শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব উইলিয়াম রজার্সকে লিখিত মিঃ উইলিয়াম গ্রিনোর চিঠি | উইলিয়াম,বি,গ্রীনো,জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় | ৬ মে,১৯৭১ |
দ্যা জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি
স্কুল অফ মেডিসিন
৬ মে,১৯৭১
জনাব,
বিগত দশ বছর যাবত জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিন এন্ড হায়াজিন ফ্যাকাল্টির বেশ কিছু সদস্য কলকাতা এবং ঢাকায় গবেষণা এবং প্রশিক্ষন প্রকল্পে নিয়োজিত রয়েছে বিধায় পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সরেজমিনে এসব এলাকায় তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহীত হয়েছে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সুপরিকল্পিত হামলা বোমা নিক্ষেপ এবং কামান হামলার মাদ্যমে প্রধান বিশ্ববিদ্যালগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি করেছে।আরো উদ্বেগের বিষয় অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে।আমি আশা করি আপনার কাছে ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার মহাদুত মিঃ আর্চার ব্লাড এর পরিপূর্ণ নথি রয়েছে।তার তথ্যগুলোকে সম্পূর্ণভাবে সঠিক মনে করা হয় এবং ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো স্বাধীন দর্শকরাও একে সমর্থন করেন।
যদিও পূর্ব পাকিস্তানের মত দেশের গুটিকয়েক শিক্ষিত এবং নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব কে হত্যা করায় এ ভয়াবহ অপচয় নিন্দিত হওয়া উচিত,কিন্তু আরো কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার রয়েছে যাতে আমাদের বর্তমানে দৃষ্টি প্রদান করা উচিত।আমি বিশ্বাস করি আমাদের আত্ম-স্বার্থ পরিস্থিতির বাস্তববাদী গুণগ্রাহিতা এবং নির্বিশেষে সকল অঙ্গিকারের ঊর্ধে আমাদের সম্বল সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত কে নির্দেশ করে।সেসব বিষয় যা দেখে ধারণা হতে পারে পূর্ববঙ্গ পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি দ্বারা বৈদেশিক কর্মীবাহিনী হিসেবে চালিত হতে পারে না তা হল :
১)সাম্প্রতিক আক্রমন যা বাঙ্গালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের কর্তৃত্ব বিষয়ক জনমত কে আরও দৃঢ় করেছে,এর পূর্বে একটি মুক্ত নির্বাচন তাই নির্দেশ করছে যে ৮০ শতাংশের বেশি জনগন শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দৃঢ় ভাবে সমর্থন করেছে।তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেড়েছে এবং অসহযোগিতা ও সক্রিয় প্রতিরোধ্য কর্মকাণ্ডে তারা একত্রিত হয়েছে।
২)ভারতের সীমান্ত এলাকা কখনই বন্ধ হয়নি এবং যথেষ্ট সৈন্য দ্বারা তা বন্ধ করা সম্ভবও নয়।ভারত আশ্রয়স্থল প্রদান করতে পেরে আনন্দিত।তাই সমগ্র দেশটি জুড়ে গেরিলাদের প্রশিক্ষনস্থল রয়েছে যারা প্রতিশোধ এর ভয় ছাড়াই অতর্কিত হামলা পরিচালনা করতে পারে।
৩)সাম্প্রতিক প্রমানাদি নির্দেশ করে যে সামরিক বাহিনী কেবলমাত্র পরিত্যাক্ত নগরকেন্দ্র ও রাস্তা এবং রেলপথ গুলো নিয়ন্ত্রন করে কিন্তু বাকি গ্রামাঞ্চলের ওপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রন কিংবা প্রশাসনিক ক্রিয়ামূলক যন্ত্রপাতি নাই।তার মানে শুধুমাত্র গেরিলাদের জন্য আশ্রয়স্থল নয় বরং গ্রামাঞ্চলের কোন অংশেই টেকসই অর্থনীতি ও সুদুর ভবিষ্যৎ গঠনের সম্ভাবনা নেই।
৪)পুর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ব্যার্থতা মানে বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ ক্ষতি যা পশ্চিম পাকিস্তান ও সামরিক বাহিনীর অর্থনীতি কে সচল রাখছিল।যা নির্দেশ করে বর্তমানে পুর্বের স্থিতাবস্থা ধরে রাখতে ব্যাপক পরিমানে বহিরাগত সাহায্য প্রয়োজন হবে।বর্তমান সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক বরাদ্দ প্রয়োজন যার পরিমান অনেক।
