You dont have javascript enabled! Please enable it!
       শিরোনাম      সূত্র     তারিখ
জেনেভায় অনুষ্ঠিত “ইউ-এন-এইচ-সি-আর” এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ অক্টোবর,১৯৭১

“প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি, জেনেভায় অনুষ্ঠিত “ইউ-এন-এইচ-সি- আর” এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার”।
৪ অক্টোবর,১৯৭১

জনাব চেয়ারম্যান, ফ্রীডটজফ নানসেন আন্তর্জাতিক শরণার্থী নিয়ে কার্য সূচনার অর্ধশতাব্দীর পর এবং আমার কার্যালয়ে শরনার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য চ্যালেঞ্জিং টাস্ক চালু হওয়ারো বিশ বছর পরও, এটি আমার কাছে রিপোর্ট করার জন্য বেদনাদায়ক যে, বিস্বেরযে শরণার্থী অবস্থা রয়েছে বা যদি থেকে থাকে তা প্রতিনিয়ত ভয়ানক এবং ক্রমবর্ধমান বিস্ফোরোক রুপ ধারণ করেছে।বছরের পর বছর, আমরা আদর্শবাদী আশার সাথে বাস করছি যে ইউ-এন-এইচ-সি-আর এর মানবিক কাজগুলো শরণার্থী সমস্যার অবসান ঘটাবে। এটি লক্ষণীয় যে এই বছর আমাদের বিংশ শতাব্দীর বার্ষিকী পালনের সময়, বর্তমান ঘটনাগুলো আমাদেরকে কঠোর মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর কঠো্র এবং করুণ বাস্তবতা,যা আমাদের আশাপূরণ থেকে বহু দূরে। এই সংকটাপন্ন দশা উদ্বাস্তুদের বিশাল জনগোষ্ঠী অতীত ইতিহাস নয়; এটি একটি বর্তমান খুব অবশেষ ঘটমান বিষয়।
যদিও ইউএনএইচসিআর-এর মৌলিক কাঠামো একই রয়ে গিয়েছে, তবে বাস্তুহারা মানুষদের নিয়ে সমস্যাটি ব্যাপকভাবে এবং আরো ভিন্নমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।বাস্তুচ্যুত মানুষের অবস্থার পরিবর্তিত প্রকৃতির ফলাফল স্বরুপ, ক্রমবর্ধমান সমাবেশে আমাকে কর্তব্য পালনে বলা হয় যখন এর মূল আদেশপত্র অভিব্যক্ত হওয়ার পূর্বাভাস ছিল না।ইউএনএইচসিআর এর “গুড অফিস” ভূমিকা ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক উপাখ্যান এই বিবর্তনের।
সংগ্রাম করার মাধ্যমে শরণার্থী সমস্যাগুলোর দ্রুত সময়াধান করার প্রচেষ্টায়, ইউএনএইচসিআর নিঃসন্দেহে রাজ্যের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে অবদান রাখে।একটি পরিস্থিতি যত জটিল এবং রাজনৈতিক ক্ষীণসুর দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, আমাদের ঠিক তত বেশী আমাদের কর্মক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে এবং আমাদের পদ্ধতিতে কূটনৈতিক হতে হবে।যেখানে শরণার্থীদের অবস্থা নিরীক্ষণ একটি দেশের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের কোন প্রকার প্রচেষ্টা ব্যতিরাকা উচিত নয় মানুষের দুঃক্ষ-দুর্দশা লাঘবের জন্য।

