You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধুর আমলে যেসকল বিদেশী প্রতিষ্ঠান এদেশে নানান কাজ করেছে সেগুলোর তালিকা, কার্যক্রম এবং অধিকর্তাদের পরিচিতি (১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ এ প্রকাশিত)

সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ 

যে সব সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করছে

এসোসিয়েশন অব ভলেন্টারী এজেন্সীস ইন বাংলাদেশ (এ্যাভাব) বাংলাদেশে কর্মরত সাহায্য সংস্থা সমূহের তালিকা আমাদের সরবরাহ করেছে। তালিকাটি ১৯৭৫ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এখন পর্যন্ত এটিকেই বাংলাদেশে বিদেশী সাহায্য সংস্থা সমূহের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ্যাভাবের তালিকায় বহুমুখী সংস্থা সমূহ, দ্বি মুখী সংস্থা সমূহ এবং কুটনৈতিক মিশনের নাম আছে। এছাড়া রয়েছে স্থানীয় ও বিদেশী বেসরকারী সংস্থাগুলোর তালিকা। এই সংস্থাসমূহ বাংলাদেশে ত্রাণ, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং উন্নয়ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। আমরা সেই তালিকা থেকে বিদেশী বেসরকারী সেচ্ছাসেবী এবং সাহায্য সংস্থা সমূহের তালিকা নীচে উদ্ধৃত করছি। সেই সাথে দেয়া হল সংস্থা সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

এশিয়া ফাউন্ডেশন

স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এই ফাউন্ডেশন অর্থ সরবরাহ করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে ইংরেজী ভাষার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে। মেডিক্যাল ও হেলথকেয়ার, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। এটি একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

এশিয়ান – আমেরিকান ফ্রী লেবার ইন্সটিটিউট

ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক প্রজেক্ট সমূহকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এটি একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাপ্টিস্ট

স্বনির্ভর চট্টগ্রামকে সহায়তা করছে। পায়ে ঠেলা জল সেচ পাম্পের মতো কম খরচের টেকনোলজির উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। এটি একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

স্টেলিয়ন ব্যাপ্টিস্ট মিশরারী ফ্যাসিলিটি

গৃহ নির্মাণ শিক্ষা, মেডিক্যাল এবং কৃষি প্রোগ্রাম এ জড়িত। ময়মনসিংহে ‘ব্রডব্যাংক ডিসপেনসারী’ (ভ্রাম্যমান ক্লিনিক, ডিসপেনসারী, হাসপাতাল কুঠি চিকিৎসা এবং টিবি ক্লিনিক) পরিচালনা করে।

স্টেলিয়ন ভলেন্টিয়ার এ্যাবরড

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মেডিক্যাল ক্ষেত্রে সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে। এটি স্টেলীয় প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ মিশন (ইউ. এস. এ)

ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা এবং ফরিদপুর অঞ্চলে কৃষি, নলকূপ, গৃহ নির্মাণ বীজ বিতরণ রিলিফ এবং কিছু মেডিক্যাল প্রজেক্টের কাজ করছে।

ব্যাপ্টিস্ট মিশনারী সোসাইটি (নিউজিল্যান্ড)

কুমিল্লায় শিক্ষা এবং কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করছে।

ব্রাদারস টু অল

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানা সদর দফতর থেকে চার মাইল দূরে নারচী ইউনিয়নের ব্যরোটি গ্রামে ‘কমপ্রিহেনসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ এ ব্যপৃত। এর মধ্যে আছে কৃষি, স্বাস্থ্য, জলসেচ এবং নারী শিক্ষা প্রোগ্রামস। সারিয়াকান্দিতে ৭০ শয্যার থানা হাসপাতাল পরিচালনা করে। কিছু এলাকায় প্রতিষেধক চিকিৎসা এবং পরিবার পরিকল্পনার কাজও হাতে নিয়েছে। ফ্রান্সের সংস্থা এটি।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিসেস ওভারসিস (কুইসো)

মেডিক্যাল, কৃষি, সমবায় জলসেচ এবং পুষ্টি প্রোগ্রাম এ সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে। কানাডীয় সংস্থা।

কেয়ার

কৃষি গ্রামীণ শিক্ষা,পরীক্ষামূলক গৃহনির্মাণ, উপযুক্ত প্রযুক্তি স্কুলগৃহ নির্মাণ এবং পুষ্টি সরবরাহ প্রোগ্রাম এর সাথে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।

ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস

বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে জলসেচ, গভীর এবং অগভীর নলকূপ, লো – লিফট পাম্প এবং ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট ‘ এবং জল সেচের ক্ষেত্রে গবেষণার ব্যাপার। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, যশোর, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া জেলার গৃহনির্মাণ ত্রাণ বস্তু, ঘূর্ণিঝড় প্রজেক্ট, টেস্ট রিলিফ এবং জলসেচ প্রজেক্ট – এ কাজ করছে। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান।

কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানঃ মেডিক্যাল ক্ষেত্রে কাজ করছে।

ক্রিশ্চীয়ান রিফর্সড ওয়ার্ল্ড রিলিফ কমিটি

মেনোলাইট সেন্ট্রাল কমিটির কৃষি প্রোগ্রামে সাহায্য করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান।

ক্রিশ্চীয়ান সার্ভিস সোসাইটি

দক্ষিণ খুলনায় সমবায় উন্নয়ন, কৃষি ক্ষেত্রে এবং মেডিক্যাল আন্ডার ফাইভ ক্লিনিকস এ কর্মরত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

চার্চেস জব গুড ইন নর্থ আমেরিকা

বগুড়া জেলার জয়পুরহাট মহকুমার খন্জনপুর এলাকায় গৃহ নির্মাণ, শিক্ষা, মেডিক্যাল এবং জনস্বাস্থ্য প্রোগ্রামের সাথে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন / সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন

নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা জেলায় গৃহনির্মাণ, নারী পুনর্বাসন, শিশু এবং কম্যুনিটি পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা এবং নারী শিক্ষা প্রজেক্টের সাথে জড়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান।

কনসার্ন

স্বাস্থ্য, কৃষি প্রশাসনীয় নারী উন্নয়ন এবং প্রকৌশল প্রজেক্টে সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে। আয়ারল্যান্ডের সংস্থা এটি।

ডেভিড লিডিংস্টেন মিশনারী ফাউন্ডেশন

একটি ‘ফিল্ড হসপিটাল ‘ পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্যের সংস্থা এটি।

ফুড ফর দ্য হাংগ্রী

এ সংস্থায় হাঁস মুরগীর প্রজেক্ট এবং বীজ বিতরণের প্রোগ্রাম আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা।

ফোর্ড ফাউন্ডেশন

অর্থ সরবরাহকারী সংস্থা। গ্রাম উন্নয়ন, সামাজিক মান ও নারীর ক্ষমতানুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই সংস্থা ব্যপৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠন।

ফর দোজ হু হ্যাভ লেস

এতিমদের জন্য কাজ করে। কৃষি ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়। অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা।

ফ্রাঙ্কলীন বুক প্রোগ্রাম

বাংলায় বইপত্র অনুবাদ এবং লাইব্রেরী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ব্যাপৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।

গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন

ভারতীয় এই সংস্থা যশোরে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং বুননের ক্ষেত্রে কাজ করছে।

হীড

দুটি থানায় সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে। স্বাস্থ্য, কৃষি শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা।

হলিক্রস ফরেন মিশনারী সোসাইটি

স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাহায্যে সমবায় ক্ষেত্রে কাজ করছে। ঢাকায় সদর দফতর এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ সিলেট জেলার ২৫ টি মিশন সেন্টারের পরিচালনায় ব্যাপৃত। নটরডেম কলেজ, হাইস্কুল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড স্কুল, রিলিফ বিতরণ, হাসপাতাল এবং ডিসপেনসারি পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেডক্রস

মেডিক্যাল প্রোগ্রামস এ ব্যাপৃত। আন্তর্জাতিক সংস্থা।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব টেরে ডেস হোমস

সবগুলো জাতীয় টেরে ডেস হোমস ইউনিটের হয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের কার্যালয়। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা।

টেরে ডেস হোমস (ডেনমার্ক)

সাধারণ স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম, পরিবার পরিকল্পনা, ফিডিং প্রোগ্রাম, শিশু কল্যাণ প্রজেক্টে কাজ করছে। ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান।

টেরে ডেস হোমস (ফ্রান্স)

মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প, মেডিক্যাল ক্লিনিক মহিলা প্রোগ্রাম এবং কমলাপুরের ফিডিং সেন্টারে কর্তব্যরত। ফরাসী সংস্থা।

টেরে ডেস হোমস (নেদারল্যান্ড)

ডে কেয়ার, পুষ্টি গবেষণা, সাধারণ স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা, শিশুদের খাওয়ানো, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন, আন্তঃদেশীয় শিশু দত্তক প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর্তব্যরত। নেদারল্যান্ডসের সংস্থা এটি।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার

ঢাকায় কালিয়াকৈর থানার পল্লী উন্নয়নে ব্যাপৃত সংস্থা এবং বিধবা মহিলাদের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়ন, গ্রামীণ সমাজ কর্ম, পরিবার পরিকল্পনা পুষ্টি, বয়স্ক – শিক্ষা এবং হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে কাজ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টারী সার্ভিস

সমবায়ী ব্যবস্থাপনা জলসেচ ও পানি ব্যবস্থা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা, জনসংখ্যা এবং পশু পালন, কৃষি সম্প্রসারণ, শিল্পায়ন এবং কারিগরী ব্যবস্থাপনা, শসা সংরক্ষণ, মার্কেটিং, নার্সিং এবং ফিজিওথেরাপি প্রজেক্টসমূহে সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে থাকে৷ অডিও ভিজুয়াল প্রশিক্ষণ প্রজেক্ট – এ এবং সিলেটে ইনটেগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে ব্যাপৃত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।

জাপানীজ ওভারসিস কর্পোরেশন ভলেন্টিয়ার্স

কৃষি ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা এবং সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে থাকে। এটি একটি জাপানী সংস্থা।

মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম

অপর একটি সংগঠন হীডকে সহায়তা দান করে থাকে। মেডিক্যাল রিলিফ দিয়ে থাকে। কৃষি এবং প্রতিষেধক চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি ইনটেগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট হাতে নেবার পরিকল্পনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা এটি।

মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এনসিসি)

স্বাস্থ্য, কৃষি এবং মার্কেটিং ক্ষেত্রে ভলেন্টিয়ার প্রোগ্রাম আছে। প্রধানতঃ নোয়াখালী জেলায় এদের কৃষি প্রজেক্ট আছে। রিলিফ অপারেশনও চালিয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সংস্থা এটি।

মরিয়াম আশ্রম

দলটি সমবায় কেন্দ্রের অধীনে কৃষি এবং ফল চাষ প্রজেক্টে কাজ করছে চট্টগ্রামে। ৫০০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা করে।

মিশনারিজ অব চ্যারিটি

শিশু ভবনকে অর্থ জোগান দেয়। পাঁচটি গ্রামে এদের মেডিক্যাল ডিসপেনসারী আছে। ভারতীয় সংস্থা এটি।

অর্গানাইজেশন অব নেদারল্যান্ড ভলেন্টিয়ার্স (ও এন ভি) সেচ্ছাসেবী সরবরাহকারী সংস্থা। বিশেষ করে মেডিক্যাল ক্ষেত্রে কাজ করে। নেদারল্যান্ডের সংস্থা এটা।

অর্থপেডিক এ্যান্ড রিহেবিলিটেশন হসপিটাল

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মেডিক্যাল সংস্থা।

অক্সফাম

কৃষি শিক্ষা, কৃষি ওয়ার্কশপর ট্রেনিং, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, পাট বাজার, যানবাহন প্রভৃতি প্রজেক্টে অর্থ যোগানদারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

পাথরঘাটা হেলথ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি

মেডিক্যাল মিশন সিস্টারদের তত্তাবধানে গৃহনির্মাণ, মেডিক্যাল জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কাজ করছে চট্টগ্রামে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

পপুলেশন সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল

একটি অলাভজনক পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা। বাজারদরের চাইতে কম দরে নিরোধক দ্রব্যাদি সরবরাহ করে। বাজার বিশ্লেষণ, বিজ্ঞাপনের সেনস প্রমোশন, কনজুমার এডুকেশন প্রভৃতি নিয়ে কাজ করে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা।

প্রেসমাইটেরিয়ান মিশন ইউ এস

ঢাকার কাছে মেডিক্যাল রিলিফ এবং কৃষি তৎপরতা পরিচালনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা এটা।

সুইডিশ সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন

মিরপুরে মা এবং শিশুর হেলথ প্রজেক্ট (হাসপাতাল) পরিচালনা করছে। সুইডেনের সংস্থা এটা।

রংপুর – দিনাজপুর রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস (লুথেয়ন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন)

কৃষি এবং মেডিক্যাল প্রেজেক্টে কাজ করে। এর মধ্যে আরো একটি আউট ডোর ক্লিনিক এবং ২৫ শয্যার হাসপাতাল। রংপুর ও দিনাজপুরের সমবায় রেশন চাষ, তাঁত বুনন, নৌকা তৈরী, জাল তৈরীর প্রজেক্টে জড়িত। আন্তর্জাতিক সংস্থা।

স্যালভেসন আর্মি

কৃষি, শিল্প, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, গৃহ নির্মাণ, স্বাস্থ্য, সামাজিক পুনর্বাসন এবং ত্রাণ কার্যের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড (ইউকে)

শিশুদের জন্য ক্লিনিক ট্রিটমেন্ট রুম, হেলথ ভিজিটরের ব্যবস্থা করে থাকে। পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে। খুলনা এবং ভোলা দ্বীপে এদের প্রজেক্ট এবং ময়মনসিংহে ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক আছে। যুক্তরাজ্যের সংগঠন এটি।

সেভেন্থ ডে এডভেনটিস্ট জনকল্যাণ সংস্থা (এস ডব্লিউ এস/ এস এ জে এস)

কৃষি, শিল্প, নলকূপ, গৃহ নির্মাণ, পোষাক বিতরণ, ফিডিং প্রোগ্রাম, ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, সোয়াবিন উৎপাদন, গ্রীন হাউজ সবজী প্রজেক্ট জড়িত।
আন্তর্জাতিক সংস্থা।

শাপলা নীড় (হেলপ বাংলাদেশ কমিটি ইন জাপান)

মানিকগঞ্জে পঙ্গুদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনা করে। এটি জাপানী সংস্থা।

সিসটার অব দি হলি ক্রস

ময়মনসিংহ জেলার জলছত্র এবং ঢাকা জেলার মঠ বাড়ীতে গ্রামীণ বয়ন সমবায় কেন্দ্র পরিচালনা করে। হলিক্রস কলেজ, হাইস্কুল, প্রাইমারী স্কুল পরিচালনা করে। সমাজ সেবার ক্ষেত্রেও জড়িত। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

এস ও এস চিলড্রেনস ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইন বাংলাদেশ

মিরপুর রোডে একটি অনাথ আশ্রম পরিচালনা করে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

সোয়ালোঁজ ইন ডেনমার্ক

বগুড়া অঞ্চলে স্বাস্থ্য কর্মসূচী এবং অনাথ ও দুস্থ্য মহিলাদের পুনর্বাসন কাজে ব্যাপৃত। এটি ডেনমার্কের সংস্থা।

সোয়ালোঁজ ইন সুইডেন

রাজশাহীর থানাপাড়ায় শিশুদের জন্য ফিডিং সেন্টার, ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষা, মৎসজীবিদের সমবায়, হাঁস মুরগীর ফার্ম, বুনন কেন্দ্র পরিচালনা করে। সুইডেনের একটি সংস্থা।

সুইডিস ব্যাপ্টিস্ট মিশন (নিউ লাইফ সেন্টার)

শিক্ষা, সমাজসেবা এবং মেডিক্যাল প্রজেক্টে কাজ করে। পুষ্টিহীন শিশুদের জন্য ডে কেয়ার ফিডিং সেন্টার পরিচালনা করে। এটি সুইডেনের সংস্থা।

সুইডিস ফ্রি চার্চ এইড

পল্লী উন্নয়ন, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, পরিবার ও স্বাস্থ্য রক্ষা প্রজেক্টে কাজ করে। এটি সুইডিস সংগঠন।

টিয়ার ফান্ড

তহবিল সরবরাহ কারী সংস্থা। পাটজাত দ্রব্যের সাথে জড়িত আন্তর্জাতিক সংস্থা।

টেরে ডেস হোমস (সুইজারল্যান্ড)

সামাজিক এবং বৃত্তিমূলক পুনর্বাসন ক্ষেত্রে কাজ করে। সুইজারল্যান্ডের সংগঠন।

আন্ডার – প্রিভিলাইজড চিলড্রেন’ স এডুকেশন প্রোগ্রাম

যুবকদের জন্য শিক্ষা এবং বৃত্তি প্রশিক্ষণ, ফিডিং এবং মেডিক্যালের ক্ষেত্রে কাজ করে। ইংল্যান্ডের সংস্থা এটি।

আংকল এরিক’ স চিলড্রেন হেলপ

ভোলার অনাথ আশ্রম পরিচালনা করে। তিনটি প্রধান প্রোগ্রাম – এ কাজ করে, একটি অনাথ আশ্রয়, কৃষি যন্ত্রপাতি মেইনটেনেস ট্রেনিং সেন্টার এবং সপ তৈরীর মেয়েদের প্রোগ্রাম। একটি সুইডেনের সংস্থা।

ভলেনটিয়ার সার্ভিস ওভারসিজ

মেডিক্যাল, ইংরেজীর শিক্ষকতা, শিল্প ও বানিজ্য ক্ষেত্রে এ সংস্থার ১৫ জন সেচ্ছা সেবী কাজ করছে। পল্লী উন্নয়ন ক্ষেত্রে যে সব স্থানীয় সংগঠন কাজ করছে, তাদের সহায়তা দানে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের সংস্থা।

ওয়ার্ল্ড মিশন ফর গ্রেগরি লীগ

আমনুরায় একটি ডিসপেনসারী পরিচালনা করে। ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল এর নির্মাণ কাজ চলছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

ওয়ার্ল্ড রিলিফ কমিশন

দক্ষিণ খুলনার কৃষি প্রোগ্রাম এবং সমবায় প্রেশারের ক্ষেত্রে ব্যাপৃত। মেডিক্যাল তৎপরতা এবং আন্ডার ফাইভ ক্লিনিক পরিচালনা করে। ক্রিশ্চিয়ান সার্ভিস সোসাইটির কাছে কাজ এবং সরঞ্জামাদি হস্তান্তর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।

ওয়ার্ল্ড ভিশন অব বাংলাদেশ

মূলত সিলেট এবং ময়মনসিংহ জেলায় স্কুলগৃহ নির্মাণ এবং স্বাস্থ্য প্রজেক্টে কাজ করে। জরুরী ত্রাণ খাদ্য এবং মেডিক্যাল সাপ্লাই, চাইল্ড কেয়ার প্রোগ্রাম এবং উন্নয়ন প্রজেক্টে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা।

স্ক্যাভেবিয়াণন মিশনারী ফাদারস

খুলনা, যশোর এবং কুষ্টিয়া জেলায় সমবায়, ঋণদান, শিল্প ওষুধ এবং জন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কাজ করছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

***

সাহায্য সংস্থা পরিচিতি

বিচিত্রা রিপোর্টার যে সব বিদেশী সাহায্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছেন, তার মধ্যে কিছু সংস্থার সাথে মূল সংস্থা পরিচিতি নীচে দেওয়া গেলঃ

অক্সফাম

১৯৪২ সালে অক্সফোর্ডের কিছু সাধারণ মানুষ একত্রিত হন গ্রীসের ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য কিছু খাবার পাঠাবার ব্যবস্থা করতে। এই থেকে অক্সফামের সূচনা। এক বছর অক্সফাম গ্রীসে তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখে। ১৯৪৫ সালে ইউরোপে, বিশেষ করে জার্মানীতে অক্সফাম তাদের তৎপরতা প্রসারিত করে। ১৯৪৮ সালে ইউরোপীয় পুনঃগঠন শেষ হলে অক্সফাম ক্রমশঃ ইউরোপের বাইরে আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকায় কাজ শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়ায় অক্সফামের শাখা আছে। অক্সফোর্ডে এর সদর দফতর। ১৯৬৫ সালে সংস্থা অক্সফাম নামটি গ্রহন করে। অক্সফামের তহবিল বৃদ্ধি বিশেষ ভাবে সাধারণ মানুষের উদ্যোগ ও সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে। অক্সফামের বাৎসরিক আয় এখন তিন মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশী।

