You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার- এর সাংবাদিক সম্মেলনের রেকর্ড জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ২৩ জুন, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২৩শে জুন জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের হাইকমিশনার-এর শরণার্থী বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডঃ
নিচে বর্নিত রেকর্ডটি ১৯৭১ সালের ২৩শে জুন জাতিসংঘে প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান কর্তৃক আয়োজিত, আগা খানের ভারত ও পাকিস্তান মিশন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডঃ
একটি উদ্ভোধনী বক্তব্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেছেন যে, তিনি সংবাদ সম্মেলন কে স্বাগত জানিয়েছেন কারন শরণার্থী বিষয়ক যেকোন ধরনের প্রশ্নে গণমাধ্যমের সহায়তা কে অন্তর্ভূক্ত করা ছিলো সম্পূর্ণরূপে অপরিহার্য। কার্যকরী পরিত্রাণের জন্য সর্বসাধারণের মতামত বুঝতে পারা প্রয়োজনীয় ছিলো যা সরকারের ঔদার্যতা, স্বেচ্ছাসেবী দল ও সংস্থাগুলোর সুবিশাল নেটওয়ার্ককে প্রভাবিত করেছে।
পাকিস্তানি শরণার্থী বিষয়ক সমস্যাটি ছিলো বিশাল মাত্রায় এবং এটি ছিলো জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি গনমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কারন তিনি এই দুঃখজনক মানবীয় বিষয়ে জাতিসংঘ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কিত যেকোন ধরনের মতানৈক্য পরিহার করতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, মহাসচিবের নিকট ভারত সহযোগিতা প্রার্থণা করেছে। এই অনুরোধটি বার্ন (Berne) এ ACC আলোচনা করেছেন এবং তাকে জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে সকল প্রকার ত্রান সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। একটি ৩-সদস্য বিশিষ্ট মিশন ভারতে গিয়েছিলো একটি মূল্যায়ন করার জন্য। তারা ভারতের যেসব এলাকায় শরণার্থী রয়েছে সেসব এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ত্রান সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যক্তির কাছে রিপোর্ট করেন যা পরবর্তীতে তিনি মহাসচিবের কাছে জানান। নিযুক্ত সদস্যরা ভারত সরকারের কাছ থেকে ছয় মাসের জন্য প্রাথিমিক প্রয়োজনীয়বস্তুর একটি তালিকা পেয়েছিলেন যা শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান অন্তঃপ্রবাহের কথা চিন্তা করে এখন পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে এই সমস্যা সমাধানের কোন তাৎক্ষণিক প্রত্যাশা পাওয়া যায়নি।
ত্রাণ সংক্রান্ত সহযোগিতা সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের অধিক্রমণ এড়ানোর জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা্র অন্তর্ভূক্তিতে জেনেভায় একটি স্থায়ী দল গঠন করা হয়েছে। তিনি উললব্ধি করেছেন যে, জাতিসংঘের ইতিহাসে এই প্রথমবার এই মানবিক প্রকল্পে জড়িত সবাই একসঙ্গে এতো ঘনিষ্ট সমন্বয়ে কাছে করেছেন। তিনি অনুধাবন করেছেন এই বিষইয়টি ভারত সরকারের দ্বারা সমাদৃত হয়েছে এবং বিষয়টিকে দৃঢ়তা সহকারে আন্তর্জাতিক ত্রাণের সমন্বয়ে পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। শরণার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের সম্পদ ও প্রশাসনের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, ভারত দৃঢ়ভাবে জানান, এটি তাদের দায়িত্ব যা প্রাথমিকভাবে পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট। দিল্লীতে কেন্দ্রীয় ব্যক্তির প্রতিনিধি জনাব জেমিসন ভারত সরকার ও জাতিসংঘের সকল সহযোগী প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান স্মরণ করেছিলেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মে মাসে বলেছিলেন, সকল বিশ্বস্ত পাকিস্তানিরা পাকিস্তানে ফেরত যেতে পারবেন। এই বিবৃতির পেছনে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য জানার জন্য তিনি নিজেই পাকিস্তানে গিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।