যদিও উৎসাহের সাথে স্মরণ করা যায় যে, নাইজেরিয়ার শিশু প্রত্যাবর্তন বা সাধারণ কর্মকান্ডগুলো আফ্রিকাসহ পৃথিবীর আরো বিভিন্ন অংশের দূর্বল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দ্বয়ীয়ে হয়েছিল,তবুও এটি ভীতিকর ও দুঃক্ষজনক যে এই তথাকথিত সাফল্যগুলো অভিনব চ্যালেঞ্জের দ্বারা নিঃগৃহীত হয়েছে, যা এই বছর আন্তর্জাতিক সম্প্রদ্বায়ের মত সবার জন্য উদ্বেগজনক।আমি নিশ্চিত যে, এটি আমাকেও আচ্ছন্ন করেছে যখন আমি চিন্তা করেছি যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত ও তার প্রতিবেশী রাজ্যে স্থানান্তরের মাধ্যমে যে ভয়ংকর সমস্যার সৃষ্টি হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল সেক্রেটারী জেনারেল ইউএনের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়েছিলেন যেন এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের দূর্ভোগ কমানো যায় এবং ভারতীয় অর্থনীতির উপর সৃষ্ট চাপ লাঘব করা যায়।পূর্ব পাকিস্তানে গত মার্চের কর্মসূচীর পর, ভারত সরকার নিজ দেশে যায়।পূর্ব পাকিস্তানীদের জনস্রোতের এক সংকটজনক পরিশ্তিতির সম্মুখীন হয়য় যা প্রাক্কালে তাদের উপস্থিতি অনিবার্যভাবে তার মধ্যে বহন করে।২৬ এবং ২৭ এপ্রিল বার্নে ইউ-থান্টের সভাপতিত্বে এই অনুরোধটি জাতিসংঘের এজেন্সি এবং প্রশাসনিক কমিটি সভায় সকল প্রধানদের নজরে আনা হয়। বৈঠকটির সময় এটি অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল যে, এই বিশাল সমস্যাটির প্রয়োজন ইউনাইটেড নেশনস সিস্টেমের সব সদস্যদের একটি সংশ্লিষ্ট এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা।খাদ্য, আশ্রয়স্থল বা চিকিৎসা
সেবার মত নানাবিধ এবং বিপুল প্রকৃতির তাৎক্ষনিক ত্রাণ ব্যাবস্থার চাহিদা এত বেশি ছিল যে, শুধুমাত্র ইউএনএইচসিআর
এর একার পক্ষে তার আর্থিক বা কারিগরি সাধ্যের অনেক খানি বাইরে ছিল।অতএব, সেক্রেটারী জেনারেল কোন প্রকার বিলম্ব ছাড়াই একটি প্রয়োজনীয় সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করলেন। তাঁর সিদ্ধান্ত ভারতের সরকারের চিন্তাভাবনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল
যা তার অনুরোধে, সমগ্র জাতিসংঘের সংস্থার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে।সকল কার্যনির্বাহী প্রধানের সাথে আলোচনার পর সেক্রেটারী জেনারেল ২৯ এপ্রিল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,শরণার্থীদের হাইকমিশনার কেন্দ্র বিন্দুতে থেকে ইউএন প্রাপ্ত সহযোগীদের সমন্বয় সাধন করবেন।তখন থেকে ক্রমবর্ধমান বিশাল সংখ্যক শরণার্থীরা বহু ত্যাগ স্বীকার করে আসছে ভারত ও তার প্রশাসনের উপর এবং আরো অনেক কিছু এখনো আসা বাকি।

অবিলম্বে এই অতিরিক্ত ফাংশন ধরে রাখার পরে, ভারতে আমি ডেপুটি হাই কমিশনারের নেতৃত্বে তিন জ্যেষ্ঠ কর্মী সদস্যের একটি দল পাঠালাম তদন্ত এবং পরিস্থিতির মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে।সরকারের সহজলভ্যতার জন্য এই মিশনের প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল।জড়িত থাকা প্রধান দুইটি দেশের, বলা যায় ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের অবস্থা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শুরু থেকেই তাদের মতে দুইটি বিষয়ের উপর ইউনাইটেদ ন্যাশনের কার্‍্যসমূহের প্রাধান্য দেয়া উচিতঃ
প্রথমত, ভারতে উদ্বাস্তুদের জন্য তাত্ক্ষণিক ত্রাণ ব্যবস্থা এবং যখনই সম্ভব তাদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের প্রচার ঘটানো, যা একমাত্র সাধারণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান হিসেবে সম্মত হয়। ফলস্বরূপ, 1971 সালের মে 19, সচিব-মহাপরিচালক
পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের সাহায্যের জন্য একটি আপিল উত্থাপন করেন।তাদের দুর্দশার প্রতি গভীর উদ্বেগের প্রকাশ ঘটানোর সময় ইউ-থান্ট এই আশা ব্যক্ত করেন যে,এই শরনার্থীরাই হবে “প্রথম স্বেচ্ছায় পূনর্বাসিত”।আমি বুঝলাম, “এইরকম প্রত্যাবর্তন মুলতবী রাখলে, জরুরী ভাবে বিশাল বাহ্যিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে” এবং আবেদন করলাম সরকার, আন্তঃসরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে, এছাড়াও অনেক নিজস্ব উৎসের কাছে।যাতে তারা আমাদের জরূরী প্রয়োজন মেটেতে সাহায্য করে।

আমি সক্রিয়ভাবে এই আপীল অনুসরণ করেছি এবং নিজেকে ধন্য মনে করছি এটি ব্যক্ত করতে যে,ভারতের চাহিদা অনুযায়ী তা অপর্যাপ্ত হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল উদার।আমি নিজেকে এই সুযোগে কাজে লাগাবো আমার কৃতজ্ঞতা এবং সমাদর জানানোর জন্য সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে, যারা সার্বক্ষনিকভাবে দ্রুত টাকা দিয়ে এবং দয়াবান হয়ে অবদান রেখেছে।বিদেশী সংস্থাগুলোর শরণার্থী সমস্যার ক্ষেত্রে সাড়া দেয়ার বিষয়টি যেখানে নগদ এবং তেমনিভাবে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার দ্বয়ীয়ে সাহায্য করা হয় অভূতপূর্ব বিশালতার যে নজির দেয় তা বিশেষভাবে লক্ষনীয়।কিন্তু আমি এটাও বলব আরো বেশী গুরুত্ব আরোপ করা এখনো প্রয়োজন।

কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকৃত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য,অবিলম্বে দায়িত্ব গ্রহনের পর আমি জেনেভাতে একটি স্থায়ী আন্ত-এজেন্সি পরামর্শদাতা ইউনিট স্থাপন করার দায়িত্ব পালন করেছি।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!