You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা এবং তাদের প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ করার জন্য গঠিত উপসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিষ্টস এর প্রতিনিধি মিঃ জন সালজবার্গের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৬ আগস্ট, ১৯৭১

ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এর প্রতিনিধি John SALZBERG র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও বৈষম্য প্রতিরোধে গঠিত সাব-কমিশনে বিবৃতি, তারিখ আগস্ট ১৬ আগস্ট, ১৯৭১
১৬ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে নিচের বিবৃতি ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এর প্রতিনিধি John SALZBERG দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও বৈষম্য প্রতিরোধে গঠিত জাতিসংঘের সাব-কমিশনে । সাব-কমিশন নিউইয়র্কে ইউ এন সদর দপ্তরে মিটিং করে। বিবৃতি দেয়া হয়েছে ২২টি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে যাদের জাতিসংঘের কনসাল্টিভ স্ট্যাটাস রয়েছে (জাতিসংঘ ডকুমেন্ট নং ই / সিএন. 4 সাব. 2 / এনজিও, 46 জুলাই ২৩, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ), পূর্ব পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বিবেচনা করতে সাব-কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জনাব চেয়ারম্যান, আমি নথিটির সাথে যেটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে জাতিসংঘের কনসাল্টিভ স্ট্যাটাস রয়েছে এমন বাইশ আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা দ্বারা উপ-কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার এই সুযোগ গ্রহণ করতে চাই (ডকুমেন্ট E / CN.4 / SUB.2 / এনজিও 46)। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনগুলোর এই ডকুমেন্ট সারা বিশ্বের ধর্মীয়, আইনগত, শিক্ষা, নাগরিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পর্কিত। আমার নিজের প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস বিশ্বের সব অংশে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, সম্মান এবং আইনের শাসন দেখতে চায় এবং এটির ন্যাশনাল সেকশন রয়েছে এবং ৬০টির বেশি দেশে বিভিন্ন গ্রুপের সাথে জড়িত।
বেসরকারি সংগঠন বিবৃতির অধিকাংশ বিষয় জরুরী এবং উদ্বেগের ব্যাপার: পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনা যা রিপোর্ট মতে সম্ভবত ২00,000 ব্যক্তির মৃত্যু, অগণিত ঘরবাড়ি ধ্বংস ও গ্রামে গণহত্যা এবং আরো ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু সৃষ্টি করে। মহাসচিব “মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক একটি পর্ব ” বলে উল্লেখ করেন। গত সপ্তাহেই মহাসচিব ত্রাণ সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিবৃত দেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক পুনর্মিলনের অগ্রগতির অভাব এবং এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আইন, শাসন ও সরকারি প্রশাসন বাধাগ্রস্ত হতেই আছে ,এমন এক অবস্থা যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলির ব্যাধিযুক্ত বৃত্ত সংশ্লিষ্ট কর্ত্রিপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অমানবিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রচেষ্টাকে হতাশ করে দিচ্ছে, এই মানবঘটিত ট্রাজেডির প্রভাব আরো বড় পরিসর পর্যন্ত যাবে। সৃষ্ট সহিংসতাকে উপমহাদেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত গ্রুপ গুলোর সাথে সম্পর্ক এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক আরো জটিল করে তুলেছে (জাতিসংঘ প্রেসরিলিজ, SG/SM 15162, আগস্ট ১৯৭১)
