You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.03 | পাকিস্তান সংকটের পটভূমি | রিপন সোসাইটি - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান সংকটের পটভূমি রিপন সোসাইটি ৩এপ্রিল১৯৭১

পাকিস্তানঃ সংকটের পটভূমি
একটি রিপন সোসাইটি প্রতিবেদন
এপ্রিল৩, ১৯৭১

এই প্রতিবেদনটি রিপন সোসাইটির হয়ে পর্যালোচনাকরেছেননিম্নোক্ত কমিটিঃ
জে লি অসপিটজ
সভাপতি
রিপন সোসাইটি।

স্টিফেন এ মার্গ্লিন
অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।

কাস্টাভ এফ পাপেনেক
প্রভাষক, হিসাব বিজ্ঞান এবং
প্রাক্তন পরিচালক, উন্নয়ন উপদেষ্টা সেবা
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ইতিহাস
অনেক কারণেই পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান কখনোই একদেশ হতে পারেনি। এমনকি সবচেয়ে কঠিন সময়েও পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্ক অতি টলমলে ছিল। তারা বস্তুত ১০০০ মাইল দূরে ছিল, তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, তাদের সংস্কৃতি ও ভিন্ন, অর্থনীতি ও ভিন্ন। তাদের শুধুই মিল ছিল ধর্মে , কিছুটা ইতিহাসে এবং একই কেন্দ্রীয় সরকারে ।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন হয় ২৪ বছর আগে, পূর্বের বাঙ্গালিরা এই সন্ধির থেকে খুব সামান্যই উপকৃত হয়েছে বরং তাদের সীমিত নিরাপত্তার ফলে তারা কখনোই জমি ফেরত পাবেনা, পুনর্দখলও করতে পারবেনা ।
এটি ক্রমেই প্রতীয়মান হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থ ধারাক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অধীনস্থ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ পরিকল্পনা পরিষদও দুই রাষ্ট্রের বর্ধমান অর্থনৈতিক অসমতার সরকারী বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা পরিষদের বিশেষজ্ঞদের সভার একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এ দেখে যায় যে, ১৯৫৯-৬০ সালে যেখানে গড় আয় পূর্বের থেকে পশ্চিমে ৩২ একক বেশি ছিল সেখানে ১০ বছর পর ১৯৬৯-৭০ সালে এই অসমতা প্রায় দ্বিগুন হয়ে ৬১ এককে পরিণত হয়েছে।²
কেন্দ্রীয় সরকারের শুল্ক , আমদানী নিয়ন্ত্রণ, শিল্পকারখানার লাইসেন্সিং, বৈদেশিক সাহায্য বাজেট এবং বিনিয়োগ বরাদ্দ প্রভৃতিউচ্চমানের কারখানা গড়ার কাজে সরাসরি বিনিয়োগ ও আমদানী করতে ব্যবহার করছে যার লাভজনকতা পূর্ব পাকিস্তানের শুল্ক ও আমদানী কোটার দ্বারা বেষ্টিত একটি বাজার নিশ্চিত করবে। যদিও শ’এর মধ্যে ৫৬ জন পাকিস্তানি পূর্বে বসবাস করে, কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন খরচের পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ ১৯৫০/৫১-১৯৫৪/৫৫ এর দিকে সর্বনিম্ন শতকরা ২০ এবং ১৯৬৫/৬৬-১৯৬৯/৭০ এর দিকে শতকরা ৩৬ এর মত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বিনিয়োগের ভাগ শতকরা ২৫ এর নিচে । ঐতিহাসিকভাবে, পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে পূর্ব পাকিস্তানের পণ্য থেকে, প্রধাণত পাট ও চামড়া শিল্প থেকে। তারপরও বৈদেশিক আমদানী অংশ (যা রপ্তানী আয় ও বৈদেশিক সাহায্য থেকে আসে) ২৫- ৩৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। মূলত, পূর্বের আদায়কৃত টাকার উদ্ধৃত অংশ পশ্চিমের বৈদেশিক হিসাবের ঘাটতি পূরণে ব্যয় হয় যা ১৯৪৮/৪৯ থেকে ১৯৬৮/৬৯ সালে এক সরকারী প্রতিবেদন অনুযায়ী আনুমানিকভাবে ২.৬ বিলিয়ন পুঁজি স্থানান্তরের উপায় হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে থাকা বিশাল সরকারী কর্তাব্যক্তিদের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অধীনস্থতা সৃষ্টি হয়।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন আমলে যখন আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসেন, কেন্দ্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব খুব অল্পই ছিল। শুধু মাত্র সহযোগী বাঙ্গালীরাই রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়োগ পেত, এবং শক্তিশালী বেসামরিক চাকুরীতে অতি ক্ষুদ্র অংশই জায়গা পেত। সামরিক বাহিনীতে বাঙ্গালীদের অবস্থান আরো শোচনীয় ছিল, ১০ শতাংশ এরও কম ।
