শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উপমহাদেশে শান্তি পুনঃস্থাপনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকাঃ ১৮ ডিসেম্বর তারিখে পররাষ্ট্র বিভাগের বিবৃতি | সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা | ১৮ ডিসেম্বর , ১৯৭১ |
১৯৭১, ১৮ ডিসেম্বর তারিখে প্রচারিত সোভিয়েত পররাষ্ট্র বিভাগের বিবৃতি
হিন্দুস্তান উপদ্বীপে বিদ্যমান বর্তমান পরিস্তিতি সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগকে নিম্নলিখিত
বিবৃতিটি প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছেঃ
অন্যান্য শান্তিকামী দেশের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নও পাক-ভারত উপমহাদেশে সশস্ত্র সংঘর্ষের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ও মত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে। বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা ও শান্তি বিধানের উদ্দেশ্যে যে পররাষ্ট্র নীতি পাকিস্তানের ঘটনাবলীর জন্য পাক-ভারত উপমহাদেশে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে , সেই জটিল সমস্যার সমাধাকল্পে নিষ্ঠার সঙ্গে এবং দৃঢ়ভাবে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যক্ত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ইচ্ছা ও অভিলাষ অনুযায়ী একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে ।
এই পরিস্থিতিতে যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত শুরু হল সেই সংঘর্ষ ও রক্তপাত বন্ধের জন্য, জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের ভিত্তিতে অনিলম্বে শান্তি স্থাপনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রানপণ চেষ্টা করছে । এই নীতি ও মনোভাবের সাথে সঙ্গতি রেখে সে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং জাতিসংঘের সংগঠন মারফত যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শান্তি স্থাপনের এই প্রচেষ্টায় নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকটি দেশের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিষ্ঠার সঙ্গে তার অবস্থানের প্রতি অবিচল থেকেছে যা পরিস্থিতির বাস্তব মূল্যায়ন করতে সক্ষম এবং যা ন্যায়সঙ্গত এবং কার্যকরভাবে অবিলম্বে এই সংঘর্ষের অবসান ঘটানো সম্ভব করে তুলবে।
তথাপি শান্তির দিক থেকে বিচার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন জনগণের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ করে এই সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে কোনরকম শৈথিল্য দেখায়নি। বর্তমানে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা হ্রাসের দিকে একটা পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ বছর ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে । তার ফলে ন্যায়সঙ্গতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেইদিনই ভারত এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে এবং ১৯৬৫ সালে নির্ধারিত কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি সীমান্তে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ভারত সরকার গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন যে , অন্য দেশের ভূখন্ড অধিকার করার কোন অভিপ্রায় ভারতের নেই । শান্তিপূর্ণ অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ভারত যে তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যেগ গ্রহণ করেছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তাকে স্বাগত জানায়। ভারতের গঠনমূলক এই উদ্যেগে সারা দিয়ে পাকিস্তান সরকার ১৭ই ডিসেম্বর পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধবিরতির যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করা হয় ।
এভাবে পাক-ভারত উপমহাদেশে সশস্ত্র সংঘর্ষ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের এবং যে সমস্যাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে সেই সংঘর্ষের সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান উপযোগী পরিবেশ ধীরে ধীরে সৃষ্টি হচ্ছে। পাক-ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধ বন্ধ হলে সেই অঞ্চলের জনগণের মূল স্বার্থ রক্ষিত হবে, তার ফলে জাতীয়
বিকাশের এবং অগ্রগতির পথে তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টি হবে এবং চরম উত্তেজনার
যে স্থানটিতে সকলের দৃষ্টি নিবন্ধ তা দূরীভূত হবে।
পাক-ভারত উপমহাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশকে সর্বপ্রকার
সহয়তা করতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পক্ষে ক্ষতিকর, এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত
থাকতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আহবান জানিয়েছে।