You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সমর্থক আমেরিকানদের তৎপরতা বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ আগষ্ট, ১৯৭১

ওহাইয়ো- পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

ওহাইয়ো হতে বি. চন্দ্রশেখরন এর রিপোর্টঃ
আমরা গর্বের সাথে এই রিপোর্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চাই যে, আমরা কলম্বাসে একটি সংগঠন চালু করতে যাচ্ছি যার নাম হচ্ছে ‘পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ’।
বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ২৯শে জুলাই ১৫ জন আগ্রহী ব্যক্তি যারা মূলত ওহাইয়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনুষদ সদস্য একত্রিত হয়। প্রথম সাক্ষাতে সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আমাদের বিশাল সভাটি আয়োজিত হয়। আগষ্টের ৫ তারিখে ২য় সভাটি যা মূলত দলের নথিভূক্ত সভা ছিল, সেখানে তখন ৬০ জনেরও অধিক ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল যারা বৃহৎ সংমিশ্রিত জনগোষ্টীর প্রতিনিধিত্ব করছিল। আমরা সৌভাগ্যবাব যে প্রধান বক্তা হিসেবে আমরা ওহাইয়ো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জে. কে. ভট্টচার্য্যকে পেয়েছিলাম যিনি বাংলাদেশ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় আছেন এবং একই রকম আরও অনেক সংগঠনের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। একটি কমিটির হয়ে কাজ করা বা অন্য অর্থে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ উপস্থিতিরা সম্মত হওয়ায় সভাটি দূর্দান্তভাবে সফল ছিল।
আমরা ইতোমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধের জন্য কংগ্রেসম্যান ও রাষ্ট্রপতি বরাবর ‘পিটিশন সাইন’ কার্যক্রম আয়োজন করে ফেলেছি। স্থানীয় একেশ্বরবাদী ও ক্যাথলিক গীর্জা বরাবর আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ১০০ এর চাইতেও অধিক টেলিগ্রাম পাঠানো হয় এবং স্থানীয় কংগ্রেসম্যানকে অনুরোধ করা হয় যেন গালাঘের সংশোধনীর সমর্থনে ভোট প্রদান করেন। প্রদর্শন ও তথ্য এই দুইই কলম্বাসের অনেকগুলো কেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে স্থানীয় গীর্জা গোষ্ঠি হতে তহবিল সংগ্রহ করা নিয়ে মনোযোগী হওয়া। এছাড়াও এই কাজের জন্য টেলিভিশন ও রেডিওতে জনসেবামুলক ক্রীড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এই মুহূর্তে তিনটি প্রধান কমিটি কার্যক্রম চালাচ্ছেঃ
১। ত্রাণ, ২। প্রচার এবং তথ্য সংগ্রহ ও ৩। চ্যারিটি শো, বৃহৎ সভা ইত্যাদি সংগঠিত করা।

এই গোষ্ঠির ঠিকানা হচ্ছেঃ
পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ
পি.ও. বক্স- ৩০৩৫
কলম্বাস, ওহাইয়ো- ৪৩২১০

ওহাইয়ো- পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

এ্যারিজোনা হতে জন মারকৌলিস লিখেছেনঃ
আমরা এ্যারিজোনার টেম্পে ‘পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ’ গোষ্ঠি চালু করেছি। এই পর্যন্ত আমরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি এবং ফিনিক্স ফেডারেল ভবনের সামনে এর উদ্বোধন করেছি।

উদ্দেশ্য হচ্ছে এই এলাকার জনগণকে অবহিত করা কারণ স্থানীয় পত্রিকাগুলো এই ঘটনাকে প্রকাশ করছে না। টিভির মাধ্যমে আমরা যতটুকু দেখতে পাচ্ছি তা অতোটা পর্যাপ্ত নয়। গোষ্ঠিগতভাবে আমরা দাবী জানাচ্ছি যে পশ্চিম পাকিস্তানে সহায়তা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে এশিয়াতে বিদ্যমান সেই বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্থানের জনগণের যেখানে প্রয়োজন সেখানে খাদ্য ও চিকিৎসা সাহায্য প্রদানে ব্যবহার করা হোক। আমরা এই পর্যন্ত ১০০ এর মতো সংগ্রহ করেছি যা ইউনিসেফকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টেম্পে ও ফিনিক্স পিস সেন্টার, ক্যাথলিক সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস, ডব্লিউ আই এল পি এফ এবং ইউনিসেফ আমাদের গোষ্ঠির সাথে একাত্ম হয়েছে। পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সেপ্টেম্বরে আমরা ‘প্যানেল আলোচনা’র আয়োজন করতে চলেছি। এই গোষ্ঠির ঠিকানা হচ্ছেঃ পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ, ১৪১৪ এস. ম্যাক্‌এ্যালিস্টার, টেম্পে, এ্যারিজোনা।

