You dont have javascript enabled! Please enable it!

তােমাদের মত পালােয়ান নয়, নয় মাংসল ভারী, ওরা কৃশ, তবু ঝকমক করে সুতীক্ষ তরবারী! বঙ্গভূমির তারুণ্যের এ রঙ্গনাটের খেলা বুঝেও বােঝেনি।

যক্ষ রক্ষ, বুঝিবে সে শেষ বেলা। দুর্জয় সেনা মুক্তিফৌজের জয় যাত্রা অব্যাহত। ওদেরকে রুখতে পারবেনা কেউ যুদ্ধের সাপ্তাহিক খতিয়ান | মংগলবার ও বাংলাদেশের কাটুলিয়ায় মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনী হানাদারদের ওপর আক্রমণ | চালিয়ে ৫ জন হানাদারকে নিহত করেছে। কুষ্টিয়ার কাছে মানসীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলষ্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে মাইন দিয়ে একটি সৈন্যবাহী ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছে। ৩০ জন হানাদার সৈন্য খতম হয়েছে। কুষ্টিয়ার সদর শহর মেহেরপুরের নিকট যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আর্শাদ নামে জনৈক হানাদার বাহিনীর অফিসার সহ কিছু হানাদার সৈন্যকে খতম করেছে মুক্তিফৌজ। | বুধবার ও সিলেট শহরে বিজলীব্যবহার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে অকেজো করে দিয়েছে মুক্তিফৌজের। গেরিলা শাখা। অনেক চেষ্টা করেও পাঞ্জাবীরা বিজলীবাতি জ্বালাতে পারছে না। ছাতক শহরটাও পূনর্দখলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে হানাদার বাহিনী। কিন্তু মুক্তিফৌজের সতর্ক দৃষ্টিকে ফাকি দিয়ে যাওয়া পশ্চিমাদের কর্ম নয়। ওদিকে বাংলাদেশের আরেক প্রান্তে রাজশাহী জেলার বাকুরা গ্রামে রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত অধ্যায়। মুক্তিফৌজের ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ খবর দিলাে আগামী কালুকে বাকরাগ্রামে খানাতল্লাসী করতে আসবে হানাদার বাহিনী। গ্রামের লােকের অপরাধ—ওরা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সহযােগিতা করে থাকে। এদিকে সংবাদটা পেয়ে মুক্তিফৌজ তৈরী। হয়ে রইলাে। পরদিন দুপুরের দিকে এলাে ওরা। তখন সামনা সামনি মাত্র ৪০/৫০ গজ দূর থেকে। চলেছিলাে রক্তাক্ত সংগ্রাম। এরপর হানাদার বাহিনীর পলায়ন। রণক্ষেত্র শবদেহে সমাকীর্ণ। যে সমস্ত মৃতদেহ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিলাে তাদের মধ্যে রেজাকার ১৫, বিহারী সুবেদার ১, ফ্রন্টিয়ার ফোর্স।

ও পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ৫, ২২টা মৃতদেহ সনাক্তের অযোেগ্য এবং আরাে ১টা মৃতদেহ ছিলাে রাজশাহীর | সর্বজন পরিচিত পাকদালাল গােচর আরাণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হােসেনের। একটি জীবন ও না খুইয়ে মুখখামুখি এতাে বড়াে সংগ্রামে বিজয়ী হয়েছে দুর্জয় সেনা মুক্তিবাহিনী। বৃহস্পতিবার খবর এসেছে মুক্তিবাহিনী পাক-হানাদারদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে নােয়াখালি জেলার ফেনী এলাকা দখল করেছেন। বহু হানাদার সৈন্য হতাহত হয়েছে। কুমিল্লায় মান্দার বাস অঞ্চলের একটা বিরাট অঞ্চলকে মুক্ত করা হয়েছে। কসবা এলাকায় আড়াই বাড়ী দখল করা হয়েছে। কুমিল্লা ও | ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে সংযােগরক্ষাকারী সড়কটিকে মুক্ত করতে গিয়ে ১২টা দুশমনকে খতম করেছে মুক্তি বাহিনী। | শুক্রবার। ফেনী মহকুমার এক বিরাট অঞ্চল এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। মহকুমার পরশুরামপুর, চিতােলিয়া ও সাল্লারের যুদ্ধে একজন কমিশন্ড অফিসার সহ ৮৪ জন শত্রু সৈন্য নিহত হয়েছে।  শনিবার ও কুমিল্লা জেলার চান্দপুর অঞ্চলে এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা।

ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চন্দপুরে অন্ততঃ ৮০ জন শত্রুসেনা ও রেজাকার খতম করেছে মুক্তিসেনা। সিলেটের শুলাপগঞ্জ থানার আমুড়া ইউনিয়নে এ সপ্তাহের বহু যুদ্ধ হয়। রােববার ও মুক্তিবাহিনীর ১২ জন গেরিলা কুষ্টিয়া জেলার দত্তনগর থেকে তিন মাইল পূর্বে যুগলিপান্তা নামক গ্রামে মাত্র কয়েকটা হালকা মেশিনগান, দু’ইঞ্চি মর্টার রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে পাক সৈন্যের শিবিরে আক্রমণ চালিয়ে ১০৫ জন শত্রুকে বধ করেছে। এবং ঢাকা শহরে বােমা দিয়ে ৭জন শত্রুকে হত্যা করেছে। ১ টি পাকিস্তানী জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসায়ের কেন্দ্র কালিয়ার বাজার এলাকার বােমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত করেছে ৬টা দুশমনকেও আহত হয়েছে ৩০টা। একই দিনে মুক্তিবাহিনী সিলেটের হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জে বহু টেলিফোন খুঁটি ধ্বংস করেছে।

এক নজরে মুক্তিবাহিনী সাফল্য : মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরের বুলেটিন। ২১শে অক্টোবর রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী অঞ্চলে সিংগীমারীতে পাক-ঘাটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে। ১০ জন খানসেনাকে খতম। ২ জন গেরিলা সৈন্য আহত। ২০শে অক্টোবর কেতকীবাড়ী এলাকায় ৪০ জন পাক-সৈন্যের সংগে সংঘর্ষ । ১১ জন শত্রু সৈন্য নিহত ও ১ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ। ১৯শে তারিখে | খেরিবাড়ী এলাকায় ৭ জন শত্রু সৈন্যকে বধ । দিনাজপুর জেলার গােদাগাড়ী হাট এলাকায় এক সংঘর্ষে ৫ জন শত্রু সৈন্য হত। ঐ দিনেই হরগােবিন্দপুরের টহলদালী শত্ৰুদলের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ১ জনকে হত্যা ও ১ জনকে আহত করা হয়েছে।  মুক্তি বাহিনী ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ও গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। ২০শে অক্টোবর কুমিল্লা জেলার মুকুন্দপুরে পাক-ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করে ৪ জন শত্রুসৈন্যকে শেষ করে দিয়েছে। ২৯শে তারিখে নালুয়া এলাকায় ৩ জন শত্রুকে খতম করা হয়েছে। ১৮ তারিখে এক আক্রমণ চালিয়ে নদী এলাকায় ৫ জন শত্রু সৈন্যকে নিহত করেছে মুক্তিবাহিনী। ২১শে অক্টোবর ৯ জন রেজাকার বাগমারা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৭ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সিলেট ও ছাতকের মধ্যে দুইটি বৈদ্যুতিক লাইন ধ্বংস করে দেয়। কুষ্টিয়া, খুলনা, যশাের অঞ্চলে ও মুক্তিবাহিনী কয়েকবার পাক ঘাঁটিগুলাের ওপর আক্রমণ চালায়। এইসব আক্রমণে বহু পাক সৈন্য হতাহত হয়েছে। বিস্ফোরণে ১২টি গাড়ী ধ্বংস গত ১৮ই অক্টোবর ঢাকায় মুক্তিবাহিনী গেরিলারা বিস্ফোরণের সাহায্যে ১২টি মােটরগাড়ী উড়িয়ে   দেওয়ায় ২০ জন নিহত হয়েছে। ই, পি, আই, ডি, সি, বিল্ডিং ও হাবিব বিল্ডিংয়ের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ীগুলাের একটিতে ২৫ পাউন্ডের বিস্ফোরক রেখে এটা ঘটানাে হয়েছে।

মুক্তবাংলা ১: ৭

১ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!