You dont have javascript enabled! Please enable it!
    শিরোনাম      সূত্র      তারিখ
ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের মন্তব্যের উপর একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার ১৩ ডিসেম্বর,১৯৭১

.
বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার
৪২৩-হেলায় স্ট্রিট, এস.ই. ওয়াশিংটন, ডিসি ২০০০৩. ২০২-৫৪৭-৩৮৭৩

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিন এসিয়ার শংকট সম্পর্কে উদ্বিগ্ন আমেরিকানদের একটি দলকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার।ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের ৭ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউজে প্রেস এর বক্তব্যের উপ্র নিম্নোক্ত বিবৃতি জারি করেন।(ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের সম্পূর্ণ বক্তব্যটি যা ৯ ডিসেম্বর মহাসভায় হয়েছিল তা সিনেট সভার সদস্য বেরীগোল্ড ওয়াটারের দ্বারা রেকর্ড হয়েছিল।)
৭ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিং এ প্রধান উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার উপস্থাপন করেছিলেন প্রথমবারের মত দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিয়ে হোয়াইট হাউস সংস্করণে
যুক্তরাষ্ট্রের পালিত ভূমিকা।
কিসিঞ্জারের বিবৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান সংঘাতে ভারত যে “প্রধান দায়িত্ব বহন করে” এবং “প্রধান হল আগ্রাসক” পূর্বের এ দুটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষিত বিবৃতিকে সংযুক্ত করে।It demonstrates the
Nixon Administration’s refusal to perceive the flight of 10 million refugees and the
Pakistan Army massacre of a repotted I million civilians inside East Bengal as the
root causes of the war.
এরকম সাতটি “আনুষাঙ্গিক বিষয়াবলী” যা ইউ.এস এর সাথে তার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে।কিসিঞ্জার শুধুমাত্র সংকটের ভুল বোঝাবোঝি প্রকাশ করেননি বরং উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকের অদূরদর্শী পক্ষপাতিত্তের প্রচেষ্টা প্রকাশ করেন।

কিসিঞ্জার দাবি করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিম্নলিখিত ফলাফল অর্জনে সাহায্য করেছিলঃ
কিসিঞ্জার দাবি ১: পূর্ব পাকিস্তানে সকল ত্রাণ সরবরাহ করা হয় আন্তর্জাতিক সংস্থার বিতরণের মাধ্যমে।
কিন্তু বাস্তবে, নভেম্বরের মাঝখানে এবং এক সপ্তাহের কম সময়ের আগেই তার সমগ্র বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৯ নভেম্বর ইউ এন কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেস রিলিজ অনুযায়ী,জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তান
রিলিফ অপারেশন (ইউএনইপিয়আরও) এখন পর্যন্ত প্রকৃত ত্রাণ বিতরণ শুরু করে নি।
বেশীরভাগ সাহায্যের পিছনে অবদান ছিল মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের, পিএল 480 খাদ্যশস্য আকারে বিতরনের মাধ্যমে।(সেক. নিউ ইয়র্ক টাইমস. ১৭ নভেম্বর ও
২০।বাল্টিমোর সান ১১ নভে.)
কোন খাদ্যশস্য বা অন্যকোন সহায়তা মুক্তিবাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিতরণ করা হয় নি।

কিসিঞ্জার দাবি ২: বেসামরিক শাসনের কাছে ফেরত পাঠানোর জন্য পাকিস্তান সরকার একটি সময়সূচী ঘোষনা করে।
কিন্তু বাস্তবে, ডিসেম্বরে নতুন নির্বাচনী তফসিলে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে, নির্বাচনী অবৈধ ঘোষনা করা হয় কারণ জয়লাভকারী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।বাল্টিমোর সান এর জন.ই ঊডরফ ১২নভেম্বর পুর্বপাকিস্তানের গোপালগঞ্জ থেকে রিপোর্ট করে যে, ৭৮টী জাতীয় পরিষদে আসন থাকার কথা ছিল যার সম্ভবত মাত্র ২০টি ভোটিং প্রতিযোগিতার জন্য স্থির করা হয়।

