You dont have javascript enabled! Please enable it! আমার জানামতে কোন আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র নেই - আটরশির পীর সাহেব | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ - সংগ্রামের নোটবুক

আমার জানামতে কোন আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র নেই – আটরশির পীর সাহেব | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/আট্রশি.pdf”]

প্রস্তুতি চলছে আসন্ন উরসের। কাজ করছেন সবাই। কেউ দিন মজুর, আবার কেউ কেউ মুরীদ। কয়েকশ চুলা বিস্তৃত এলাকা জুড়ে খাবার বিতরণের জন্য বাঁশের চুলা তৈরী হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার ক্ষুদ্র গ্রাম আটরশি ভরে ওঠে মানুষের ভিড়ে ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে ২২ ফেব্রুয়ারী অবধি ‘হযরত মওলানা শাহ সূফী হাশমতউল্লার আধ্যাত্মিক গুরু পীর এনায়েতপুরীর’ উরস উপলক্ষে।

প্রায় সত্তরের কাছাকাছি অথচ সতর্ক এবং ঋজু হযরত মওলানা শাহ সূফী হাশমতউল্লাহ যিনি আটরশির ‘পীর সাহেব’ বা ‘হুজুর’ নামে পরিচিত তদারক করছেন সবকিছু। একটি ছোট্ট মাইক্রোফোন তার ঘরে৷ প্রয়োজনে প্রায় এক বর্গমাইল এলাকা ব্যাপী উরস ক্ষেত্রে কর্মরত দের সাথে যোগাযোগের জন্য মাইক ব্যবহৃত হচ্ছে।

উরসের প্রাক্কালে এসেছেন আটরশিতে বিবিসি’ র বিশেষ প্রতিনিধি এ্যালান ম্যাকডোনাল্ড। বিচিত্রার তরফ থেকে প্রতিবেদক প্রায় ২৫ মিনিট ব্যাপী সাক্ষাৎকারে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন জড়তা ছাড়াই।

ম্যাকডোনাল্ড জানতে চাইলেন অসংখ্য মানুষ – এমনকি রাষ্ট্রীয় পদে আসীন ব্যক্তিরাও কেন আসেন তার কাছে। জবাবে পীর সাহেব বললেন, ‘আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ, আমি নিজেও জানি না তারা কেন আসেন। কেউ আসেন সুখ দুঃখ যন্ত্রণা জাগতিক অপার্থিব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দোয়া চাইতে। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে আমি কাউকে কোন মতামত বা উপদেশ দেই না। তারাও এ ব্যাপারে উপদেশ চান না। তবে তিনি সাধারণ ভাবে জনগণকে সেবা, তাদের ভালবাসা অর্জন, ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্যে কাজে লাগানোর এবং দেশকে রক্ষা করার জন্য সমবেত ভাবে কাজ করতে সবাইকে উপদেশ দেন।

বিচিত্রার তরফ থেকে প্রশ্ন করলাম, ‘সাম্প্রতিক কালে আপনি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র জগতে আলোচিত হয়েছেন, বিদেশী সাংবাদিকরাও আসছেন কথা বলতে। এর কারণ কি? ‘ মৃদু হেসে বললেন, ‘আমি তো সাধারণ মানুষ, তারা কেন আসেন তারাই বলতে পারবেন।’

বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান কি না?
বিবিসি প্রতিনিধির এই প্রশ্নের উত্তরে পীর সাহেব বললেনঃ ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এখানো মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রীয় শক্তি তৈরী করতে পারলে তার চেয়ে আর কি ভাল হতে পারে? তবে কা জাতীয় আদর্শ, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই হতে হবে – ঐক্যের বিনিময়ে নয়।’

ম্যাকডোনাল্ড জানতে চাইলেন তার মুরীদ জেনারেল এরশাদের সাথে এ ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়েছে কি না। তিনি জানালেন ইসলামী রাষ্ট্র প্রসঙ্গে তার সাথে এরশাদ সাহেবের কোন আলোচনা হয়নি।

স্কুলে ইসলামী শিক্ষার ওপর তিনি জোর দিতে চান কি না – এ প্রশ্নের জবাবে পীর সাহেব বললেন, আমি জোর দিতে বলি যেহেতু দেশকে আমরা যেমন ভালবাসি তেমনি ধর্মকেও ভালবাসি। একে রক্ষা করতে হলে ইসলামকে ভাল ভাবে জানতে হবে, শিখতে হবে।

বিচিত্রার তরফ থেকে জানতে চাইলাম, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে সংখ্যালঘুদের কি অবস্থা হবে। এটা কি খোমেনীর ইসলামী রাষ্ট্র হবে কি না? সাথে সাথে জবাব দিলেন পীর সাহেব – ‘না। আমরা খোমেনীর নীতি পছন্দ করি না। ইসলাম এমনি ধর্ম যা সবার সঙ্গে মৈত্রী সাম্য ভাতৃত্ব এবং যা বিশ্ব মানবতার কল্যাণ, মানব জাতির মধ্যে ঐক্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

বিবিসি’ র বিশেষ প্রতিনিধি জিজ্ঞেস করলেন পৃথিবীর কোথাও কোন আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র আছে কি না? উত্তরে বললেনঃ ‘আমি কোন দেশে যাইনি, সবখানেই খবর শুনি মারামারি হানাহানি চলছে। সরাসরি কোন রাষ্ট্র চিহ্নিত করতে বলা হলে তিনি বললেন, ‘আমার জানামতে কোন আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র নেই।

জাতির উদ্দেশ্যে তার কোন বাণী আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, তিনি কোন গণমাধ্যমের মাধ্যমে কোন বাণী প্রচার করেন না। মুরীদদের মাধ্যমে নসিহত, যা ঘরে ঘরে পৌছে যায়। দেশের মঙ্গল চাচ্ছি কারণ দারিদ্র, অভাব অনটন হিংসা দ্বেষ, মানবতা বোধের অভাব, দেশে ক্যান্সারের মতো ছেয়ে আছে, একে সমবেতভাবে সমাধান করতে হবে।
– শেহাব আহমেদ।

***