You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.16 | বাংলাদেশের অনুকূলে জনমত সৃষ্টিকারী মহলের উপর নির্দেশাবলী | ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র              তারিখ
বাংলাদেশের অনুকূলে জনমত সৃষ্টিকারী মহলের উপর নির্দেশাবলী ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ সেপ্টেম্বর ১৬, ১৯৭১

তদবিরকারিদের জন্য নির্দেশাবলী (সংশোধিত ০৯/১৬/৭১)
১. অফিসে হিল এনকাউন্টারস তৈরির জন্য নিম্নোক্ত তথ্যাদি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া গেল।
ক. নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষের সদস্যদের সাথে আমাদের যোগাযোগের সংক্ষেপিত কার্ড ফাইল।
খ. বিভিন্ন সূচকীয় বিষয়ে তাদের মতামত প্রদানের নথিসমূহ।
গ. তদবিরকারীদের জন্য কোকারদের পুস্তিকা।
ঘ. অঙ্গরাজ্য, দল, অফিসের রুম নম্বর এবং টেলিফোন নম্বরসহ কংগ্রেস সদস্যদের বর্ণমালা অনুসারে সাজানো তালিকা।
ঙ. বৈদেশিক সহায়তা আইনে সাক্সবে-চার্চ সংশোধনী এবং গালাঘার সংশোধনীর কো-স্পন্সরদের তালিকা এবং নথিপত্র।
চ. সংসদীয় তথ্যসংবলিত পঞ্জি (জীবনচরিত, পরিষদ ইত্যাদি)।
ছ.সংবাদপত্রের নথি যেগুলোতে সংসদ সদস্যদের এলাকার বিভিন্ন সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, সংবাদ থাকতে পারে।
জ. পুনর্মুদ্রিত নথিপত্র যেগুলোতে দরকারি তথ্য আছে এবং সংসদ সদস্যদের অফিসে পাঠানো বিলিপত্রের জন্য উপযোগী ।
২. ভবন এর অবস্থান মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন (অফিস ভবন অনেকগুলো এবং আকারে বড়)।
৩. সময়ের পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই উপস্থিত হওয়ার মত সময়ানুবর্তীতা দেখানো উচিত। যদি দেরি হয় তবে একটা চটপটে ব্যাখ্যা (ভাল হয় অ্যাপয়েন্টমেন্টের আগেই ফোনে জানানো নাহলে পৌছে যত তাড়াতারি সম্ভব) দেরিতে দেখা করার চেয়ে বেশি গ্রহণীয় হবে। ফোনকলের মাধ্যমে দরকার হলে কাজের সময় আবারও ঠিক করে নেয়া যায়।
৪.সংসদসদস্য অথবা সিনেটরকে প্রথম দেখাতেই পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা এবং সাক্সবে-চার্চ (গালাঘার) সংশোধনী সম্পর্কে বলেন যদি সে দেখা করার সময় দিতে না পারে।তারপর তার সাথে কথা বলতে চাইবেন যে বৈদেশিক বিষয়ে ওই সংসদসদস্যের মতামত এর বিষয় দেখভাল করে।
৫. যে ব্যক্তির সংগে কথা বলবেন তার নাম(নামের বানান জেনে নিতে লজ্জা করবে না) এবং পদমর্যাদা জেনে নেবে এবং তা প্রতিবেদনে (প্রশ্নাবলী) অন্তর্ভুক্ত করবেন যাতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়।
৬. যার সংগে কথা বলবেন তার কাছে নিজের পরিচয় সংক্ষেপে দিয়ে দেবেন যে যুক্তরাষ্ট্রের কোথ্থেকে, কি করছেন (যেমনঃ ভার্সিটিতে শিক্ষকতা),কোন সংসদসদস্যর এলাকা অথবা সিনেটরের কেটের ভোটার এসব তার কাছে পরিস্কার করুন (সে যাতে বুঝতে পারে আপনি .. … সংখ্যক ভোটার তার পক্ষে নিতে পারেন)।
৭. সংসদসদস্য অথবা ঐ ব্যক্তি পূর্ব পাকিস্তান কিংবা বৈদেশিক সহায়তা বিলের সাক্সবে-চার্চ সংশোধনীর বিষয়াদির সাথে কতটা ঘনিষ্ঠ তা স্টাফ সদস্যদের জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে।বিবেকবান কর্মকর্তাগণ সময় পেলে অকপট, বুদ্ধিমান এবং সংক্ষেপে বলতে পারা লোকের কাছে কিছু জানার সুযোগ কাজে লাগায়।এছাড়া কর্মীদের বাইরে যোগাযোগ বহুল শ্রমসাধ্য, তাই তদবিরকরিগণ তাদের তথ্যের মূল্যবান উৎস, কখনো কখনো একমাত্র উৎসও বটে।এভাবে তাদের কাছে কিছু দেয়ার মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা যাবে, তাদের অনুগ্রহে নয়।তাদের জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করার পর তাদের কাছে পাকিস্তানের ‘গৃহযুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্রের কেন নিষ্ক্রিয় অবস্থান গ্রহন করা উচিত তা ব্যাখ্যা করবেন।