৬জন পন্থি স্প্লিন্টার দলের একটি জোটের প্রতিটি জেলার একজন লোকের প্রার্থীতার উপর ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে অবশিষ্ট আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করার পরিকল্পনা ছিল যারা তারপর বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রভাব বিস্তার করবে।

কিসিঞ্জার দাবি ৩: পাকিস্তান সরকার বেসামরিক গভর্নরের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর প্রতিস্থাপন করতে সম্ভব হয়।
পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর টিক্কা খান মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরে পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের জনপ্রিয় বিক্ষোভে তার নির্মম আচরণ দমনের জন্য “বেলুচিস্তানের কসাই” শিরনাম অর্জন করে।
সেপ্টেম্বরে বাঙ্গালী বেসাম্রিক গভর্ণর ডঃ এ এম মালিক কর্তৃক খাঙ্কে প্রতিস্থাপন করা হয় কিন্তু এটি পাকিস্তানের দূর্বল অবস্থানকে ব্যাখ্যা করতে পারে না কারণ সন্ত্রাসী সেনা অভিযান তখনও প্রশমিত করা হয় নি এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা নিরবিচ্ছিন্নভাবে ধ্বসে পড়েছিল যার সাক্ষ্য হচ্ছে প্রতিদিন প্রদেশ থেকে হাজারও উদ্বাস্তুর ক্রমাগত পলায়ন।
যদিও ডঃ মালিকের পূর্ব পুরুষ থেকেই ভয়ংকর রকম খ্যাতি ছিল না কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক সমাজে তার কিছু যোগ্যতার জন্য তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হন। ডঃ মালেক,
(ক) তিনি কখনও তার জীবনে কোন পদে বহাল ছিলেন না।
(খ)তিনি ইয়াহিয়া খান কর্তৃক মনোনীত ছিলেন।
(গ)মার্শাল ল এর অধীনে পূর্ব বাংলাকে শাসন করতেন এবং
(ঘ) বাঙ্গালী দেশবাসীর জন্য তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তার মেয়ে কর্তৃক সমালোচিত ছিলেন।
কিসিঞ্জার দাবি ৪: পাকিস্তান সরকার একটি রাজক্ষমার ঘোষনা করে।
বাস্তবতাঃ অব্যাহত সন্ত্রাসীমূলক পরিবেশে রাজক্ষমার ঘোষনাটি একটি ফাঁকা অংগভঙ্গি যা গুটী কয়েককে অনুপ্রাণিত করে। যদিও কোন উদবাস্তুকে ফিরে আসার এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ চাপা উত্তেজনা নিরসনে কোন অবদান রাখে নি।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়ায় ক্ষান্তি দেয়নি এবং বেশুমার নৃশংসতা সংগঠিত করে যা এখন বিস্তারিতভাবে বিশ্বের প্রেস দ্বারা নথিভুক্ত হয়েছে।

কিসিঞ্জার দাবি ৫:পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে সম্মত ছিল “এমনকি তারা কারা ছিল সম্ভবত এ ধরনের কোন বিতর্ক ছিল”।

