You dont have javascript enabled! Please enable it!
         শিরোনাম              সূত্র            তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতৃবর্গের বিবৃতি      ‘বাংলাদেশ ডকুমেন্টস’      এপ্রিল-ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২২শে এপ্রিল,ক্যানবেরায় প্রতিনিধিবর্গের সভায়,অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাননীয় উইলিয়াম ম্যাকমোহানের বিবৃতি
২২শে এপ্রিলের সভায়,মাননীয় ব্রায়ান্টের প্রশ্ন,কেনো তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ব্যাপক হত্যায় কোনো প্রকাশ্য প্রতিবাদ করেননি,এর উত্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জবাবে বলেনঃ

অবশ্যই আমরা এই প্রাণহানিতে দুঃখপ্রকাশ করি,এবং এই সভায় আমি এটা জানাতে পারি যে এই রক্তপাতে আমরা কতটা অনুতপ্ত,বিশেষ করে যেহেতু আমরা চিহ্নিত করেছি,সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান,উভয় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হতে জোরালো সমর্থন পেয়েছে।পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির বিবৃতিকে আমরা সাধুবাদ জানাই যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি যত শীঘ্র সম্ভব অসামরিক শাসন পুনরারম্ভ নিশ্চিত করবেন।আমরা আশা করছি যে তিনি খুব দ্রুত তার বক্তব্যকে কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন এবং,সর্বোপরি,এই মত জ্ঞাপন করবেন যে,সেখানে আর কোনো প্রাণহানি হবে না ও আওয়ামী লীগের নেতাকে পূর্ণ ক্ষমতা অর্পণ করা হবে যাতে পাকিস্তানের গণপরিষদে বেসামরিকভাবে তাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি
২৪শে মে, ১৯৭১

নিম্নলিখিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অধিকার সম্মানিত মাননীয় কিথ হ্যালইয়র্কে-এর ২৪শে মে,১৯৭১ এর বিবৃতির উপর ভিত্তি করেঃ

“পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনায়,নিউজিল্যান্ড নিশ্চুপ বা উদাসীন নয়”,প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
জনাব কিথ-কে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে বিরোধী দলের নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে,যখন তিনি নিউজিল্যান্ড ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে ছিলেন।প্রতিবেদনে জানা যায় জনাব কির্ক বলেছেন, “কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ না নিয়ে,আমরা শুধু নিজেদের দোষারোপ করতে পারি যদি জনগণ ভাবে আমাদের নীরবতা উদাসীনতার প্রাচীর”।

যখন তিনি তাঁর বক্তব্য দিয়েছিলেন,জনাব কির্ক সম্ভবত অবগত ছিলেন না যে ১৪ই এপ্রিল বদলি প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বজনীন বিবৃতি জারি করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভোগ ও প্রাণহানি যার সাথে যুক্ত হয়েছে আত্মবিরোধ,তাতে সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ করে।এই পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়ে,জনাব মার্শাল দ্রুত এই রক্তপাত বন্ধের এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতাদের দ্বারা আলাপ-আলোচনা ও আপোষের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্নের প্রয়াস পুনরারম্ভের আহবান জানিয়েছেন।

“জনাব মার্শাল-এর বিবৃতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে”, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকলেন। “এটা পাকিস্তানের সরকারের-ও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ক্যানবেরায় এর দূতাবাসের মাধ্যমে।

মাননীয় কিথ যোগ করলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সাম্প্রতিক অধিবেশনে ভারতের প্রশ্ন উত্থাপনের অধিকার কে নিউজিল্যান্ড সমর্থন করেছে।৭ই মে পরিষদের সামাজিক সমিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী নিয়ে নিউজিল্যান্ডে যে গভীর উদ্বেগ অনুভূত হয়েছে নিউজিল্যান্ড স্থায়ী প্রতিনিধি তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।“এই পরিস্থিতির মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি হল এই যে,এই রক্তপাত ও দুর্ভোগ,নিউজিল্যান্ডবাসীর সবচেয়ে বেশী মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে”,জনাব স্কট বলেছেন, “কিন্তু উপমহাদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর তাৎপর্য নিয়েও আমরা সমানভাবে উদ্বিগ্ন”।

“সরকার পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে এই দেশে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে শুধু তাই উল্লেখ করেননি” প্রধানমন্ত্রী বললেন, “আমরা এটা চিহ্নিত করেছি যে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ-ও প্রয়োজন।এখন এখানে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লক্ষ শরণার্থী ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে রয়েছে এবং তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না যদি না বিদেশ হতে বৃহদায়তনের সাহায্য আসে।আমি অনুধাবন করছি নিউজিল্যান্ড এর ভিতরে ইতিমধ্যে একটি প্রকাশ্য আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে;মাননীয় সরকার প্রস্তুত এই মানবিক প্রচেষ্টায় সহযোগিতা প্রদান করতে এবং সাধ্যমতো অবদান রাখতে”।

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মাননীয় ধর্মযাজকের আবেদন
২ই জুন, ১৯৭১

অর্থনৈতিক পরিত্রাণের উপর আলোচনা হওয়ার পর,২রা জুন,১৯৭১-এ সাধারণ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়,ষষ্ঠ পল বিশ্বাসীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন যুদ্ধের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক পরিণতির দিকে।নিচের বক্তব্য ধর্মযাজকেরঃ

এখন আমাদের অনুমতি দিন একটি অন্য বিষয়ে কথা বলার।

এই পর্যায়ে পরীক্ষার মধ্যে যা আমাদের এখন পীড়ন করছে তা হল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুঃখজনক অবস্থা।এটার কারণসমূহ জানা এবং এর রাজনৈতিক মূল্যায়ন করা আমাদের কর্ম নয়।আমরা দেখতে পাই এই অঞ্চলের অবস্থা ইতিমধ্যে ভয়ংকর হয়েছে গত বছরে গঙ্গার বিধ্বংসী বন্যার প্রকোপে যার জন্য আমরা কিছু সাহায্য প্রদানের চেষ্টাও করেছিলাম এবং বিশ্বজুড়ে চার্চে সাহায্যের আহবান জানিয়েছিলাম।তখন ক্যাথলিক গুরুভাইদের দান ও ক্যাথলিক সাহায্য সংস্থা তাদের উদারতার প্রমাণস্বরূপ এই সাংঘাতিক দুর্যোগে পাকিস্তানের আঘাতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসেছিলেন।আমরা-ও,আমাদের বিশেষ কৌতূহলে গত নভেম্বরে আমাদের ফিলিপাইন যাওয়ার পথে,সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রাতে ঢাকায় একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি নেয়ার যাতে কর্তৃপক্ষ ও জনগণের নিকট সাক্ষ্য আনতে পারি।কিছু মাস পরে,আরেকটি ও আরো গুরুতর ঝামেলা দেশটির পূর্বাঞ্চলকে বিশৃঙ্খল করেছে,একটি বেসামরিক দ্বন্দ্ব আন্দোলিত হচ্ছে যা কোনো ছোট অনুপাতে নয়।দুই,যন্ত্রণাদায়ক ঘটমান বিষয়টি কল্যাণের প্রতি উৎকণ্ঠিত বার্তা;বিশাল পরিমাণে নিবাসীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, ২০ বা ৩০ লক্ষ গরীব মানুষ যারা এখন খুব করুণ হালে আছে বলে জানা যায়।অন্য চলমান চিন্তার বিষয় হল যারা নিজেদের এলাকায় রয়ে গেছে,এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলো ধরে যাদের কষ্টকর ও গুরুতর

পরিস্থিতি সার্বজনীন মতামতে পর্যাপ্ত অবহিত করা হয়েছে এবং বেদনাগ্রস্ত।আমরা জানি যে সাহায্য পাঠানোর বিভিন্ন প্রয়াস ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে,শরণার্থীগণ ও জনগণ যারা নিজেদের এলাকায় অবস্থান করছে উভয়ের জন্য।মানবিক সংহতি আরও একবার নিজেকে বিচক্ষণ ও উদার প্রমাণ করলো এবং আমরাও আমাদের সঙ্গতি ও আমাদের পরামর্শ দিয়ে এটাকে উৎসাহিত করি যদিও সত্য এটাই যে এতো বিশাল চাহিদা মেটাতে এটা হয়তোবা যথেষ্ট হবে না।