৫)বাংলাদেশে একটি নির্মাণাধীন শর্তাধীন সরকার রয়েছে যারা আর্মি থেকে পালানো স্বাধীন বাংলার অটুট লক্ষ্য রাখা গ্রামাঞ্চলের নেতাদের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক বজায় রাখছে।কূটনীতিক এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষিত বিদেশী কর্মী অস্থায়ী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাকে ব্যাহত করছে।এই সরকারের প্রতিনিধিগন যোগ্য এবং আন্তরিক।শেখ মুজিবুর রহমান এর মুখ্য উপদেষ্টা,মিঃ রহমান সোবহান বর্তমানে এ দেশে রয়েছেন এবং তাকে সরকারের উচ্চ পদাসিন ব্যাক্তিবর্গের নিকট তার তথ্য পোঁছানোর সুযোগ দেয়া উচিৎ।
৬)খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে।১৯৭০ এর সাইক্লোন এর পর ত্রানসামগ্রীর অভিজ্ঞতার প্রমাণাদি নির্দেশ করে যে ইসলামাবাদে বৈদেশিক মুদ্রার গুরুত্বপূর্ণ অপসারণ ঘটেছিলো।বর্তমানে সেসব সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকার মানুষের প্রায় এক মাস যাবত কোন খাদ্য সরবরাহ নেই।এসব এলাকার জন্য সঞ্চিত শস্য চট্টগ্রামে আর্মিদের খাদ্য হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে।সাইক্লোনের হামলা থেকেও চড়া মূল্য পরিশোধ করতে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্টত একটি ধ্বংসাত্মক দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা যাচ্ছে যা অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে সারাবিশ্বের নজর কাড়বে।
ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাতিত সরাসরি অনুদান অথবা বিশ্বব্যাংক এর পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া আর্মির বর্তমান ব্যয় খুব দ্রুতই অসহনীয় হয়ে যাবে এবং অতি শীঘ্রই মীমাংসা ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন ছিল।১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য উদ্যোগটি খুব বেশী অনুকূল ছিল।
চীন পশ্চিম পাকিস্তানের সাপেক্ষে আমাদের জায়গা গ্রহন করতে পারে এই ভীতি থাকা যুক্তিযুক্ত,কিন্তু এটি আমাদের পক্ষে গভীর রাজনৈতিক এবং যুদ্ধকৌশল সংক্রান্ত সাংঘাতিক ভুল প্রকাশ করতে পারে এবং প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্র কে দমনমূলক সামরিক সরকার যা অদূর ভবিষ্যতে টিক্তে পারবে না; তার বিরুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা সমর্থন করতে দেখা যেতে পারে।এই প্রতিবাদের পক্ষে দাঁড়ানো যুক্তিযুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান নেতৃত্বের আপোষের উদ্যোগ এবং বিদেশী সংস্থা গুলোর পশ্চিম পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান অন্তত দুর্ভিক্ষের বোঝা নিরসন করবে এবং সমস্ত জনগনকে করা অস্ত্রসহ গেরিলা যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি দমন করবে যা হবে আমাদের জন্য প্রতিকুল।
বক্তব্যটি যেসকল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা তা ব্যাপক,বাস্তব এবং সাম্প্রতিক।তথ্যের কিছু উৎস আপনার পড়ার জন্য সংযুক্ত করা হল।যদিও আমি মনে করি আপনি ইতিমধ্যে তা কনসুল ব্লাড থেকে হাতে পেয়েছেন।
আমি আশা করি আপনি খুব ভালভাবে পর্জবেক্ষন করে দেখবেন এতে একজোট হয়ে দেশ এবং মানুষের মধ্যে ক্ষমতার সাম্য যা প্রকাশ করছে যা সারাবিশ্বে দ্বিতীয়।দুর্ভিক্ষে এদেশে লক্ষ্য মানুষের মৃত্যু সারাবিশ্বে অবশ্যই নজর কাড়বে।বিষয়টি দমন করতে অতি দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।অপেক্ষা করা কেবল সাইক্লোনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের ইতিহাস ভেঙ্গে ফেলবে এবং তাদের বর্তমান কর্মকান্ডে ধারনা করা যায় এ পথে কোন সাহাজ্যই কার্জকরী হবে না।আন্তর্জাতিক সাহাজ্য আবশ্যক।
নিবেদনে,
উইলিয়াম বি গ্রিনাফ , ৩ , এম ডি
প্রধান
সংক্রামক রোগ বিভাগ।