পূর্ব ও পশ্চিমের বর্ধমান অস্থিরতা যা ১৯৬৯ এ বিক্ষোভ ও ধর্মঘট এ চূড়ান্ত পরিনতি পায়, এর ফলে আইয়ুব খান , যার বিরুদ্ধে বাঙ্গালীরা ১৯৬৫ তে প্রবল ভাবে ভোট করে, পদত্যাগে বাধ্য হন। ১৯৬৯ এর বসন্তে ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া খানের মার্শাল ল শাসন যা সবসময়ইজনপ্রিয় নির্বাচনের পর এক অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে প্রতিস্থাপনের আভাস দিচ্ছিল। রাজনৈতিক ও সামাজিক বলয়ে সামরিক বাহিনী কোন নতুনত্ব আনছিল না। যা হোক , মিলিটারীরা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিলঃ তারা একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে, গণপরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ উভয়ের জন্য।
এই নির্বাচন “এক নাগরিক এক ভোট” এর ভিত্তিতে ছিল । যার মানে, গণপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানিদের মোটামুটিভাবে ৫৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ ছিল। দুইটি দল এই নির্বাচনে কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে। পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের দল, আওয়ামী লীগ, গণপরিষদের ১৬৯ টির মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে, অন্যদিকে পশ্চিমে জুলফিকার আলী ভুট্টোর দল আনুমানিকভাবে ১৪০ আসনের ৮০ টিতে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগের আসলে গণপরিষদের সংখ্যাধিক্যের জন্য যথেষ্ঠ ভোট ছিল।
আওয়ামী লীগ একক প্রচারেই চলছিল যা হল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন৭। ২৫ শে মার্চ রাতের গোলাগুলি শুরুর আগ পর্যন্ত , তারা স্বাধীনতার কথা কখনো ঊঠায় নি, শুধু পশ্চিমের সাথে শিথিল ঐক্যের আবেদন করেছিল। যেখানে কাগজে কলমে তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পেয়েছিল, কিন্তু তারা সম্ভবত অনুভব করেছিল যে তারা সেটি করতে পারছেনা, এমনকি , সামরিক, বেসামরিক ও বড় বড় ব্যবসা গুলো পশ্চিমাদের হাতেই ছিলো। অতএব তারা এমন একটি সরকারের ব্যবস্থা চেয়েছিল যায তাদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় স্বার্থগুলো নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা দিবে। পশ্চিমের প্রতিষ্ঠিত স্বার্থান্বেষী দল, বিশেষত, সামরিক বাহিনী যাদের অর্থবরাদ্দ হুমকির মুখে ছিল এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা পূর্বের বাজার ও বৈদেশিক লেনদেন হারানোর পর্যায়ে ছিল, তারা পূর্বের সার্বভৌমত্বের প্রবল প্রতিবাদ করে।
যখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের স্বায়ত্বশাসনের দাবি থেকে পিছু হটবেনা, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চের গণপরিষদের সভা পিছিয়ে দেন। ফলে ১লা মার্চের বিক্ষোভ সংঘটিত হয় যাতে শতাধিক মানুষ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। এই প্ররোচনার পরও শেখ মুজিব আলোচনার দুয়ার খোলা রাখেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর জবাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাথে আলোচনা দুই সপ্তাহের জন্য ঝুলিয়ে রাখেন। অতীত ঘাটলে বুঝা যায় যে এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সামরিক বাহিনী বহাল করার সময় নেওয়ার জন্য তাদের একটি চাল । ২৫ শে মার্চ , সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগ কে বেআইনী ঘোষণা করে, এদের নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং কামান , স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র (বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহকৃত) দিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করে।৯
সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ড সন্ত্রাসের রাজত্বের মাধ্যমে নগরবাসীদের মধ্যে ত্রাস হিসেবে প্রতীয়মান হয়। বাছবিচার ছাড়াই হত্যাকান্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। প্রথম তিন দিনে ১৫০০০ এর ও বেশি লোক মারা যায় বলে প্রতিবেদনে দেখা যায়।
নিকট ভবিষ্যতে দেখা যায় সামরিক বাহিনী প্রধান নগরীগুলোতে ভয় দেখাতে সক্ষম হয়, কিন্তু এখনো গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত অংশে তারা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এইসামরিক অবস্থা অসমর্থনীয়। বৈরী পরিবেশে এবং যৌক্তিক বিচারে, এখন যেই ৬০,০০০ পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য পূর্বে অবস্থান করছে, তা বজায় রাখা কঠিন হবে। তাছাড়া সীমানা পাহারা দেওয়া ও তাদের প্রতিহত করার জন্য বাঙ্গালীদের অস্ত্র যোগাড় করা থেকে বাধা দেওয়া সামরিক বাহিনী দ্বারা সম্ভবপর না।