কেয়ার

কেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়ায়। বন্তুতঃ কেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে। কেয়ারের প্রথম খাবারের প্যাকেট ইউরোপে পৌছে সেই বছরের ১১ ই মে। কেয়ারের সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে – কো অপারেটিভ আমেরিকান রিলিফ এ্যাভরিহোয়ার। ১৯৪৯ সাল থেকে কেয়ার বাংলাদেশে কাজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জনগণের অর্থে তহবিল গড়ে ওঠে কেয়ারের। অন্যান্য দেশের জনগণের কাছ থেকেও কিছু চাঁদা আসে। প্রতি বছর ৪৬, ০০০, ০০০ সাধারণ মানুষ সংস্থায় চাঁদা দেন। সদর দফতর নিউইয়র্কে। বিশ্বের ৩৫ টি দেশে কেয়ার কাজ করছে।

পপুলেশন সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল

১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম সমূহ উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম খরচায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের কাছে এরা পৌছে দিতে সচেষ্ট। শ্রীলঙ্কা সরকারের আমন্ত্রণে কাজ করে পিএসআই তাদের সামগ্রী শতকরা দুই জন সক্ষম দম্পতির কাছে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন থেকে এরা তহবিল পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রজেক্টের জন্য অর্থ আসছে ইউএস এইড থেকে।

এম, সি, সি

উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের একটি গীর্জা সংগঠন মেনোনাইট চার্চ। এম, সি, সি এই চার্চ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেচ্ছাসেবী সংস্থা। চার্চ গ্রুপ এম, সি, সি ‘র মাধ্যমে তাদের সাহায্য বিতরণ করে। এদের স্লোগান হচ্ছে – A Christian resources for meeting human need. এম, সি, সি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯২০ খৃষ্টাব্দে। সদর দফতর উত্তর আমেরিকায়। এখন প্রায় ৩৫ টি দেশে এমসিসি তৎপরতা চালাচ্ছে। শিল্প, চিকিৎসা, কৃষি এবং কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সাহায্য দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে এই সংগঠনটি কাজ করছে। একটি পাখীর আউটলাইন এম, সি, সি ‘র প্রতীক চিহ্ন। মূল সদর দফতরে এই পাখির জন্য হলুদ রং ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয় সবুজ রং। প্রতিটি দেশের জন্য এমন রং নির্দিষ্ট আছে।

স্যালিভেশন আর্মি

সারা বিশ্বে ৭০ টিরও বেশী দেশে এই সংস্থা তৎপরতা চালাচ্ছে। উইলিয়াম বুথ এই সংস্থার জনক। ১৮২৯ সালে বুথের জন্ম হয় নাটিংহামে। ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত এ সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান মিশন নামে পরিচিত ছিল। এ সময় পর্যন্ত এ সংস্থার কর্মীদের সাধারণ সেচ্ছাসেবী হিসাবে বিবেচনা করা হত। স্যালভেশন আর্মি নাম নেবার পরই সমগ্র সংস্থাটিকে ঢেলে সামরিক কায়দায় সাজানো হয়। সংস্থার শ্লোগান হচ্ছে – “আর্মি উইদাউট গানস”। এক্ষণে স্যালভেশন আর্মিতে লেফটেন্যান্ট, ক্যাপ্টেন, মেজর, লেঃ কর্ণেল, কর্ণেল এবং কমিশনার র্যাংকের অধিকারী আছেন ২৫০০০ জন। এদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক মহিলা। ১৮৭৯ সালে স্যালিভেশন আর্মি বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় তাদের তৎপরতা প্রসারিত করতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের পর স্যালভেশন আর্মি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করতে শুরু করে। এরপর আয়ারল্যান্ড। এ সংস্থার আর্মিরা এগারোটি সত্যে বিশ্বাসী। এ সংস্থা ইংল্যান্ডের রাজকীয় স্বীকৃতি লাভ করেছে।

কনসার্ন

সদর দফতর আয়ারল্যান্ডে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বায়াফ্রা নাইজেরিয়া বন্ধের সময়। কনসার্ন প্রথম সে অঞ্চলে চিকিৎসা এবং অন্যান্য সাহায্য পাঠায়। বাঙালী শরনার্থীরা ভারতে গেলে এ সব শরনার্থীদের সাহায্যার্থে কনসার্ন সর্বপ্রথম এশিয়ায় আসে। মেঘালয় এবং কলকাতার সাহায্য শিবিরে কনসার্ন কাজ শুরু করে। বাংলাদেশে কাজ করছে ১৯৭২ সাল থেকে। এবারে বাংলাদেশ প্রজেক্টের জন্য কনসার্ন ইউরোপীয়ান ইকনমিক কমিটির তহবিল থেকে কিছু অনুদান পাবে বলে আশা করছে।

কনসার্নের মনোগ্রাম শ্যামরকের পাতা। শ্যামরক আয়ারল্যান্ডের জাতীয় বৃক্ষ এবং এটি আইরিশ জাতীয় প্রতীক।

জেওসিডি

১৯৬৫ সালে জাপানে প্রতিষ্ঠিত। জেওসিভির রিক্রুট করা এবং ট্রেনিং দেয়া জাপানী সেচ্ছাসেবকের ছাব্বিশ জনের প্রথম দলটি সে বছরের শেষ দিকে কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে কাজ করতে যান। ১৯৭৪ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে জেওসিভির ১৭১৮ জন ভলেন্টিয়ার যে আঠারোটি দেশে যান তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে জেওসিডি সেচ্ছাসেবক দিয়ে সাহায্য করে থাকে৷ প্রতিটি ভলেন্টিয়ার যাতায়াত খরচ এবং কমপক্ষে ১৭০ ইউ, এস ডলার ভাতা দিয়ে থাকে এই সংস্থা। জেওসিডির সমস্ত তহবিল আসে জাপান সরকারের কাছ থেকে। বর্তমানে ৫০০ জুনিয়র এক্সপার্ট জেওসিডির হয়ে বিশ্বের ১৭ টি দেশে কাজ করছেন। জেওসিডির মনোগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নিপ্পন এর মাঝে রক্তিম সূর্য।

আইভিএস

১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত। উন্নয়নশীল দেশসমূহে কারিগরী সহায়তা দিয়ে থাকে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মেধা এবং সদিচ্ছাসম্পন্ন আমেরিকানদের দেশের বাইরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাজ করবার জন্য সুযোগ করে দেয়া। শুরুতে খুব ছোট আকারে এ সংস্থা কাজ করতে থাকে। ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট এফ, কেনেডী আইভিএস এর কার্যক্রম দেখে শান্তি বাহিনী গঠনে উৎসাহী হন। আইভিএস এবং শান্তি বাহিনীর মধ্যে মৌলিক তফাৎটা হচ্ছে আইভিএস বেসরকারী এবং শান্তি বাহিনী সরকারী সংস্থা। আজ পর্যন্ত আইভিএস এর এক হাজারের মত সেচ্ছাসেবী ২৪ টি উন্নয়নশীল দেশে কাজ করেছেন। আইভিএস ইতিপূর্বে কম্বোডিয়া, গাজা ঘানা, ইরাক, লাওস, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, জর্দান, মাদাগাস্কার মরক্কো, নেপাল, সাবাহ সিরিয়া, সংযুক্ত আরব রিপাবলিক এবং ভিয়েতনামে কাজ করেছে। এখন আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইকুয়েডর, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সুদান, ইয়েমেন, আরব রিপাবলিকে আইভিএস কাজ করছে। ভবিষ্যতে যেসব দেশে কাজ করার পরিকল্পনা আছে তাদের মধ্যে আছে বেটসওয়ানা, মৌরিতানিয়া, তাঞ্জানিয়া।

বাংলাদেশ মিশন

বাংলাদেশ মিশন (সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশনের ফরেন মিশন বোর্ড) বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইউএসএ ‘র একটি অঙ্গ সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রাথমিক ভাবে একটি মিশনারী সংগঠন। ১৯৫৭ সাল থেকে এ সংস্থা এ দেশে কাজ করছে। এই সংস্থাই বাংলাদেশ মিশন নামে এখন কাজ করছে। ১৯৭০ এর উপকূলীয় ঘুর্ণীঝড়ের পর বাংলাদেশ মিশন প্রথম রিলিফের কাজ শুরু করে। মুখ্যতঃ এটি একটি খৃষ্টধর্ম প্রচারণী সংগঠন। বিশ্বের মানচিত্রের উপরে ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে বাংলাদেশ মিশনের প্রতীকের চিহ্ন।

সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড (ইউকে)

ইংল্যান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই সংস্থার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। প্রিন্সেস এ্যান এর বর্তমান চেয়ারম্যান। ১৯১৯ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত। জাতিসংঘের শিশু অধিকার ঘোষণা এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সনদের ১০ নীতিই এই সংস্থার মূলনীতি। এর তহবিল আসে প্রাইভেট চাঁদা থেকে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ, দেশের শিশুদের দেয়া চাঁদা থেকে এর তহবিল গড়ে ওঠে। প্রতি বছর এই চাঁদা দাড়ায় ৩ মিলিয়ন পাউন্ড স্ট্যার্লিং।

রাড্ডা বারনেন

সুইডেনের সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন। প্রায় ৫০ বছর আগে এই সংস্থাটি সুইডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এই সংস্থা শুধুমাত্র সুইডেনে কাজ করে। পরে ক্রমশঃ এর তৎপরতা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিবার পুনর্বাসন কেন্দ্রের সূচীতে ইয়েমেনে, উত্তর ইথিওপিয়ায়, তাঞ্জানিয়ায় রাড্ডা বারনেন এর তৎপরতা চালাচ্ছে। শিশু এবং তার মায়েদের সাহায্য করাই সংস্থার মূল লক্ষ্য। বিশেষ প্রচারণার মাধ্যমে সুইডেনে তহবিল গঠন করা হয়। তাছাড়া আছেন কয়েক জন চাঁদা দাতা। বাংলাদেশের বন্যার প্রচারণা চালিয়ে ১৯৭৪ সালে রাড্ডা বারনেন তহবিল সংগ্রহ করা জয় সারা বিশ্বের জন্য খাদ্যের প্রচারণা চালিয়ে।

সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন

সদর দফতর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩২ সালে। যে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বিপর্যয় চলছিল। ১৯৫৫ সালে কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে সংস্থাটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের সদস্য। এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং ইউরোপের ১৪ টি দেশে এই সংস্থা দুটির প্রজেক্ট আছে। সেভ দি চিলড্রেন নামে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে সব সংস্থা আছে, এই সংস্থা তাদের সাথে সহযোগিতা করে যাবে। ২৮ হাজার সাধারণ মানুষ এই সংস্থায় চাঁদা দিয়ে থাকে৷

আঙ্কল এরিক্স চিলড্রেন হেলপ

আঙ্কল এরিক্স চিলড্রেন হেলপ প্রতিষ্ঠার পেছনে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। সুইডেনে এরিক নামের এক পঙ্গু ব্যক্তিকে তার অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে থাকতে হত। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে এরিক বাচ্চাদের অবস্থা দেখতেন। পরে তিনি এদের জন্য কিছু করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি ৫ জন শিশুকে ভাঙাচোড়া খেলনা উপহার দেন। এই উপহারের ব্যাপারটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তারাও বাচ্চাদের দেবার জন্য কিছু খেলনা দেন। পরে সুইডেন রেডিওর বাচ্চাদের এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে এরিকের সাক্ষাৎকার প্রথব বার প্রচারিত হয়। এর পরে তিনি সারা সুইডেনে বিখ্যাত হন৷ সবাই তার কাছে বাচ্চাদের উপহার পাঠাতে শুরু করে। এই ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিলড্রেন হেলপ সংস্থা। এরিক ৩৪ বছর বয়সে মারা যান। এরিকের এই সংস্থা এখন বিশ্বের ৩০ টি দেশে কাজ করছে। সুইডেনে এর সদর দফতর পরিচালিত হয় মাত্র ৩ জন কর্মচারী সাহায্যে। একমাত্র বাংলাদেশেই আঙ্কল এরিক এর এই সংস্থা সরাসরি কাজ করছে। থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে এতিমখানা ইত্যাদি সংস্থাকে চিলড্রেন হেলপ স্পন্সর করে থাকে। ভিয়েতনাম বিজয়ের আগে এই সংস্থার সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট ছিল আশ্রয় তৈরীর৷

কুঁসো

কানাডীয় সংস্থা। ৬০ – এর শুরুতে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ, লাওস,থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় কাজ করছে৷ উন্নয়নশীল দেশসমূহে কানাডীয় সেচ্ছাসেবী সরবরাহ করে থাকে৷ অনেকটা কানাডিয়ান ‘পিস কোর’ ধরণের সংগঠন এটা। তবে বেসরকারী কানাডীয়ান ইন্টারন্যাশনাল ল ডেভেলপমেন্ট এইড (সিডা) থেকে মূলতঃ তহবিল পেয়ে থাকে৷ তাছাড়াও কিছু অর্থ আসে সাধারণ মানুষের কাছে থেকেও।

ওয়ার্ল্ড ভিসন

২৬ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ল্ড ভিশন সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর শাখা আছে। এই সব দেশের জনগণের দেয়া অর্থ দিয়ে এর তহবিল গড়ে উঠেছে।

টেরে ডেস হোমস

টেরে ডেস হোমস শিশুদের জন্য একটি সংস্থা। ফরাসী ভাষায় টেরে ডেস হোমস অর্থ ‘সবার জন্য বিশ্ব’। সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন ‘ র অনুরূপ একটি সংস্থা। ১১ টি দেশে এই সংস্থার জাতীয় হোমস আছে। সব শাখা হোমস মিলিয়ে টের ডেস হোমস এর একটি আন্তর্জাতিক হোমস আছে। ‘৬০ এর দশকের আগে সুইজারল্যান্ডে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ফ্রান্স, হল্যান্ড, ডেনমার্ক। ইউরোপের বাইরে শুধুমাত্র কানাডায় আছে। বর্তমানে ২৫ টির মতো দেশে টেরে ডেস হোমস কাজ করছে।

এশিয়া ফাউন্ডেশন

আমেরিকার কয়েকজন নাগরিকের উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। সদর দফতর সানফ্রান্সিসকো। উদ্দেশ্য এশিয়ার দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা। এটি কোন ত্রাণ পরিকল্পনা পরিচালনা করেন। বিভিন্ন সংস্থায় এরা তহবিল সরবরাহ করে থাকে। ১৩ টি দেশে ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অফিস এবং কর্মসূচী আছে।

সুইডিশ ফ্রি চার্চ এইড

এ নামটি অনেকের কাছেই বিভ্রান্তির কারণ। আসলে এটি কোন মিশনারী সংগঠন নয়। সুইডেনের ফ্রি চার্চগুলোর সংগঠন এটিকে স্পন্সর করে থাকে। ২য় মহাযুদ্ধের পর চার্চের এই সব সংগঠন জোরদার হয়ে ওঠে। সুইডেনের সরকার সম্পূর্ণ মার্কেটের ৫% বিএনপি আদায় করে সুইডেন ইন্টারন্যাশনাল এইড ফর দি ডেভেলপমেন্ট তহবিল (সিডা) গড়ে তুলেছেন। ফ্রি চার্চ এইড এই তহবিল থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। ১৯৭৪’ র প্রচারণায় ২৭, ৫৫, ৯০২ সুইডিশ ক্রোনার তহবিল সংগৃহীত হয়। ১৯৭৩ সাল থেকে সিডা এই সংস্থাকে সহায়তা দিচ্ছে।

সংস্থার মনোগ্রাম হচ্ছে দুটি হাত দিয়ে তৈরি শান্তির পাখী, তার মাঝে শস্যের ডগা। এ দিয়ে বোঝানো হয়েছে – শান্তি আসবে কাজের মাধ্যমে।

সোয়ালোজ ইন ডেনমার্ক

প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে। ফরাসী পাদ্রী আবে পিয়ারে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এমমাউস মুভমেন্টের সাথে সোয়ালজ সংশ্লিষ্ট। সংস্থার নামটি রূপকার্থে গৃহীত হয়েছে। সোয়ালেজের সেচ্ছাসেবীরা নানা দেশে ভিনদেশী পাখির মতো। সোয়ালজ সর্বপ্রথম পেরুতে, তারপর দক্ষিণ আমেরিকায় এবং এরপর ভারতে যায়। সোয়ালজের মূলমন্ত্রঃ হেলপ ইওরসেলফ। এরা সমস্ত ফান্ড প্রজেক্টে খরচ করতে আগ্রহী। কর্মীরা সবাই সেচ্ছাসেবক। পাবলিক হেলথ, নার্সিং, শিশু এবং বয়স্ক শিক্ষা এবং ব্যবসা প্রশিক্ষণ প্রজেক্টে এরা জড়িত। সোয়ালজের বর্তমান চাঁদা দাতা সদস্য সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশী। সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কেনা বেচা করেও এরা তহবিল সংগ্রহ করে থাকেন।

রংপুর দিনাজপুর রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস

রংপুর দিনাজপুর রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস বস্তুত একটি সংস্থার স্থানীয় নাম। এই সংস্থার মূল নাম লুথারেন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন। সদর দফতর জেনেভায়। এই রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস ওয়ার্ল্ড ফেডারেশনের একটি অঙ্গ সংস্থা। মূল সংস্থা বর্তমানে তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া, মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া, সুদান, মৌরিতানিয়া, জর্দান, বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, পেরুতে তৎপর। ৬০ মিলিয়ন লুথাবেন বিশ্বসীরা এই সংস্থার সাথে জড়িত। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডে লুথাবেন চার্চ আছে। এ সব চার্চ থেকে এ সব দান, চাঁদা, ব্যক্তিগত দান এবং কিছু সরকারী সাহায্যে লুথাবেনের তহবিল গড়ে ওঠে।

ব্রাদারস টু অল ম্যান

ইউরোপীয় সাহায্য সংস্থা। এশিয়া, আফ্রিকা ও সাউথ আমেরিকার কয়েকটি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই সংস্থা সহায়তা দিচ্ছে। ফ্রান্সের প্যারিসে এর সদর দফতর অবস্থিত। এর মনোগ্রাম একটি বড় বৃত্তের নীচে ডান কোণে একটি ছোট চতুর্ভুজ। মনোগ্রামটি আর্কিমিডিসের একটি বক্তব্য – give me a firm spot level and I will move the earth. – এর উপরে ভিত্তি করে রূপায়িত। ১৯৬৫ সালে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৮ টি দেশে তৎপরতায় লিপ্ত।

এর তহবিল কোন সরকারী সংস্থা কিংবা চার্চের কাছ থেকে আসে না। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ইটালী, বৃটেন, জার্মানী, সুইডেন এবং লুক্সেমবার্গে বামের শাখা আছে৷ এ সব শাখা থেকে চাঁদা তোলা হয়। ৬০ টিরও বেশী স্থানীয় ও আঞ্চলিক শাখা আছে। এটি বস্তুতঃ ফরাসী ভাষাভাষীদের একটি সংস্থা।

ইউসেপ

এ্যালেন চেইনী কর্তৃক এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম বাংলাদেশে। এটির বৈশিষ্ট্য – একজন কর্মকর্তা, একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা, একটি মাত্র প্রজেক্ট, সব মিলিয়ে একটি সংগঠন। ইউসেপের জন্য তহবিল সরবরাহ করেন ডেনমার্ক সরকারের ডানিডা এবং সহায়তা আসে ওরায় অন ওয়াল্ট থেকে। এছাড়াও ডাচ, নিউজিল্যান্ড, কানাডা সরকারও সাহায্য দেন। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে ইউসেপের জন্ম। বিশ্বের কোথাও এর সদর দফতর নেই এখনো।