মিল্বৌকী ১২ই আগষ্ট, ১৯৭১

মিল্বৌকী পিস এ্যাকশন কমিটি হতে রন ডিনিকোলা লিখেছেনঃ তুলনামূলকভাবে মঙ্গলবার রাতে হওয়া সভাটি সাফল্যমন্ডিত ছিল। আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট ক্লাবের মারক্বেট স্থানীয় ভারতীয় ছাত্ররা সহ বিশ জন ব্যক্তি সেখানে অংশগ্রহণ করে।
আমরা দলটিকে দুইট নীতিতে আলাদা করি, এর একটু হচ্ছে ত্রাণ এবং অন্যটি বিশদভাবে রাজনোইতিক কার্যক্রম ও শিক্ষার উপর। আগামী মঙ্গলবার রাত ৮টায় আমাদের দ্বিতীয় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে যা মূলত আভ্যন্তরীন কর্মশালাকে নিয়েই হবে। সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে যেহেতু এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাদের নিজেদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষিত করার জন্য। আমি আশা করছি আপনি বা বিডিএল এর প্রতিনিধি এতে উপস্থিতি থাকবেন।
বুধবার আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম যেখানে আমরা জনসম্মুখে বিবৃতি দেই যে পূর্ব পাকিস্তানের ত্রাণ এবং শিক্ষাগত প্রচেষ্টাতে প্রভাব রাখাটা মিল্বোকীর পি.এ্যা.ক. এর কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা হবে এবং এর জন্য কমিউনিটির নিকট সহায়তার দাবী করা হচ্ছে। এ নিয়ে শুধুমাত্র একটি টিভি ষ্টেশনই ভালমতো প্রচার করেছে আর সেটি হচ্ছে- চ্যানেল ৬।

বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা
টরন্টো

‘বাংলাদেশে সংকটকাল’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভা ১৯৭১ সালের ৫ই আগষ্ট সন্ধ্যা ৭:৩০ এ বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা ছিলেনঃ
১। জনাব এন্ড্র্যু ব্রিউইং- কানাডিয়ান সংসদ সদস্য,
২। জনাব ফ্রেডেরিক নস্যাল- টরন্টো টেলিগ্রামের সহযোগী সম্পাদক,
৩। জনাব পল ইগ্নেট্যিফ- টরন্টো ইউনিসেফের পরিচালক,
৪। জনাব লেসলি স্মিথ- খাদ্য ও ঔষধ অধিদপ্তর, জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ।

জনাব ব্রিউইং হচ্ছেন সেই তিনজন কানাডিয়ান সংসদ সদস্যের একজন যারা সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে ভারত ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি বারংবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এই বলে যে, পূর্ব বাংলায় কোন প্রকারের রাজনৈতিক সমাধান মানেই হচ্ছে জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন যা গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছিল।

জনাব ইগ্নেট্যিফ ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের ব্যাপক ত্রাণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন যাকে তিনি ‘সংকটের ভিতরে সংকট’ বলে অভিহিত করছেন। শরণার্থীরা যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে তার চাক্ষুষ বর্ণনা দেন জনাব স্মিথ। একটি তথ্যভিত্তিক চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হয় যা জনাব স্মিথ ধারণ করেছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়াঃ
জোয়ান বায়েজ বেনিফিট কনসার্ট

বাংলাদেশের ৭০ লক্ষ শরণার্থীদের উপকারের জন্য জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী জোয়ান বায়েজ ২৪ শে জুলাই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি গানের কনসার্ট প্রদর্শন করেন। এই কন্সার্টটিতে সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকা হতে প্রায় ১২,০০০ এরও অধিক লোক উপস্থিত হয়েছিল। এই কনসার্টটি শীমতি রানু বসু এবং স্ট্যানফোর্ড ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশন হতে অন্যান্যরা মিলে আয়োজন করেছিলেন। আমেরিকান লীগ ফর বাংলাদেশ এর সদস্যরা, পিউপলস ইউনিয়ন এবং ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ নন-ভায়োলেন্স এই কনসার্টের প্রচার ও অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রচন্ডভাবে সাহায্য করেছিলো।