কিন্তু যা সবচেয়ে জরুরি তা হল শান্তি,এবং আমরা প্রার্থনা করি শান্তি যেন দ্রুত পুনর্প্রতিষ্ঠা হয় ও ব্যাপক দ্বন্দ্বের বিপদ থেকে সর্বোত্তম উপায়ে জনগণের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি এবং সাধারণ দরকার বিবেচনায় এনে এশিয়া তে নতুন ও বিপদজনক দ্বন্দ্ব দ্বারা বিঘ্ন ঘটা রোধ করতে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিতে হবে,ও যাতে এশিয়া আধুনিক সভ্যতার প্রতি তার স্বাধীন ঐক্য এবং স্বাভাবিক বিবর্তনের মধ্যে সংরক্ষিত হয়।

এল ওসারভাতোরে রোমানো-৩রা জুন, ১৯৭১)
১৪ই জুন, ১৯৭১ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বন ভ্রমণ শেষে
জার্মানির ফেডারেল রিপাবলিক এর বিবৃতি পাঠ

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে,ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব সোরান সিং তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের পথে ৯ই ও ১০ই জুন,১৯৭১-এ জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পরিদর্শন করেন।

১০ই জুন,মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী কথা বলেছেন মাননীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী,পররাষ্ট্র বিষয়াবলীর মাননীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রী এবং মাননীয় রাষ্ট্র সচিব ডঃ ফ্রাঙ্ক এর সাথে।

৯ই জুন,উত্তর রাইন ওয়েস্টফ্যালিয়ার সরকার মাননীয় মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায় এবং দুপুরে ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধি ও সংবাদ ও টেলিভিশন-এর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ অনুস্থান ছিল।বিকালে তাঁর সংসদের মাননীয় বক্তা(হার ভন হ্যাসেল),অর্থনৈতিক সমবায় মন্ত্রী(হার এপলার),সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি(ডক্টর শ্রোডার) এবং অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনায়,পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতে শরণার্থীদের বিপুল অন্তঃপ্রবাহ নিয়ে তাঁর সরকারের বৃহৎ উদ্বেগের বিষয় ব্যক্ত করেন,যা পূর্ব পাকিস্তানের পরিণতির ফলাফল স্বরূপ কিছু সপ্তাহে ৫০ লক্ষ সংখ্যায়ন হয়েছে।মাননীয় মন্ত্রী চিহ্নিত করেছেন যে এটা ভারত সরকারের উপর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক গুরুভার চাপিয়ে দেয় নি বরং আর্থ-সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি প্রতিপন্ন হয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কে সকল সরকারি ও ব্যক্তিগত সহায়তা যা শরণার্থী ত্রাণ প্রসঙ্গে প্রদান করা হয়েছে এবং জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র সরকার ভারতে যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রতি যে সহানুভূতি ও

উদ্বেগ দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।জার্মানির পক্ষ থেকে উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং গভীর উদ্বেগের সাথে কঠোর সমালোচনা করেছেন যে এটা উন্নতির পশ্চাৎধাবন করছে ও সেই অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঝুঁকি নিয়ে সচেতন ছিলেন।সেখানের চুক্তিতে ভারত একা শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানের প্রকাণ্ড দায়িত্ব পালনের অবস্থানে ছিল না।জার্মান পক্ষ চিহ্নিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সচিবের আবেদনে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ইতিমধ্যে শরণার্থীদের জন্য ইউএন দূতাবাসে প্রথম অনুদান দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রীপরিষদ শরণার্থীদের আরও সহায়তার ব্যাপারে ১০ই জুন এর সভায় বিবেচনা করবেন।
দুই মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী একমত হয়েছেন যে শরণার্থীদের নিজের ঘরে ফেরার জন্য এই সমস্যার একটি আশু রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।
বৈদেশিক বিষয়াবলীর পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর ভারতীয় অতিথির কাছে জার্মানি এবং বার্লিন ও জার্মানির সাথে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর সম্পর্কের সমস্যাগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারত সরকারের তরফ থেকে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে পুনর্মিলন ও সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বিশেষ সমাদর জানিয়েছেন।

