হানাদার ও রাজাকারদের দলে দলে আত্মসমর্পণ
মুক্তিবাহিনীর সর্বত্র বিজয়-অভিযান। কুমিল্লা রণাঙ্গনের ফেনী ও বিলােনিয়ার মধ্যে অবস্থিত ফুলগাজী রেল সেতুটি মুক্তিবাহিনী গত সপ্তাহে ধ্বংস করে দিয়েছেন। কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে সম্প্রতি ৩নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যদের বহনকারী একটি লঞ্চ মুক্তিযােদ্ধারা ডুবিয়ে দেন। এর ফলে বহু খানসেনা খতম ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়। | বাঞ্চারামপুরে আরও একটি লঞ্চ মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযােদ্ধারা ডুবিয়ে দেন। ফলে আরও বহু সৈন্য একই অঞ্চলে গেরিলা যােদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে খানসেনাদের ৩টি স্পীড বােট ও ১০টি দেশী নৌকা ডুবিয়ে দেন। গত সপ্তাহে কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যবাহী একটি লঞ্চ অতর্কিতে আক্রমণ করে দুইশ তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের শত্রুসৈন্য খতম করেছেন। লঞ্চ থেকে মুক্তিযােদ্ধারা প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র দখল করে নিয়ে পরে ডুবিয়ে দেন। অমরাতােলিতে এক টহলদার পাকিস্তানী বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে মুক্তিযােদ্ধারা ৪জন শত্রুসৈন্যকে খতম করেন। ৩রা অক্টোবর নয়ানপুর রেল স্টেশনের কাছে ৩ জন হানাদার খতম করেন। বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, গত ২রা অক্টোবর কুমিল্লা জেলার হােমনা থানায় ১১ জন পাকিস্তানী পুলিশ ও ৫ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাছাড়া অস্ত্রশস্ত্র সহ ১৫ জুন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১লা অক্টোবর বল্লায় শত্রুবাহিনীর সমাবেশ ছাউনী আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী আশ্রমপুরা থেকে বল্লা পর্যন্ত যাতায়াতকারী সৈন্যদের মধ্যে ১৫ জনকে নিহত এবং ৮ জন আহত করেন।
হানাদার সৈন্য নিহত হলে তারা অবস্থা বেগতিক দেখে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এগিয়ে হানাদারদের সঙ্গে সরাসরি মুখােমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই সংঘর্ষে ৪০ জন শত্রুসৈন্য প্রাণ হারায়। রংপুর রংপুর সেক্টরে সম্প্রতি চিলাহাটির প্রায় ১৭ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের ফলে বহু সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। | গত ৪ঠা অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বৈঠামারীর কাছে মাইন বিস্ফোরণে শত্রু পক্ষের একটি জীপ ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা যায় যে দিনাজপুর জেলার চিনিরবন্দরে দখলদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর দুর্ধর্ষ যােদ্ধারা ৪ জন শত্রুসেনা হত্যা করেন এবং একটি রাইফেল দখল করেন।
৫ই অক্টোবর দিনাজপুর জেলার খানপুরে মুক্তিবাহিনী খানসেনাদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হন ও ৪ জন খানসেনাকে খতম করেন। এই সংঘর্ষে আরও ৯ জন শত্রুসেনা আহত হয় । রংপুর, সিলেট, চাটগাঁ, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও যশাের জেলায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধাদের তৎপরতায় দখলদার সৈন্য ও রাজাকার খতম হয়েছে। ময়মনসিংহ-এর গফরগাঁও এলাকায় ও সিলেটের রাধানগর এলাকায় প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনীর মােকাবেলার জন্য খানসেনারা সিলেট শহরে সান্ধ্যআইন জারী করে ও নিপ্রদীপ মহড়া চলছে। চাটগাঁ বন্দরে দখলীকৃত বাংলাদেশের সামরিক কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতকর্তামূলক ব্যবস্থা করার। মধ্যেই মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা গত ১লা অক্টোবর এক ভয়াবহ আক্রমণে একটি তেলবাহী গ্রীক গাড়ী মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত করে। কুষ্টিয়া-খুলনা-যশােরে ব্যাপক আক্রমণ গত ৫ই অক্টোবর রেবিলৰাড়ীর কাছে মুক্তিযােদ্ধারা একটি শত্রুঘাটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান এবং ৩৫ জন খানসেনা খতম করেন। ৪ জন দস্যুসৈন্য মারাত্মকভাবে আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী একসাবাড়িয়াডাঙ্গার মধ্যে টেলিফোন যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং নবকাঠিতে শত্রুপক্ষের একটি জীপ ধ্বংস করেন। গত ৩রা অক্টোবর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের কাছে দখলদার পাকিস্তানী সৈন্য ও কুখ্যাত রাজাকারদের ওপর গেরিলা যােদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন হানাদার খতম করেন।
জয়বাংলা (১)১: ২৬
৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