You dont have javascript enabled! Please enable it! সাক্ষাৎকারঃ মিজানুর রহমান খান | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

সাক্ষাৎকারঃ মিজানুর রহমান খান
১১-১২-১৯৭৫

মহেন্দ্রগঞ্জ ছিল ১১ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার।২১শে জুলাই আমি মহেন্দ্রগঞ্জ সেক্টরে যোগ দিই।আগষ্ট মাসের শেষ দিকে মেজর তাহের মহেন্দ্রগঞ্জ ১১ নং সেক্টরে যোগ দেন।মেজর তাহের আসার পর তিনি আমাদের ৪৮ জন নিয়ে একটি স্পেশাল পার্টি তৈরী করেন।আমরা তুরাতে ট্রেনিং নেওয়া সত্ত্বেও মেজর তাহের আমাদের বিশেষভাবে ট্রেনিং দেন।আমাদের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন হেলাল(সৈয়দ সদরুজ্জামান)।আমাদের পার্টি হেলাল পার্টি হিসেবে পরিচিত ছিল।আমরা ৪৮ জন কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম।মেজর তাহের আমাদেরকে সবসময় সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভ রাখতেন।প্রতিটি প্রথাগত যুদ্ধে বা সম্মুখযুদ্ধে আমরা অংশ নিয়েছি।ক্যাপ্টেন মান্নান ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড।লেঃ মিজান,লেঃ আলম সেপ্টেম্বর এর শেষের দিকে সেক্টরে যোগ দেন।১৫/১৬ আগষ্ট আমাদের ১৩৫ জনকে পাঠানো হয় কামালপুর আক্রমণের জন্য।কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর সুবেদার মনসুর।অন্যদিকে লেঃ মাহফুজ তার কোম্পানী নিয়ে ছিলেন। লেঃ মাহফুজ মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর এর অধীনে যুদ্ধ করেছেন।পরবর্তীতে লেঃ মাহফুজ ডালু সাবসেক্টরে নভেম্বর মাসে এক অপারেশনে নিহত হন।

ভোর রাতে আমরা কামালপুর আক্রমণ করি।দিনের আলোতে আমরা পরস্পর কে দেখতে পাচ্ছিলাম।সংঘর্ষ আধঘণ্টা স্থায়ী হয়।এই সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়।পাকিস্তানিদের ৮/৯ জন নিহত হয় বলে জানা যায়।

মুক্তিবাহিনীর নিহতদের মধ্যে আমানুল্লাহ কবিরের নাম বিশেষভাবে বলা যায়।আব্দুল মালেকসহ আরও কয়েকজন আহত হন।

নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি মেজর তাহেরের নেতৃত্বে ৮টি কোম্পানীকে নিয়ে ভারতীয় সৈন্য সহ কামালপুর আক্রমণ করা হয়।রাত ১২ টার দিকে ডিফেন্স পজিশনে চলে যাই।ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটে আমরা কামালপুর আক্রমণ করি।আমরা ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাহেরের সঙ্গে ছিলাম।আমাদের উপর নির্দেশ ছিল কামালপুর দখলের পরপরই অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নিয়ে আসতে হবে।ভোর ছ’ টার দিকে মেজর তাহের সহ আমরা নয়াপাড়ার শেষপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছায়।আমাদের অস্ত্র ছিল ২ টি ষ্টেন,৮ টি এস-এল-আর এবং আমার সঙ্গে একটি অয়ারলেস সেট ছিল।মেজর তাহেরের সঙ্গে একটি অয়ারলেস সেট ছিল এবং তার সঙ্গে সর্বমুহুর্তের জন্য একটি ছড়ি থাকতো।

রাস্তার পাশে আমরা পজিশন নিলাম।উভয়পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।সকাল প্রায় ৮ টার দিকে একটি শেল মেজর তাহেরের বাঁ পায়ে এসে পড়ে।মেজর তাহের চিৎকার করে ওঠেন।আমি তার ছড়ি এবং অয়্যারলেস সেটটি নিয়ে নিই।আমি এবং সফি মেজর তাহেরকে ধরে পেছনে নিয়ে আসি।লেঃ মিজান তাড়াতাড়ি এসে ধরলেন।আমরা কাদঁছিলাম।মেজর তাহের চুপ করতে বলে সবাইকে অগ্রসর হতে বললেন।সেদিন কামালপুর দখলের পূর্ব মুহূর্তে এই দূর্ঘটনার পর কামালপুর আর দখল করা সম্ভব হয়নি।ভারতীয় বাহিনী মেজর তাহেরকে নিয়ে যায়।

৩০ শে নভেম্বর আমরা প্রায় ৫০০ জন মুক্তিযোদ্ধা কামালপুর ঘিরে রাখি।কামালপুর পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখি।

৩০ শে নভেম্বর ভারতীয় বাহিনীর একটি সম্পূর্ন শেষ হয়ে যায়।৪ ঠা ডিসেম্বর পাকসেনারা কামালপুরে আত্মসমর্পণ করে।বিকাল ৪ টায় ভারতীয় অফিসার আমাকে ডেকে জানতে চাইলেন কে চিঠি এবং পতাকা নিয়ে কামালপুর যেতে পারবে।মুক্তিযোদ্ধা বশীরকে নির্বাচন করি।আমার জাম্পারটি সবুজ রংয়ের ফুলহাতা ছিল।বশীরকে তা দিয়ে দিই ভারতীয় অফিসারের কথা মত।বশীর জাম্পারটি পরে আমার স্টেনটি নিয়ে রওনা হয়ে যায়।অপরদিক থেকে সঞ্জু নামক মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠানো হয়েছিল।সন্ধ্যা ৬ টায় বশীর এবং সঞ্জু ফিরে আসে।পাকসেনারা ছিল ১৬১ জন এবং দু’ জন অবাঙ্গালী অপারেটর ছিল।দুজনের মধ্যে ১ জন মেয়েও ছিল।পাক সেনারা ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।কামালপুর মুক্ত হয়।পরে ১১ ই ডিসেম্বর জামালপুর মুক্ত হয়।মেজর তাহেরকে উদ্ধার করার জন্য সরকার আমাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন।

মিজানুর রহমান খান
১১-১২-১৯৭৫