You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.16 | ইকনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে নিউজল্যান্ড প্রতিনিধি মিঃ জে. ভি. স্কটের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ইকনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে নিউজল্যান্ড প্রতিনিধি মিঃ জে. ভি. স্কটের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৬ জুলাই, ১৯৭১

জুলাই ১, ১৯৭১ এ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের প্রথম অধিবেশনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি মিস্টার জে. স্কটের বিবৃতি

আমরা আগ্রহ এবং মূল্যায়নের সাথে ভারতে অবস্থানরত পুর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে হাইকমিশনারের ভূমিকার বিস্তৃত বিবৃতি শুনেছি ।

আমরা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি তার কাজের বিশালতার বর্ননা দ্বারা এবং সঙ্গে প্রায় সাত লাখ শরণার্থীর আকস্মিক ক্রমাগত আগমনে ভারত সরকারের উপর পতিত প্রচণ্ড বোঝার বর্ননা দ্বারা। আমরা আবারও উদ্বাস্তুদের পক্ষ হতে তার হস্তক্ষেপসমুহের আবশ্যকতা স্বীকার করছি এবং এই অতুলনীয় মানবিক ট্র্যাজেডির কঠিন চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ভারতীয় কর্তৃপক্ষসমূহকে, বেসরকারি এবং আন্তঃ সরকারি সংগঠনসমুহকে এবং বেসরকারী নাগরিকদের প্রতি।

আমরা হাইকমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞ ত্রাণ কার্যক্রমের এমন একটি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত চিত্র প্রদানের জন্য, যার জন্য তিনি কেন্দ্রবিন্দুতে এবং কিছু দিন আগে আমার প্রতিনিধিদলের করা জিজ্ঞাসাসমুহে সাড়া দেয়ার জন্য।আমরা আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় বিষয়ে তার বক্তব্য থেকে আস্থা গ্রহণ করতে পারি।আমরা আশ্বাস বোধ করতে পারি সম্পদ ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা সঙ্গে তার আপোষ না করাতে। তার ভাষ্যমতে এ এমন এক গুরুতর মানবিক দুর্দশার পরিস্থিতি যা লাখ লাখ চরম নি:স্ব এবং শারীরিক অবসাদগ্রস্থ মানুষের অপ্রতিরোধ্য আগমনের দ্বারা নির্মিত।বিশেষভাবে আমরা জাতিসংঘের সংস্থাসমুহের মধ্যে বিদ্যমান অকৃত্রিম সহযোগিতার বাতাবরণ এবং যৌথ উদ্যোগ বিষয়ে তার মন্তব্য শুনে আনন্দিত হয়েছিলাম।

যদিও ইতিমধ্যে অনেক কিছু সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু অনেক কিছুই এখনও করতে হবে।

আমরা এই ক্রমবর্ধমান মানব প্রবাহের পরিবর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বাসস্থান এবং আশ্রয়, পরিবহন, খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত সহযোগিতার প্রয়োজনের সম্মুখীন। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন, অপুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে খুব দ্রুত মহামারি এবং সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব স্পষ্ট। এই জরুরী অবস্থা মেটাতে ভারত সরকারের সাহায্যার্থে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, এফ এ ও, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বেসরকারী সংস্থাসমূহের কার্যক্রম প্রশংসনীয়।

হাইকমিশনারের বক্তব্য মানুষের দুর্দশার উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে। জরুরি সহায়তার প্রয়োজন রয়ে গেছে, যদি তা অপর্যাপ্ত থেকে যায় তবে তা খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া নিশ্চিত । ভারতীও সীমান্ত জুড়ে উদ্বাস্তু প্রবাহ অব্যাহত সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের প্রয়োজনের পরিমাণ বেড়েছে।এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের চোখ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেনা।

নিঃসন্দেহে যে মানব দুর্দশা সৃষ্ট হয়েছে তা দূর করতে সাহায্য সঞ্চালনের করার জন্য হাইকমিশনারের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তিনি যা বলেছেন তা একটি আশঙ্কাময় পরিস্থিতিতে অন্যদের পক্ষ থেকে সমবেদনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে। তার প্রভাব ওপর পক্ষে তীব্র অনুভূতি তৈরি করা সমস্যাসমূহ মোকাবেলার এক পক্ষকে নিয়ন্ত্রন করছে। আমরা আশা করি যে কাউন্সিলের অনুপ্রেরণায় হাইকমিশনারের প্রচেষ্টার একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ উন্নীত হবে যেখানে উদ্বাস্তু সমস্যার কারনসমুহ যা ইতোপুর্বে সমাধান করা হয়নাই তা মোকাবিলা করা যেতে পারে।

