You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.11 | স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামে ভারতীয় ভূমিকা সম্পর্কে পিপলস ডেইলীর ভাষ্য | পিপলস ডেইলি উদ্ধৃতি: চায়না পাকিস্তা এন্ড বাংলাদেশ- আর.কে. জৈন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামে ভারতীয় ভূমিকা সম্পর্কে পিপলস ডেইলীর ভাষ্য পিপলস ডেইলি উদ্ধৃতি: চায়না পাকিস্তা এন্ড বাংলাদেশ- আর.কে. জৈন ১১ এপ্রিল, ১৯৭১

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা কি করার চেষ্টা করছে ? নিবন্ধে ” পিপলস ডেইলি “র বিবরণদাতা , ১১ই এপ্রিল , ১৯৭১

সম্প্রতি ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারের পুনঃপুন তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করেছে ।
বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাবলি যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কর্তৃক গৃহীত হয়েছে , তা একান্তই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় , যার উপর কোন দেশের নাক গলানোর অধিকার নেই এবং
তা উচিতও নয় । তথাপি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলগণ ত্বরিত গতিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে এসেছে যার মধ্যে ভারত সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী , সংসদ সদস্যগণ এবং রাজ্য সরকারের প্রধানগণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য একটা হায় হায় রব তুলেছেন । ভারতের জাতীয় সংসদ এবং
বিধানসভায় প্রকাশ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব গৃহীত হচ্ছে । ভারত সরকার এই বিষয়ে দুই পরাশক্তির সাথে মিলে একটা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনায় ব্যস্ত আছে ।
ইতোমধ্যে , ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা তাদের সম্পূর্ণ প্রচারণাযন্ত্র পাকিস্তান বিরোধী জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে নিযুক্ত করেছে । এসব উন্মত্ত কার্যাবলী ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের বিকাশের পরিচায়ক ।

প্রতিবেশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা এই ধারণা প্রচার করছে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ” ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তার
জন্য হুমকি ” । এটা প্রশ্ন উঠতে পারে ঃ এটা কি পাকিস্তান যে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি , নাকি এটা ভারত যে পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ? যখন ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা
পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছে তখন ভারতসরকার পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সৈন্য জমায়েত করছে এবং উপরন্তু সাদা পোশাকে সশস্ত্র মানুষ পাঠাচ্ছে পাকিস্তানের ভেতরে
বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা সৃষ্টির জন্য । এই শক্তির প্রকাশ কি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি নয় ?

ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা আরও দাবি করছে যে ” ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেবলমাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দেখাটা অসম্ভব করে তুলেছে। ” এধরণের
বক্তব্য পুরোপুরি অযৌক্তিক । একটি ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রতিটি দেশের প্রতিবেশি থাকে । যদি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের এই ” তত্ত্ব ” সঠিক হয় , তবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিক্রিয়াশীল যেসব দেশে আছে
তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভৌগলিক কারনের দোহাই দিয়ে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে । এহেন পরিস্থিতিতে , দেশগুলোর মাঝে কি করে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকবে ?
ইহা উল্লেখযোগ্য যে এই দুটি পরাশক্তি , যারা ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় রেখে কাজ করছে , তারা অমার্জিতভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে । যুক্তরাষ্ট্রের
স্বরাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার নাক গলানোর জন্য একটি স্টেটমেন্ট জারি করেছে যেখানে সোভিয়েত সরকার আর স্থূলভাবে কাজ করেছে । প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠানো
চিঠিতে , সোভিয়েত ইউনিয়নের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি এস. আর. পদ্গরনি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের পাকিস্তানের প্রতি হুমকির কোন উল্লেখ করেননি , কিন্তু এর বিপরীতে তিনি তিব্রভাবে পাকিস্তান
সরকারের নিন্দা করেছেন । তারা নিজেদের “বন্ধু ” বলে দাবী করে এবং ভণ্ডামি করে ” পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থ ” নিয়ে উদ্বেগ জানায় । এটা সবারই জানা , যদি কোন দেশের স্বাধীনতা , সার্বভৌমত্ব ,
একতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিঘ্নিত হয় , তবে তার জনগণের স্বার্থ বলতে আর থাকে কি ? সোভিয়েত ইউনিয়ন চেকোস্লোভাকিয়ার উপর কি করেছিল সেটা বিচার করলেই দেখা যায় , সোভিয়েত নেতৃত্ব
কিসের পক্ষে ,কিসের বিপক্ষে , এবং তারা কোন পক্ষ অবলম্বন করে ।

মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও এটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেনঃ ” আমরা দৃঢ়ভাবে এটা মেনে চলবো যে সকল দেশ পারস্পরিক সম্মানের সেই ৫টী মূলনীতি চর্চা করবে যা হলো সার্বভৌমত্ব এবন আঞ্চলিক অখণ্ডতা ,
অনাগ্রাসন এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা , সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান । ” জাতিসমূহের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখার এটাই পূর্বশর্ত । যে নিজের স্বার্থের
উদ্দেশ্যে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সে কোন ভাল ফলাফল বয়ে আনে না ।

পাকিস্তানের জনগণের আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার বিপ্লবী ঐতিহ্য আছে এবং বহিরাগত আগ্রাসী ও হস্তক্ষেপবাদিদের বিরুদ্ধে অনমনীয় সংগ্রাম করেছে । চীন সরকার ও জনগণ বরাবরের মত
পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে তাদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং প্রাদেশিক সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার এবং বিদেশী আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এই ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম সমর্থন জানিয়েছে ।