এই আলোচনা সংঘটিত হয়েছিলো জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সমঝোতার সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার মানসে।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ ই মারকস এর বিবৃতি
১৫ই জুন, ১৯৭১
নিম্নলিখিত লেখাটি ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর চিঠি হতে নেয়া।মাননীয় কার্লোস পি রমুলো,ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী দেবা রাও কে বলেছেন, “আমি আপনাকে জানাতে সম্মানিত বোধ করছি যে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে ১৫ই জুন ভারতের মহামান্যা প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো চিঠির জবাবে,১৮ই মে,১৯৭১ এ মাননীয় রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত বিবৃতি সাংবাদিকদের নিকট জারি করেছেন”।

“ফিলিপাইনের সরকার এবং জনগণ পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতির দ্বন্দ্বের কারণে বিরূপভাবে আক্রান্ত মন্দাবস্থার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে”।

“যদিও প্রথমদিকে এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শাসনে রাজনৈতিক সমস্যা হওয়ায়-ফিলিপাইন এর অংশী হতে চায় নি-এটা এখন লাখো বাঙালির দুর্ভোগ,প্রতিনিয়ত তার তীব্রতার পটভূমিতে একটি মানবিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের পূর্ব বাংলা থেকে ভারতের পশ্চিম বাংলা অঞ্চলে যাত্রা জোয়ারের অনুপাতে পঞ্চাশ লক্ষের কাছে পৌঁছেছে এবং কলেরার মহামারী প্রকোপ তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে”।

“এই পরিস্থিতিতে ফিলিপাইন মনে করে সকলেরই দ্রুত ও সারগর্ভ ত্রাণ শীঘ্রই প্রস্তুত করা প্রয়োজন।পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ,ভারত সরকার যার পশ্চিম বাংলার উপর আইনগত অধিকার রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সকল সদস্য সহ পুরো

জাতি উদ্বিগ্ন”।

“মানবতার খাতিরে,ফিলিপাইন বাঙালিদের কষ্ট উপশমে এবং শান্তির জন্য যদি সেই এলাকায় বিপর্যয় প্রতিহত করতে হয় তবে প্রয়োজনীয় অবস্থা ফিরিয়ে আনার সম্মিলিত কার্যে সচিব-জেনারেল ইউ থান্ট ও তাঁর পবিত্র ধর্মযাজক ষষ্ঠ পল এর সাথে একটি আহ্বানে মিলিত হয়েছে”।

“এই উদ্বেগের প্রতীক স্বরূপ ফিলিপাইন সরকার,পশ্চিম বাংলায় শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ কার্যের জন্য,ফিলিপাইন ন্যাশনাল রেডক্রস এর মাধ্যমে এক জাহাজবোঝাই পণ্যদ্রব্য পাঠাচ্ছে,প্রধানত এক হাজার টন চিনি ভারতীয় রেড ক্রস এর মাধ্যমে ভারত সরকারকে হস্তান্তর করা হবে”।

মাননীয় মিশেল শার্প এর বিবৃতির প্রতিলিপি,
বৈদেশিক বিষয়াবলীর রাষ্ট্র সচিব,
কানাডা, সাধারণ সভা,
১৬ই জুন, ১৯৭১।

মাননীয় বক্তা,আমরা সকলে একটি রাজনৈতিক সমাধানের চাপ অনুভব করছি।এটাই একমাত্র সম্ভাব্য রাস্তা এই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক মীমাংসা হচ্ছে শরণার্থীরা ভারতেই অবস্থান করবে এবং শান্তির পথে কাঁটা হয়ে থাকবে,যদি এভাবেই রাখা হয়।সুতরাং আমরা সকলে আমাদের সর্ব ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছি এবং পাকিস্তান সরকার কে মীমাংসার গুরুত্ব বোঝাতে প্রতিটি সম্ভাব্য পথ ব্যবহার করছি,যা গণতান্ত্রিক ও অসামরিক নিয়ন্ত্রণে গঠিত।

হ্যাঁ মাননীয় বক্তা,আমরা এই সমস্যা বিবেচনা করছি।আগামী সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানে সাহায্য-সংঘ নিয়ে একটি সভা আছে।আমি আশা করছি আগামী বুধবারের মধ্যে আমি মাননীয় সদস্যের উত্থিত বিষয় সহ,সকল বিষয়ের উপর একটি বিবৃতি তৈরি করতে সমর্থ হব।সম্ভবত আমি আরো যোগ করব যে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, অন্টারিও সরকারের দান করা কিছু এ্যাম্বুলেন্স সহ জরুরি সরবারাহ পরিবহণের জন্য দুটি হারকিউলিস বিমান-ও প্রদান করেছেন।এই হারকিউলিস বিমানগুলো আগামীকাল সকালে সরাসরি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

