শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের সংগ্রাম জাতীয় মুক্তি আন্দোলনঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা | আনন্দবাজার পত্রিকা | ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
রাশিয়ার প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা
বাংলাদেশের সংগ্রাম জাতীয় মুক্তি আন্দোলন
(দিল্লী অফিস থেকে)
৯ই নভেম্বর- ভারত সফররত সোভিয়েত সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্রী ভি কুদরিয়াভেৎসেভ আজ এখানে বলেন, বাংলাদেশের যে সংগ্রাম চলছে তা জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এবং তার মধ্যে গৃহযুদ্ধের উপাদান রয়েছে।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম সোভিয়েত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভের উক্তিতেই প্রথম একজন সোভিয়েত নেতার কাছ থেকে বাংলাদেশের আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বলে প্রকাশ্য স্বীকৃতি লাভ করল। শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভের মন্তব্য এই কারণে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ যে, তন শুধু একজন সফররত সংসদীয় হিসাবে এ কথা বলেননি, বলেছেন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র ও তার সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে কোন সমাধানের সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে সমধানই নির্ণয় করা হোক না কেন তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছা, তাদের আইনসঙ্গত অধিকার ও জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে।
তাঁর ধারণা, এই উপমহাদেশের ঘটনাবলীর প্রতি চীন এক অযৌক্তিক মনোভাব গ্রহন করেছে। তবে চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক বিষয়ে তিনি আশা করেন, চিন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হওয়ায় এই সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক হবে।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ তাঁর পূর্ব মন্তব্য সত্ত্বেও আশা করেন যে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাবলী দু’দেশের মধ্যে কোনন সশস্ত্র সংঘর্ষ ডেকে আনবে না। তবে সংঘর্ষ হবে কিনা তা তিনি বলতে পারেন না। তাঁর মতে, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা এখনও বিস্ফোরণের মুখে থাকায় পৃথিবী তৃতীয় একটা সংঘর্ষের বিলাসিতায় মাততে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা, একবার সংঘর্ষ শুরু হলে অধিক থেকে অধিকতর দেশ জড়িয়ে পড়তে চায়। তাঁর এই মন্তব্য চীনকে উপলক্ষ করে কিনা তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ আশা করেন, পাকিস্তান বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করবে এবং একটা সমাধানে উপনীত হবে ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, জাতে উদ্বাস্তুরা আস্থা অর্জন করে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে। তবে কী সেটা করা যেতে পারে তা তিনি বলিতে পারেন না। সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোন দেশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সমাধান নির্ণয় করতে হবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আর বাংলাদেশের নেতাদের।
তিনি স্বীকার করেন যে, যদিও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমস্ত রকম সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে, তবুও তার সঙ্গে বৈষয়িক সম্পর্ক বজায় আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৃদ্ধি না পেলেও চলছে। …
তি আরও বলেন, কথায় কিছু যায় আসে না, আসল জিনিস হচ্ছে কাজ।
শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ ভারতের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাদের শান্তির জন্য চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু তাই বলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবহেলা করা ঠিক হবে না। সকল অবস্থাতেই প্রতিরক্ষা জোরদার করতে হবে।
আগ্রা থেকে ইয় এন আই জানাচ্ছেনঃ শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ গতকাল সেখানে ভারত সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বলেন যে ভারত যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তাঁর দেশ তাকে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশ ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে চান।
তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন যে, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি’, যতো ভারত ও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বন্ধুত্বে ভীত হয়ে পড়েছে, তারা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-সোভিয়েত চুক্তির বিরুদ্ধে প্রচারকার্যে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানী শাসকদের যুদ্ধংদেহি মনোভাবের দরুন ভারতের অখন্ডতা যখন বিপন্ন হয়ে পড়ে তখনই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।