You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাক্ষাতকারঃ মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশীদ

আমাকে দেওয়া হয় ৬ নং সেক্টরের ১নং সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব। ১৩ ই জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে ৬ নং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধিনে দিনাজপুর জেলার তেতুলিয়া নামক স্থানে ১৭ ই জুলাই দায়িত্বভার গ্রহন করি।

প্রথম সপ্তাহে আমার সাব সেক্টরের মুক্ত এলাকা রেকি করা হয় ও পরিচিত হই। সেই সময় উক্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভংগ অবস্থায় ছিল। জুলাই মাসের ২৯ তারিখে তেঁতুলিয়া থানা উন্নয়ন কেন্দ্রে সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করি। সেখানে তৎকালীন ই পি আর আনসার মুজাহিদ ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানরা একত্রিত হই। তার মধ্যে তৎকালীন ৯ নং ই পি আর উইং এর জোনের সংখ্যাই বেশি ছিল। এখানে তিনটি কোম্পানী গঠন করা হয়।

“এ” কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার আহমেদ হোসেন প্রাক্তন ই পি আর
“বি” কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার খালেক প্রাক্তন ই পি আর
“সি” কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার আবুল হোসেন প্রাক্তন ই পি আর।

আগস্ট মাসের ২ তারিখে ভজনপুরে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। ৪ ঠা আগস্ট ভজনপুর থেকে কোম্পানী দেবনগরে ডিফেন্স নেয়। সেখানে অবস্থানকালে ময়নাগুড়ি, কামারপাড়া, বিলখাঁজুদ, ফকিরপাড়া, নয়াপাড়া গ্রামসহ সাত আট মাইল জায়গা দখল করে নেয়া হয়। সেখানে পাকবাহিনীর পোস্ট হিসাবে ছিল। এইসব এলাকা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের ভিতরেই আমাদের দখলে চলে আসে। আগস্ট মাসের ২য় সপ্তাহের মধ্যে সম্মুখের দিকে ১ মাইল জায়গা আমরা দখল করে নেয়। প্রশস্ত ছিল ৭ মাইল। সেখানে জাবরী দেয়ার, গোয়ালঝার, বানিয়াপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, বামনগাঁও, কামাদা ও ভেলুকা পাড়া গ্রাম দখল করে নেই। সেখানে পাক বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ ছিল। এই সময় পাকবাহিনী আমাদের উপর ভেলুকাপাড়া, গোয়ালঝাড়, ও জারীদোয়ার গ্রামে আক্রমন করে। এই আক্রমনে প্রথমে আমাদের কোম্পানি ছত্রভংগ হয়ে যায়। সেই সময় আমার অনুরোধে ভারতীয় আর্টিলারি রেজিমেন্ট পাকবাহিনীর উপর শেলিং করে। এই সুযোগে আমরাও তাদের উপরে পালটা আক্রমন চালাই, ফলে পাকবাহিনি উক্ত গ্রামগুলি ছেড়ে পেছনে চলে যায়। এই যুদ্ধে আমাদের ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরন করে ও কয়েকজন আহত হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে আর এক কোম্পানি গঠন করা হয় ছাত্র যুবক ও কিছু সামরিক জোয়ান দিয়ে। এই কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত হয় সুবেদার আবুল হোসেন। সে সময় আমাদের মোট শক্তি চার কম্পানির মত। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চুই নদীর পশ্চিম পাড়ে, চকরমারী গ্রাম ফকিরপাড়া খইপাড় ডাঙ্গাপারা পাথিলগাঁও জুতরারপাড়া খাসপাড়া বালিয়াপাড়া ও প্রধানপারা আমরা দখল করে নেই। এই এলাকা দখলে আনতে আমাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সঙ্গে কয়েকবার সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং সমস্ত চুই নদীর পশ্চিম পারে পাক বাহিনির মুখোমুখি ডিফেন্স নেয়া হয়। সেই সময় ভারতীয় বি এস এফ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হবার সময় সাহায্য করে। চুই নদীর পশ্চিম পারে চার কম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ডিফেন্স লাগিয়েছিল। সে সময় আমাদের অপর কম্পানী ও আমাদের ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।

সেপ্টেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহে পাকবাহিনির পাক্কা ঘাঁটি অমরখানা তিন কম্পানি নিয়ে আক্রমন করি। অমরখানায় পাকবাহিনির সঙ্গে আমাদের মুক্তিযদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয় কিন্তু পাকবাহিনির তীব্র আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পুনরায় চুই নদীর পশ্চিম পারে আমাদের ডিফেন্সে চলে আসি। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে জগদলহাটে পাকবাহিনীর ঘাঁটির উপর আক্রমন চালাই। জগদলহাটেও পাকবাহিনীর সঙ্গে আমাদের ভীষন যুদ্ধ হয় কিন্তু তাদের তীব্র আক্রমনের মুখে টিকতে না পেরে চুই নদীর পশ্চিম পারে চলে আসি।

অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে অমরখানা ও জগদলহাটে পুনরায় ক্রমন করা হয়। কিন্তু পাক বাহিনীকে প্রতিহত করা যায় নাই। অক্টোবর মাসের ২য় সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রথম কমিশনপ্রাপ্ত ২য় লেঃ এ মতিন চৌধুরি ও ২য় লেঃ মাসুদুর রহমান আমার সাব সেক্টরে যোগদান করে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ভিতরে পচাগড়, পুটিমারি, বোদা, ঠাকুরগাঁও ও বীরগঞ্জে এবং দিনাজপুরের এফ এফ বাহিনীকে হাল্কা অস্ত্র ও ডিফেন্স দিয়ে পাঠান হয়। সেই সময় পাকবাহিনী রাজাকারদের ডিফেন্সের উপর আমাদের কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধাগন সেকশন ভিত্তিতে ভাগ হয়ে পাকবাহিনীর গতিপথে রেইড ও এমবুশ করে। আমাদের এমবুশে পাকবাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়। এইভাবে নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত পাকবাহিনীর উপর হামলা, রেইড ও এমবুশ চলতে থাকে।

২২ শে নভেম্বর রাতে আমার তিন কোম্পানি নিয়ে পুনরায় অমরখানা আক্রমন করি। এই যুদ্ধে ভারতীয় আর্টিলারি পাকবাহিনীর ঘাঁটির উপর খুব শেলিং করে। তীব্র আক্রমনের মুখে পাকবাহিনী হটে যায়। আমরা অমরখানা দখল করি। এই যুদ্ধে বি এস এফ বাহিনী আমাদেরকে কভারিং ফায়ার দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করে। সেই দিন ই ভারতীয় ১২ রাজপুতানা রাইফেলস অমরখানার সম্মুখে অবস্থান নেয়। নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখে চুই নদির পশ্চিম পাড়ে আমাদের ডিফেন্সের পেছনে ভারতীয় ৭ নং মারাঠা রেজিমেন্ট অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায়।

২৩ শে নভেম্বর রাতে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগীতায় আমরা জগদলহাট আক্রমণ করি। উভয়পক্ষে ভীষন গুলি বিনিময় ও আর্টিলারি শেলিং হয় কিন্তু সেদিন জগদলহাটে আমাদের সাফল্য লাভ হলো না। আমাদের পক্ষে সেই যুদ্ধে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। ২৪ নভেম্বর পুনরায় জগদলহাট আক্রমন করি। আমাদের আক্রমনে পাকবাহিনী জগদলহাট ডিফেন্স ছেড়ে দিয়ে পচাগড় অভিমুখে পশ্চাদপসরন করে। জগদলহাট আক্রমনে ভারতীয় ১২ রাজপুতানা রাইফেলস রেজিমেন্টের “এ” কোম্পানী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে যুদ্ধ করে। জগদলহাট দখলে আমাদের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাতবরন করে। তার মধ্যে হাওলাদার সাকিমউদ্দিন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরন করে। কয়েকজন আহত হয়।

এই সময় চুই নদীর পশ্চিম পারে অমরখানা ও জগদলহাটে বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যগন পজিশন নেয়। ২৪ আহে নভেম্বর সম্মিলিত বাহিনী জগদলহাট হতে পচাগড় অভিমুখে রওনা হয়। পথে পচাগড় থেকে ১ মাইল দূরে থাকতে পাকবাহিনী আমাদের উপর বিক্ষিপ্তভাবে শেলিং ও গুলি করতে থাকে। ফলে সেখানে ডিফেন্স নিতে হয়। উক্ত জাউগায় আমাদের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাতবরন করে ও সাতজন আহত হয়। তার মধ্যে ২য় লেঃ এম মতিন চৌধুরীও গুরুতরভাবে আহত হয়।

পচাগড়ে পাকবাহিনীর খুব মজবুত ঘাঁটি ছিল। এখানে পাক বাহিনীর প্রায় তিন ব্যাটেলিয়ন সৈন্য নিয়োজিত ছিল। পাকবাহিনির পচাগড়ের চতুর্দিকে পাক্কা বাংকার ও মজবুত ট্রেঞ্চ ছিল।

২৬ শে নভেম্বর রাতে আমাদের মুক্তিবাহিনীর ১ ব্যাটেলিয়ন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২ ব্যাটেলিয়ন যৌথভাবে পাক বাহিনীর পাকা ঘাঁটি পচাগড় আক্রমন করে। সারারাত যুদ্ধ চলে কিন্তু পাকবাহিনী পচাগড় ডিফেন্সে থাকতে সমর্থ হয়। এই রাতে ভাররতীয় বাহিনীর ১০০ জনের মত জোয়ান ও ২২ জন মুক্তিবাহিনি হতাহত হয়। ২৭ তারিখ সারা দিনরাত যুদ্ধ চলে। সেদিন ভারতীয় বিমান বাহিনী পচাগড়ে পাকবাহিনীর উপর বিমান হামলা চালায় ও ২৮ তারিখ দিনেও আক্রমন অব্যাহত থাকে। ২৮ তারিখ রাতে পুনরায় ভারতীয় বাহিনির তিন ব্যাটেলিয়ন ও মুক্তিযোদ্ধা ১ ব্যাটেলিয়ন ও ৩ শত এফ এফ তাদের উপর আক্রমন চালায়। সেই রাতে ভারতীয় আর্টিলারি রেজিমেন্ট ৬০ টি গান থেকে একসাথে শেলিং করে। উক্ত রাতে ৬ হাজার গোলা পাক ডিফেন্সের উপর নিক্ষিপ্ত হয়। পাক বাহিনী ২৮ তারিখ রাতে পচাগড় ছেড়ে ময়দান দীঘিতে ডিফেন্স নেয়। ঐ রাতের যুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত বাহিনির ২৫০ জনের মত হতাহত হয়। ২৭ জন পাক সেনাকে জীবন্ত ধরে ফেলা হয়। প্রচুর অস্ত্র গোলাবারুদ ও ৮ টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়। পঁচাগড় যুদ্ধ মিত্রবাহিনি ও মুক্তিবাহিনির বাংলাদেশের ভিতরে বৃহৎ যুদ্ধগুলির মধ্যে অন্যতম।

৩০ তারিখ দিনের বেলায় বোদা থানার উদ্দেশ্যে রওনা হই। বেলা ৩ টার সময় পুটিমারী নামক স্থানে দুশমন আমাদের অগ্রগতি প্রতিহত করে। ফলে আমরা সেখানে ডিফেন্স নিতে বাধ্য হই।

৩১ তারিখ ১২ টায় আমরা পাকবাহিনির উপর আক্রমন চালাই। এই আক্রমনে মুক্তিবাহিনির ৫ জন ও ভারতীয় বাহিনির ৫৫ জন হতাহত হয়। পরে আমরা ময়দান্দীঘি দখল করে ফেলি। বিকেলে আমরা বোদার উদ্দেশ্যে রওনা হই। পাকবাহিনি বোদাতে আমাদের উপর আক্রমন চালায়। আমরা বাধ্য হয়ে বোদা থানার ১ মাইল দূরে ডিফেন্স নেই। বিকালে বোদা হেডকোয়ার্টার আক্রমন করি। এখানে পাকবাহিনীর সাথে আমাদের ভীষন যুদ্ধ হয়। এখানে ভারতীয় আর্টিলারির ক্যাপটেন সুধির নিহত হয়। সন্ধ্যায় বদা থানা আমাদের দখলে আসে। পাকবাহিনীর ৬০/ ৭০ জন হতাহত হয়। ভারতিয় বাহিনী বোদাতে এসে বিশ্রাম নেয় কিন্তু মুক্তিবাহিনি বোদা থেকে তিন মাইল সম্মুখে ঠাকুরগাঁও এর পথে ডিফেন্স নেয়। সেদিন রাতে ভুলে মিস ফায়ার হয়। তাতে ভারতীয় ২০/২৫ জন জোয়ান হতাহত হয় এবং আমাদের খাদ্য ও রান্না বহনকারী পার্টির ৪/৫ জন নিহত হয়। এ রাতেই ভারতীয় কোম্পানীর সহিত মুক্তিবাহিনির ৪০ জন জোয়ানকে পাঠাই। তারা ভুলিরপুলের নিকতে গেলে পাকবাহিনি তাদের উপর আক্রমন চালায়। তখন ভারতিয় বাহিনীও তাদের পাল্টা জবাব দেয়। পাক সৈন্যরা ভারতীয় বাহিনির আক্রমনে টিকতে না পেরে ভুলির ব্রিজ নষ্ট করে পেছনে হটে। ১লা ডিসেম্বর আমরা ব্রিজ থেকে ২ মাইল দূরে অগ্রসর হয়ে ডিফেন্স নিতে থাকি। ভারতীয় বাহিনী তখন ব্রিজ মেরামত করে।

