শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেনেভায় সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের সবন্ধে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৫ মে, ১৯৭১ |
০৫ মার্চ ১৯৭১ জেনেভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের নিয়ে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খাঁনের বিবৃতি-
আমি নিশ্চিত আপনারা সবাই পৃথিবীর অপর প্রান্তের সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে অত্যন্ত উন্মুখ হয়ে আছেন।জেনেভায় গত সপ্তাহে আপনাদের সাথে সাক্ষাতের সময় মহাসচিব অন্যান্য বিষয়ের সাথে পত্রিকায় বহুল প্রচারিত ও স্বীকৃত ,পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখে বাস্তচ্যূত মানুষের ব্যাপক স্রোতের কথা উল্লেখ করেছেন।আমি আপনাদের বলতে পারি ভারতীয় সরকার ভারতে এই অসংখ্য বাস্তুহারা মানুষের জন্য সহায়তা চেয়ে পুনর্বাসন মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।এই অনুরোধ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে আমি জাতিসংঘের আমার অন্যন্য সহকর্মী বিশেষ করে মহাসচিবের সাথে আলোচনা করে আমি দ্রুত একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ডেপুটি হাইকমিশনার চার্লস ম্যাকের নেতৃত্বে আজ রাতেই নয়াদিল্লীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এই প্রতিনিধি অন্যদের আরো রয়েছেন আমাদের অপারেশন বিভাগের পরিচালক জেমলেসন যিনি তিব্বতের শরনার্থী বিষয়ে বেশ কয়েকবার ভারত সফর করেছেন এবং আমাদের আইনি পরামর্শক ডঃ ওয়েইস। ভারতে বাস্তুচ্যুত মান্যুষের কারণে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আমরা কিভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি সে ব্যাপারে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবে।এখানে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই অতীতের সকল অনুরোধ এবং কার্যক্রমের ন্যায় এবারো ইউএনএইচসিআর অত্যন্ত জোড়ালো অরাজনৈতিক ও মানবিক ভুমিকা পালন করবে। হতে পারে এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবতা বিষয়ক অন্যান্য সংস্থা যেমন খাদ্য ও কৃষিসংস্থা,বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি,ইউনিসেফ,বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা সহ অন্য সকল সংস্থা অরাজনৈতিক ও মানবিক মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাদের ভূমিকা পালন করবে। এখানে অবশ্যই সমন্বয়য়ের প্রয়োজন পড়বে আর আমরা জানি ত্রান কার্যক্রম অনেকাংশে সমন্বয়ের উপর নির্ভর করে। কারণ আমরা দেখেছি নাইজেরিয়ার মত দেশে এমনকি সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে ঘুর্নিঝড়ের প্রাকৃতিক দূর্যোগে সমন্বয়হীনতা ত্রাণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করে দিতে পারে। আমি আশা করি এই প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে দেখতে পারব অন্যরা কি করছে এবং জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে আরও সমন্বিত করে সমস্যার যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা কি করতে পারি। আর আমরা অবশ্যই আগের শরনার্থী সমস্যাগুলোর ন্যায় স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে অত্যন্ত আগ্রহী ;আমরা অবশ্যই তা করব।আমাদের দপ্তর স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করে। আমরা ব্যপক অস্থায়ী আবাসনের কর্মসূচি নিতে পারিনা যা তাদের স্থায়ী হতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে দেখে তা অবস্থার সৃষ্টি করে। আমাদের দ্রুত খুজতে হবে এর চূড়ান্ত সমাধান কি হতে পারে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এই সমস্যার চেয়ে ভাল সমাধান হতে পারে মানুষগুলোকে তাদের বাড়ি ফিরত সাহায্য করা এবং এটা বলতে মহামানব হতে হয় না ।