এই কন্সার্টে, আমেরিকান লীগ ফর বাংলাদেশ এর সদস্যরা এবং স্ট্যানফোর্ড ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ৮,( ) এরও অধিক প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন যা বাংলাদেশের গণহত্যায় ইউনাইটেড স্টেইটসের দুষ্কর্মের সহকারিতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। প্রচারপত্রটি ইউনাইটেড স্টেইটসের সাম্প্রতিক অস্ত্রের চালান যা নিষ্ঠুর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল এবং প্রশাসনিকভাবে তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত নীতির প্রতি দিকপাত করেছিল। মিসেস জোয়ান বায়েজ হ্যারিস প্রশাসনের এই অনৈতিক এবং লজ্জাজনক নীতির প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ইসলামাবাদের দমনমূলক শাসনের সকল প্রকারের সাহায্যার্থ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে কনসার্টে উপস্থিত ১২,০০০ সদস্য শ্রোতাকে পিটিশন স্বাক্ষর করতে বলেন। শ্রোতাদের কয়েক হাজার এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।

নিউইয়র্কঃ পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ
পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ (নিউইয়র্ক) আগষতের ১৪ তারিখে বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকার সমন্বয়ে নিউইয়র্কে এক বিশাল র‍্যালির সংগঠিত করে। এই র‍্যালিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছিল যা ইউ.এন. প্লাজায় দিনের মধ্যভাগ হতে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই র‍্যালির আহ্বায়ক ছিলেন বাংলাদেশ লীগের ডঃ আলমগীর, পশ্চিম পাকিস্তানের দুই বিদ্বান ডঃ ইকবাল আহমেদ এবং ইজাজ আহমেদ এবং কোয়েকার প্রোজেক্টের জনাব এস.জে. এ্যাভেরি।

পরবর্তীতে ছোট ছোট বিভিন্ন কর্মশালা দ্বারা বাংলাদেশের সংকট নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করা হয়।
১৯৪৭ সাল হতে পাক-বাংলাদেশ বিরোধ নিয়ে ঐতিহাসিক সারসংক্ষেপ সম্বলিত আশি পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা অন্যান্য প্রচার পত্রের সাথে র‍্যালিতেই পূর্ববাংলা বন্ধুবর্গ দ্বারা বিতরণ করা হয়। পূর্ববাংলা বন্ধুবর্গ (নিউ ইয়র্ক) এর ঠিকানা হচ্ছেঃ ১৩ ই, ১৭তম সড়ক, ৭ম তলা, এন.ওয়াই., এন.ওয়াই. ফোন- (২১২) ৭৪১-০৭৫০।

ঘোষণাঃ

(১) আমরা বাংলাদেশের জরুরী মঙ্গল আহ্বান প্রচারপত্র এই সংবাদপত্রের সাথে নমুনা অনুলিপি হিসেবে সংযুক্ত করছি। অনুগ্রহ করে আমাদের জানান আপনি আপনার এলাকায় কতজন সম্ভাব্য দাতার নিকট তা বিলি করতে চান।

(২) “কেন বাংলাদেশ” পুস্তিকার জন্য যারা আমাদের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছেন, তারা অনুগ্রহ করে আমাদের আরও এক সপ্তাহ সময় দিন যাতে তা আমরা আপনার নিকট পৌঁছে দিতে পারি।

(৩) অনুগ্রহ করে আপনার গোষ্ঠির কার্যক্রমের রিপোর্ট আমাদের সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য পাঠান। সেই সাথে আপনাদের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ‘পেপার কাটিং’ও পাঠান।

(৪) “বাংলাদেশে পাকিস্থানের গণহত্যা বন্ধ কর” বৃহদাকার স্টিকার আমরা প্রচুর পরিমাণে পুনঃমুদ্রিত করেছি। বাংলাদেশ গোষ্ঠিকে সমমূল্যমানে আমরা তা যোগান দেবো।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!