বাস্তবতাঃ ইউ.এস. এর গন্যমান্য ব্যাক্তিদের বিরুপ মনোভাবের পরও পাকিস্তান সরকার কোন দিক থেকেই বাংলাদেশি সরকারের কোন প্রতিনিধিদের সাথে মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়নি।
যদিও ডঃ কিসিঞ্জার তার প্রথম ব্রিফে নোট করেন যে পাকিস্তান সরকার ইউ.এস. কর্তৃক প্রস্তাবিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে মধ্যস্থতার বিষয়টি গ্রহন করে পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সরকার সম্মত বলে তা নিয়ন্ত্রণ করে।পরে তিনি ক্ষমতা অর্জন করেন এই উক্তিটি বলার যে পাকিস্তানি সরকার সম্মত হন “শুধুমাত্র সেইসব বাংলাদেশি মানুষের সাথে কথা বলার যারা কোন প্রকার অপরাধের সহিত অভিযুক্ত নন”। এই সঙ্গায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সকল নেতা, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে বহির্ভূত হয়ে পড়বেন।
পরবর্তী ব্রিফিং এ ডঃ কিসিঞ্জার এইসব অস্বীকার করেন এই বলে যে, “আমরা পাইনি
পাকিস্তান সরকারের চুক্তি… আমি শুধু বলছি আমরা কি করার চেষ্টা করছিলাম”.
কিসিঞ্জার দাবি ৬: পাকিস্তান সরকার তার প্রতিরক্ষা আটর্নির সঙ্গে কথা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি প্রদান করে মুজিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে।
বাস্তবতাঃ বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি একটি বাস্তব সমাধানকে ব্যাতিরেকে ইঙ্গিত করেছিল সন্দেহাতীত ব্যর্থতার।
সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে পাঠানো অব্যাহত রাখা হয় যাতে তার লিভারেজ না হারান হয় এবং কঠোরভাবে জন নীরবতা বজায় রাখা অনুচ্চারিত বর্বরতার একটি ভাষ্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মুজিবের সাথে সাক্ষাত করার অনুমতিকে প্রত্যাখান করে।আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এমনকি ভগ্ন প্রমাণ গুলোও বের করতে ব্যর্থ হয়েছে এখনো মুজিব মৃত বা জীবিত কিনা।
কিসিঞ্জার দাবি ৭ঃ পাকিস্তান সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন পূর্ব পাকিস্তাঙ্কে দেওয়া হবে।
বাস্তবতাঃবাস্তবের এই দাবি শুধুমাত্র একটি গভীর সংকটাপূর্ন ভুল বোঝাবুঝির প্রমান নয় বরং কিভাবে একটি জাতি পাকিস্তান কর্তৃক আরোপিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রকাশ ঘটাবে তার উপলব্ধির অক্ষমতাও।
রাষ্ট্রপতির আপস পরিকল্পনা ভাঙ্গনের জন্য কিসিঞ্জার ভারতীয় সরকারকে দায়ী করে যা এতই দ্রুতবেগে সম্পন্ন হয় যে তা রাজনৈতিক বিবর্তনে খুব দীর্ঘস্থায়ীভাবে কার্যকর না হলেও রাজনৈতিক পতন সম্পন্ন হয়।
এটা আশ্চর্যজনক ছিল যে, একজন রাজনৈতিক বুঝদার হওয়া সত্ত্বেও কিসিঞ্জার বুঝেনি পাকিস্তানের ধ্বংস ছিল নিশ্চিত যখন আর্মিরা তাদের নিজ জনগণদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে।
এপ্রিল বা মে এর দিকে ডঃ কিসিঞ্জারের এটা অক্ষম হওয়া মানুষ হিসেবে তার একটা ত্রুটি বলেই ধরে নেয়া যায়। জুন এ তার ভারত যাত্রার সময় শরণার্থী ক্যাম্পগুলোয় যেতে অস্বীকৃতি জানানো যখন ৪ মিলিয়ন শরণার্থী ইতোমধ্যেই বর্ডার পার হয়ে অপাড়ে যায়, এটা প্রমাণ কোরে আরো বড় একটি বিরুপকতার।কিন্তু পাকিস্তানের নির্মমতার কোনরুপ উপশমের চিহ্ন না থাকার পরও এবং মহাসভায়ও প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া সত্ত্বেও তার একইভাবে ৮ মাস ধরে প্রত্যত্তর দেয়া অব্যাহত রাখার ঘটনা ছিল অমার্জনীয়। এখন পর্যন্ত জেনারেল ইয়াহিয়া খান মুজিবের সাথে একতরফা আলোচনার ইতি ঘটান,যদিও গত মার্চে পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে শান্তিচুক্তি্তে আসা অসম্ভব কিছু ছিল না।
কিন্তু একসময় সৈন্যবাহিনী সরানো হয়েছিল, একসময় সৈনিকদের ধ্বংসলীলা চালানোর জন্য খালাস করা হয়েছিল এবং শুরু হয়েছিল গণহত্যা, অবিভক্ত পাকিস্তানের সকল আশা চূর্ন হয়েছিল। ২৫শে মার্চ এর পর আর সন্দেহ থাকলো না যে স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতাই এর ইস্যু।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!