শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত পাকিস্তানের সমরাস্ত্র সম্পর্কে মিঃ চেস্টার বাউলস-এর বিবৃতি | নিউইয়র্ক টাইমস | ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ |
জনাব চেস্টার বাউলস-এর পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত সমরাস্ত্র
নিউইয়র্ক টাইমস, ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১
এসেক্স, কানেটিকাট- পূর্ব পাকিস্তানে এখন যে সাংঘাতিক সংগ্রাম চলছে তা, কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে বা কি জন্য ব্যবহৃত হবে তা সামান্যই বিবেচনা করে “বন্ধুসুলভ সরকারের” হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বোকামির আরো একটি প্রমান।
১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান(পশ্চিম পাকিস্তানকে বোঝানো হচ্ছে) সরকারের জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য ডলারের সামরিক সরঞ্জামের কর্মসূচি ১৯৬৫ সালে ভারতকে আক্রমন করতে পাকিস্তানিদের সক্ষম ও উৎসাহিত করেছিল।এখন(কিছু সোভিয়েত ও চীনা সরঞ্জামসহ) এটা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পুর্ব পাকিস্তানে তাদের সহজাত দেশবাসীদেরকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে যারা সম্প্রতি মহান স্বাধীনতার জন্য ব্যাপকহারে ভোট দিয়েছে।
এটি বিশেষত একটি ভুয়া উপস্থাপন কারন আমাদের অস্ত্র কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের সরকারের সামান্যতম দায়িত্ব আছে বলে তারা মনে করেন বলে মনে হয় না।নিঃসন্দেহে এটা পুরো পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।
এমনকি যখন আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, যখন সকল বিদেশী সংবাদদাতাদের ঝটিতে দেশের বাইরে বের করে দেওয়া হয়, এবং যখন ঢাকায় আমাদের কন্স্যুলেট জেনারেলের দৈনিক স্থানীয় সংবাদ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্যপক সামরিক অভিযান বিশদভাবে বর্ননা করে, আমাদের সরকার বলেছে কি ঘটছে তা সে জানত না এবং তাই মন্তব্য করার মত কোন অবস্থানে ছিল না।
এটি কেবলমাত্র তখনই ঘটে যখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৫০০ আমেরিকান শরনার্থী সংবাদ মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ননা দিল যে, আমাদের সরকার পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারকে একটি প্রায় ক্ষুদ্র প্রতিবাদের প্রস্তাব দেয়।
আমার কাছে মনে হয় দুইটি পদক্ষেপ, একসাথে নেওয়া উচিত। প্রথমত, আমাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জামের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ গড়ে তোলা উচিত এবং চিকিৎসা সরবরাহ ও খাদ্য ছাড়া অন্য সকল সাহায্য অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।দ্বিতীয়ত, এই সংঘাত স্পষ্টত এশিয়ার শান্তির প্রতি যে হুমকির সৃষ্টি করেছে তা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ বিবেচনার জন্য আমাদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক ডাকা উচিত।যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের মুখপাত্র ইতমধ্যেই প্রথম পরামর্শটি উপেক্ষা করেছেন এবং দ্বিতীয়টি এই মর্মে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ একটি “অভ্যন্তরীন বিষয়” যাতে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই। কিন্তু কংগোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকার কি হবে, দক্ষিন আফ্রিকা, দক্ষিন রোডেশিয়া, সাইপ্রাসের ক্ষেত্রে?
যখন শান্তি এত ব্যপক আকারে হুমকির সম্মুখীন, তখন জাতিসংঘ দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সেটাকে সমাধা করার জন্য সম্ভাব্ যেকোন কিছু করার দায়কে অগ্রাহ্য করেছে। এই দায় বিশেষত তখনই স্পষ্ট হয় যখন “অভ্যন্তরীন বিষয়টি” একটি সুসজ্জিত সংখ্যালঘু সেনাবাহিনীর ১০০০ মাইলের বেশি বিদেশী এলাকা পৃথকীকৃত, ভিন্ন ভাষাভাষী এবং গভীর অন্তঃনির্মিত সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও ভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা বিভক্ত একটি রাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দমনের চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
যদি আমরা যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশ্বের মতামত সংগ্রহের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কথা চিন্তা করি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যে কিনা সীমাবদ্ধতার একটি হালকা অজুহাতে তার প্রতিক্রিয়াকে সীমিত করেছে, প্রায় নিশ্চিতভাবে আমাদের অবস্থানকে সমর্থন করবে। এটা বিশেষত এই কারনে যে চীন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যাকে প্রভাবিত করার জন্য এই অবস্থাকে ধরে রেখেছে, এমনকি যদি এটা তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানের ডানপন্থী সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সাথে সমঝতা এনে দেয় তবুও।
এমন একটা মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুত্থান হয়েছে যখন দক্ষিন এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিরতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। ডিসেম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর আওয়ামী লীগের পাকিস্তানে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত অবাধ নির্বাচনে অপ্রতিরোধ্য জয় শুধুমাত্র প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের দ্বার খুলে দেয়নি বরং ভারতের সাথে বানিজ্যের ব্যাপক সম্প্রসারন ও দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ নিরসনের দ্বারও উন্মুক্ত করেছে।
দুই মাস পর ভারতে মিসেস গান্ধীর হঠাৎ বিপুল ভোটে নির্বাচন তাকে শুধুমাত্র ভারতের জনগণের দারিদ্র নিরসনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ভাড়ই দেয়নি বরং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে এর সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্বও দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে পাকিস্তান সরকারের কার্যকলাপ একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল, প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাসরত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের আশাকে কিছু সময়ের জন্য ধ্বংস করেছে। সকল সম্ভাব্য উপায়ে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে শেষ পর্যন্ত বের করা হবে। যদিও তাদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান, তবুও আগামী বর্ষায় আতংকিত গ্রামাঞ্চলে খাদ্য ও সামরিক সরঞ্জাম নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে।একটি স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুদয় প্রায় নিশ্চিত।
কিন্তু যদি যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ সম্মিলিতভাবে অন্য পন্থা অবলম্বন করে এবং বর্তমান সংঘাতকে এর অবশ্যম্ভাবী রক্তাক্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যেতে দেয়। সাত কোটি তীব্র অসন্তুষ্ট জনগণ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান একটি রাজনৈতিক শুন্যতায় পরিনত হবে যারা ভারতের সবচেয়ে চরম উপাদান থেকে সাহায্যের একমাত্র আশা করছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা বিশেষত সম্ভাব্ যদি শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি গভীরভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ইতমধ্যেই মারা গিয়ে থাকেন।
বিপদ বাড়ার সাথে সাথে মিসেস গান্ধীর সরকার ক্রমান্বয়ে এর ভারতের জনগণের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি্র জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে সরে আসবে, এর পরিবর্তে এর উত্তর ও পূর্ব সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে রাজনৈতিক ও সামরিক সমস্যার দিকে নজর দিবে।