সাক্ষাৎকারঃ হাবিলদার মোঃ ফসিউদ্দিন আহমদ
২-৫-১৯৭৪
ভারতের সহযোগিতায় আমাদের পুনর্গঠন শুরু হয়। গেরিলা যুদ্ধ বাংলাদেশের ভেতরে চলতে থাকে।
ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে পোলাডাঙ্গা এবং সাহেবনগর চরে মুক্তিযোদ্ধারা এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ডিফেন্স নেয়। চর এলাকাকে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য মে মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানীরা আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের কিছু সংখ্যক লোক হতাহত হয়। পাকিস্তানীদেরও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় চর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।
মে মাসের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পদ্মা নদী পার হয়ে ফরিদপুরে ডিফেন্স তৈরি করে। ডিফেন্স মজবুত করা হয়। সেখান থেকে প্রায়ই গেরিলা অপারেশন চালানো হতো। জুলাই মাস পর্যন্ত আমরা পোড়াগাঁও, হাকিমপুর, বাঘের আলী এলাকা আমাদের দখলে আনি। পোড়াগাঁওতে আমাদের উপর পাকিস্তানীরা আক্রমণ চালায়। উভয়পক্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর আমরা পোড়াগাঁও এলাকা ছাড়তে বাধ্য হই। ভারতের লালগোলা এবং বাংলাদেশের ভেতরে ফরিদপুর থেকে বিভিন্ন দলকে রাজশাহী শহর, নওয়াবগঞ্জ, পাবনা এবং বগুড়াতে গেরিলা অপারেশন চালানোর জন্য পাঠাতে হত।
অক্টোবর মাসে আমরা আবার পোড়াগাঁও পর্যন্ত দখল করে নেই। ডিসেম্বর মাস থেকে আমাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। ডিসেম্বরে আমরা নওয়াবগঞ্জ দখল করে নেই। নওয়াবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হবার সময় আমাদের ও পাকিস্তানীদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর নওয়াবগঞ্জ দখলের সময় শহীদ হন। নওয়াবগঞ্জ দখলের পূর্বদিন আমাদের সাথে ভারতীয় এক রেজিমেন্ট বি-এস-এফ দেয়া হয়। দুই-তিন মিনিট যুদ্ধের পর তাদের বহু আহত হয় এবং মর্টার, মেশিনগান এবং গোলাবারুদ ফেলে তারা পলায়ন করে। নওয়াবগঞ্জ দখলের সময় কোন ভারতীয় সৈন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে নাই।
১২ই ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা নওয়াবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে নাটোরে আশ্রয় গ্রহণ করে।
স্বাক্ষরঃ মোঃ ফসিউদ্দিন
২-৫-১৯৭১
**বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত।