You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাক ভারত যুদ্ধঃ কংগ্রেস সদস্য ফ্যাসেল এর বক্তৃতা প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল রেকর্ড–অভ্যন্তরীণ এইচ ১২৭৩৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

জনাব ফ্যাসকেল। মাননীয় স্পিকার, পূর্ব পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ সত্ত্বেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুটি দেশের মধ্যে এইরূপ যুদ্ধ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যথাসাধ্য চেষ্টা করা আবশ্যক।
এতকিছুর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোথায়? এই বিষয়ে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত যে, আমাদেরকে অবশ্যই যুদ্ধে জড়িয়ে পরা থেকে বিরত থাকা লাগবে। কিন্তু আমরা যদি দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাপারটি প্রভাবিত না রাখতে পারি, তাহলে আমরা প্রভাব ধরে রাখতে পারবো না। এখন পর্যন্ত ঐ প্রভাবটি তেমন ভাবে ব্যাবহার করা হয়নি। আরও এক বছর আগে থেকে বর্তমান সংকটের শুরুতেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সকল আবেদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করে আসছে, যারা কিনা একটি মুক্ত নির্বাচনে গিয়ে সন্ত্রাস ও অত্যাচারের একটি শাসন প্রবর্তন করেছিলো।
প্রেসিডেন্ট খান ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এজন্য আমরা উনার কাছে কৃতজ্ঞ। আর আমি নিশ্চিত যে, যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে দেয়া সকল প্রতিশ্রুতি আমরা অত্যন্ত গুরুত্তের সাথে রক্ষা করবো।
অবশ্য ভারত যে উদ্বাস্তুদের বৃদ্ধি ঠেকাতে সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন অবলম্বন করছে না, সেই ব্যাপারটি ভুল ও হতে পারে। আমারা যুক্তরাষ্ট্রেবাসী নিজেরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিৎ যে, এই দেশগুলো ভারতকে একটি শান্তিপূর্ণ বিকল্প আশায় দিতে পারবে কি? এই যুদ্ধটি প্রতিরোধ করতে প্রকৃতপক্ষে কি করেছি?
বিশ্বের অন্যান্য এলাকার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে, ১৯৭১ সালে উপমহাদেশের তৎকালীন সামগ্রিক নীতি কোন বাস্তবতার দেখা পায়নি। মনে হচ্ছে যেন আমরা পুরাতন ব্যাপারগুলোর উপরেই নতুন প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করছি। সুতরাং আমাদের প্রায় সম্পূর্ণ সমর্থন থাকলো পাকিস্তানের প্রতি।
আমার মনে হচ্ছে যে আমাদের নীতিগুলোর যথার্থতা কেবল আমাদের নীতির ব্যাপারেই না, বরং আমাদের নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতেও ভুল। কিন্তু এখন অধিকার বা ভুলগুলো নিয়ে বিতর্ক করার সময় না। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ ভারতের এই আপাত বিজয়ের প্রাক্কালে অপ্রয়োজনীয় রক্তপাত রোধ করার করার জন্য কাজ করা। আজ সকালে সমুদ্রে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোর গতিপথ এবং গতকাল মস্কো থেকে জারী হওয়া একটি বেনামী সতর্কবার্তা থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রেসিডেন্ট উপমহাদেশের ব্যাপারে সম্ভবত কিছু একটা করার চিন্তা করছেন।
মাননীয় স্পিকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রাণনাশের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার ব্যবহার করার ব্যাপারে আমি কোন বিরোধিতা করবো না। কিন্তু একটি গুরুতর পদক্ষেপ কেবলমাত্র তখনই গ্রহণ করা উচিত, যখন নিচের ব্যাপারগুলো সম্মুখে চলে আসে,
প্রথমত, যদি এটি মানবিক কাজের জন্য অপরিহার্য হয়;
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসকে যতটা সম্ভব পূর্ণ পরামর্শ দেয়া যায়; এবং
তৃতীয়ত, যদি আমাদের যেকোনো মানবিক প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের সম্মতি পাওয়া যায়।
আমি সম্পূর্ণ এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ব্যবহারের বিরোধিতা করছি যতক্ষণ না পর্যন্ত কংগ্রেস সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক বা মানবিক উদ্দেশ্যে এই শক্তি ব্যবহারের পরামর্শ না দেয়া হয়।
যদি এর মধ্যে কোনটি সম্পূর্ণ করা হয়, তাহলে আমি আশা করি রাষ্ট্রপতি নিজে থেকেই কংগ্রেসকে বিশ্বের প্রধান প্রধান উন্নয়ন কর্মে কাজ করার পরামর্শ দিবেন।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!