মহাসচিব উপসংহারে বলেন, “অতীতে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থা ছিল পর্যবেক্ষকের, অবনতি দেখা এবং আশা প্রকাশ করা যে ত্রাণ কর্মসূচী, মানবিক প্রচেষ্টা এবং মানুষের ভাল উদ্দেশ্য মানব দুর্বিপাক এবং সম্ভাব্য দুর্যোগ পরাহত করবে। আমি গভীরভাবে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন শুধুমাত্র মানবিক অর্থে না, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে এবং এর ফলাফল জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কাযযাবলির একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবেও। এটা আমার মনে হচ্ছে যে বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতি, যেখানে মানবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা এমনভাবে মিশেছে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা কঠিন, এটি একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে যা পূরণ করা জাতিসংঘের জন্য আবশ্যক। এই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। সংগঠন এখন এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, এর নতুন আবরণ এবং নতুন শক্তি দরকার হয় ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায়।“
কীভাবে বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রতিরোধ কমিটি মহাসচিব এর জরুরী আবেদনের জবাব দিতে পারে? মহাসচিব পরিস্থিতির মানবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ করেন। আমি বিশ্বাস করি না যে এই সমস্যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান ছাড়া সফলভাবে সমাধান করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং গ্রুপ দ্বারা জাতিসংঘে প্রেরিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যাচাই করে দেখার জন্য এবং যোগাযোগের নিয়মাবলীর খসড়া তৈরীর জন্য একটি কর্মশীল গ্রুপ তৈরির জন্য সাব-কমিশনের প্রশংসা করা হয়। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ জাতিসংঘের কর্মপন্থার একটি বড় ত্রুটি যেটি জন্মলগ্ন থেকেই মানবাধিকার রক্ষার বাধা ছিল, ভবিষ্যত নাগরিকগণ তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে পিটিশনের মাধ্যমে যৌক্তিক ক্ষোভ প্রকাশ করার অধিকার পেল। যাইহোক যোগাযোগের এই কর্মপন্থা ১৯৭২ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত সাব-কমিশনের পরবর্তী সেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করবে না। পূর্ব পাকিস্তানের চরম পরিস্থিতি যা জেনারেল সেক্রেটারির বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, এটি নিয়ে সাব কমিশন এই সেশনেই কাজ শুরু করবে।
সাব-কমিশন এই অধিবেশনে মানবাধিকার কমিশন এবং অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করবে। মানবাধিকার কমিশন রেজল্যুশন 8 (Xxiii) অনুযায়ী ১৬ মার্চ ১৯৬৭ তারিখে উপ-কমিশনকে আমন্ত্রন জানায়, কমিশনের যে কোনো পরিস্থিতি যা এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে কোন দেশে মৌলিক স্বাধীনতা জাতিগত বৈষম্য, পৃথকীকরণ এবং জাতিবিদ্বেষ নীতি সহ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা গোচরে এসেছে, ঔপনিবেশিক ও অন্যান্য বিশেষ নির্ভরশীল এলাকার রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়। একই সমাধানে, কমিশন সাব-কমিশনকে এরকম একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করার রিকমেন্ডেশন করেছে, যেখানে পাওয়া যেতে পারে এরকম সকল সোর্স থেকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের রিপোর্ট থাকবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে 1235 (XLII) ধারায় ৬ জুন ১৯৬৭ তারিখে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয় এবং কমিশনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি প্রকাশ করতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করতে ও সুপারিশ সহকারে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাছে প্রতিবেদন করার অনুমোদন দেয়।

পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সমর্থনে কি তথ্য আছে? সাব-কমিশন সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তি দ্বারা ইউ এন এ পাঠানো অভিযোগের তথ্যাবলীর এক্সেস আছে। সদস্যদের কাছে সেই সব সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে এক্সেস ছিল যারা স্বচক্ষে নৃশংসতা দেখেছে অথবা নৃশংসতা স্বচক্ষে দেখেছে এরকম লোকের সাথে কথা বলেছে, বেসরকারি পাশাপাশি আন্তঃ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে এরূপ পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে, অবশেষে পাকিস্তান সরকার মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। তথ্যগুলোর উৎসগুলোর সবগুলো পারবে না এমনকি অধিকাংশই আদালতে গ্রহনযোগ্য হবে না কিন্তু সাব-কমিশন একটি আদালত নয় কিংবা এটা পরিস্থিতির উপর একটি চূড়ান্ত রায় তৈরীর জন্য দায়ী নয়। সাব-কমিশন শুধুমাত্র একটি পরিস্থিতির পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করতে অনুমোদিত। স্পষ্টত সেখানে উপ-কমিশনের পরিস্থিতি তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা জন্য যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
মানবাধিকার লঙ্ঘন যা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটেছে সেগুলো কি এবং এই সাব-কমিশন সদস্যদের কোন অভিযোগ বিবেচনা করা উচিত? প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে নিম্নলিখিত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, হত্যা ও নির্যাতনের, নারী ও শিশু, সশস্ত্র সংঘাত, নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি, ধর্মীয় বৈষম্য, গ্রেফতার ও আটক, নির্বিচারে সম্পত্তি বঞ্চনা, বক্তৃতা, প্রেস ও সমাবেশ, রাজনৈতিক অধিকার দমন এবং দেশান্তর হতে বাধা দেয়া।
পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক একটি মিশন দ্বারা একটি রিপোর্ট, যার উদ্ধৃতাংশে, নিউ ইয়র্ক টাইমস এর জুলাই ১৩তম সংস্করণে বেসামরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, যে যশোর শহরে জনসংখ্যা ৮0,000 থেকে নেমে ছিল ২0,000/ ১৫,000 এ। বিশ হাজার লোক নিহত হয়েছে. প্রতিবেদনে বলেন যে, “সেনাবাহিনী জনসাধারণকে ভীত করে তুলেছে, বিশেষ করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের সন্দেহভাজন সদস্যদের নিশানা করেছে।“
আরেকটি প্রামাণিক প্রতিবেদন লন্ডনের সানডে টাইমসে জনাব এন্থনি মাসকারেনহাস দ্বারা, ১৩ জুন, ১৯৭১ তারিখে উপস্থাপন করা হয়। জনাব মাসকারেনহাস আট সাংবাদিকদের একজন ছিলেন যিনি পাকিস্তানি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উড়ে সরাসরি এলাকায় কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন। জনাব মাসকারেনহাস ১৯৪৭ সালে দেশ প্রতিষ্ঠার পরই পাকিস্তানের নাগরিক হয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের একজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক হয়েছেন, করাচির মর্নিং নিউজ এর সহকারী সম্পাদক থাকাকালে পূর্ব পাকিস্তানে তার ট্রিপ এর বর্ননা তিনি লিখেছিলেন। সানডে টাইমস পূর্ব পাকিস্তানের একটি অবস্থানে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে তার অ্যাকাউন্টের সত্যবাদিতা খতিয়ে দেখে যে তার সাথে কোন কূটনৈতিক সূত্র ছিল কিনা। আমি মাসকারেনহাস এর রিপোর্ট যা তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অমানবিক কাজ পরিলক্ষিত করেছেন তা থেকে উদ্ধৃত করতে চাই।
“ছয় দিনে আমি কুমিল্লার ৯ম ডিভিশনের সদর দপ্তর এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করে আমি হত্যাকান্ড অতি নিকটে থেকে দেখেছি।
আমি গ্রামে গ্রামে এবং দ্বারে দ্বারে হিন্দুদের শিকার করতে দেখেছি, চট করে গুলির পর একটি দ্রুত ছোট বাহু পরিদর্শন করে দেখা তাদের খৎনা আছে কিনা। আমি কুমিল্লার সার্কিট বাড়ির সীমানায় মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা পুরুষের চিৎকার শুনেছি (সিভিল প্রশাসনিক সদর দপ্তর)। আমি ট্রাকভর্তি টার্গেট করা মানুষ ও তাদের সাহায্য করতে চাওয়া হৃদয়বান মানুষ দেখেছি “নিষ্পত্তির জন্য”। আমি “মিশন হত্যা ও পুড়ানো” দেখেছি, আর্মি বিদ্রোহীদের পরিষ্কার করার পর শহরে ও গ্রামে সুসংগঠিত হত্যাসাধন ও লুন্ঠন করেছে।
আমি “শাস্তিমূলক ব্যবস্থা” হিসেবে পুরো গ্রাম ধ্বংস হতে দেখেছি এবং রাতে অফিসারদের মেসে আমি সাহসী এবং সম্মানিত লোকদের সদম্ভে দিনের হত্যাকান্ডের বর্ননা দিতে শুনেছি।
“আপনি কত পেতে পারেন?”
“উত্তরগুলো আমার স্মৃতিকে অসাড় করে দিয়েছে।”

জনাব মাসকারেনহাস, সেইসাথে অন্য সাংবাদিকরা হিন্দু জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং অনুষদ ও আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যার নীতি অনুসরণ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেছে । সম্প্রতি চৌদ্দ কূটনীতিক ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পদত্যাগ করেছে এবং পাকিস্তান মিশন জাতিসংঘে দাবি করেছে যে তাদের সরকার “সভ্য আচরণের প্রাথমিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করেছে।” অন্য অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতানুসারে উপ-কমিশন যা ইঙ্গিত দেয় যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটছে।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারীকৃত শ্বেতপত্র যে অভিযোগ করেছে তা হল, “ ১লা মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, পরিবহন এবং যোগাযোগ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধারণাতীত ক্ষতি ঘটাচ্ছে, এ ছাড়াও লক্ষ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জীবনহানি ঘটিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের সক্রিয় সহায়তায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অবর্ননীয় নৃশংসতা সংঘটিত করছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভীতিপ্রদর্শন একটি প্রচারাভিযান চলে। আওয়ামী লীগ জঙ্গিরা প্রদেশের প্রায় প্রতিটি শহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা আগ্নেয় অস্ত্রের দোকান অভিযান চালিয়ে লুট করেছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিজ থেকে অ্যাসিড, রাসায়নিক ও বিস্ফোরক লুটপাট করা হয়। বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকার ও যোগাযোগ কেন্দ্রসহ সরকারের সম্পত্তির উপর আক্রমন প্রত্যাহিকসূচী হয়ে ওঠে। ট্রেন লাইনচ্যুত করা হয় এবং যাত্রীদের টেনে বাইরে আনা হয় এবং সহিংস দাঙ্গায় কেউ কেউ নিহত হয়।
আওয়ামী লীগের মারকুটে জওয়ানরা হামলা চালায় এবং পৌর এলকায় শত শত লোক একসঙ্গে তাদের বিরোধীদের সমগ্র কলোনি পুড়িয়ে ফেলে। “আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব রিপোর্ট ও অভিযোগ সাব-কমিশন দ্বারা তদন্ত করা উচিত।
কিছু ব্যাক্তি আছে যারা এই সাব-কমিশনের ব্যাপারে তর্ক করতে পারে যে এই অংশে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি- যা হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।
যাইহোক, এমনকি পাকিস্তান সরকারও দাবি করেছে যে সরকারি বাহিনী দ্বারা এই ক্ষেত্রে ১০০০০০ জন নিহত হয়। যারা এই পরিস্থিতিতে উপ-কমিশনের বিবেচনার বিরোধিতা করবে তারা বলবে মানবাধিকার অভ্যন্তরীন আইনগত বিষয় এবং সেইজন্য জাতিসংঘের এখতিয়ারের বাইরে বিষয়। সাধারণ অধিবেশন, যাইহোক, রেজোলিউশন 2144 (XXI) ২৬ অক্টোবর ১৯৬৬ তারিখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং মানবাধিকার কমিশনে “মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেখানেই ঘটতে পারে তা থামানোর জাতিসংঘের উপায় এবং ক্ষমতা উন্নত করার সামর্থ জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনা করতে” এই অধিবেশনেই সাব-কমিশন পরিস্থিতিতে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ করে তার ম্যান্ডেট নিয়ে একত্রে মানবাধিকার পর্যালোচনার জন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।
জাতিসংঘ এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করেছে যে যেকোন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনা প্রকাশ পেলে তা একচেটিয়াভাবে সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু জাতিসংঘের এখতিয়ারের মধ্যেও পড়ে।