৮.’সাক্সবে-চার্চ (গালাঘার) সংশোধনী-না’ এটাকে সিনেটর সমর্থন করবে কিনা জিজ্ঞাসা করো, কারণ ভবিষ্যতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিবর্তিত হলেও এটা তাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাখতে চাইবে।বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশের দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থার প্রতি সমব্যথী ;এছাড়া অন্য কোন কারণেও তারা বিলটির বিপক্ষে ভোট দিতে পারে।যদি ওই ব্যক্তি বিরুদ্ধাচরণ করে বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে না চায় তবে জিজ্ঞাসা করো কেন।এটা কোন হতবুদ্ধিকর অবস্থায় ফেলে দেয়ার মত কোন প্রশ্ন নয় কারণ কংগ্রেস সদস্য এবং তাদের কর্মকর্তাগণ এরকম সমালোচনামূলক বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য তৈরি থাকেন।ততই তাদের মতে আনতে প্ররোচিত করা যাবে যখন তাদের আপত্তির বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে।
আমাদের অধিকতর কাজ করতে হলে কি কি অবস্থান নেয়া হয়েছে তা অবশ্যই জানতে হবে।তাদের মতভেদ এবং উদ্বেগের ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে আমাদের জানাতে হবে যাতে আমরা পরবর্তীতে তার কাছে যাওয়ার সময় প্রস্তুত থাকতে পারি।(প্রশ্নবিবরণীতে এসব মন্তব্য লিখে নিতে হবে। Your recollections are………………. shdst if noted briefly before continuing on to your next appointment.) যোগাযোগের ব্যক্তিকে মুখে বলে কিংবা লিখিত কোন তথ্য দিয়ে জানানো বা বোঝানোর চেষ্টা করাই বেশি কাজে দেবে।
৯. কংগ্রেস সদস্যের অবস্থান এবং সহয়তাকরী ব্যক্তির মতামতের মধ্যে নিশ্চিতভাবে পার্থক্য করতে হবে।
১০. বাংলাদেশের দুঃখজনক ঘটনায় সমব্যাথী হলেও অনেক সদস্যেরই বৈদেশিক বা প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপারে সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করার বাধ্যবাধকতা থাকে কিংবা অন্য কোন বিষয়বস্তুতে আপত্তি থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির ব্যাখ্যা কাজে লাগতে পারে।
ক. নিম্ন এবং উচ্চকক্ষের দ্বারা প্রণীত আইনসমূহের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে দুই পক্ষের এক পক্ষকে পক্ষপাতিত্ব করা থেকে বিরত রাখা যাতে এশিয়ায় আরেকটি গৃহযুদ্ধ (আমাদেরকে সাহায্যের সম্পৃক্ততা থেকে সরে আসা আরেকটি সম্ভাব্য ভিয়েতনাম সৃষ্টি করতে পারে) না বাঁধে।বিশেষ করে যখন সরকারের ভেতর ও বাইরের ওয়াকিবহাল পর্যবেক্ষক দ্বারা এক দেশের স্বাধীনতা অনিবার্য প্রমাণিত।
খ. আমলাগণ রাষ্ট্রপতিকে উপরের নীতিটাই গ্রহন করার জন্য প্ররোচিত করছে।কারণ সিস্কো অঙ্গরাজ্যের সহকারী সচিব বৈদেশিক সম্পর্ক পরিষদকে জানান যে পাকিস্থানের একত্রিত অবস্থায় টিকে থাকার সম্ভবনা ৫০% এর নিচে।
গ. The only ones to gain in the present can………………….. are Mao tse-Tung and chaos- whereas……osers will be U.S., India, Russia, and moderate democratic Awami League leaders.