* * *

মাননীয় বক্তা,আপনি যদি একটি সংক্ষিপ্ত জবাব দেন,অবশ্যই এর কাংখিত মিমাংসা্য়‌,সেই ব্যাক্তিগণ যারা পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অনুবর্তী নির্বাচিত হয়েছে,তাদের-ই পাকিস্তান শাসনের দায়িত্ব দেয়া হবে,বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের।

(ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের তর্কবিতর্কের মুদ্রিত বিবরণী হতে উৎকলিত-১৬ই জুন,১৯৭১)
.

পূর্ব পাকিস্তানের মানবিক এবং উদ্বাস্তু পরিত্রাণ প্রচেষ্টার উপর ভারতের একটি বিবৃতি।
১৮ মে,১৯৭১

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দূর্ভোগ এবং অসচ্ছলতা নিয়ে গুরুত্বের সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন যেটি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক বিশৃঙ্খলার উদয় ঘটিয়েছিল।
এই সমস্যার দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে জড়িত আমাদের নির্দিষ্ট মনোযোগের প্রথমটি হলো চুক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা যেটিতে নির্বাসনের পুনরুদ্ধারে প্রশাসন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অনুমতি দেওয়া হবে যাতে খাদ্য বন্টন এবং অন্যান্য অপরিহার্য সেবা পুনরায় শুরু করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, উদ্বাস্তু যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে গেছে তাদের তদারক করতে হবে।যত দ্রুত সম্ভব আমরা আমাদের উদ্বেগ সর্বসমক্ষে এবং গোপনে প্রকাশ করেছিলাম শান্তিপূর্ণ বাসস্থানের যেটি পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক জীবন ধারনের অনুমতি মিলবে এবং উদ্বাস্তুরা নিজেদের ঘরে ফিরবে।

পরিত্রাণ প্রচেষ্টার মত লোকহিতকর কাজে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার সাথে আমরা আলোচনা করেছি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য আগ্রহী দেশসমূর্হকে আকস্মিক ঘটনার পরিকল্পনায় যথাযথ দায়িত্ব গ্রহনে আহবান জানিয়েছি। এই একটি সমস্যা মূলত সরকারের প্রধান সমস্যা হিসেবে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং জনগন অবিলম্বে তা সমাধানে উদ্বিগ্ন। তাদের প্রচেষ্টা অপরিহার্য কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রচেষ্টায় এবং তাদের সম্পদ প্রতিস্থাপনে মহান সহায়ক হতে পারে।

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক মুক্তির পহেলা এপ্রিলের উৎসর্গে জাতিসংঘ মহাসচিব উ-থান্টস এর সাথে আমরা নিজেদেরকে সর্বসমক্ষে এবং গোপনে যুক্ত করেছি।পাকিস্তানের সরকারের সাথে আমরা বারবার আলোচনা করেছি।
সচিব রজার বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২৭ শে এপ্রিল একটি বার্তায় সাধারন সভায় যোগদান করেন। মানবিক সহায়তায় তার প্রস্তাব তিনি পুনঃআরম্ভ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বন্টনের ৭.৫ মিলিয়নের উপর এবং ১০০ মিলিয়নের বেশী মার্কিন মালিকানাধীন পাকিস্তানি মুদ্রা পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুত করেছিলেন। ঘূর্নিঝড়ে দুর্যোগপূর্ন এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য চুক্তির সাথে দ্রুত খাদ্য শস্যের ১৫০০০০ টন প্রদানের জন্য আমরা সামনের দিকে এগুতে পারি। আমরা আরো দ্রুত ১৭০০০০ টন গম দখলের জন্য মোটামুটি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্বের চুক্তির ভারসাম্যে রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব বন্দরে প্রেরণ করতে এবং বিতরন সুবিধার জন্য অনুমতি নিতে হবে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহু সংখ্যক উদ্বাস্তু ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। ইন্ডিয়ার সরকার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং তিনি উদ্বাস্তুদের সাহায্য করতে ক্রোড়পত্রে এটি নিজেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে দ্বিপার্শ্বিক সহায়তা চেয়েছিলেন। উদ্বাস্তুদের আন্তর্জাতিক মুক্তি প্রচেষ্টার সমর্থনে আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি যেটি জাতিসংঘের হাই কমিশনার দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল। আমরা খুব আন্তরিকভাবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর সাথে কাজ করছি যেটি মুক্তি প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের হাই কমিশনারের সাথে আরো সহযোগী হবে।

যত দ্রুত সম্ভব ইন্ডিয়ার মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তুর স্রোতের সংখ্যা অটলভাবে বলিষ্ঠ করতে অামরা একটি কর্মসূচী শুরু করেছি।এই সপ্তাহের সবশেষে অামরা একটি ক্যাথলিক ত্রান সেবা “কেয়ার” বিশ্বের গির্জা সেবার জন্য অপেক্ষা করেছি। এবং লুথেরান বিশ্ব সংঘ যত বেশী সম্ভব ৩০০০০০ উদ্বাস্তুদের “পি এল- ৪৮০ খেতাব খাদ্য অাইটি” ব্যাবহার করে প্রতিপালন করবে।এই জন্য এবং অন্যান্য মুক্তির উদ্দেশ্যে অামাদের অাছে অনুমোদিত ২.৫ মিলিয়নের বেশী খাদ্য এবং অন্যান্য সহায়তা অামাদের প্রাথমিক অবদান হিসেবে জরুরী মুক্তি কার্যকলাপকে সচল করতে পথ খুঁজে পেয়েছি। যখন অান্তর্জাতিক মুক্তি প্রচেষ্টা সংগঠিত হচ্ছে একটি “ইউ এন এইচ সি অার ” দল হিসেবে সম্প্রতি ভারতে মুক্তির প্রয়োজনে পরিমাপন দরকার। অামরা বিবেচনা করব কি ধরনের অতিরিক্ত অবদান অামাদের গ্রহন করতে হবে যখন এই দল এটির অাবিষ্কারকে রিপোর্ট করেছে।

১৯৭১ সালের ২১ শে নভেম্বরে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান উইল স্টফ জনসাধারণের কাছে তার এক বিবৃতিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সামরিক দ্বন্ধ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্ব পাকিস্তান ও তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ন রাজনৈতিক সমাধান আনতে ইচ্ছাপোষণ করেন এবং তাদের দেশের শরানার্থীদের দ্রুত নিরাপদে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়।

পাকিস্তানের কাছে যথেষ্ট দায়িত্বশীল সরকারের উদাহরণ ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
যাতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিকরণ নিশ্চিত করা যায়।
সেভেয়েত সরকার সেই উদ্দীপনা থেকে বার বার পাকিস্তান সরকারের কাছে আবেদন করে।
ভারত সরকারও বারংবার শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রস্তাবনা তৈরী করে।

দুঃখজনকভাবে পাকিস্তান সেনা কতৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারটি নাকচ করে দেয়।
তারা ভারতের সাথে তীব্র সংবেদনশক্তি হয়ে উঠে এবং সক্রিয়ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।
সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতীয় উপমহাদেশে আক্রমণাত্মক সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ লুকায়িত এবং বিকৃত।
এটি অবশ্যই বর্ণিত যে সামরিক দ্বন্ধের প্রধান কারণ পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নীতির বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থান।
এটা জানা যে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে দেশের সাধারণ সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামীলীগ বিপুল জয়ে নিমজ্জিত হয়।
প্রগতিশীল সামাজিক অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সাম্রাজ্যবাদী সামরিক জোট “দ্যা সাউথইস্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন” এবং “দ্যা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন” থেকে পাকিস্তানের প্রত্যাহারের জন্য
পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলের এই নির্বাচন স্বায়ত্বশাসনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ, পাকিস্তানের সামরিক কতৃপক্ষ নিরবিচ্ছিন্নভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে, সংসদীয় সমাবর্তন রোধ করে এবং আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে দেয়।
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এককগুলো পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার দখলদারিত্ব দমন করে এবং
তখনকার আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
পূর্ব পাকিস্তানি জনসংখ্যার ১৩ শতাংশের প্রায় ১০ মিলিয়ন লোক পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী আতঙ্কে ভারতে পালিয়ে যায়।
তাদের খাবার এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ভারতের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল এবং একটি সামাজিক সমস্যায় পরিনত হয়ে গিয়েছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশের সক্রিয় অবস্থা শিথিল হওয়ার পেছনে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের ফেরত দেয়ার সমস্যা।
পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তি নিঃসন্দেহে ৭৫ মিলিয়ন অধিবাসীদের স্বার্থ এবং সমর্থনযোগ্য দাবীগুলো নিয়ে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সম্ভব।
ভারতীয় এবং পাকিস্তানি জনগনের জন্য শান্তিপূর্ন এবং স্বাধীন উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের রক্তপাত ও ক্ষতচিহ্ন অনতিবিলম্বে আরোগ্য করা উচিত এবং পূর্ব পাকিস্তানে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে নিস্পত্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুহার্তো এর বিবৃতি, জার্কাটা