আমরা বিশ্বাস করি যে, পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, এই পরিস্থিতিতে সাব-কমিশনকে তার কর্তৃত্বকে ব্যবহার করা প্রয়োজন। সাব-কমিশনের পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত অথবা এটা মানবাধিকার কমিশনের নিকট সুপারিশ করা উচিত যে একটি পর্যবেক্ষক দল স্থাপন করা দরকার, জনাব মোহাম্মদ খলিফা ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক থেকে আসা উপ-কমিশনের বিশিষ্ট সদস্য, এই অধিবেশনে একটি বাক্যবাগীশ এবং প্রাণবন্ত বিবৃতি দেন যা সাব-কমিশন সদস্যদের এই প্রশ্ন মনে রাখার বিবেচনা করতে বলেন। মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন এই এজেন্ডার উপর মন্তব্য করতে যেয়ে জনাব খলিফা বলেছিলেন যে, ” উপ-কমিশন কে তাদের মৌলিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, যা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং বৈষম্য প্রতিরোধ। ব্যক্তির নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদার নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ব্যক্তিকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তবুও তারা কর্তৃপক্ষের মুখে অরক্ষিত ছিল এবং কখনো কখনো তাদের একমাত্র আশ্রয় মানবজাতির বিবেক। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি হস্তক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়, কিন্তু আবেদনকারীদের পক্ষে তাদের কথা জাতিসংঘ শুনতে পারে এবং তাদের নৈতিক সমর্থন দিতে পারে, শেষ বিশ্লেষণটি বিশ্বের মতামত জানানো এবং অমানবিক বৈষম্যমূলক ধর্মীয় কুসংস্কার বা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের জাতির উপর ভিত্তি করে নীতি গ্রহণ করার আগে সরকারগুলোকে দ্বিধায় ফেলার একমাত্র উপায় হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে নির্দিষ্ট ঘটনার উপর তার মতামত প্রকাশ করেছে। ১৫ এপ্রিল আমাদের টেলিগ্রামে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস বিবৃত করেন যে ” সামরিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের চেষ্টাতে অনুতাপ প্রকাশ করাটাই হতে পারে স্বাভাবিক বেসামরিক আদালতের কাজ শুরু করার পূর্বে আন্তর্জাতিক মতামত সন্তুষ্ট করতে পারে যে আইনের মেনে চলা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস সবসময় অভিযোগ করে আসছে যে রাজনৈতিক অপরাধের জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের আঘাতের চেষ্টায় বিশেষ ট্রাইবুনাল এর প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুমোদন হয়েছে। স্পেশাল ট্রাইবুনাল করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার থেকে সহজ কিছু নাই যেখানে বৈধ বিচারক দ্বারা স্বাধীনতা এবং আইনকে রক্ষা করা হয় না।
শেখ মুজিবুর রহমান বা অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, দেশের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত বেসামরিক আদালতে না আনার কোন কারণ নাই। “
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস “পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা ‘ও অন্যান্য অপরাধের জন্য একটি গোপন সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচারের চেষ্টার পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস জরুরিভাবে পাকিস্তান সরকারকে আবেদন জানায় শেখ রহমানের সামরিক বিচার বন্ধ করতে এবং এই সাব-কমিশনকে বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে এটি যেন একটি অনুরূপ আবেদন পাঠায়। জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যে এই বিচারের ব্যাপারে এবং এ এলাকায় শান্তির জন্য তার প্রভাব প্রকাশ করে সসম্মানে তার নিজের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এবং অন্যান্য একুশটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন যারা এই উপ-কমিশনের সামনে বিবৃতিসহ একসাথে জরুরিভাবে আবেদন করেছিল এই অংশ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সন্মান প্রদর্শন প্রশ্নে এই অধিবেশনে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিবে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!