ঘ. এই অবস্থা লাখো শরণার্থীকে উত্তেজিত করে তুলছে যেটা ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থাকে আরো উস্কে দেবে এবং এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মদ্ধ্যে আরেকটি অনাবশ্যক যুদ্ধ বাধার উচ্চ সম্ভবনা আছে।
ঙ.সহয়তা প্রত্যাহার বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রত্যাহার পূর্ববঙ্গের শরণার্থীদের চালানোর কাজ পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিকভাবে অনেক কঠিন হবে।
চ.এটা অনিশ্চিত যে পাকিস্তান আসলেই বন্ধুভাবাপন্ন মিত্র দেশ নাকি আমেরিকান সহায়তা লাভই তাদের উদ্দেশ্য। চীনের ক্ষমতা অতিমূল্যায়িত।এটা দেখা যায় তাদের স্বল্প পরিমাণ সাহা্য্যের প্রতিশ্রুতি এবং খুব বেশি কিছু দিতে না পারা থেকে (উত্তর ভিয়েতনামকেও তারা নামমাত্র সহয়তা দিয়েছিল)। পশ্চিম পাকিস্তান চীনের নয় তাদের নিজস্ব স্বার্থই দেখবে, যেমনটা তারা পূর্বে করেছিল।
ছ.পাকিস্তান গত গ্রীষ্মে পূর্বেকার ঋণের আদায়ের দায় আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।এর সাথে আবার ৩১শে অক্টোবর ও এর পরের অনুদানের বকেয়া অর্থও চাপাতে চাচ্ছে। তাদের এমন জোর করে চাপানো অর্থনৈতিক সহয়তার দয় বাংলাদেশের উপর তাদের সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের পরিচয় বহন করে।তাই আমাদের উচিত সহয়তা কার্যক্রম চালিয়ে এই হুমকির পাশে না দাড়ানো, এবং ভালো অর্থনীতির পরিচয় দেয়া।
জ. বর্তমান সামরিক এবং অসামরিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকলে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণমূলক প্রত্যাশা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসও খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে অপব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে অপর্যাপ্ত হবে।গ্রামবাসীদের কাছে আকাশপথে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী পাঠালেও তা নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভাবে বন্টিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি সঠিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি অর্জন করা যাবে।ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা কিছু পরিমাণে কমে গেছে কারণ মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগেরও বেশি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।ভারতের সাথে সংযুক্ত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি কারণ পাকবাহিনী এখানেই বেশি ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাই আমাদের ভারতের শরণার্থীদের জন্য ৪৮০ পিএল খাদ্যসামগ্রী পাঠানো জরুরি যাতে সীমান্তের ওপারেও কিছু খাবারের জোগান যেতে পারে।
১১.যদি সহায়তাকারী কোন কংগ্রেসসদস্য প্রণীত আইনটি কিংবা পাকিস্তানের অবস্থার ব্যাপারে আরও নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানতে চান যেটা আপনি তাকে জানাতে পারছেন না, তবে সেটা অবশ্যই আমাদের জানাবেন। প্রশ্নাবলী সংবলিত বিবরণীতও এটা উল্লেখ করবেন যাতে ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়া যায়। আপনি যদি আদৌ তথ্যটি জানাতে না পারেন তবে লক্ষ রাখবেন যেন তার কাছে এটা পরে পৌছায়।
১২.হিল অফিসের গোচরে যাওয়া উচিত এমন কোন তথ্য পেলে তার কপি অবশ্যই আমাদের কাছে পাঠাবেন।