আমার কাছে মনে হয় বিভিন্ন পক্ষের সদিচ্ছা নিয়ে এই বাস্তুহারা মানুষুগুলোকে সাহায্যের পদক্ষেপ নেয়ার উচিত যাতে করে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় শিবিরে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে না হয়। সীমান্তের উভয় পাশেই জনসংখ্যার সমস্যা রয়েছে আর যদি মানুষগুলো ফিরে যেতে পারে আমাদের অবশ্যই তাতে সাহায্য করা উচিত।আমার দপ্তর অতীতের এইধরনের সমস্যার ন্যায় এখানেও ভূমিকা রাখতে পারে যেমনটি আমরা করেছিলাম নাইজেরিরায় সংঘাত শেষে নাইজেরীয়দের বিশেষ করে শিশুদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা হবে অন্তর্বর্তী মঙ্গলজনক কিছু করার ক্ষেত্রে সংলাপ শুরু করার ব্যাপারে। আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা উচিত এবং একই সাথে যারা ঘরে ফিরতে চায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এমনকি নিজভূমিতে ফিরে আসার পরেও তাদের এমনভেবে গ্রহণ করা উচিত যাতে তাদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ত্রান দেয়া যায়। আর এইসকল পদক্ষেপ কেবল ঘটনাস্থলেই মূল্যায়ন করা সম্ভব। আমরা এখন সংশ্লিষ্ট উভয় সরকার এবং অবশ্যই একই সাথে আমাদের জাতিসংঘের সকল অন্যান্য সকল সহকর্মী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান নির্বাহীদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। আমি অবশ্যই আপনাদের এই প্রতিনিধিদলের সফরের ফলাফল জানাবো। আর এগুলোই আজকের প্রধান বিষয় যা আমি আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে চাই। একই সাথে আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই আপনাদের উপলব্ধি এবং ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য। কারণ এটি এমন একটি কাজ যেখানে সমস্যা অনুধাবন ও সমাধানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মতামত আপনাদের সহয়তা ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। এবারে উন্মুক্ত আলচনার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সেখানে শরনার্থীর সংখ্যা নিয়ে আপনার কোন ধারণা আছে আর আপনারা কি ধরণের সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করবেন?
হাইকমিশনারঃ বেশ, প্রথমত আপনার প্রথম অংশের উত্তরে আমি বলব শরনার্থী বিষয়ক যেকোন সমস্যা সেটা হতে পারে এই ক্ষেত্রে বা অন্যক্ষেত্রে যেটা আমরা আফ্রিকায় দেখেছি সুনিদির্ষ্টভাবে এই সংখ্যা অনুমান করা খুবই কঠিন। আমি যতদূর জানি এই মুহুর্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব মানুষের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে,এটা সম্ভবত একটি সুনিদির্ষ্ট ধারণা দিতে পারে। আমাদের একটি গোষ্ঠীকে শরনার্থী বলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আপনারা সকলেই জানেন ব্রিটেন যখন ভারত ভাগের মাধ্যমে উপমহাদেশের স্বাধীনতা প্রদান করে সেই সময় থেকেই ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের মধ্যেই স্থানচ্যুত মানুষদের নিয়ে একটি সমস্যা রয়েছে। শরনার্থী সমস্যা এমনকিছু যার সাথে উভয় দেশ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাস করতে শিখে আসছে। তাই আমরা যখন শরনার্থীদের নিয়ে কথা বলি তখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা ঠিক কাদের বোঝাতে চাই যারা অনেক আগে এসেছে, যারা সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর গোলযোগপূর্ন সময়ে এসেছে নাকি যারা মার্চের অবস্থার পরিবর্তনের সময় থেকে এসেছে। একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা প্রতিষ্ঠা করা খুব কঠিন যারা ভারত বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতায় এসেছে তারা অধিকাংশ একই এলাকায় বসবাস করছে। কিছু মানুষ এই অর্থে এখনও উদ্বাস্তু কারণ তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রশ্ন হল তারা কখন এসেছে। তাই সংখ্যা নিয়ে আমি বেশ কিছু অনুমান শুনেছি। আপনারাও একটা সংখ্যা উল্লেখ করেছেন,বিবিসি একটি সংখ্যা বলেছে যেটা গতকাল আমি শুনেছি প্রায় তা প্রায় ৬ লক্ষ। জেনেভায় বসে এগুলোর পর্যালোচনা করা আসলে খুব কঠিন তাই আমরা ভারতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছি। এবার আসা যাক ২য় বিষয়ে, আমি জেনেছি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা পৃথক পৃথক আবেদন করেছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা,বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচি ইতিমধ্যে সাড়া দিয়েছে।আর দিল্লীতে ইউনিসেফের অফিস আছে তারা সেখান থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে,কিছু সরবরাহ ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে,কিছু
পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে কিছু খাদ্যের মজুদ যা স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য তা জরুরীভিত্তিতে সংস্থান করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে কিছু দ্বিপক্ষীয় সহয়তা বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকেও পাঠানো হয়েছে। আমি জানি কিছু বেসরকারি সংস্থা যাদের উল্লেখযোগ্য পরিমান সম্পদ রয়েছে তারা সেখানে রয়েছে কিন্তু ভারতীয় সরকার এসব কিছুর মাঝে নিজেদের কার্যকর সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং এসকল প্রস্তাব অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সাথে সঠিক সমন্বয় করাটা খুব স্বাভাবিক। আমি মনে করি পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণের ব্যাপারে একই ভাবে চিন্তা করবে। আমি মনে করি এই প্রবণতা পরিবর্তন হচ্ছে। আপনাদের মনে আছে নাইজেরিয়ায় সংকটের সময় কঠিন অবস্থার কথা,যেখানে অনেক সংস্থা, অনেক বেশি স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী,দেশ ব্যাপী অনেক মানুষ সমস্যা তৈরি করছিল।অনেক সময় এই সমস্যা ছিল দক্ষতার আবার অনেক সময় রাজনৈতিক। তাই আমার মনে হয় আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকা উচিত এসব ব্যাপারে এবং যদি পর্যাপ্ত তহিবল বা ত্রান সরবরাহ করা হয় তবে অবশ্যই যেদেশে সাহায্য প্রয়োজন সেই সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে সমন্বয় করা উচিৎ।
ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনার দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট পরিমান কত হবে?
হাইকমিশনারঃ আমাদের ৫ লক্ষ ডলারের একটি আপদকালীন তহবিল আছে যদিও সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনায় এটা খুবই অপ্রতুল এবং এই অর্থে খুব বেশি দিন যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের হাতে জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য শুধু মাত্র এই পরিমান তহবিলই রয়েছে। দিল্লীতে আমাদের প্রতিনিধি দল পর্যালোচনা করে নিরূপণ করবে আমরা এবং জাতিসংঘ মিলে কি মোট পরিমাণ তহবিল প্রদান করতে পারি। আপনারা জানেন ভারতীয় সরলার সরকার সরাসরি জনাব উথান্ট এর শনাপন্ন হয়েছেন,এর পূর্বে নিউইয়র্কের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ইউএনএইচসিআর বরাবর সরাসরি আবেদন করেছিলেন সুতরাং জাতিসঙ্ঘের এখানে পালন করার মত ভুমিকা রয়েছে।
ফিনিশ রেডিওঃ স্যার আমি এর সাথে কিছু যোগ করতে চাই । আমি জানতে চাচ্ছি দুই আর দুইয়ে কি আসলেই চার হয়, আসলে আমি আপনার সাম্প্রতিক ভারত আর পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে উল্লখ করতে চাচ্ছিলাম।
হাইকমিশনারঃ সোজাসুজি বললে আমার মনে হয় সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। আমাদের প্রতিনিধিদল আজ রাতে দিল্লীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে সেখানে প্রকৃত আলোচনার পর পর্যালোচনা করে দেখতে পারব আমাদের প্রত্যকের ভুমিকা কি হবে। যতক্ষণ জাতিসংঘ সম্পৃক্ত আছে ততক্ষন আমরা প্রত্যেকে নিয়মিত এসম্পর্কে অবগত করছি। অধিকাংশ মানুষের ধারণা এটি উদ্বাস্তু মানুষের সমস্যা তাই তারা প্রতিনিয়ত আমাদের যোগাযোগ করে জানাছে তারা কি করছে বা তাদের কি করা উচিত এই বিষয়ে পরামর্শ চাচ্ছে।
ফিনিশ রেডিওঃ তাহলে কি ইউএনএইচসিআর সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করতে যাচ্ছে?
হাইকমিশনারঃ আসলে আমাদের মধ্যস্থতা করাকে সমন্বয়কারীর ভুমিকা বলা খুব অপরিপক্ব হবে। প্রথম কথা সমন্বয়কারী দ্বারা পনি ঠিক কি বুঝাতে চাচ্ছেন। আমাদের দেখতে হবে ভারতীয় সরকার প্রকৃতপক্ষে কি চায়। এটা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয় এবং আমার মনে হয় এটা শুধুমাত্র নয়াদিল্লিতেই সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়ান রেডিওঃ উদ্বাস্তু এবং অন্যদের মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করা সম্ভব?
