শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকনমিক এ্যান্ড সোশাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে যুগোশ্লাভ প্রতিনিধি মিঃ এল. মেঝব-এর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ জুলাই, ১৯৭১ |
১৬ জুলাই, ১৯৭১-এ ইকনমিক এ্যান্ড সোশাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে যুগোশ্লাভ প্রতিনিধি মিঃ এল. মেঝব-এর বিবৃতি
মি. চেয়ারম্যান
প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খান, হাই কমিশনার ফর রিফিউজি, তার চমৎকার ও বিস্তৃত বক্তব্যে কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন যাত বলা হয়েছে অনেক মিলিয়ন পাকিস্তানি উদ্বাস্তু ভারতে আছে এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তিনি যেসব কার্যকর সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেসব। HCR বর্ণনা দিয়েছে “একটি করুন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি যা অসংখ্য মানুষের জীবনে প্রভাব রাখছে।” সংক্ষিপ্ত সময়ে হঠাত অসংখ্য লোকের প্রবাহ বস্তুতঃ সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ৬ মিলিয়ন পেরিয়েছে এবং সম্ভবত দূর্ভাগ্যজনকভাবে আরো বাড়তে পারে। অভিযোজন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার পদক্ষেপসমূহের খড়চ বিশাল পরিমান এবং নিশ্চিতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতের প্রদেশসমূহ এই ব্যয় বহন করতে পারবে না। এই বিশাল পরিমান ব্যয় যা ভারত করতে বাধ্য হয়েছে, তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প ও অগ্রাধিকারের ক্ষতি করে এই ব্যয় স্বভাবতই এই দূর্ভাগা লোকদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। অধিকন্তু, তৃণ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কিছুতেই এই প্রবাহের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে না, অথবা তারা আন্দাজ করতে পারবে না যে এই ধরণের স্থানচ্যুতি তাদের নিম্নবিত্তদের জন্য এি সামাজিক সমস্যা তৈরি করবে। এবং যদি এই বস্তুগত ব্যয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্যে কিছুটা ক্ষতিপূরণ করা যায় তবুও প্রশ্ন থাকে সর্বোপরি এই জটিল সমস্যার মানবিক দিক মনে রেখেকিভাবে সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক ফলাফল সমাধান করা যাবে অথবা কমানো যাবে যেগুলো এই পরিস্থিতিতে অবশ্যম্ভাবী। এবং আমরা কি বলি এই মানুষদের দূর্ভাগ্য নিয়ে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু আছে, যারা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে না পারার অবস্থায় পড়েছে এবং যাদের জীবন ভয়ানক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিস্থিতির দ্বারা বিপদাপন্ন হয়েছে। এই কারণে, যুগোস্লাভ সরকার ও জনগণ, মানবিক বিবেচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে, ভারত উপমহাদেশে উন্মুক্ত হতে থাকা চরম উদ্বেগপূর্ণ নাটকের অনুভূতি ও যে অনিষ্টের কারণে লক্ষ লক্ষ পুরুষ, মহিলা ও শিশু দূর্দশায় পতিত হয়েছে তা লক্ষ্য রাখছে। আমরা অনেক আন্তর্জাতিক বক্তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত যে এমন একটি সমাধান বের করা বাধ্যতামূলক যার ফলে উদ্বাস্তুরা তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে, যেহেতু এটি এইসব মানুষের সমস্যার এবং একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী আগ্রহের সবচেয়ে স্বাভাবিক ও মানবিক পথ হবে।
যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসিপ ব্রোজ টিটো একই বিবেচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো বার্তায় উদ্বাস্তুদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যেহেতু হাইকমিশনার ফর রিফিউজি জাতিসংঘ পদ্ধতির সকল সংস্থা ও প্রোগ্রামের সহায়তা কার্য সমন্বয়ের কেন্দ্ররুপে কাজ করছে, সেহেতু আমরা আশা করি যে তিনি তার বিজ্ঞ অভিজ্ঞতা ও কর্তৃত্ব উদ্বাস্তুদের প্রকাশিত ইচ্ছা ও তাদের আগ্রহ প্রাথমিক বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পেতে ব্যবহার করবেন। ভারত ও পাকিস্তানের দ্বায়িত্ববান লোকদের সাথে তার যোগাযোগ ও কথাবার্তা এই আশা করা ন্যায় করে যে এই সমস্যা, যার ভার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর বর্তায় এবং এর সাথে জড়িত প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে বোঝা হয়, শেষ পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে সমাধান হবে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যারা তাদের ক্ষমতার মধ্যে উদ্বাস্তুদের তাদের ঘরে ফেরাতে সক্ষম করতে চায় তাদের দ্বায়িত্ব। এই কার্যের সফল প্রয়োগ একই সঙ্গে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি বুঝায় যা আরও উদ্বাস্তু প্রবাহ বন্ধ ও তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে।
এতে অংশ নিতে, যুগোস্লাভ সরকার তার সম্ভপর সীমায় উদ্বাস্তুদের জন্য সহায়তা বৃদ্ধির অনুমোদন করেছে। এইই সহায়তা ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজির মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছে। যুগোস্লাভ রেড ক্রস ও সহায়তা তোলার আবেদন ইস্যু করেছে যা পরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভারতের ভূমিতে উদ্বাস্তুদের সহায়তা করতে জাতিসংঘ পদ্ধতির সহায়তা সমন্বয়ে হাই কমিশনারকে যুগোস্লাভ সরকার প্রয়োজনীয় সমর্থন সহায়তা করতে প্রস্তুত। এই পথে হাইই কমিশন কর্তৃক গৃহীত অন্যান্য কার্যক্রমও আমরা অনুমোদন করি। আমরা তার বক্তব্যে গভীর অভিভূত যে পূর্ব পাকিস্তানের ত্রাণ কার্যক্রম “আমাদের সময়ের অন্যতম বড় ও কঠিন কার্যের” প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এই বড় ও জটিল কার্য সংগঠনে এইচসিআর ECOSOC এর অনুমোদন প্রাপ্য।
জাতিসংঘ পদ্ধতির সদস্য দেশসমূহ,বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের জাতিসংঘ মহাসচিব উ. থান্টের আবেদনের পক্ষে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এই আশা বজায় রাখে যে মানবিক কার্যক্রম সফলতায় শেষ হবে এবং এভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এই সম্পর্কে, আমরাও মহাসচিবের প্রতিনিধি মি. কিত্তানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, ত্রাণ কার্য সূচনায় তার অবদানের জন্য পরিষদে তার অসাধারণ প্রতিবেদনের জন্য।