পাকিস্তান তাকে নিমন্ত্রণ জানায় এবং পাকিস্তানি সরকারের সাথে বিয়ষটির সারগর্ভ আলোচনা করেন। তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সাথেও সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তানি শরণার্থীরের ফেরত আসার বিষয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্তসমূহ করেন এবং কিভাবে এগুলো কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

তারপর তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন যেখানে তিনি পূর্ব পাকিস্তা্নি শাষকগোষ্ঠীকে দেখেছিলেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের দিকে গিয়ে কিছু অভ্যর্থনা কেন্দ্র দেখেছেন এবং মানুষের ফেরত যাওয়া এবং শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্ররনের ব্যপারে হাই কমিশনারের অবস্থান ও কার্যক্রম মূল্যায়ন করেছেন।
হাই কমিশনার ‘স্বেচ্ছায়” শব্দিটিতে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন তার অফিসের মোলিক কাজের মধ্যেই রয়েছে যে, কোন শরণার্থী এমন কোন দেশে ফেরত যাবেনা যেখানে সে আবদ্ধ অথবা যেখানে তার নিপীড়নের ভয় আছে। প্রত্যাবাসন হতে হবে মুক্ত এবং স্বেচ্ছায়। তিনি বলেন তিনি বিষয়টি তীব্রভাবে উপলব্ধি করেছেন যেভাবে ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উপলব্ধি করেছিলেন যে, শর্তসাপেক্ষে শরণার্থীদের যার যার নিজের দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুমতি দেওয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান বলেন, ভারত সরকার জোর দিয়ে বলেছে শরণার্থীরা ভারতে থাকতে পারবেনা। শুধুমাত্র সাময়িকভাবেই এই উদার মনোভবপূর্ণ সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, ভারতে তাদের পূনর্বাসনের কোন প্রশ্নই ছিলোনা এবং তাদের ভারতের নির্ধারিত অঞ্চলে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট সাধারণের মতো বিবেচনা করা হবেনা।
তিনি আরো বলেন, মানবিক দিকটিকে ভিত্তি করে পাকিসস্তানের সাথে তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের কার্যবিধি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করেছেন। এই বিষয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শাষকগোষ্টীর পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন।
তিনি বলছেন যে হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন তার পাইলটকে বলে তিনি বারংবার গমনপথ পরিবর্তন করিয়ে তিনি মূল প্ল্যানের বাইরে থাকা অঞ্চল গুলোও পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারটির গমনপথ কম উচ্চতায় ছিলো বিধায় তিনি খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পেয়েছিলেন যে কিভাবে মানুষ তাদের জমিতে শস্য বপন করছে এবং বাজারে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করছে। তিনি দেখতে পেয়েছেন যে এসকল অঞ্চলে ধীরে ধীরে জীবনমান স্বাভাবিক হচ্ছে। এছাড়াও তিনি বলেন, যেহেতু তিনি পাকিস্তান পুরোপুরি ঘুরে দেখেননি সেহেতু অন্যান্য অঞ্চলের সার্বিক অবস্থার কোন প্রকার সাক্ষ্য দিয়ে পারছেন না।
