শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের পাকিস্তানী শরণার্থী বিষয়ক কমিটিতে গনচীনের প্রতিনিধি ফ হাও-এর বক্তৃতা | চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ | ১৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
ভারতে পাকিস্তানি শরনার্থীদের বিষয়ে জাতি সংঘের সাধারন অধিবেশনের তৃতীয় কমিটিতে চীনের প্রতিনিধি ফ হাও এর বক্তৃতা, ১৯শে নভেম্বর, ১৯৭১
চীন সরকার এবং জনগণ সবসময় ভেবে এসেছে যে, কোন দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো সেই দেশের জনগণের নিজেদেরই ঠিক করা উচিত। পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রশ্নটি উদ্ভূত হয়েছে তা সম্পুর্নভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় যেটা কেবলমাত্র পাকিস্তানের জনগণ নিজেরা সমাধা করতে পারে এবং কোন অজুহাতেই এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোন দেশের নেই।
পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের প্রসংগ উঠেছে এবং সেটা এই অবস্থায় এসেছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট দেশের হস্তক্ষেপের কারনে, যার ফলে উপমহাদেশে বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার বারবার উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য এবং শরনার্থীদের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই সবগুলো প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এটা পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের প্রসংগকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী কর্মকান্ড সংঘটিত করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানি শরনার্থী প্রসংগে একটি যুক্তিসংগত সমাধানে পৌছানোর বিষয়টিকে অসম্ভব করে তুলে পুর্ব পাকিস্তানি শরনার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরে আসায় বাধা দিচ্ছে। চীন সরকার এবং জনগণ ভালভাবেই জানে যে এগুলো অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের কৌশল। আমাদের দেশের তিব্বত অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিগ্রহের পরিকল্পনা করা ও বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালানোর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যখন চীনের জনগণ এর পরিকল্পিত বিগ্রহকে বানচাল করে দিল, এটি চীনের প্রতি প্রচন্ড বিরোধিতায় তথাকথিত তিব্বত শরনার্থীর প্রশ্ন তুলে হাজার হাজার চীনবাসীকে তার দেশে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি যে পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থী প্রশ্নে একটি যুক্তিসংগত নিষ্পত্তিতে পৌছানোর জন্য সবার আগে অবশ্যই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। একমাত্র এভাবেই পূর্ব পাকিস্তানি শরনার্থীদের সত্যিকার অর্থে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সাহায্য করা হবে।
চীন সরকার সবসময় শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতি মেনে চলেছে, কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি এবং কোন দেশ তথাকথিত ‘শরনার্থী প্রশ্নে’ বা অন্য কোন অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে দৃঢ ভাবে তার বিরোধিতা করেছে। প্রদেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে, আমরা সবসময় মনে করি যে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশেগুলোর মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানি জনগণের বিপুল জনগোষ্ঠী দেশপ্রেমিক, বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধি, এবং তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে।