You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে আমেরিকার বুদ্ধিজীবী মহলের আবেদন বাংলাদেশ ডিকুমেন্ট ১২ নভেম্বর, ১৯৭১

পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে আমেরিকার বুদ্ধিজীবী মহলের আবেদন

আমেরিকান বুদ্ধিজীবীমহলের নিন্মলিখিত শতাধিক সদস্য থেকে দেশটির বিশ-এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হয়-
নোবেল বিজয়ীদের পল স্যামুএলসন এবং এম.আই.টি. এর সালভাদর লুরিয়া এবং হার্ভার্ড শিমোন খাজনেটস ; প্রধান একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের গ্যাব্রিয়েল আল মুখ (স্ট্যানফোর্ড), জেমস টবিন(ইয়েল), টাল্কেট পারসন্স, ওয়াসিলি লিয়নটিফ ড্যানিয়েল বেল, সিমুর লিপ্সেট(হার্ভার্ড), জর্জ রাতজেন্স, ফ্রাঙ্কো মোডিগ্লিয়ানি এবং রবার্ট সলোহ (এম.আই.টি.); বিশিষ্ট এশীয় বিশেষজ্ঞ হেনরি রোসভস্কি, জন মন্টোগোমারি, বেঞ্জামিন শোয়ার্জ (হার্ভার্ড), লুসিয়ান পাই। ম্যারুন উইনার, হ্যারল্ড আইজেক্স পৌল রোজেন্সটাইন রোডেন (এম.আই.টি)। অ্যালেক্স ইনকাল্স, জন ডব্লিউ লুইস, রবার্ট সি উত্তর (স্ট্যানফোর্ড), রিচার্ড এল পার্ক(মিশিগান), ডেভিড ম্যেন্ডেলবাম, লিও রোজ, জেরাল্ড বিয়ারম্যান, রালফ রার্টস্লাফ (বার্কলে), এবং অন্যান্য।
রাষ্ট্রপতি রিচার্ড এম নিক্সন, রাজ্য সচিব উইলিয়াম পি রজার্স, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনসভার সদস্যদের প্রতি:
পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি মার্কিন সংকলনের উপর একটি ভারী দায়িত্ব অর্পণ করে।গত মার্চে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলার জনগণের উপর ব্যাপক হামলা শুরু করে যারা মাত্র কয়েক মাস আগেই সিংহভাগ পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন পক্ষপাতিত্ব একটি রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছিলো।প্রায় ৩০০,০০০ বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায় নব্বই লক্ষ পূর্ব বাংলা শরণার্থীদের ভারত সীমানা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০০০ হাজার শরণার্থী ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়।এই অসহায় মানুষের খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার হিমশিম খায়।পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের হামলার ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় ভারত সরকার প্রাণপন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি হুমকির সম্মুখীন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধে শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তান নয়; চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও শঙ্কিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের একটি সামরিক মিত্র এবং পাকিস্তানের সামরিক সরকার সমর্থনকারী নীতি অনুসরণ করছে। ।আমরা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখি।নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা সত্ত্বেও, আমরা পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য সরবরাহ অব্যাহত রাখি।একমাত্র এভাবেই আমরা পাকিস্তানকে প্রভাবিত এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারি;এ যুক্তির ভিত্তিতে আমাদের এরূপ কর্মপন্থা গৃহীত হয়েছিলো।কিন্তু এই নীতি শুধুমাত্র ভারত এবং বাংলাদেশের জনগনকে পাকিস্তানের সাথে কেবল বিচ্ছেদই সৃষ্টি করে,পাকিস্তান সরকারকে অত্যাচার বন্ধ করে রাজনৈতিক সমঝোতা স্থাপনে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
নীতিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি সরকারের পাশে দাঁড় করায় যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।তারা পূর্ববাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের সমস্ত মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করেছে এবং নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে। যে কারণে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এর নীতির ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা যায় না। তাছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কঠোর জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে যৌক্তিক হতে পারে না। একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করা, যারা কিনা নিজস্ব সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের বিপক্ষে সংগ্রাম করে, তা নিতান্তই মূর্খতা। ন্যায়বিচারের প্রতি বিবেচনা,মানবতা, এবং জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আরেকটি আবেদন এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে নীতিতে আমুল রদবদল আনতে হবে।আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি যে:
১. পাকিস্তানকে জানান হোক , যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বা অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করবে না, পাইপলাইনে বর্তমানে সহায়তা বহাল থাকবে না, কিংবা যতক্ষণ না সেখানে পূর্ববাংলার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়,ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত ঋণ পরিশোধ হবে না।
২. ভারতে আশ্র্য় নেওয়া পুর্ববাংলার শরণার্থীদের পাকিস্তানের অনুরূপ সাহায্য করা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পূর্ববঙ্গে ফেরত আসতে সমর্থ হয় এবং উল্লেখযোগ্যভাবে শরণার্থীদের পরিত্রাণের খরচের জন্য ভারতের সহায়তা বৃদ্ধি করা।
৩. জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ববাংলার জণগনকে সহায়তা প্রদান।
৪. ভারতের সাথে যুদ্ধের বিষয়ে পাকিস্তানকে জানানো হোক পাকিস্তানের এরূপ ভাবার কোন কারণ নেই যে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের মত এবারও ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন প্রত্যাহার করবে।
৫. মুসলিম অধ্যুষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বিশেষত ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,ইরান ও তুরস্ককে জানান যে,পাকিস্তান সরকারকে পূর্ববাংলার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মধ্যস্ততা বন্দবস্ত করতে উৎসাহিত করার জন্য আমরা তাদের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রচেষ্টা স্বাগত জানাই।

আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নৈতিক উদ্বেগ পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন প্রত্যাখ্যান করা উচিত।বাঙালীদের দাবীকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং শরণাত্থী সংকট কাটাতে ভারত সরকারকে ব্যাপক পরিসরে সাহায্য করা হবে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে।বর্তমান পরিস্থিতি দাবী করে যে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি আমরা আমাদের নীতি পুনঃনিরীক্ষণ ও পুনর্বিবেচনা করবো,যেখানে শান্তি হুমকির সম্মুখীন।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!