তিনি বলেছে, তিনি এমন সব গ্রামও দেখেছে যেখানে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর ও উত্ক্ষেপের চিহ্ন সুস্পষ্ট। তিনি সেখানে বড় পরিসরে সেনা মোতায়েনের অথবা কোন নির্দিষ্ট দিকে মানুষকে কেন্দ্রীকরণের কোন আলামত দেখেননি। তিনি যে হেলিকপ্টারে ভ্রমন করেছেন তার সর্বস্বত্ব পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর। এর উপস্থিতিতে গ্রামের মানুষজন ভেঙ্গে পড়েনি বরং তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাত নাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্ছারা হেলিকপ্টার দেখে হাত নাড়িয়ে তাদের উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে যা তারা যেকোন জায়গাতেই রবে।
এছাড়াও, পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্নরূপে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন বলে দাবি করতে পারছেন না জাতসংঘের হাইকমিশনার। তবে তিনি এইটুক বলতে পারেন যে যেকল অভ্যর্থনা কেন্দ্রে তিনি দেখে এসেছেন সেগুলো ছিলো নানাবিধ উপকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বেসামরিক কর্মীদ্বারা সঠিকভাবে পরিপূর্ণ এবং সেখানে প্রত্যাবাসনের সকল প্রস্তুতির জন্য একটি সঠিক অবকাঠামো বিধ্যমান বলেই তার ধারণা।
তাছাড়াও অভ্যর্থনা কেন্দ্র গুলো নির্মাণকালে, শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের আহবান করে পাকিস্তানী রাষ্ট্রপ্রধানের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য হলেও তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তা খুবএকটা কার্যকরী হয়নি। সব ধরনের শরনারথিদের ক্ষেত্রেই সে বলেছে যে, লোকেদের যেটা ফেরত এনেছে সেটা হলো রাজনৈতিক সমাধান। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে পাকিস্তানও এই বিষয়টিতে সহমত প্রকাশ করবে।
সে যা বলেছে, অবশ্যই তার ভিন্ন ব্যাখা ছিলো, মানে রাজনৈতিক সমাধান বলতে সে কি বুঝিয়েছে, সেটার অনেকগুলো মানে হতে পারে। এটা হতে হয়েছে এমন, যেটা ভবিৎষতে আত্নবিশ্বাস ও আস্থা যোগাবে এবং এটা ছিলো শরনার্থিদের নিজ দেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে প্রকৃত উদ্দীপনা। সে বলেছে যে, সে এটা স্পষ্ট করে বলেছে যখন পাকিস্থানে সে তার নিখাদ মানবিক ভূমিকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছিলো।
প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেছিলো, ভারতের সরকারের আমন্ত্রনে যে পাকিস্থান থেকে সরাসরি দিল্লী গমন করেছে। সেখানে সে আলোচনা করেছে, ত্রানের পুরো প্রশ্ন, আন্তজার্তিক গোষ্ঠি কর্তৃক আরোও সহায়তার প্রয়োজনীয়তা, জাতি সংঘের সহায়তা, এবং নগদ প্রদান ও আন্তরিক হওয়াসহ এই ধরনের সহায়তার ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রাখার সহযোগীতার ব্যাপারে বিশদ আলোচনা সে করেছে।
সে বলেছিলো, তাঁর মিশন পুরোপুরিভাবে মানবিক এবং রাজনৈতিক কোন কিছুর সাথে সংযুক্ত নয়, এবং অবশ্যই উপড়ে ফেলাটা একটা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলো। সে বলেছে, সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপারে সে দায়ী নয়, কেননা ভারতের সংবাদ মাধ্যম খুবই স্বাধীন এবং সক্রিয়। সে তাঁর ব্যাপারে সংবাদ পত্রের শিরোনাম দেখেছে যে, সে নাকি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে এবং তার লক্ষ্য ছিলো সমস্যার মধ্যস্থতা করা। সে বলেছে যে, সে জানতো না যে তার মধ্যস্থতা করার কথা ছিলো এবং সে পাকিস্থান – পূর্ব পাকিস্থান কিংবা পাকিস্থান-ভারতের মধ্যে কোন ধরনের মধ্যস্থতা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি।
