচিত । পরিবর্তে, চেয়ারম্যানকে এই সংকলনকে সমর্থন করার জন্য জেনারেল অ্যাসেম্বলি সভাপতির কাছে রেখে রেকর্ডের জন্য একটি সমষ্টি তৈরি করতে হবে।

৩১। নেপাল- জনাব জে. লিয়াঃ
এই মানবিক সমস্যা এই অঞ্চলের একটি প্রধান দ্বন্দ্ব রূপে বপিত হয়েছে । অতএব, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ছিল । আন্তর্জাতিক সহায়তা, যদিও অভূতপূর্ব, স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত ছিল । স্পষ্টতই আরো উদার সহায়তার প্রয়োজন ছিল । সমস্যাটির একমাত্র সমাধান উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের জন্য রাখা এবং সেইসাথে সাধারণ পরিষদ তাদের শর্ত মঞ্জুরের শর্তগুলির জন্য আপীল করতে হবে । কোনও আপিল ততক্ষণ না কার্যকর হবে যতক্ষণ এটা দলগুলি মনোযোগ সহকারে বিবেচনা করে ।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!