শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি এইচ. সি. টেম্পলটন এবং গায়ানা প্রতিনিধি মি. বিসেম্বর-এর বক্তব্য | বাংলাদেশ ডকুমেন্টস | ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি এইচ. সি. টেম্পলটন -এর বক্তব্য
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আমরা একটি রাষ্ট্র হিসেবে এটাই মনে করি যে, ভারত ও পাকিস্তানের জনগনের এই সমস্যা দূর করার জন্য কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘের কাজ করা উচিত। আমরা এই ব্যাপারে সরাসরি পাকিস্তান সরকারকেও বলেছি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের অধিকার রক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আমরা মনে করি পাকিস্তান সরকারের অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসা এবং পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জননেতার প্রহসনমূলক বিচার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পাকিস্তান সরকারের উচিত তাঁর(জননেতার) অধিকারকে স্বীকৃতি দান করা এবং আমাদের সবারই এই শাসনপন্থা পরিবর্তন করার জন্য বলা অত্যাবশ্যক।
কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে গায়ানা প্রতিনিধি মি. বিসেম্বর -এর বক্তব্য
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আমি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে এটা বিশ্বাসও করিনা আবার অবিশ্বাসও করিনা যে আমাদের স্বাধীন কোন অঞ্চলের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে কি না। কিন্তু আমি এটাই পেশ করছি জনাব সভাপতি,যে যেখানে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ, যেখানে মানবতার অবমূল্যায়ন এবং যেখানে নৈতিকতার বিসর্জন হয়ে পড়ে এবং একই সাথে সকল আন্তর্জাতিক নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়, তখন এটা আমাদের মত সকল কমনওয়েলথ সদস্যের একটি অধিকার ও কর্তব্য হয়ে পড়ে এমন কোন সভায় নিজেদের মত ব্যক্ত করা।
………………আমি মনে করেছিলাম, মি. জাফর(কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের তৎকালীন আইনমন্ত্রি)) এবং পাকিস্তানে বসবাসকারী মানুষজন সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যেকারণে তারা এই সভাটি তাদের দেশে অনুষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল। মি. চেয়ারম্যান, পাকিস্তানে বসবাসকারী মানুষের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা কীভাবে এই সভা পাকিস্তানে করার চিন্তা করতে পারি যেখানে তারা একে নির্বাচন বলে, এবং সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান জয়লাভ করার পরেও পাকিস্তানে কোন সরকার গঠন করার তারা কোন অনুমতি পায়না।
মি. চেয়ারম্যান, আমি এটা বলেছি কারন, আমার এক বিশেষ বন্ধু আমাকে জানিয়েছে যে নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু মি. চেয়ারম্যান, মূলকথা হল, লালচীন যেভাবে জাতিসংঘে রয়েছে সেভাবে পূর্ব পাকিস্তানও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছে, বিপুল জনসমর্থন পেয়ে তারা জয়লাভ করেছে এবং সিংহভাগ আসন তারাই পেয়েছে। সুতরাং চীন যেকারনে জাতিসংঘে সয়েছে, সেকারণেই পূর্ব-পাকিস্তানকেই তাদের দেশ চালানো উচিত। আমরা কুয়ালালামপুরে বসে কলোম্বের কোন মানুষকে তার ঘরের আসবাবপত্র সে কিভাবে রাখবে তা বলে দিতে পারিনা। কিন্তু যদি আমরা এমন কিছু ঘটতে দেখি যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অগ্রহনযোগ্য, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী ইত্যাদি তাহলে আমি মনে করি কমনওয়েলথ সদস্য হিসেবে এটা আমাদের অধিকার সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার বা হস্তক্ষেপ করার এবং একই সাথে আমাদের নিজ নিজ সরকারপ্রধানকে এটা বলা যেন তারা জাতিসংঘে উক্ত ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলে। কারন ভারত এবং পাকিস্তানে যা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা বর্তমান পৃথিবীতে আর কিছু নেই…
………………………………সুতরাং মি. চেয়ারম্যান, আমি মনে করি আমার জানামতে আমরা যারা এখানে ৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তাদের কোনভাবেই এই ভয়াবহ নৃশংসতার নিন্দাপ্রকাশ থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়। নিন্দাপ্রকাশ করা উচিত তাদের প্রতি যারা গণতান্ত্রিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছে এবং একই সাথে লঙ্ঘন করেছে সংবিধানকে এবং ভারতীয় জনগণের উপরে বয়ে এনেছে সীমাহীন নৃশংসতা ও ভয়াবহ দুর্ভোগ।