সে বলেছে যে, ভারতের শরনার্থী পরিস্থিতি নিয়ে সে মারাত্নক রকমের ব্যথিত। সে কখনই এই ধরনের কোন উচ্চতা দেখেনি, যেটা এমন একটা জাগায় ঘটছে যেটা ইতোমধ্যেই অনুভব করা গেছে সম্ভাব্য সবচাইতে খারাপ ধরনের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিস্ফোরণ। সেখানে ক্রমাগত ত্রানের প্রয়োজনীয়তা ছিলো, এবং সেখানে ক্রমাগত কলেরা, আলসার আর ম্যালেরিয়ার হুমকি ছিলো। অবশ্যই ত্রান নির্ভর করেছে জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ঔদার্যের উপরে। জাতিসংঘ একটি চমৎকার কার্যকর যন্ত্র হতে পারতো, কিন্তু তারা মালামাল সরবরাহ করতে পারতো না, যদি না তা তাদেরকে দেয়া হতো।

সেক্রেটারি জেনারেলের আপিলের প্রায় পর পরই সে বল্ল যে, সে ফলাফলগুলো দেখে খুবই আগ্রহ উদ্দীপিত হয়েছে এবং সেগুলো অনুমোদন করেছে স্বয়ং ভারত সরকার। প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য এসেছে ফোকাল পয়েন্টে এবং আরো ৩০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান সাহায্য আসছে ত্রান হিসেবে। (সে আশা করেছে যে, ভারত এবং পাকিস্থানে জাতি সংঘের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত শান্তি ও সম্প্রতী গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এই ধরনের বিস্ফোরক পরিস্থিতিতেও।)
প্রিন্স সদরুদ্দিন এর পর প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
একজন জনপ্রতিনিধি বলেছিলো যে, মানুষের জীবনযাত্রা যে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তার প্রমান সে স্বচক্ষে দেখেছে। তবুও বলেছে যে, একটি মিশনের শেষে আরো শরনার্থি সেনাবাহিনীরা সরিয়ে নিয়েছে, হাই কমিশনার পূর্ব পাকিস্থান ত্যাগ করার পরে। সে জিগেস করেছিলো, সৈন্যরা কেন জুনের ৫ এবং ১২ তারিখে ৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং জুনের ১২ এবং ১৯ তারিখে চার লাখ শরনার্থিকে ভারতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো? প্রিন্স সদরুদ্দিন বল্ল, এই পরিসংখ্যানগুলো তার কাছে ছিলো এবং তার অফিস এই তথ্যগুলোর উপরে নির্ভর করেছে যেগুলো উভয় পক্ষ থেকেই তার কাছে সরবরাহ করা হয়েছিলো। সে বল্ল, মানুষের হৃদয়ে যখন একবার ভয় ঢুকে যায়, তখন সেটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে অনেক সময় নেয়। পরিস্থিতি এখনো পূর্বের অব্স্থায় ফিরে আসেনি। সে বলেনি যে, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো না সারা দেশে, সে বলেছে যে, উক্ত এলাকায় খুব ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
”আমি আরো এ্যাকশন নেবার ব্যাপারে অনুশোচনা করি, যেটা আরো শরনার্থি তৈরী করবে, শরনার্থিদের হাই কমিশনার কি করে আরো শরনার্থি তৈরী করার ব্যাপারে খুশী হতে পারে?” এই ধরনের পরিস্থিতিকে আরো কাছ থেকে দেখতে হেবে, ভারতকে সাহায্য দিতে হবে এবং এই শরনার্থী সমস্যার একটা আশু সমাধান জরুরী। তার পূর্ব পাকিস্থান সফরকালে তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিলো, সে বলেছিলো সে সময় সে সেখানে ছিলো, মানে জুনের ১১, ১২, ও ১৩ তারিখে। সে ঢাকা থেকে পশ্চিমের সীমান্তে একদম কেন্দ্রে চূয়াডাঙ্গায়, যেখানে সে যশোর এবং বেনাপোলের কেন্দ্র দেখেছিলো। ঢাকা ফিরে আসার পর, পরের দিনই সে কুমিল্ল, ফেনি আর নোয়াখালি গিয়েছিলো।
একজন সংবাদদাতা জানালেন যে, রয়টারের একজন প্রতিনিধিকে গতকাল ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে, সেই প্রতিনিধি বল্ল যে, কুমিল্লাতে এখনো গৃহযুদ্ধ হচ্ছে। প্রিন্স সদরুদ্দিন বল্ল, পরিস্থিতি যে কোন মূহুর্তে বদলে যেতে পারে। সে যখন কুমিল্লাতে ছিলো তখন কি পরিস্থিতি ছিলো সে শুধুমাত্র তাই বলতে পেরেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, সে যখন ঢাকায় ছিলো, তখন সেখানে ৮টা বোমা মারার ঘটনা ঘটেছিলো কিনা, হাই কমিশনার সাহেব বল্লেন, ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিলো, কিন্তু সে যখন ঢাকায় ছিলো, তখন সেই কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। ঢাকাতে তখনো ঝামেলা চলছিলো, ২৫ মার্চ রাতে যা হয়েছিলো তার সূত্র ধরে। তাঁর মনে হচ্ছিলো, সে যখন সেথায় ছিলো, তখন ঢাকার পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক ছিলো না, এমনকি তা স্বাভাবিক হওয়ার দিকেও যাচ্ছিলো না। এবং জনগনের একটা অংশ তখন রাজধানীতে ছিলো না। কিন্তু এই শহরকে এই সমস্ত ঘটনা দ্বারা খুবই আক্রান্ত মনে হচ্ছিলো।
