You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.11 | বাংলাদেশের শরণার্থী প্রশ্নে হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের প্রধানের বিবৃতি | বাংলাদেশ ডকুমেন্টস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের শরণার্থী প্রশ্নে হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের প্রধানের বিবৃতি বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১১ নভেম্বর, ১৯৭১

হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের সভাপতির বিবৃতি।
নভেম্বর ১১, ১৯৭১।

এই বিবৃতিটি সাবেক হাঙ্গেরীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী এবং হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের সভাপতি, লেনিন নোবেল বিজয়ী ড: এন্ডার সিক প্রকাশ করেন।পূর্ববাংলার শরণার্থীরা ইন্ডিয়ায় প্রস্থানের সমস্যাগুলো এবং কারণের বিষয় নিয়ে।

আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, ইন্দো- পাকিস্তানের সীমান্ত দিনদিন খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে।সম্ভবত বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে এমন কোন জায়গা নেই, যেখানে এরকম সামরিক দ্বন্দ্ব বেঁধেছে। আমরা নির্বিকার ছিলাম। ইন্দো – পাকিস্তান উপ মহাদেশের জনগন বিশেষভাবে আমাদের কাছের।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, Sandor Korisi Csoma, Anrel Stein এবং Ervin Baktai ঐতিহ্যগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কে শক্তিশালী অবদান রেখেছে, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক সম্পর্ক দ্বারা।শুধুমাত্র ইন্ডিয়াতেই নয় বরং পাকিস্তানেও। হাঙ্গেরীয় জনগনের কাছে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান ভালো বন্ধু এবং সীমান্তের উভয় পাশের পরিখাগুলোতে শুয়ে থাকা মানুষ গুলোর জীবন আমাদের কাছে খুব দামী।

আমরা এই বিষয়ে আরো বেশী উদ্বিগ্ন যে, বর্তমানে এই যুদ্ধটি স্থানীয় পর্যায়ে থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বিপদজনক, ছোট মনমানসিকতা এই যুদ্ধটিকে মহাদেশ পর্যন্ত সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারে এবং যে দ্বন্দ্বটি সহজাত প্রবৃত্তি থেকে উৎপত্তি হয় তা আরো ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব কাছ থেকে দেখছি কিভাবে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। গতবছর পাকিস্তানে কি হয়েছিল তা আমরা দেখেছি এবং বিশেষত এই বছর বসন্তকালে যখন পূর্ব পাকিস্তানের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে হত্যা করার জন্য।মার্চের শেষদিকে ঢাকায় যে ভয়ানক হত্যাকান্ড ঘটেছিল এবং তারপর প্রায় এক কোঠি মানুষ ইন্ডিয়াতে পালিয়ে গিয়েছিল তা আমরা অবগত আছি। আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এই মানবিক বিপর্যয়ে, যেটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল শরণার্থী শিবিরে, এবং লাখ লাখ লোক ঘর আর দেশ ছেড়ে, ক্ষুদা আর দুর্দশায় বসবাসের চিত্র।এই বিষয়ে আমাদের জনগণের উদ্বেগ সুস্পষ্ট, যে কারণে হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের প্রতিনিধি দ্বারা আমরা ৮৫০০০ ডোজ কলেরা ভ্যাক্সিন শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়েছিলাম।ইতিপূর্বে, একটি হাঙ্গেরীয় শান্তি প্রতিনিধিদল ইন্ডিয়ায় ছিল।এবং ওরা তাদের সাথে ব্লাড প্লাজমা,ঔষধ, কম্বল শরণার্থীদের জন্য নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের মোট জনসংখ্যা ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত শরণার্থীর সংখ্যার চেয়ে বেশী নয়। আমরা অবগত যে, ইন্ডিয়ার জন্য এটি কত বিরাট বোঝা এবং সে জন্য আমাদের পরিমিত সামর্থ্য দ্বারা আমরা প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নিয়েছি সাহায্যর জন্য।

ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান উভয় দেশের সকল জনগণ আমাদের বন্ধু। জাতীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা এবং সামগ্রিক আত্ম- নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের চেষ্টা, আমাদের সহানূভুতি আহবান করে, এবং আমরা তাদের পাশে আছি।কিন্তু পাকিস্তানে সৃষ্ট বর্তমান উদ্বিগ্নতা নিয়ে আমাদের প্রত্যয় লুকায়িত রাখতে পারিনা।একমাত্র পাকিস্তানকেই এর একটা সমাধান বের করতে হবে, শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার সাথে সম্পর্কের জন্য নয়, এটা আমাদের মতামতের মধ্যে কেবল দ্বিতীয় প্রশ্ন,
কিন্তু সবাইকে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যাওয়া লাখো মানুষের ভাগ্যে নিয়ে পাকিস্তান নির্বিকার থাকতে পারে না।

এই বিতর্কের বিষয়ে সমাধানে তারা যতদিন পর্যন্ত কোন সম্ভাব্যতা খুঁজে বের করবে না ততদিন এই উপমহাদেশে কোন শান্তি বিরাজ করবে না। পূর্ব পাকিস্তানে বৈধভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে জনগণের অধিকারের জন্য কথা বলেন।পাকিস্তান সরকার যদি মার্চের অনুকরণীয় নীতি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিত, তাহলে হয়ত সমাধানের পথে আসতো, যদি তারা পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিকে ছেড়ে দিত এবং তাদের সাথে আলোচনা করতো, পুরো পৃথিবী তাদেরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখতো, পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে সমাধান হয়ে যেত, শরণার্থীরা ঘরে ফিরে যাওয়ার সাহস এবং নিশ্চয়তা পেত, এটাই যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র সম্ভাবনা ছিল।

একটা ছোট দেশ এবং ছোট জাতি হিসেবে আমরা জ্ঞ্যত যে, আমাদের কথা, দুইটি জাতির মধ্যে এরকম মারাত্মক দ্বন্দ্ব সমাধান করতে পারবে না।কিন্তু বর্তমান এই খারাপ অবস্থায় এটা প্রত্যেকটা মানুষের শুধুমাত্র অধিকার নয় বরং দায়িত্ব যে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। হাঙ্গেরীয়ান শান্তি পরিষদের বক্তব্য এবং অবস্থান, দশ লক্ষ হাঙ্গেরীয়ান মানুষের মতামত উপস্থাপন করে।

এই মতামতটি একেবারেই দ্ব্যর্থহীন, এই উদ্বিগ্নতার বিষয়ে এটি শিথলীকরণ এবং লাগবকরণ ব্যতীত একটি রাজনৈতিক সমাধান আশা করে যা এই উপমহাদেশের কাছে কল্পনাতীত। আমরা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু উচ্চ রাষ্ট্রনায়কত্ব এবং সংযম দ্বারা যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব এখনো থামানো সম্ভব।