হাইকমিশনারঃ জর্জ আমি অত্যন্ত আনন্দিত জে আপনি এই প্রশ্ন করেছেন কারণ এটা আসলে খুব মৌলিক একটা বিষয়। এটা সুনির্দিষ্ট করা বলা আসলেই খুব কঠিন যে এই মানুষগুলো ঠিক কারণে ঘড় ছেড়েছে। কিছু মানুষ হয়তবা সেখানকার দূর্ভিক্ষের ভয়ে পালিয়ে এসেছে। এই মুহুর্তে পৃথিবীর ঐ প্রান্তে বর্ষা মৌসুমের কারণে অবস্থা খুবই শোচনীয়।
আর অনেক মানুষ রাজনৈতিক কারণে তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। শুধুমাত্র এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা একজন মানুষ ইউএনএইচসিআর নীতিমালা অনু্যায়ী উদ্বাস্তু কিনা। যে পরিমান মানুষ আর যে দুরত্ব এর সাথে জড়িত তারা নির্যাতনের ভয়ে দেশ ছেড়েছি কি ছাড়েনি এবং নীতিমালার আওতায় আসবে কিনা তা চিহ্নিত করার চেষ্টা হবে অনর্থক। এটা সম্পুর্ন মানবিক মধ্যস্থতা কার্যক্রম। রেডক্রস সোসাইটিও একটি অনুসন্ধানী দল পাঠিয়েছে। আপনারা জানেন তারা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। আমরা দেখতে চাই জাতিসংঘ এখানে কি করতে পারে, যেমনটি রেডক্রস সেখানে গেছে। এই সফর শুধুই মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সেখানে কি ধরনের মানুষ আছে তার উপর ভিত্তি করে নয়।
ও.ক্লবো, রিওডিজেনিরোঃ আপনারা কি পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছেন?
হাইকমিশনারঃ আবারো বলছি আমার কাছে মনে হয় যদি এই মানুষগুলো দেশে ফিরে যেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারে সেটাই হবে সবদিক থেকে সন্তোষজনক সমাধান। তার অর্থ আমরা অবশ্যই পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ রাখছি। আমার দপ্তর সবসময় যেসকল দেশ থেকে শরনার্থী আসছে এবং যেদেশে যাচ্ছে সব সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখতে সজাগ আছি। যদি আপনি সত্যিই গুরুত্বপুর্ন মানবিক ভূমিকা রাখতে চান, যদি সম্ভব হয় তবে অবশ্যই আপনাকে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হতে হবে। সেখানে প্রতিনিধির মাধ্যমে অথবা আমি নিজে পাকিস্তান সরকারের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন হবে যদি আমরা মানুষের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর সহায়তা করতে পারি।
ও.ক্লবো, রিওডিজেনিরোঃ সেখানে রেডক্রসের ভূমিকা কি হবে?
হাইকমিশনারঃ আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি পুর্বপাকিস্তান সংকটের শুরুর দিকে একটি বিমান পাঠিয়েছিল এবং সেটি ফেরত আসে। আমার মনে হয় এধরনের একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে ভারতীয় রেডক্রস যদি তাদের অনুরোধ করে তবে তারা অবশ্যই সক্রিয় হবে। যতদুর আমি মনে হয় দিল্লিতে তাদের এই মিশন শুধুই অনুসন্ধানী দল। আমি মনে করি এটা অনেক বড় একটা সমস্যা এবং রেডক্রসের একার পক্ষে এর মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যেহেতু ভারত সরকার জাতিসংঘ মহাসচিব এবং আমাদেরসহ অন্যান্য সংস্থার কাছে আবেদন করেছে আমাদের অন্তত যথাযথভাবে দেখা উচিত তারা আমাদের কাছে কি চায় এবং আমরা কি করতে পারি। আমি মনে করি রেডক্রস সোসাইটির সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব বিশ্বের অন্যন্য প্রান্তের মত এই পরিস্থিতিতেও চলমান থাকবে।
এজেন্সী ফ্রান্স প্রেসঃ আমার তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে,তবে আমার বিশ্বাস এই প্রতিনিধিদল পাঠাতে আপনাকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে ।
হাইকমিশনারঃ মহাসচিব ওক সপ্তাহ আগে বার্নে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। রাষ্ট্রদূত সেন যিনি নিউইয়র্কে ভারতের প্রতিনিধি তিনি জনাব উথান্টের সাথে সাক্ষাত করে একটি প্ত্র দিয়েছিলেন এবং প্রাথমিক আলাপচারিতায় জাতিসংঘ পরিবারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহাছিল। এই পত্রটি মহাসচিব বরাবর প্রদান করা হয়েছিল। প্রথমত এগুলো এক সপ্তাহ আগে ঘটেছিল। দ্বিতীয়ত আমাদের দিল্লি অফিসের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন যিনি নিয়মিত ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনি পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছেন যারা ভারতে উস্বাস্তুদের সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।