এ্যাভাব

বাংলাদেশে যে সব বিদেশী সাহায্য সংস্থা কাজ করছে তাদের সমিতি এটা। ১৯৭৪ সালের ১ লা জানুয়ারী তারিখে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। ৩৫ টিরও বেশী সংস্থা এ্যাভাবের সদস্য। সদস্য সংস্থার মধ্যে কিছু স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠনও আছে৷ এ সব বিদেশী এবং বাংলাদেশী সংস্থা এ দেশে ত্রাণ, পুনর্বাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন প্রোগ্রাম এবং প্রজেক্টে কাজ করছে। এ্যাভাবের উদ্দেশ্য – সেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচয় দানকারী তালিকা তৈরী, সংস্থাসমুহের কর্মসূচী এবং প্রজেক্টের রিসার্চ এবং প্রকাশনার বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ, অনিয়মিত ও নিয়মিত নিউজ লেটার, বিবৃতি প্রকাশ, কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয়ে মাসিক কোরাম ‘এর ব্যবস্থা করা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্মেলন, সেমিনার, আলোচনার ব্যবস্থা করা। সংস্থাগুলোকে এক সংস্থা সম্পর্কে বহিরাগতদের তথ্য প্রেরণ, রিসার্চ ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা করা এবং বাংলাদেশ সরকারের আদেশ, নির্দেশ সম্পর্কে বিদেশী সংস্থা গুলোকে সচেতন রাখা। এ্যাভাবের কোন মনোগ্রাম নেই।

***

বাংলাদেশে বিদেশী সাহায্য সংস্থার কার্যক্রম

বাংলাদেশে, (হিসাব অনুযায়ী) ষাটটিরও বেশী বিদেশী সাহায্য সংস্থা তৎপর রয়েছে। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় ক’ টি সাহায্য সংস্থা সরকারী, বেশীরভাগই বেসরকারী। এদের অনেকেরই ঢাকায় একটি করে অফিস আছে, অনেকের নেই। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এদের প্রজেক্ট – কোথাও স্বাস্থ্য, কোথাও কৃষি ক্ষেত্রে, কোথাও বা পুনর্বাসন ক্ষেত্রে৷ মিলিয়নকে – মিলিয়ন টাকা পাউন্ড স্টালিং, ডলার, ক্রোনার বার হচ্ছে এসব প্রজেক্টে। কি করছে এই সব সংস্থা, এই সব প্রজেক্টে এত ব্যবস্থার সাথে এই অর্থ ব্যয় করে? কয়জনেরই বা উপকারে আসছে এই সব প্রজেক্ট? কত মানুষ খাটছে, কতজনেই বা বিদেশী আয় কত টাকাই বা ব্যয় হচ্ছে বিভিন্ন খাতে। এমনতর নানা প্রশ্ন নানা জনের মনে। বিচিত্রা রিপোর্টার ঢাকায় অফিস আছে এমন কিছু বেসরকারী সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। কর্মকর্তারা তাদের প্রজেক্টের খবর জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন তাদের বাজেটের কথা, অনেকে এড়িয়ে গেছেন, অনেকেই বলেননি। আমরা নীচে তাদের দেয়া তথ্যাবলী উদ্ধৃত করছি। মনে রাখতে হবে, ষাটটিরও বেশী তৎপর সংস্থার মধ্যে এখানে আছে গুটিকয়েক সংবাদ – শুধু যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে।

অক্সফাম

১৯৫৯ সালে চন্দ্রঘোনা হাসপাতালের মাধ্যমে অক্সফাম তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। ভারতে বাংলাদেশের স্মরণার্থীদের জন্যও এ সংস্থা তৎপর ছিল সীমান্তের ওপারে। ১৯৭২ সালে ঢাকায় অক্সফামের ফিল্ড অফিস খোলা হয়, অক্সফাম নিজে কোন প্রজেক্ট পরিচালনা করে না৷ এই সংস্থা শুধু স্থানীয় সংস্থা গুলোকে সহায়তা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে অক্সফামের দুই জন বিদেশী এবং তিন জন স্থানীয় কর্মী কাজ করছেন।

১৯৭৪ সালের মে মাস থেকে ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অক্সফাম বাংলাদেশে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে –

উন্নয়ন ক্ষেত্রে মেডিক্যাল খাতে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কম্যুনিটি হেলথ প্রোগ্রাম এর জন্য (১৯৭৫- ৭৬ সালের ৩১২৩ পাউন্ড সহ) ৭৯০১ পাউন্ড। রংপুরের সেবা সংস্থার ডিসপেনসারীর জন্য ২৬৮ পাউন্ড। কুমুদ্দিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর জন্য ২১, ১৫০ পাউন্ড। চন্দ্রঘোনার খৃষ্টান হাসপাতালের জন্য ৬০ পাউন্ড। ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরির জন্য ১০০০ পাউন্ড, ঢাকায় জন হপকিনস মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের জন্য ২৯২ পাউন্ড। গুটিবসন্ত নির্মূল অভিযানে ৭৫০০ পাউন্ড। কৃষিখাতে সমবায় ক্ষেত্রে ২০৫০ পাউন্ড। বগুড়া আজিজুল হক কলেজের জন্য ৫,৩৮৪ পাউন্ড। ব্রাক সংস্থার জন্য ২৫, ৫০২ পাউন্ড। রংপুরের রউমারী থানা সমবায় সমিতির জন্য ৫০০০ পাউন্ড। ব্যাপ্টিস্ট মিশনের শস্যবীজ আনবার ভাড়ার জন্য ৬৯৬ পাউন্ড। ভোলায় কেয়ারের প্রজেক্টের জন্য ৪৪৪১ পাউন্ড। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি সেচ্ছাসেবী দের জন্য ৪২ পাউন্ড। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জন্য ২৫০০ পাউন্ড। প্রশিক্ষণ খাতে খুলনায় ওয়ার্ল্ড রিলিফ কমিশনের জন্য ৫৬৪ পাউন্ড। রিলিফ কমিশনের জন্য ৫৬৪ পাউন্ড। কুমিল্লার চন্দ্রপুরের নিউজিল্যান্ড ব্যাপ্টিস্ট মিশনের জন্য ৫০০ পাউন্ড। চার্চ অব বাংলাদেশের জন্য ৭২ পাউন্ড। ওয়েলফেয়ার খাতে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থাকে দেয়া ৭৭৭ পাউন্ড। মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির জন্য ৪২০০ পাউন্ড। ঢাকার সোনাতলা রেডক্রসের জন্য ২৬৮ পাউন্ড। রিলিফের ক্ষেত্রে ফিডিং ৫০, ০০০ পাউন্ড, মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের জন্য ৫৪ পাউন্ড। ওয়েলফেয়ার খাতে ১১১৩ পাউন্ড, জরুরী খাতে ব্যয় হয় ১১, ৫০০ পাউন্ড। এম্ববরবিং এবং সম্নসারসীল খাতে ব্যয় হয় ২২৮৬ পাউন্ড, ৪২৫৫ পাউন্ড, ১০, ২৮৬ পাউন্ড এবং ৫, ৪৩৬ পাউন্ড।

উপরের হিসাবের অতিরিক্ত অনুদান হিসাবে দিয়েছে অক্সফাম – এ্যাভাবকে ৫০০ পাউন্ড, পাবনার সোনাতলার পরিবার পরিকল্পনার জন্য ৯৪৯ পাউন্ড। চট্টগ্রামের সেবার সংস্থার জন্য ৫৫০ পাউন্ড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জন্য ১৯১৪ পাউন্ড, ফরিদপুর গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টার জন্য ৬, ৩৩১ পাউন্ড। সিলেট, রংপুর এবং ঢাকার ফুড ফর ওয়ার্ক – এর জন্য ২০,৬০০ পাউন্ড, গুটি বসন্ত নির্মূল অভিযানে ১২, ০০০ পাউন্ড এবং মিরপুরের বাস্তুহারা ক্যাম্পের জন্য ১০৪০০০ পাউন্ড, কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরির জন্য ১০০০ পাউন্ড, কুমিল্লার বার্ড এবং রাঙ্গুনিয়ার টিসিসি এর জন্য ৬৯৫ পাউন্ড।

কনসার্ণ

১৯৭২ সাল থেকে কনসার্ণ বাংলাদেশে কাজ করছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা এবং ঢাকায় কনসার্নের প্রচেক্ট আছে। যে সব মানুষ ক্যাম্পে থাকে, সে সব গৃহহীন দের পুনর্বাসন এদের মূল লক্ষ্য। কনসার্নের প্রথম প্রজেক্টই ছিল ঘরে ফিরে আসা শরনার্থীদের জন্য ঢাকার কাছে ২ হাজার কাঁচা বাড়ী নির্মাণ। বিভিন্ন অবাঙ্গালী ক্যাম্পেও এরা কাজ করছে। কনসার্নের বিভিন্ন প্রজেক্টে ৩ হাজার মেয়ে হস্তশিল্পের কাজ করছেন। এদের উৎপাদিত দ্রব্য প্রধানতঃ বিদেশে রপ্তানী করা হয়। বিভিন্ন অস্থায়ী সাহায্য সংস্থার ক্যাম্পে কনসার্ন সরাসরি বা স্থানীয় কোন সংস্থার সাহায্যে ১৫ হাজার ছেলে মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে। এসব স্কুলে একই সাথে ফিডিং এরও ব্যবস্থা আছে। কনসার্ন বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে ২ হাজার অন্তত গরীব মেয়েদের নিয়ে ‘য়্যুমেন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ‘ হাতে নিচ্ছে। এসব মহিলারা স্থানীয় বাজারের জন্য হস্ত শিল্পের কাজ করবেন। এদের জন্য থাকা, খাওয়া এবং কাজের সময় তাদের সন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হবে। ৩ টি সেক্রেটারিয়াল স্কুলকেও এই সংস্থা সহায়তা দান করছে। বাংলাদেশে মহিলা কল্যাণ ফেডারেশনের এ ধরণের একটি স্কুলে শিক্ষক দিয়ে তারা সাহায্য করছে। চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ঐ সংস্থার জন্য কনসার্ন স্কুল তৈরী করে শিক্ষক দিয়ে সহায়তা দান করছে। কনসার্ন চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহের কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী পরিচালনা করছে ভলেন্টিয়ার ইন্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে। রংপুর এবং ময়মনসিংহেও তাদের কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসূচী আছে। নেত্রকোনা মহকুমায় কনসার্ন ৬০ ফিট সেন্ট্রাল স্প্যান এবং ৩০ ফিট পাশের স্প্যানের একটি ব্রীজ তৈরী করছে। ময়মনসিংহের মূল পারাপারে কনসার্ণ একটা ফেরী দিয়েছে। তারা এ বৎসর আরো দুটো ফেরী দেবে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কনসার্নের নার্স কাজ করছেন। মিরপুরে, মোহম্মদপুর, আদমজী বেগারস হোমের ক্যাম্পসমূহেও তারা কাজ করছেন। ময়মনসিংহ এর ডারার একটি হোমেও কনসার্নের এক্সপার্টিস কাজ করবেন। আগামীতে কৃষিক্ষেত্রে আরো জোরে সোরে কাজ করবার ইচ্ছা আছে কনসার্নের। ইতিমধ্যে আমদানী করা ৪০ টন গমবীজ রংপুর এর নীলফামারী এবং ময়মনসিংহের নেত্রকোনা মহকুমার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের অস্থায়ীদের ক্যাম্পে কনসার্নের ৬ টা স্কুল আছে, সেই সাথে আছে ফিডিং এর ব্যবস্থা।