একজন সাংবাদিক জিগেস করলো, সে যখন ঢাকায় ছিলো তখন সে কোন ধরনের বোমা হামলার ঘটনা দেখেছে কিনা, এবং এরপর সে কোন কূটনৈতিক মহলের সাথে যোগাযোগ করেছে কিনা, সে বল্ল, সে যা শুনেছে, সেটা অবশ্যই একটা স্থানে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ছিলো। সেখানে অন্যান্য কিছু ঘটনার গুজবও ছিলো। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানালো, এইসব তারাই করেছে যারা সম্প্রতি এইসব ঝামেলার সুযোগে জেল থেকে পালিয়েছে। সে জানালো, সে ঢাকা থাকাকালীন কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছিলো। সে এও বল্ল যে, কূটনৈতিক মহল এবং জাতি সংঘের কয়েকজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। যদিও সে মাত্র তিন দিনের জন্য পূর্ব পাকিস্থানে ছিলো, যার দুই দিনই সে হেলিকপ্টারে করে সারা দেশ ঘুরেছে।
তাঁকে জিগেস করা হয়েছিলো যে, কূটনৈতিকদের প্রমান কি ছিলো? সে বল্ল, তাদের দৃষ্টিভংগির বৈচিত্রতা রয়েছে। কেউ কেউ ভেবেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আবার কেউ এর উল্টোটা ভেবেছে। ২৫ মার্চের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভংগির ভিন্নতা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, একটা রাজনৈতিক সমাধান আশু দরকার। এরপর তাঁকে জিগেস করা হলো, ফোকাল পয়েন্টে যে ৪৫ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিলো, সেগুলো দিয়ে কতদিন চলবে? সে বল্ল, ভারতে পৌছাঁনোর প্রায় সাথে সাথে এই টাকার সমুদয় খরচ হয়ে গেছে অথবা প্রায় শেষ হবার পথে। কারণ, ভারতের যে পরিমান অর্থের এখন দরকার, এই টাকার পরিমানটা তার চাইতে অনেক কম ছিলো।
দাবিদাওয়ার একটা হিসাব চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন ভারত ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের একটা চূড়ান্ত দাবি করেছিল। এই প্রস্তাবনাটা তৈরি হয়েছিল যখন সেখানে উদ্বাস্তু-জ্বর চলছিল এবং যেভাবেই হোক ছয় মাস সময় শেষও হয়ে গিয়েছিল। নতুন দাবিটা আলোচিত হয়েছিল দিল্লিতে। ভারত বলেছিল ৫ মিলিয়নেরও অধিক উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের দেশে।
জিগেস করা হলো, সে সময় কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট কত ছিলো। সে জবাব দিলো, সে যখন ভারতে ছিলো, তখন আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
তাকে জিজ্ঞেস করা হল, পাকিস্তান কলেরার বিপদের কথা স্বীকার করেছে কিনা। তিনি বললেন, পাকিস্তান করেনি এবং এ সম্পর্কে খুব সচেতন ছিল। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে কলেরা ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছিল। পাকিস্তানে কলেরা ছিল কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকিস্তানে ছিল না। তিনি পাকিস্তানে কলেরা ছিলো কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানে কলেরার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব তাঁকে দেওয়া হয়নি।
