সাক্ষাতকারঃ সৈয়দ মনসুর আলী
১৯৭১ এর ২ রা নভেম্বর ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ সাহেব আমাকে মুক্তিবাহিনীর দুটি এলাকার (বুড়াবুড়ি এবং যাত্রাপুর) কোম্পানী কমান্ডার করে পাঠান। প্রথমে নাগেশ্বরী থানার মাদারগঞ্জে করা হয় ক্যাম্প এবং সেখান থেকে যাত্রাপুর অপারেশন করা হয়। একদিন যাত্রাপুর বাজারে তিনজন পাকসেনা এবং ৯ জন রাজাকার সংঘর্ষে নিহত হয়। জনগণের সহায়তায় ১৫০ জন রাজাকারকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় (৯ ই নভেম্বর ১৯৭১)। ৯ ই নভেম্বর স্বাধীন বাংলায় প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সংঘর্ষের খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থানায় ঘোগাদেহ ইউনিয়নের ৩০০ রাজাকার স্বেচ্ছায় তাদের হাতিয়ারসহ যাত্রাপুরে আমার নিকট আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের খবর বিভিন্ন স্থানের রাজাকারদের মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা কুড়িগ্রাম মহকুমার বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন নুনখাওয়া বুড়াবুড়ি, মোগলবাছা ইত্যাদি ইউনিয়ন থেকে স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। কুড়িগ্রাম শহরের পাকসৈন্যের ঘাঁটি থেকে বহূ রাজাকার তাদের হাতিয়ারসহ পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
কুড়িগ্রাম শহরের নিকটবর্তী মোগলবাছা ইউনিয়নে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি ছিল আমি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনবার পাক ঘাঁটি আক্রমন করি। তৃতীয়বারের সংঘর্ষে উনিপুরগামী ট্রেনের দুটি বগী বিচ্ছিন্ন করি ডিনামাইট দিয়ে। এতে প্রায় ৩৫ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। মোগলবাছা ইউনিয়নের অর্জুনমালায় রেললাইনের নীচে ডিনামাইট রাখা ছিল। পাকবাহিনীর ট্রেন অতিক্রমের সময় ডিনামাইটটি বিস্ফরিত হয়। কার্যরত সময়ে বিস্ফোরণে মীর নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়।
৭ ই ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনির ব্রিগেডিয়ার যোশীর নির্দেশে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে কুড়িগ্রাম শহরে বর্বর পাক বাহিনীর অবস্থানে ভারী ও দুরপাল্লার কামান দিয়ে আক্রমন করে। পাক বাহিনী তেমন মোকাবিলা না করেই কুড়িগ্রাম থেকে সরে পরে।
মিত্র ও মুক্তিবাহিনী ১০ ই ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম নতুন শহরে উঁচু পানির ট্যাঙ্কে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। পাকবাহিনীর অবস্থান ঘাঁটিসমূহ ছিলঃ (১) রিভারভিউ হাইস্কুল (ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ ও গোলন্দাজ গ্রুপ) (২) কুড়িগ্রাম ধরলা নদির ঘাট (৩) কুড়িগ্রাম সি এন্ড বি অফিস গোডাউন (৪) নুতন টাউন কোর্ট বিল্ডিং (৫) শান্তিকমিটি ও রাজাকার ট্রেনিং কেন্দ্র (সঞ্জীব করঞ্জাই এর গোডাউন ও কুড়িগ্রাম কলেজ)
স্বাক্ষরঃ সৈয়দ মনসুর আলি টিংকু
২৭-৭-৭৩