বাঙ্গালিরা তাদেরকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে এবং তারা লড়াই করতে সংকল্পবদ্ধ। পরিশেষে , তারা জিতবেই। কত সময়ে, কত প্রাণের বিনিময়ে, কত ধংসের মধ্য দিয়ে সেই স্বাধীনতা আসবে সেটিই প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক নির্বাচন পূর্ব পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম এমন একটি দল দিয়েছে। বেসামরিক যুদ্ধের চেয়ে বর্তমান অবস্থা হচ্ছে এক রাষ্ট্রের দ্বারা অন্য রাষ্ট্রের উপর সেনাবাহিনী দিয়ে আক্রমণ, একটি যথাযথ নির্বাচিত সরকারের পতনের জন্য এবং জনগনকে আয়ত্তে নেয়ার জন্য।

আনর্জাতিক সম্প্রদায়ে এক স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান
বাংলাদেশের, পূর্ব পাকিস্তানিদের তাদের আকাঙ্ক্ষিত জাতির জন্য পছন্দের নাম, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের পশ্চিম বাংলার মধ্যে একই ভাষা-বাংলা ভাষার সাংস্কৃতিক বন্ধন ছাড়াও শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্ধনে আগ্রহ অনুরূপ। পশ্চিম বাংলার কয়লা ও লোহার আকরিকের নিকটবর্তী সরবরাহের দ্বারাপূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়ন বিশালভাবে উপকৃত হবে। এমনকি কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য, সমবায়ের মাধ্যমে, বিশেষত বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যে, সেচ নিয়ন্ত্রন সমৃদ্ধ করতে বেশিরভাগ বিনিয়োগ ভারতের দ্বারাই করতে হবে। ভারত শুধু জলনিয়ন্ত্রনের মাধ্যমেই উপকৃত হবে না, বরং পূর্ব পাকিস্তানের বাজারে সরাসরি প্রবেশ এবং আসামে প্রবেশের উন্নত ব্যবস্থার ফলে তারা সুবিধা লাভ করবে। ঐতিহাসিকভাবে, পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ভারতের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পারস্পরিক স্বার্থ জড়িয়ে থাকলেও, তাদের সম্পর্ক উন্নয়নে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার সবসময় বাধা প্রদান ও নিরুৎসাহিত করে আসছে। বিশেষ করে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা বিশ্বাস করতো, যুদ্ধ করে বিজয় লাভ ব্যতীত, পূর্বের বাজারে ভারতের অর্থনৈতিক আগ্রহ কে কাজে লাগানোই তাদের কাছে কাশ্মীর দাবীর একমাত্র উপায় ।
এক স্বাধীন বাংলাদেশ চীনের সাথে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তা হবে বর্তমান চীন ও পাকিস্তানের বানিজ্যে ও সহযোগিতার মাপকাঠিতে অতি ক্ষীণ। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনে যত সময় লাগবে এর নিয়ন্ত্রণও সময়ের সাথে, মধ্যপন্থী আওয়ামী লীগের হাত থেকে সংগ্রামী ও বাম্পন্থীদের হাতেও যেতে পারে যেমন জাতীয় আওয়ামী পার্টির কাছে (যারা ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয়নি)
সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, ইউ, এস, এস, আর পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। এর নতুন প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়ননের যোগাযোগ পশ্চিম পাকিস্তানেসামরিক শাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যদিও এটি অনুমান করা কঠিন ছিল যে সোভিয়েতদের আচরণ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি কেমন ছিল, তাও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধন চীনের সাথে বন্ধন থেকে কখনোই দৃঢ় হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিঃ অতীত ও ভবিষ্যত
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের সম্ভাব্য ধারা গভীরভাবে নির্ভর করে বর্তমান সংকটে তাদের নীতির উপর, বিশেষত পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর। যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সম্ভাবনার প্রশংসা করতে, সামান্য ইতিহাস সাহায্য করবে।