এই ধরনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলাপচারিতায় সবসময়ই হয় তাদের অবগত করা হয় আমরা কি করতে পারি এসম্পর্কে। সেটা কখনোই আনুষ্ঠানিক অনুরোধ ছিল না। আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আমরা মাত্র দুইদিন আগে পেয়েছি। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমি মহাসচিবের সাথে এবিষয়ে কথা বলে দেখব তিনি তারপক্ষ থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ নেন। আমি জানতে চাই অন্যান্য বিশেষায়িত সংস্থা কি কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা কিধরণের সমন্বিত প্রয়াস নিতে পারি। তাদের তাৎক্ষণিক সহায়তার পরপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অনতি বিলম্বে সকল দায়িত্ব গ্রহন করেছে। যারা ভারতে এসেছে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে ভারতে যা পাওয়া গেছে টা থেকে এবং খুব সম্ভবত একটি দ্বিপাক্ষিক উৎস থেকে কিছু সহায়তা করা হয়েছে । আমি বিশ্বাস করি তারা এটি চলমান রাখবে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে ভারত সরকার সব কার্যক্রমে নিশ্চিতভাবে তার নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে। আমরা সেখানে তাদের অনুরোধে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী সহয়তা করতে অবস্থান করছি। আর এখন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তদারকি ও সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
ফিনিশ রেডিওঃ আপনার কি পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ আছে?
হাইকমিশনারঃ পাকিস্তান সরকারের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও আমি যখন সেখানে ছিলাম আমি বৈপ্লবিক কোন পদক্ষেপ নেই নি। আমরা প্রায় সার্বক্ষনিক এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। আমার যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি যে মানুষের প্রত্যবাসনের ব্যবস্থা করাই একমাত্র সমাধান। এমনকি হেরাল্ড ট্রিবিউনে শ্রীমতি গান্ধীকে উধৃতি দিয়ে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। আমি জানিনা আপনারা এটা পড়েছেন কিনা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেন এটা একটি অস্থায়ী সমস্য এবং তিনি আশা করেন মানুষ খুব দ্রুতই দেশে ফিরে যাবে।
ফিনিশ রেডিওঃ সারাংশ হচ্ছে ইউএনএইচসিআর নেতৃত্ব নিতে যাচ্ছে।
হাইকমিশনারঃ কারন এটি বাস্তচ্যূত মানুষদের একটি বিষয়। আপনারা প্রত্যেকেই দেখেছেন সবাই উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে কথা বলছে তাই মানুষ এই দপ্তরের কথা চিন্তা করছে। এটা একদমই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের প্রথম দেখতে হবে ভারতীয় সরকার কি চায় এবং যতক্ষন পর্যন্ত আমরা যথাযথভাবে না জানছি ততক্ষন পর্যন্ত আমি আমাদের দপ্তরকে সমন্বয়ের কেন্দ্র বলতে রাজি নই। এই হচ্ছে অবস্থা এবং যা ভারত সরকার চায়। যতক্ষন পর্যন্ত জাতিসংঘ সজাগ থাকবে অবশ্যই মানুষ আমাদের অবগত করবে এবং কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আমাদের কিছু এডহক উপায় রয়েছে।
একজন প্রতিবেদকঃ জাতিসংঘ পরিবারের অন্যান্য সদস্য নয়াদিল্লীর সাথে আলোচনায় অংশ নেবে কিনা?
হাইকমিশনারঃ আমি যতদূর জানি তাদের অধিকাংশই নয়াদিল্লিতে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি জনাব ম্যাক ডায়ারমিড রয়েছেন যিনি বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিছু বিশেষায়িত সংস্থার লোক সেখানে আছেন।
আমি জানি ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা সেখানে রয়েছেন। আমি জানিনা তারা পৃথক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা অথবা আমাদের দলের সফরের সুবিধা নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা তাদের স্থানীয় কর্মীদের দিয়ে সাড়বেন কিনা। এটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয় কিন্তু আমার মনে হয় সম্ভবত এটাই ঘটবে।