আমি 8 জুলাই আমার সাধারণ বিতর্ক বক্তৃতায় বলি যে, ” কেন এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এটা এই কাউন্সিলে বিবেচনা করা ফলপ্রসূ হবে না, উদ্বাস্তুদের তাদের ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার আগে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক অবস্থার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করাও নয় । ইতিমধ্যে সৃষ্ট কঠিন পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন যেকোন কর্ম এড়ানোর প্রয়োজন সুস্পষ্ট। নিউজিল্যান্ড নিজেও ভারত বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমুহে জড়িত হতে চায় না।

তা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড, উদ্বাস্তু সংকট দ্বারা সৃষ্ট ভোগান্তি এবং জীবনের ক্ষতিতে গভীরভাবে পীড়িত এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সচেতন । আমাদের কাছে স্পস্ট মনে হয়, স্বস্তির জলবায়ু প্রতিষ্ঠা ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তানে নিতান্ত অপরিহার্য ত্রাণ অর্জন করা যেতে পারে যা বর্তমানে যারা ভারতে উদ্বাস্তু গ্রহণ করছেন তাদের ভয়কে প্রশমিত করবে। মানবিক নির্দেশনাসমূহ খাদ্য এবং আশ্রয় পর্যন্তই ক্ষান্ত হয়না এবং সেই পরিমণ্ডলে এখনও যথেষ্টই কাজ বাকী আছে। এটা হতভাগ্য উদ্বাস্তুদের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ এবং বিশেষভাবে তাদের স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরে যাবার অধিকার পর্যন্ত প্রসারিত যা তাদের একটি স্বাভাবিক জীবন এবং নাগরিক হিসেবে সমাজে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সহজ বার্তাটি একটি মানবিক উদ্বেগ, কোন সমাধানের পরিকল্পনা নয় যা কাউন্সিলের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভরশীল নয়, আমার প্রতিনিধিদলের আশা যা এই কাউন্সিলের আলোচনা থেকেই উত্থিত হবে।

হাইকমিশনার তার বক্তব্যের শেষের দিকে উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রেরণের আশু প্রয়োজনীয়তা থেকে তার গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় বিষয়সমুহ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবং আমি তা উদ্ধৃত করি।

“আমি এই সুবাদে উল্লেখ করেছি, যেহেতু উদ্বাস্তুগণ ভারতে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করতে পারবে না তাই ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার উপর জোর দিয়েছেন। আমি উদ্বাস্তুদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে পাকিস্তান সরকারের অবস্থানও উল্লেখ করেছি। আমি কাউন্সিলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমি শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন যে কোন উপায়ে সহজতর করার জন্য প্রস্তুত। যা প্রকৃতপক্ষে, একটি মানবিক লক্ষ্য যা আমাদের প্রচেষ্টার পথ প্রদর্শন করে। আমি শুধুমাত্র পরিস্থিতির জটিলতায় অত্যন্ত সচেতন। সর্বোপরি এমতাবস্থায় একটি আস্থাপুর্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে শরণার্থী নিজেই স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক হবে”।
আমরা স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার গুরুত্বপুর্ন অভিমতকে সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে সমর্থন করি।

এই মানবিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার হ্রাসের উপর নির্ভরশীল। আমরা উপলব্ধি করি যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আপোস ও সমঝোতার একটি পরিবেশ তৈরি করা বিশেষ কঠিন।

আমরা সবাই নির্দ্ধিধায় উপলব্ধি করে যে, শরণার্থী সঙ্কটের গোঁড়ার সমস্যাসমূহ সমাধান করা সহজ নয় এবং তা বিশেষভাবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৃষ্ট ঘটনাসমূহ দ্বারা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আমাদের কেউ সমাধানের প্রকৃতির উপর পরামর্শ দেয়ার অবস্থানে নেই। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে, যা করা যেতে পারে, দীর্ঘমেয়াদী নিষ্পত্তির জন্য আপোষ ও সমঝোতার একটি পরিবেশের তৈরির জন্য মনোযোগের দেয়ার দিকে ফোকাস করা যায়। সমস্যা আগে থেকেই অভূতপূর্ব মাত্রার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এটার সম্মুখীন না হলে তাদের এটা পরে করতে হবে যখন এর মাত্রা অনেক বড় এবং আরো গুরুতর হবে।

এই মৌলিক প্রয়োজন মাথায় রেখে আমি শরণার্থীদের জন্য হাই কমিশনারের প্রচেষ্টার বিশেষভাবে প্রশংসা করছি। আমি তাকে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে তার অব্যাহত প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে পারি ।