শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটির ম্যানিফেস্টো | বাংলাদেশের ডকুমেন্টস | অক্টোবর, ১৯৭১ |
ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটির ম্যানিফেস্টো- অক্টোবর, ১৯৭১।
পূর্ববাংলার আগের অপরিমেয় মর্মপীড়া এবং দু:খজনক অবস্থা সামনের মাসে আরো খারাপের দিকে যাবে, বিশেষত কৃষিক্ষেত্রের ধ্বংসের হিসেব সাপেক্ষে, ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর ফ্রান্সের জনগণ এর মতামত আহবান করে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান বাঙ্গালীদের ঔপনিবেশিক ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছিল। একটি খুবই ব্যাপক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য, দেশে সংগঠিত সার্বজনীন ভোটাধিকার এর উপর ভিত্তি করে প্রথম অবাধ নির্বাচনের সময় প্রায় নিজেরাই সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষিত। ১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এই স্বায়ত্তশাসন প্রদত্ত ( Resolution of Lahore).
এই নির্বাচন কর্মসূচীতে আওয়ামিলীগ পুনরায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্তাপন করে। এই আইনত কর্মপন্থার উপর নির্ভর করে, পূর্ববাংলার ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে ওরা জয় লাভ করে, পুরো পাকিস্তানে ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গণপরিষদের অধিপতি হিসেবে নিশ্চিত হয়। গণতান্ত্রিক এবং সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যে, ৫৫ মিলিয়ন পশ্চিম পাকিস্তানীর বিরুদ্ধে, ৭৫ মিলিয়নেরও বেশী বাঙালী জনতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সম্মুখে। ইসলামাবাদের সামরিক সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংকল্পবদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের রক্তের মধ্যে ডুবাতে চেষ্টা করে। আসলে, বাঙালী জাতির স্বাধীনতার জন্য সংকল্পই একমাত্র অনূসৃত পরিবর্তন, যা এটাকে সহযোগীতার প্রতি প্রত্যাখ্যান ব্যাক্ত করে, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সংবিধান অনুযায়ী, এবং গেরিলা দ্বারা গত ছয় মাসে প্রমাণিত হয় বাঙালী জনগণের ক্ষমাহীন সংকল্প।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে এই বর্বর নিপীড়ন অব্যাহত, যার কারণে, ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, এটি উদ্রেককর দুর্দশা এবং দুর্ভিক্ষ, লক্ষ্যহীনভাবে ইন্ডিয়ায় ৯ মিলিয়ন বাঙালী প্রস্থান করেছে। শরণার্থীদের স্রোতের পরিমাণ এখনো প্রতিদিন দশ হাজারেরও বেশী।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি স্বেচ্ছাকৃত এবং নিয়মিত ব্যাতিক্রমধর্মী গাম্ভীর্যের লঙ্ঘন এবং সুযোগ, এবং বিশদভাবে:
১. মানুষের অধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা, অনুচ্ছেদ – ২১;
২. জাতিসংঘের দলিল, রাজনৈতিক এবং নাগরিকের অধিকার সচেতন আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ১ এবং ২৫।
৩. প্রতিরোধ ও গণহত্যা অপরাধ দমনের জন্য সম্মেলন ( ৯ ই ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত এবং ১ ই ডিসেম্বর ১৯৫১ সালে প্রাণশক্তি পায়)।
আসলে সব হিসেবে এটা প্রমাণিত যে, সেখানে নিয়মকানুন বর্জন করে অভিজাত এবং বাঙালী জনগণের নেতাদের এবং পুরো দেশের জনগণের উপর ধ্বংসকরণ চলছে।
দশ মিলিয়ন লোকের ভাগ্য ঝুঁকির মুখে, কেবল যেহেতু অপরিহার্য নীতি এবং দাম জড়িত, একটি জাতি জোড় এবং নিপীড়ন দ্বারা বঞ্চিত এটাকে মীমাংসা করা এর অধিকার।একটি একক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের অন্যত্রস্থীতি পেছন থেকে ভরসা করা দীর্ঘসময় ধরে সম্ভব নয়।এই দু:খজনক ঘটনার বিভিন্ন মাত্রা এটাকে আন্তর্জাতিক ব্যাপারে রুপ দিয়েছে। অধিকাংশ সরকারের নিরবতায় আমাদের এটা নিয়ে কথা বলতে এবং ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে।আমাদের কার্যকলাপ অবশ্যই নিম্নলিখিত নির্দেশনাবলী অনুযায়ী বিশেষভাবে প্রয়োগ করা হবে।
১) প্রাণবধের জন্য সাহায্য। আমাদের সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ যতদূর চাহিদা, তার অনুপাতের বাইরে, এবং সামান্য পরিমাণে আন্তর্জাতিক সহায়তা সরবরাহ করা হয়।যার ১০ ভাগই ব্যয় করা হয় ইন্ডিয়ায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বেঁচে থাকার জন্য। আমাদের দেশ খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব বেশী কিছু করতে প্রস্তুত। পূর্ববাংলার জনগণের কাছে শুভেচ্ছা হিসেবে সহায়তা পাঠানো হয়েছে, এটা যুক্তিযুক্ত নিশ্চিয়তা যে পাকিস্তানী সরকারের রাজনৈতিক চাপের কারণে এটার পরিবর্তন হবে না।
২) একটি রাজনৈতিক সমাধান কামনা। এটি অবশ্যই প্রকৃত এবং বাঙালী জনগণের মনোনীত প্রতিনিধির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে হতে হবে। এর দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির কথা প্রকাশ পায়।শরণার্থীদের, সম্মতিক্রমে অবাধে প্রত্যাবর্তন করা গেলে প্রমাণিত হবে যে একটি সন্তোষজনক নিষ্পত্তিতে পৌঁছানো গেছে।
৩) অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব। আমাদের দেশ পাকিস্তানী আর্মীদের অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে প্রধানতম, শেষ চুক্তিতে কয়েক ডজন ” Mirages” অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আমরা বিদেশী উৎস থেকে জেনেছি যে আমাদের সরকার এই চুক্তি নিষ্পত্তি এবং অস্ত্র না দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।আমাদের সরকার থেকে এই বিষয়ে সরকারী ঘোষণা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। যতক্ষন না পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় সামরিক অপারেশন বন্ধ হবে, পাকিস্তানে সকল প্রকার অস্ত্র, যুদ্ধোপকরণ এবং অতিরিক্ত অংশের সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিৎ।
৪) অর্থনৈতিক সহায়তার চাপ, ফ্রান্সের, আন্তর্জাতিক সহায়তা কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানের প্রতি, উত্তাপন করা উচিৎ, সহায়তা কেন্দ্রের বিলম্বিত প্রভাব বজায় রাখা, সেইসাথে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার বরাদ্দ ইসলামাবাদে বন্ধ করে দেওয়া, যতক্ষণ পর্যন্ত, পাকিস্তানি সরকার বাঙালি জনগণের উপর নিপীড়ন অব্যাহত রাখবে।
ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটি,উপরিউক্ত বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর ব্যবস্থা গ্রহণকে উৎসাহিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, পূর্ববাংলার পরিস্থিতির উপর ফ্রান্সের জনগণের মতামত অবহিত করা এবং যারা অত্যধিক সহজে শক্তিহীনতায় মারা যাওয়ার পথে তাদের মধ্যে যোগাযোগ নিশ্চিত করা।