১৯৫০ এর প্রথম দিকে, যখন পাকিস্তান “সিয়াটো” ও “সেন্টো” -র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তিতে যোগদান করে, সে মার্কিনদের থেকে বিশাল অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পায়। ১৯৬৯ এর মধ্যে অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিমান ৩ বিলিয়ন ডলারের মত হয় এবং সামরিক সাহায্য , প্রায় ১.৫ থেকে ৫২ বিলিয়নের মধ্যে ছিল বলে অনুমান করা হয়। এই সহায়তার অন্তর্ভূক্ত ছিল এফ-১০৪ স্টার ফাইটার, এফ-৮৪ সাব্রে জেট, সি-১৩০ পরিবহন, প্যাটন ট্যাংক, সাঁজোয়া বাহক, ভারী অস্ত্র এবং স্বয়ংক্রীয় অস্ত্র। অত্যাধুনিক সরঞ্জামের এই সহায় স্পষ্টভাবে প্রতিরক্ষা জন্যই ছিল , সাম্যবাদীদের সম্ভাব্য আক্রমণকারী হিসেবে দেখা যাচ্ছিল এই প্রসঙ্গে ই এগুলো সরবরাহ করা হয়। ১৯৬৫ এর ইন্দো-পাকিস্তান সীমানা যুদ্ধের পর, যখন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশে অস্ত্রের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, পাকিস্তান সরকার ভারতের অন্য শত্রুদের যেমন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সমর্থন খোঁজে।
পাকিস্তানি এই উদ্যোগ সহানুভূতির সাথেই চীন গ্রহন করেছিল, সম্ভবত ভারত-চীন সংঘাতের কারণেই না , বরং “সিয়াটো” ও ‘সেন্টো’ তে এটি বিরোধের প্রতিনিধিত্ব করে সেই জন্য। চীনা সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেও অনুরূপ প্রস্তাবকে উৎসাহিত করে, যারা পশ্চিম ক্ষমতার সাথে পাকিস্তানের সামরিক জোট ছোটানোর জন্য তৎপর। সম্ভবত যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বাস করে যে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রভাব বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, অথবা সম্ভবত পেন্টাগন ও পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর মধ্যে দীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের নিছক প্রেরণার কারণে, ১৯৬৭ এ অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা সরানোর প্রচেষ্টা জোরালো হয়। পূর্বে আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশ জার্মানী ও তুর্কি তে নাম মাত্র দামে বিক্রীর প্রচেষ্টা করা হয় এই নিশ্চয়তার সাথে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগুলোর বদলে নতুন অস্ত্র সরবরাহ করবে। ১০
যদিও জনসন প্রশাসনের এই বিশেষ পদক্ষেপ, উপযুক্ত সরঞ্জামে সজ্জিত তৃতীয় দেশগুলোর এই ব্যবস্থার প্রতি অনিচ্ছার কারনে প্রতিহত হয়, ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে নিক্সন প্রশাসন এফ-১০৪ স্টার ফাইটার, বি-৫৭ বোমারু বিমানের একটি দল ১১ এবং ৩০০ কামান সহ এমন কিছু আইটেম পাকিস্তান কে নিজ থেকেই প্রদান করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেখলে, ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ স্বাধীন বাংলাদেশের জরুরী অবস্থা ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে বিরোধ মিটানোর ইউ, এস এর বৈদেশিক নীতির যে লক্ষ্য তাতে সহায়তা করবে। কাশ্মীর সমস্যা , যে বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তান কখনোই মাথা ঘামায়নি, তা ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান কে বিভক্ত করতেই থাকবে। কিন্তু একটি পৃথক সত্তা হিসাবে, পশ্চিম পাকিস্তান ভারতের সাথে এই দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল টানাপোড়েন চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেনা, যা এই দরিদ্র দুটি দেশের অপ্রতুল সম্পদ কে নিঃশেষ করছে।
স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সম্ভবত একটি সরকারী পশ্চিমা নীতি অনুসরণ করবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সহায়তার বিধানের সাথে এক হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কাছে ইউ.এস. সহযোগিতা অব্যাহত থাকার ফলস্বরুপ যদি এই স্বাধীনতার সংগ্রাম দীর্ঘায়িত হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থী শক্তির উত্থানের ফলে ইউ এস সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আর উন্নয়ন হবেনা। ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টগুলি নিশ্চিত করে যে পূর্ব পাকিস্তানে সন্ত্রাসের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ান এবং চীনা অস্ত্রের পাশাপাশি এখন আমেরিকান অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকান সরকার অবশ্যই নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের হত্যাকারী দল অথবা পূর্ব পাকিস্তানিদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রামের জোরপূর্বক দমনকারই দল হতে চাইবে না। যেহেতু প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহারের চুক্তিতেই অস্ত্র গুলো সরবরাহ করা হয়েছিল, সেখানে নিরস্ত্র নাগরিকদের গণহত্যা জন্য এগুলো ব্যবহারে ইউ, এস প্রতিবাদ জানাতেই পারে।
সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য অব্যাহত রাখা এই ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল সহায়তা পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের দিকে প্রবাহিত করতে বাধ্য। পরিশেষে , যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অক্টোবর ১৯৭০ এর অস্ত্র প্রস্তাবের আওতায় সকল সরবরাহ প্রতিরোধ করা উচিত, ভবিষ্যতেও কোন অস্ত্র লেনদেন এড়ানো উচিত এবং পাকিস্তানের সকল অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করা উচিত। এমন পদক্ষেপ, কূটনৈতিক চাপ ও নৈতিকতার সাথে, সকল বৈরীতার অবসান ঘটতে পারে এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রাথমিক গঠনের দিকে ধাবিত করতে পারে।

NOTES
1. Reports of the Advisory Panels for the Fourth Five Year Plan 197 -7 ,Vol. I,
Planning Commission, Government of Pakistan, July, 1970.
2. Planning Commission, op. cit,p. 2.
3. Soligo. R. and Stern, J. J., “Tariff Protection, Import Substitution, and Investment
Efficiency.” Pakistan Development Review, Summer 1965. This demonstrates the
inefficiency of nearly all industries.
4. Planning Commission, op. cit., p. 6.
5. Foreign Trade statistics,various issues, Central Statistical Office, Government of
Pakistan.
6. Planning Commission, op. cit. Appendix III.
7. The Six-Point autonomy program of the Awami League is-
(1) Establishment of a federation “on the basis of the Lahore Resolution and the
Parliamentary framework of government with supremacy of legislature directly
elected on the basis of adult franchise.”
(2) Federal government shall deal with only two subjects; that is defense and
foreign affairs and all other residuary subjects should rest in the federating states.
(3) There should be either two separate but freely convertible currencies for the
two wings or one currency for the whole country, provided that effective
constitutional provisions were made to stop the flight of capital from East to West
Pakistan. There should be separate banking reserves and a separate fiscal and
monetary policy for East Pakistan.
(4) It denies the centre the right of taxation and vests it in the hands of the
federating states with the centre receiving a fixed share.
(5) Foreign trade: Five steps
(a) There shall be two separate accounts for foreign exchange earnings.
(b) Earnings of East Pakistan shall be under the control of East Pakistan
and the same for West Pakistan.
(c) Foreign exchange requirements of the federal government shall be met
by the two wings cither equally or in a ratio to be fixed.
(d) Indigenous products shall move free of duty within the wings.
(e) The constitution shall empower the unit governments to establish trade
and commercial relations with, set up trade missions in, and enter into
agreements with foreign countries.
(6) Setting up a militia or para-military force by East Pakistan.
8. Papanek, G. F. Pakistan s Development: Social Goals andPrivate Incentives,
Harvard University Press, 1967.
9. The Washington Post, March 30, gives a graphic account of the massacres
committed
with the use of armored units in Dacca, the regional capital of East Pakistan.
10. Bowles, Chester, Promises to Keep: My Years in Public Life 19 1-19 9,p.
521, Harper and Row, 1971.
11. Bowles, op cit., p. 522.