একজন সংবাদদাতা বলেন, এটি পরিষ্কার যে কলেরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল । বাদশাহ পুত্র সাদ্রুদ্দীন বলেন, এটি তাঁর চাকরি ছিল ভারতে ত্রাণ দেখাশোনা করা। কোন উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবাসন ছিল না পাকিস্তানে উদ্বাস্ত ক্ষেত্রে । তাঁর অফিস ভারতে জরুরী অবস্থার সম্মুখীন ছিল। তিনি আলোচনা করেছিলেন উদ্বাস্তুদের ফিরে আসতে কি প্রয়োজনীয় ছিল । প্রশ্নে কলেরার বিষয়ে আলোচনা করা ছিল কিন্তু বিস্তারিত ছিলো না। যদি পাকিস্তানে কলেরা থাকতো তাহলে তা পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য একটা সমস্যা হাতো, কিন্তু হাই কমিশনারের জন্য নয় ।
একজন সংবাদদাতা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন কমপক্ষে ৫০ সেন্টস প্রয়োজন ছিল প্রতিটি উদ্বাস্তুর একটি দিনের ভাতার জন্য। এই মাসে ভারতে শরণার্থীদের জন্য সাহায্য সংক্রান্ত পরিমাণ হবে ৯০ মিলিয়ন ডলার। এমন সাহায্যের কোনো আশার আলো ছিল? প্রিন্স সদরুদ্দিন এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া উপর নির্ভরশীল হয়ে বলেন। এই সংখ্যাগুলো সহায়তা পাবার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আবারো আলোকপাত করেছে।
হাইকমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হল, যেখান থেকে উদ্বাস্তুরা আসছে, সেখানে সে কোন স্থানচ্যুতি দেখেছে কিনা। প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেন, তিনি সব শরণার্থী এলাকা দেখতে চেয়েছিলেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় কিন্তু সে সময় তাঁর ছিল না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এলাকায় ফিরতে সক্ষম হবে। এটা খুবই সম্ভব যে উদ্বাস্তুদের আন্দোলন ছিল সে সব এলাকাতে, যেগুলো তিনি দেখার সময় পান নি। তিনি তর্ক করেননি যে সেখান আরও উদ্বাস্তু আন্দোলন ছিল । সে বলতে সীমিত এলাকায় পরীক্ষামুলক ভাবে দেখলেন যে সেই নতুন দেখতে পাইনি অন্তঃপ্রবাহ যে দিনে। তবে বেশ কিছু পরিস্থিতি অস্থির ছিল এবং উদ্বাস্তুদের আন্দোলন সংঘঠিত হচ্ছিলো।
একজন সংবাদদাতা জানালো যে, পূর্ব পাকিস্থানের লন্ডন প্রবাসীরা হাই কমিশনারকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে পক্ষপাতিত্ব করার দোষে, কারণ তারঁ ও তার পরিবারের বড় ধরনের বিনিয়োগ ছিলো পাকিস্থানে।

তাঁর ভাষ্যমতে তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক কর্মচারী। তিনি আশা করেছিলেন তাঁর তৈরিকৃত নিয়ম-কানুন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিরেপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি ১০ বছর যাবত শরনার্থীবিষয়ক কাজে জড়িত ছিলেন এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। তাঁর গৃহীত তিনটি সমারোহ হাই কমিশন কতৃক প্রশংসিত হয়ছিল। তিনি সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তার নথি ইহার জন্য কথা বলবে। তার ব্যাক্তি নিরপেক্ষতা সম্পর্কে কখনও কোন প্রশ্ন উঠেনি নাইজেরিয়া, চেকোস্লোবাকিয়া, সুদান, ইথিউপিয়া, পর্তুগাল অঞ্চল কিংবা অন্যত্র। তিনি বলেছিলেন তার পরিবার এবং তার সম্প্রদায় ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান উভয়ের প্রতিই আগ্রহী ছিলেন। হতে পারে ইন্ডিয়া অধিক শক্তিধর। তিনি একজন ইরানী ছিলেন,পাকিস্তানি নন। তাঁর মতে, তাঁর ভাই ছিলেন নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি।কিন্তু সেখানে অনেক পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান সিনিয়র অফিসার এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন যারা একে অন্যের ভাই এবং আত্মীয়। ইহা ছিল উপ-মহাদেশীয় বিভক্তিকরণ।
তিনি বলেন” আমি পাকিস্তানেও নেই, ইন্ডিয়াতেও নেই, আমি উদ্বাস্তু। আমি উদ্বাস্তুদের সংঘটক।”……………