৫০ জন বিদেশী সেচ্ছাসেবক কনসার্নের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন। এদের প্রায় সবাই আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী। ৬ জন বৃটিশ এবং একজন ভারতীয় নাগরিক আছেন। এরা সবাই পেশাগত দিক থেকে কোয়ালিফাইড। স্থানীয় কর্মচারীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১ হাজারের বেশী। বাংলাদেশে পার্সোনাল দের বেতনসহ মোট খরচার প্রায় ৪০% এসে থাকে মূল কনসার্ন তহবিল থেকে। বাংলাদেশের সমস্ত প্রোগ্রামে অর্থ খরচ হয় এ বৎসরে ৪ শ হাজার পাউন্ড। নগদ ছাড় অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে যা ব্যয় হবে তার মান দাড়াবে ৩ খেকে ৪ শ হাজার পাউন্ড। উল্লেখ্য কনসার্ন শুধুমাত্র ডেমরা – মিরপুর ক্যাম্পে প্রতিদিন ২৩ হাজার ‘মিল’ খাওয়াচ্ছে।

স্যালভেসন আর্মি

স্যালভেসন আর্মি ভারতে শরনার্থী শিবিরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্বপ্রথম কাজ শুরু করেন। যুদ্ধ শেষের সাথে সাথে স্যালভেসন আর্মি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আর্মি সেভ দি চিলড্রেন ফান্ডের সঙ্গে বাহাদুরাবাদে ‘রিভার প্রজেক্টে’ কাজ করছে। সেখানে ৮ টি গ্রামে পুষ্টি বিতরণ, পাঁচটি গৃহ নির্মাণ প্রকল্প (যার মধ্যে ৬০ টির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে), ১৫ টি পরিবারের ফিশিং প্রোগ্রামও স্যালভেসন আর্মি তৎপর রয়েছে। অন্য দিকে ঢাকার মিরপুরে বন্যা পীড়িত মানুষদের জন্য সংস্থা কাজ করছে। স্যালভেসন আর্মি র ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের সুবিধা গ্রহন করে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ জন মানুষ। বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের জন্য জিঞ্জিরায় ১০০ টি গৃহ নির্মাণ হচ্ছে। স্যালভেসন আর্মি ‘র প্রতিটি বাড়ী নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। অনুরূপ গৃহ টঙ্গীতেও নির্মাণ করা হবে। গুলশানে পঙ্গু এবং এ্যাগনসনের জন্য অপেক্ষারত শিশুদের থাকবার জন্য একটি শিশু সনদও আছে এদের। যশোরে আছে ক্লিনিক এবং রুরাল হেলথ কেয়ার সেন্টার। স্যালভেসন আর্মি অন্যান্য কিছু সংগঠনকেও ত্রাণ এবং উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে থাকে। ১২ জন বিদেশী বাংলাদেশে এই অস্ত্রবিহীন আর্মিতে কাজ করছেন। স্থানীয় কর্মচারীদের সংখ্যা ৭৫% বিভিন্ন দেশের এবং সংস্থার দেয়ার অর্থের উপরে সংস্খার বাজেট এবং ব্যয় নির্ভর করে। যেমন ‘৭৪ – ‘৭৫ সালে একমাত্র হল্যান্ড থেকেই এসেছে তিন মিলিয়ন সিন্ডার। এক সিন্ডার স্থানীয় ৫ টাকার সমান। জার্মানী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা থেকেও আর্মির সাহায্য আসে৷

কেয়ার

কেয়ারের বর্তমান কার্যক্রমের মধ্যে আছে – ৫০ হাজার টন গমের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের সাথে ম্যানেজমেন্ট প্রোপ্রামে সারাদেশের শিশু ও মহিলাদের জন্য ৮৬,০০০ টন খাদ্য শস্য সরবরাহ। দুটি পাইলট ফিডিং এবং পুষ্টি কর্মসূচী একটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কুমিল্লা এ সিলেট জেলার একটি করে মহকুমায় এবং অপরটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কুমিল্লা জেলার দুটি মহকুমায়। আই আর ডি পি ‘র সঙ্গে সমবায় কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচী। বরিষালের ৩ থানায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এবং জয়দেবপুর থানায়। এসব থানায় আছে ‘কো অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফার্মার ট্রেনিং এডুকেশন। কেয়ার এক ধরণের জুট প্লাস্টিা আবিষ্কার করছে৷ আলমগঞ্জে এই জুট প্লাস্টিকের সাহায্যে গৃহ নির্মাণের প্রজেক্টও তারা স্থাপন করেছে। এই কারখানায় ফ্রি ফ্যাব্রিকেটেড জুট প্লাস্টিকের স্কুল গৃহ তৈরী করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য। এসব স্কুল ২০ করে বসানো হবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম জেলায়।

ইতিপূর্বে কেয়ার ১৯৭২ সালে প্রতি গ্রামে ২৫০ টি করে ৬২ টি মহকুমার একটি করে গ্রামে গৃহ নির্মাণ করেছে। ডেল্টা হাউজিং প্রোগ্রামে নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলায় ৭০০ টি বাড়ী নির্মাণ করা হয়। আই আর ডি পি ‘ র জন্য সারাদেশে যে ৫৫ টি পুদাম কেয়ার তৈরী করছে, তার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কেয়ারের সামান্য মেডিক্যাল প্রোগ্রামও আছে।

গত বছরে কেয়ার তার বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করেছে দশ মিলিয়ন ডলার। এ বৎসরে ব্যয় করবার কথা ছিল দশ মিলিয়ন ডলার। তবে তা বেড়ে ২৮ মিলিয়ন ডলারে দাড়াবে বলে মনে হয়। ১৮ জন বিদেশী এবং ৩৯৫ জন স্থানীয় কর্মচারী আছে।

এম, সি, সি

হাতিয়া ছাড়া নোয়াখালী জেলার আর সব কটি থানায় এম, সি, সি অর্থাৎ ‘মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি ‘র কৃষি প্রজেক্ট রয়েছে।

এছাড়া মিরপুরে অস্থানীয়দের ক্যাম্পে এদের প্রজেক্ট আছে পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটারী ইউনিট এবং কীচেন গার্ডেন সাব প্রজেক্ট। উত্তরবঙ্গের রংপুরের সৈয়দপুরে অস্থানীয়দের ক্যাম্পে পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি কেন্দ্র এবং দুধ ফিডিং সেন্টার এম, সি, সি পরিচালনা করে। এ ছাড়াও তারা অনেক ইনস্টিটিউশনে দ্রব্য সাহায্য এবং রিলিফ সামগ্রী বিতরণ করে থাকে। খুব ছোট আকারের কাজের বিনিময়ে খাবার প্রজেক্টও এই সংস্থার আছে। কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এম, সি, সি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সম্মানের সনদ লাভ করে।

এম, সি, সি ১৯৭২- ৭৩ সালে নোয়াখালীর ৪০০ টি প্লটে তাদের প্রথম কৃষি প্রজেক্ট শুরু করে। এম সি সি’ র সহায়তায় ১৯৭৩-৭৪ সালে ৪০০ একর গম, তিল, সালগম, সূর্যমুখী, সয়াবিন, বার্লী মাইজ সবজি এবং আলু চাষ করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে আরো ভালো আবাদের জন্য ধান চাষেও এম, সি, সি নিয়োজিত হয়েছে। এম, সি, সি র সমগ্র কৃষি প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে পুষ্টির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা।

পপুলেশন সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পি এস আই বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করছে। ইউ এস এইড এর প্রান্ত সাবসিডি দিয়ে এই সংস্থা উৎপাদন মূল্যের চাইতে কম দামে জন্ম নিয়ন্ত্রক মাধ্যম জনগণের কাছে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পৌছে দেবার কাজে নিয়োজিত আছে। ইতিমধ্যে ফুরিয়ে যাওয়া দেড় বৎসর সহ আগামী চার বছরে এজন্য ব্যয় হবে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর অতিরিক্ত আরো এক মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবারও সম্ভাবনা আছে। গত ডিসেম্বর থেকে সোসাল মার্কেটিং প্রোগ্রামের আওতায় সংস্থা রাজা ও তৃপ্তি কনডম ও মায়া পিল বিদেশ থেকে আসে এবং এখানে তা মোড়ক আবৃত করা হয়। তিনটি রঙ্গীন কনডমের এক বাক্স রাজার দাম চল্লিশ পয়সা এবং দুই মাসের খাবার পিলের এক বাক্স মায়ার দাম ১.৪০ টাকা।

তিন বৎসরের প্রাথমিক মার্কেটিং সময়সীমায় ৪০ মিলিয়ন কনডম এবং সাত মিলিয়ন খাবার পিলের সাইকেল বিক্রীর লক্ষ্য পি এস আই এর আছে। এতে করে এক মিলিয়নের বেশী দম্পতি ২৫০ হাজার থেকে তিন হাজার অবাঞ্ছিত জন্ম রোধ করতে পারবেন। এই তিন হাজার শিশু জন্মালে বাঙলাদেশ সরকারের এদের জন্য খরচ হবে ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জানুয়ারীর শুরুতেই ১০০০, ০০০ কনডম এবং ২০০, ০০০ সাইবেল পিল বিক্রী হয়ে গেছে।