৩ রা ডিসেম্বর আমরা সম্মিলিত বাহিনী ঠাকুরগাঁও এর দিকে অগ্রসর হই। এই সময় পাক বাহিনী ঠাকুরগাঁ ত্যাগ করে। ঠাকুরগাঁ তে পাক বাহিনীর সহিত আমাদের কোন সংঘর্ষ হয়নাই। ওই দিন ই আমরা ঠাকুরগাঁ দখল করে ঠাকুরগাঁ থেকে আরো তিন মাইল সম্মুখে অগ্রসর হই। ৪ তারিখে আমরা বটতলি নামক স্থানে ডিফেন্স করি। ৫ তারিখ সারাদিন পাক বাহিনির পুঁতে রাখা মাইন উঠাই। ৬ তারিখ আমরা বীরগঞ্জ আক্রমন করি। পাক বাহিনীর সহিত আমাদের বহু সময় যুদ্ধ হয়। শেষে পাকাহিনী বীরগঞ্জ ছেড়ে পিছনে হটে। এখানে ভারতীয় বাহিনির ১০/১২ জন জোয়ান নিহত হয়। ৭ তারিখ আমরা সম্মিলিত বাহিনী ভাতগাঁও ব্রীজের দিকে রওনা হই। পাকবাহিনি তখন ভাতগাঁও ব্রীজ নষ্ট করে রাস্তার দুপাশে মাইন পুঁতে রেখে পিছনের দিকে অগ্রসর হয়। আমরা তখন ভাতগাঁও ব্রীজের চারপাশ থেকে মাইন তুলতে শুরু করি।

৯ তারিখে আমাদের দুটি কোম্পানি ভারতীয় দুটি ব্যাটেলিয়ন দিনাজপুর আক্রমন করতে অগ্রসর হয়। দিনাজপুরের নিকটে গিয়ে কাঞ্চন নদি পার হয়ে আমরাও দিনাজপুর আক্রমন করি। এখানে পাকবাহিনীর সহিত আমাদের অনেক্ষন যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত বাহিনির ৩০/ ৩৫ জন নিহত ও ১০/ ১২ জন নিখোঁজ হয়। পরে আমরা সেখান থেকে পিছনে হটি। ফেরার পথে দশ মাঙ্গল নামক স্থানে পাকবাহিনীর আরেকটি ডিফেন্সের উপর আক্রমন করি। এখানে আমরা ২৩ জন পাকসৈন্যকে জিবন্ত ধরে ফেলি এবং প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করে সরে পরি। কারন পাকবাহিনির কয়েকটি ট্যাঙ্ক পেছন থেকে আসছিল।

১০ তারিখে ভারতীয় দুটি ব্যাটেলিয়ন সৈন্য পাকবাহিনীকে আক্রমন করে কিন্তু এখানে পাকবাহিনীর তীব্র আক্রমনে তারা আর সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। এই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর প্রায় ১৫০ জন জোয়ান মারা যায়। পরে পাকবাহিনি পেছনে হটে। তখনো আমাদের হেডকোয়ার্টার বীরগঞ্জেই ছিল। ইতিমধ্যেই হিলি থেকে আমাদের বাহিনী ও ভারতিয় বাহিনী হিলি দখল করে দিনাজপুরের নিকট এসে পরে।

১২ ই ডিসেম্বর আময়া দিনের বেলায় খানসামা আক্রমন করি। আমাদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীও ছিল। এই আক্রমনে ভারতিয় বাহিনীর ১৫ জনের মত ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমাদের ৭ জন মারা যায়। এখানে আমরা মেজর খুরশীদ সহ ১৯ জনকে জিবন্ত ধরে ফেলি। ঐ দিন ই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হই এবং নিলফামারি দখল করে ফেলি।

১৩ তারিখে আমরা সৈয়দপুরের দিকে অগ্রসর হই। সৈয়দপুর থেকে ৫ মাইল দূরে পাক ট্যাঙ্কের সহিত আমাদের ট্যাঙ্কের সংঘর্ষ হয়। তাতে ভারতীয় বাহিনির দুটি ট্যাঙ্ক ও পাক বাহিনির তিনটি ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ১৩ তারিখ বিকালে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক ও একজন অফিসার সহ প্রায় ১০৭ পাকসৈন্য আমাদের সম্মিলিত বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

১৫ ই ডিসেম্বর রাতে পাক ব্রিগেড কমান্দার সাইফুল্লাহ যুদ্ধ স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করেন। কিছুক্ষন পর তিনি কয়েকজন গার্ড সহ আমাদের সম্মিলিত ক্যাম্পে আসেন। তার সঙ্গে আমাদের অনেক সময় ধরে আলাপ আলোচনা হয়। পরে পাক ব্রিগেড কমান্ডার চলে যান।

১৭তারিখ সকালে সেখানে অবস্থানরত সকল পাকসৈন্য মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

স্বাক্ষরঃ মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশীদ
কুমিল্লা সেনানিবাস
১৪-১০-৭৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!