নিম্নলিখিত বিবৃতিটি একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া:
রাষ্ট্রপতি সুহার্তো গতকাল (৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বলেন
-ইন্দোনেশিয়া ইন্দো-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত আছে যদি যুদ্ধরত দুই পক্ষ অনুরোধ করে।
রাষ্ট্রপতি গতকালের বিবৃতিতে জানান ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সময়ের চলিত সংকট এবং বিনা গ্রাওয়ার বিল্ডিংয়ের সীমিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া, ভারত পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সবসময় ভারত-পাকিস্তানী সম্পর্কের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।
“বর্তমান সময়ে দুই দেশের মধ্যে উন্মুত্ত যুদ্ধ উদ্বেগকে বৃহত্তর করছে।” রাষ্ট্রপতি সুহার্তো বিবৃত করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন- ইন্দোনেশিয়া উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা যেমন: বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনের মুখোমুখি হয়ে বুঝতে পেরেছে যে, যুদ্ধই সকল সমস্যার সমাধান অর্জনের একমাত্র পন্থা নয়।
তিনি আরোও বলেন যে, যুদ্ধ জনগনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং বৃহত্তর দূর্দশা নিয়ে আসে।
ইন্দোনেশিয়ান সরকার আশা করে যে যুদ্ধরত দুটি দেশ, যুদ্ধের ফলাফল উপলব্ধি করবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ মিমাংসার প্রচেষ্টা করবে।
(জার্কাটা টাইমস- ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১)

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী জনাব মি. লী কুয়ান ইউ
-ক্ষমতাসীন জনগনের ১৭ তম কংগ্রেস দল, সিঙ্গাপুর।
১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জনাব লী জনসাধারণের জন্য তৈরী প্রথম ঘোষনাপত্রে বলেন, যদিও পশ্চিম এবং পাকিস্তান একই ধর্মমতে বিশ্বাসী তবুও তাদের আলাদা সংস্কৃতি এবং প্রতিযোগিতায় লিপ্ত অংশগ্রহনকারী একদিকের অসম চিকিৎসা ব্যবস্থা চূড়ান্ত দুঃখজনক অবস্থায় উপনীত করে।

ক্ষমতাসীন জনগনের দল ১৭তম কংগ্রেসে যারা প্রস্তুতকৃত লেখার বাইরে বলেছিলেন তার মধ্যে উনার দ্বিতীয় সেক্রেটারী অন্যতম।
জনাব লী জোর দিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা বহুসংখ্যক লোকজনের সহনশীলতার প্রয়োজনের জন্য।

বৈদেশিক মন্ত্রী জনাব রাজারাথনাম বলেন, বাংলাদেশের দ্বন্ধ হল ঘরোয়া দ্বন্ধ কীভাবে শীতল যুদ্ধে পরিণত হতে পারে তার সাম্প্রতিক চিত্র।
তিনি ইউ এন এর সাধারণ পরিষদের ভোটদান কালে যুদ্ধবিরতির সমাধানে বলেন, এটি একটি শীতল যুদ্ধ যা শুধু সারিবদ্ধ বাস্তবতা নির্ধারণ করে।
পূর্ব বাংলার জনগণের দুঃখ-দূর্দশার জন্য উদ্বেগ নয়, সঠিক বা ভুল বিবেচনা করেনা।
তিনি আরোও বলেন, এ কারণেই সিঙ্গাপুর নিজেকে নিবৃত্ত করে রেখেছিল।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!