একজন সংবাদদাতা বলেছে, হাই কমিশনার বলেছিলেন ৭৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তায় বেড়েছিল। যদিও সমস্যার বিশালতা পরিমাপ করা যাচ্ছিল না বিপরীত সহায়তার জন্য। রাজপুত্র সাদরুদ্দিন বলেছিল, তিনি আগামীকাল ওয়াশিংটন যাবেন এবং পরের সপ্তাহে অন্য রাজধানীগুলোতে যাবেন আরো সহায়তার জন্য। কিন্তু যন্ত্রপাতি খুব ধীরে সরানো হচ্ছিল এবং করসমূহ সাধারণত জনগণের মতামতের উপরই নির্ভর করতো। তবে তিনি এতটাই অণুপ্রাণিতবোধ করেছিলেন যে করসমূহ একমাসের আগেই উঠে এসেছিল সেক্রেটারী জেনারেলের আবেদনের আগেই। কিন্তু সমস্যাটা ছিল যে, এইটুকু সহায়তা পুরোপুরি যথেষ্ঠ ছিলো না।
প্রিন্স সদরুদ্দিনকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলার পর তাঁর এটা মনে হয়েছিলো কি না যে এর একটি বাস্তব রাজনৈতিক সমাধান আশা করা যায়। উত্তরে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক সমাধান বলতে আসলে কি বোঝায় তার উপর। উদ্বাস্তুরা কত তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন পাকিস্তান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সাধ্যের ভেতর কিন্তু বাস্তব অবস্থা বড়ই জটিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করবে জুনের ২৮ তারিখে যেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কিছু খসড়া তিনি আশা করছেন। উদ্বাস্তুরা একমাত্র তখনই ফিরে আসবে যখন তারা একটি রাজনৈতিক সমাধানের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে।
জাতিসংঘ রাজনৈতিক সমাধান দিতে চাইলে কি হতো? তিনি উত্তর দিলেন- সেক্রেটারি জেনারেল এই সমস্যার ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। এটি অবশ্য একটি সঠিক ছোট পদক্ষেপ ছিল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিনিধি স্বীকার করেছিল তার অফিস, সেখানে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বাধ্যবাধকতার সাথে কাজ করছিলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই যে, একটি জাতি সংঘের উপস্থিতি ছিল একটা অনুভূতির অবদান এবং যে উপস্থিতি বর্ধিত করা যেতে পারে। যেটা মানুষকে তাদের বাড়িতে ফিরে উৎসাহিত করতে পারে।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, সাহায্য যদি না আসে, কি হবে? প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেন, এখানে মিশনগুলোর জন্য না-বলা কিছু রহস্য ছিলো যা হয়তো ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া ভয়ানক অবস্থাকে আরো উসকে দিতে পারতো।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের এই নিয়ে দু:খবোধ আছে কিনা যে তাঁর দেশের ৫ মিলিয়ন লোক পাকিস্তান ত্যাগ করাকে জরুরি মনে করেছিলো। হাইকমিশনার উত্তর দেন যে এতে কেউ খুশি হবেন না বা এ তথ্য কেউ উপেক্ষাও করতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তানে যা হয়েছে এ সম্পরকে তাঁর পরিষ্কার ধারণা ছিলো। চলে আসা উদ্বাস্তুরা প্রেসিডেন্ট ও সরকারের উপর বিরাট চাপ হয়ে ছিলো। সরকার ও প্রেসিডেন্ট তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
অন্য এক জায়গায় প্রিন্স সদরুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, সে সেক্রেটারী জেনারেল হতে চায় কি না। তিনি প্রেসের সব কিছু বিশ্বাস করতে পরামর্শ দেন। তিনি তাঁর প্রার্থীতা নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ইঙ্গিত দেননি। তিনি উ-থান্টের তত্তাবধানে জাতিসংঘকে সেবা দিয়ে গেছেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, তিনি কি সেক্রেটারি জেনারেলের অফিস বড় বড় শক্তির আহ্বানে গ্রহণ করেছিলেন কি না। তিনি এর উত্তর না দিয়ে বলেন যে তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!