জে ও সি ডি

জাপান ওভারসীজ কর্পোরেশন ভলেন্টিয়ার্স এর ১৮ জন জুনিয়র এক্সপার্ট বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করছেন। এরা হচ্ছেন খুলনার দৌলতপুরে এ্যাগ্রনমিস্ট তাকিও ওসামা, এগ্রিকালচার মেকানিক ওশিও তানিকওয়া, হর্টিকালচারিস্ট হিকারু উচি, রংপুরের গাইবান্ধা ময় এগ্রনমিস্ট কিওসি তাকাহাসি, এগ্রিকালচার মেকানিক নরিউকি শুটনি, হর্টিকালচারিস্ট তাদাসি সাইতো, রাজশাহীর নাটোরে এগ্রনমিস্ট সাদাউশী তাকেউচী, এগ্রিকালচার মেকানিক তোমোআকিউ, সয়েল এবং ইরিগেশন টেকনিশিয়ান হিবোয়াশী সাতো। ময়মনসিংহ এর শেরপুরে হিতোশি হরিকোশী, সয়েল টেকনিশিয়ান তাকাফুমি ও গাওয়া, এগ্রিকালচার মেকানিক উজি কাতসুকি, সিলেটের বাদিম নগরে সয়েল এবং ইরিগেশন টেকনিশিয়ান মাসাকি ওতসুকা, এগ্রিকালচার মেকানিক সুয়েসী কারসায়া, হর্টিকালচারিস্ট সুটমসেকিয়া ও সেইকো তাসাকি, চট্টগ্রামের পটিয়ায় পওকি মায়েবা এবং খুলনার দৌলতপুরে কিয়োসি মাসুবুচি বাংলাদেশে সাতটি এগ্রিকালচার এডুকেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে। গাইবান্ধায় জে, ও, সি, ভি কৃষকদের মধ্যে স্বল্পব্যয়ে ৮০ টি হাতে চাপা টিউবওয়েল সরবরাহের একটি স্কিম হাতে নিয়েছে। এই স্কিমে প্রতি টিউবওয়েলের খরচ পড়বে ৭০০ টাকা। গরীব কৃষকদের এই টিউবওয়েলের জন্য মাত্র ২৬০ টাকা দিতে হবে। বাকি ৪৪০ টাকা জে ও সি ডি বহন করবে৷ এসব টিউবওয়েলের সাহায্যে খরা মৌসুমে আবাদ করা সম্ভব হবে। গাইবান্ধায় এই পরীক্ষামূলক স্কীম বাস্তবায়িত হলে অন্যান্য স্থানেও এমন স্কিম চালু করা হবে । ভবিষ্যতে বি, আর, টি, সি তে বন, মৎস্য, গবাদি, পশু, পল্লী উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দানের জন্যও জে, ও, সি, ডির জুনিয়র এক্সপার্টদের আসবার সম্ভাবনা আছে।

সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড (ইউকে)

ভোলার সেই মর্মান্তিক সাইক্লোনের সময় ভোলার শিশুদের জন্য সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড ইংল্যান্ডে তহবিল গড়ে তোলে। এর পরে ইমার্জেন্সি রিলিফ নিয়ে ভোলায় একটি টিম আসে। সেই থেকে সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড বাংলাদেশে কাজ করছে। ভোলার জরুরী ত্রাণ তৎপরতা শেষে সাপেক্ষে এ দেশের শিশুতের কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরী করেন। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে আড়াই বৎসর আগে ঢাকায় এরা পুরোদস্তুর অফিস স্থাপন করেন। এই সংস্থার ভোলা, খুলনা এবং ঢাকায় প্রজেক্ট আছে। এসব প্রজেক্টের অধীনে কিছু সাব প্রজেক্টও এরা স্থাপন করেছে।

ভোলার প্রধান প্রজেক্টের অধীনে আছে বোরহানউদ্দীন গ্রামে মা ও শিশু হাসপাতাল ও সাপ্লিমেন্টারী ফিডিং সেন্টার, ভাদা গ্রামে মা ও শিশু হাসপাতাল এবং সাপ্লিমেন্টারী ফিডিং সেন্টার। ইলিশাতে মিনি ক্লিনিক, বাংলা বাজারে ক্লিনিক এবং মূল ভোলায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার। খুলনার মূল প্রজেক্টের সাথে আছে বাহরাবদিয়ায় মাজগারী শাহপুরে ও বাগেরহাটে একটি করে মাতা ও শিশু হাসপাতাল এবং রেসিডেন্সিয়াল কেয়ার সেন্টার। এ ছাড়া ঢাকার ইস্কাটন রোডে আছে পুষ্টি কেন্দ্র। এ সংস্থা বাহাদুরাবাদ ঘাটে স্যালভেসন আর্মি ও অন্যান্য সংস্থার সাথে রিভার প্রজেক্টেও কাজ করছে।

বিশজন বিদেশী এখন এই সংস্থার জন্য বাংলাদেশে কাজ করছেন, ওরা সবাই কোয়ালিফাইড। এই বিশ জনের মধ্যে প্রায় সবাই ইংল্যান্ডের। শুধু একজন করে হল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী আছেন। সব মিলিয়ে ২৪০ জন স্থানীয় কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। বাংলাদেশের শিশুদের জন্য এই সংস্থা প্রতি বছর প্রায় ৩০০ হাজার পাউন্ড স্টালিং ব্যয় করে। ১৯৭৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই সংস্থা বাংলাদেশে ব্যয় করেছে ২৫০,৮৩৮ স্টালিং পাউন্ড।

সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন

সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন এবং কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ১৯৭২ এর মধ্যে জাতীয় সমবায় ফেডারেশনের সহায়তায় কুমিল্লার ব্যক্তি ও এক পরীক্ষামূলক ব্যবসা শিক্ষার ট্রেনিং স্পনসারের মাধ্যমে বাংলাদেশে তৎপরতা শুরু করে। সংস্থা দুটি একত্রে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এবং মিরসরাই থানার সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রামের রাস্তা মেরামত, সেচ প্রকল্প স্থাপন এবং বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। ইউএস এইডের অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঐ দুটি গ্রামে তিন হাজার আধ স্থায়ী বাড়ী নির্মাণ করছে। রাঙ্গুনিয়ার দুটি গ্রামে সেলফ হেলপের ভিত্তিতে সমবেত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এখন আবার নোয়াখালী জেলার পরশুরাম থানার সুধুমা, কুমিল্লার নাদিরনগর থানার কুন্ডা, ঘিওর থানার, জবরা মির্জা থানার মিরদেওহাটা গ্রামে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। খুব শীঘ্র কুমিল্লার নাদিরনগর থানার গোম্বলনারপুর গ্রামে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হচ্ছে, সমন্বিত কর্মসূচীর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার অগ্রাধিকার আছে। সারা বছরে সংস্থা বাংলাদেশের প্রকল্পের জন্য ২০-২২ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সদর দফতরে বাংলাদেশের প্রকল্পের জন্য ব্যয়ও ধরা আছে। একজন বিদেশী এবং ২০২২ জন স্থানীয় কর্মী সংস্থায় কাজ করেন।

রাড্ডা বারনেন

১৯৭২ এর ডিসেম্বরে রাড্ডা বারনেনের সেক্রেটারী জেনারেল অন্য একটি সংস্থার কাজে ঢাকা এলে বাংলাদেশ সম্পর্কে উৎসাহিত হন। ১৯৭৩ এর জুলাই মাস থেকে রাড্ডা বারনেন এখানে কাজ শুরু করে। ঢাকার মিরপুরের তিন নম্বর সেকশনে সংস্থার একটি ক্লিনিক আছে। যুদ্ধের আগে এই ক্লিনিকটি সরকার পরিচালিত ছিল। যুদ্ধে ক্লিনিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার বিনামূল্যে এই দালানটি রাড্ডা বারনেনকে দিয়েছেন। ১৯৭৩ এর আগস্ট মাসে দালানটির মেরামত শুরু হয় এবং ১৯৭৪ সালের জুন থেকে ক্লিনিকটি পুরাদস্তুর চালু হয়। এখন ডিরেক্টর ছাড়া এই ক্লিনিকে স্ক্যানডেভিয়ার একজন ডক্টর এবং দুই জন নার্স কাজ করছেন। অপর এক প্রজেক্টে মীরপুরে প্রতিদিন সাত হাজার শিশুকে খেতে দেওয়া হয়। ৬, ১০, ১১, ১২, ১৩ নম্বর সেকশনে এই রকম পাঁচটি ফিডিং সেন্টার আছে। এ সব সেন্টারে তাদের জ্ঞান দানও করা হয়। রাড্ডা বারনেনের রোগীদের হোম ভিজিটের সাথে সাথে সোসিও ইকনমিক সার্ভেও চালাচ্ছে। স্পন্সরশীপ আওতায় রাড্ডা বারনেনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহের দুই হাজার প্রাইমারী স্কুল ছাত্র প্রত্যেকে প্রতি মাসে প্রকল্পের ৪০ টাকা করে সাহায্য লাভ করছে। ১৯৭৩ সালে সরকারী কাজ শুরু করবার আগেও রাড্ডা বারনন এ দেশে কাজ করেছে। কক্সবাজারের আবহাওয়া বেতার কেন্দ্রটি এই সংস্থার খরচায় তৈরী। ১৯৬৯ সালে এটিকে আবহাওয়া বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংস্থায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে আছে মিরপুরে পোলট্রি এবং টেক্সটাইল সমবায়, ক্লিনিকের সম্প্রসারণ, মিরপুর সেকশন ১৩ ‘এ একটি সার – ক্লিনিক স্থাপন। পুরা বেতনে ৫ জন বিদেশী এখানে কাজ করছেন। ক্লিনিকে ৫৫ জন এবং ফুড প্রোগ্রামে ৯০ জন স্থানীয় কর্মচারী আছেন। ১৯৭৫ সালে ক্লিনিাে খরচ হয়েছে নয় লক্ষ টাকা এবং এ খরচ হবে দেড় মিলিয়ন টাকা। ফুড প্রোগ্রামে ১৯৭৫ সালে খরচ হয়েছে দেড় মিলিয়ন টাকা এবং ১৯৭৬ সালে ব্যয় হবে পাঁচশ হাজার টাকা। ফুড প্রোগামের খাবার অবশ্য আসবে বিশ্ব খাদ্য প্রোগ্রাম থেকে। স্পন্সরশীপ প্রোগ্রামে গত বছর খরচ হয়েছে ১ মিলিয়ন টাকা৷ সমপরিমাণ টাকা ব্যয় হবে এই বছর।

আঙ্কল এরিকস চিলড্রেন হেলপ

উপকূলীয় ঘুর্ণিঝড়ের পর ১৯৭০ সালে আঙ্কল এরিকস চিলড্রেন হেলপ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কাজ শুরু করে। ভোলায় এই সংস্থা ২০০ শিশুর জন্য একটি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। পরে সেখানে একটি পুরোদস্তুর এতিমখানা স্থাপন করা হয়। এ বছরের শুরুর দিকে এতিমখানাটি সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৩০ টি শিশু এই এতিমখানায় থাকে। গত পাঁচ বছর এরিকস চিলড্রেন হেলপ অনাথ সদনটি চালিয়ে এসেছে। এতিমখানা ছাড়াও হেলপের হেলপের জীবিকার প্রশিক্ষণ স্কুলে ১৬ জন ছাত্র এক বছর ধরে পরীক্ষামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছে। ভোলায় টিনের ছাদ এবং বাঁশের বেড়া দেওয়া ১৮০ টি কাঁচা বাড়ীও তৈরী করেছে এই সংস্থা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভোলার বোরহান উদ্দিনে “হোম ডেভেলপমেন্ট সেন্টার” স্থাপন করা হয়েছে। এখানকার হস্তশিল্প বিদ্যালয়ে গত এক বছরে তিনটি কোর্স পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে স্কুলটি অবশ্য বদ্ধ আছে। এখন ভোলার ফিডিং সেন্টারে ২০০ জন শিশুকে পাকানো দুধ, মাছ এবং ভাত খেতে দেওয়া হচ্ছে। ঐ সমস্ত বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টিও রাখা হয়। এদের সবার মেডিক্যাল চেক আপ করে একটা মোটামুটি স্তরে স্বাস্থ্য উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এখন একটি প্রাথমিক স্কুল তৈরীর কাজ চলছে। নির্মাণ শেষে এই সমস্ত শিশুরা এই স্কুলে পড়াশোনা করবে। সমস্ত পরিবারের মানোয়ন্নয়ের জন্য এই সব শিশুদের মায়েদেরও পুষ্টি, শিশু পালন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। এই প্রজেক্ট সিডা (সুইডিস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এইড) এর সাহায্য বাড়াবার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে জীবিকা প্রশিক্ষণ স্কুলের জন্য গৃহনির্মাণের পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত।

ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে আছে মৎস্যজীবীদের সমবায় স্থাপন, বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থা করা।

টেরে ডেস হোমস, নেদারল্যান্ড

টেরে ডেস হোমস, নেদারল্যান্ড ভারতে বাঙালী রিফিউজিদের মধ্যে প্রথম কাজ শুরু করে। স্বাধীনতার পরে এই সংস্থা সরাসরি এ দেশে তাদের তৎপরতা শুরু করে। প্রথম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করতে শুরু করে। এ সময় ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির মেডিক্যাল প্রজেক্টকেও সাপোর্ট করে। ফিডিং প্রজেক্ট দিয়ে নিজস্ব প্রজেক্টের সূচনার। এই সাথে বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ঢাকার মিরপুরে মেডিক্যাল প্রজেক্ট। হোমসের ৬ টি ফিডিং সেন্টারে প্রতিদিন ৮ হাজার ছেলে মেয়ে খেতে পাচ্ছে। অন্যান্য ফিডিং সেন্টারগুলো হচ্ছে কালিয়াকৈর থানা, পাবনার চরদুলাই, বরিশালে গলসাখালী, মঠবাড়ীয়া, পটুয়াখালীর দেশান্তরকাঠি এবং হোমস কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত কমলাপুরে সংস্থার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বেতাগী দাতব্য চিকিৎসালয় এবং রংপুরে সেবা সংস্থাকে নিয়মিত অর্থনৈতিক সহায়তা দান করে। তাছাড়া অনেক সংস্থাকে সাময়িক সাহায্যও দিয়ে থাকে। এ মাস থেকে টঙ্গীতে এদের নতুন একটি মেডিক্যাল প্রজেক্ট চালু হবে।

চারজন বিদেশী টেরে ডেস হোমস, নেদারল্যান্ডে কাজ করেন। একজন নার্স ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট এ এবং একজন ডাক্তার কমলাপুর ডিসপেনসারীতে বর্তমানে কাজ করছেন। অন্য দুজন শিল্পী ঢাকা এসে পৌছাবেন। সব মিলিয়ে স্থানীয় কর্মচারী ৮০ জন এর মতো।

ঔষধ খাবার ক্যাম্প অপারেশন, কস্ট সব মিলিয়ে ১৯৭৫ সালে নেদারল্যান্ডের হোমস এখানে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ করেছে।

টেরে ডেস হোমস (ডেনমার্ক)

টেরে ডেস হোমস (ডেনমার্ক) ৩৮ জন ছেলে মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ডেনমার্ক পাঠিয়েছে। মোহাম্মদপুরের কাছাকাছি টেরে ডেস হোমসের অর্থনৈতিক সহায়তায় ‘ইউসেফ’ পঙ্গু ছেলে মেয়েদের জন্য একটি পঙ্গু দের স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে। এই সংস্থার পরিচালনায় একটি বেবী হোমস আছে। প্রতি বছর সব মিলিয়ে এই সংস্থা এ দেশে ৫ শ হাজার টাকা ব্যয় করে। সংস্থার এ বছরের বাজেট হচ্ছে ৩ শ হাজার ডেনিস ব্রুনা।

টেরে ডেস হোমস (ফ্রান্স)

ঢাকায় টেরে ডেস হোমস (ফ্রান্স) এর ৫ টি প্রজেক্ট আছর। মোহাম্মদপুরে ১ টি মেডিক্যাল সেন্টার। ডে কেয়ার সেন্টার, কমলাপুরে ফিডিং সেন্টার, এবং সেখানে বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে ১ টি ডে কেয়ার সেন্টার আছে। এই সংস্থা শিশুদের এ্যাডাপসনও করে থাকে। বাহাদুরবাদের রিভার প্রজেক্টে এই সংস্থার একজন নার্স কাজ করছেন। এ সংস্থার মাধ্যমে এখানকার অনাথ শিশুদের স্পন্সরশীপ প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিমাসে দেওয়া হয় ১৫০ টাকা। ঢাকায় এমন সাহায্য পায় ৬০ জন এবং চট্টগ্রামে পায় ৫০ জনের বেশী শিশু। এ্যাডাপশনের জন্য ২০ জন বাচ্চাকে ইতিমধ্যে ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে। আগামীতে আরো পাঠাবার পরিকল্পনা আছে। কমলাপুরের ফিডিং সেন্টারে প্রতিদিন ৬০০ বাচ্চাকে খাবার দেওয়া হয়। মোহাম্মদপুরের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রতিদিন ৮০ জন জন্মনিরোধক ব্যবস্থা এবং ২০০ জনকে ইনজেকশন দেয়া হয়। আউট পেসেন্ট ক্লিনিকে প্রতিদিন ৪৫০ জন রোগীকে দেখা হয়। টেরে ডেস হোমস এর স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা ২৩ জন। চারজন ফরাসী মহিলা এখানে কাজ করছেন। সংস্থা তাদের বার্ষিক বাজেট বলতে পারেননি তবে আমাদানী করা ঔষধ এবং খাবারের পরিমাণ গত বছরে ছিল আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকায়।

ওয়ার্ল্ড ভিশন

বাংলাদেশের শরনার্থীরা ভারতে গেলে ওয়ার্ল্ড ভিশন সেখানে প্রথম কাজ শুরু করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সরাসরি তৎপরতা শুরু করে এই সংস্থা। প্রথমদিকে খাদ্য ক্রয়, মেডিক্যাল সাপ্লাই, যানবাহন এবং পোশাক কিনবার জন্য এরা তহবিল সরবরাহ করে। এ সময় ওয়ার্ল্ড ভিশনের একজন চিকিৎসকও এখানে কাজ করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে ২৫০০ টি গৃহ, ৩০ টি স্কুল নির্মাণ এবং কিছু গবাদি পশু কিনবার জন্য ওয়ার্ল্ড ভিশন অর্থ সরবরাহ করে। বেশ কিছু সংখ্যক সরকারী গৃহ এরা মেরামতও করিয়ে দেয়। সে সময় কাজের জন্য খাবার কর্মসূচীর বিনিময়ে এই সংস্থা ৩০ হাজার ম্যান আওয়ার কাজ করিয়ে নেন।

এখন ওয়ার্ল্ড ভিশনের অধীনে ১৬ টি হোস্টেল সহ ১০০ টি স্কুলে চাইল্ড কেয়ার প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর সুবিধা লাভ করছে সাত হাজার শিশু। ঢাকার গ্রীনরোডে ওয়ার্ল্ড ভিশন সরাসরি একটি ‘অন্ধ সদন’ পরিচালনা করছে। ধানমন্ডির একুশ নাম্বার রোডের শিশু হাসপাতালটিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের পয়সায় চলে। ডেমরা পুনর্বাসন ক্যাম্পে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পয়সায় চলে৷ ডেমরা পুনর্বাসন ক্যাম্পে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সর্ববৃহৎ প্রজেক্টে কয়েক হাজার গৃহ এখন নির্মিত হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক বছরের নগদ বাজেট হচ্ছে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ মিশন

মিশনারী সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত এই ত্রাণ সংগঠন উপকূলীয় ঘুর্ণিঝড়ের পর তাদের ত্রাণ কার্যক্রম তৎপরতা শুরু করে। ১৯৭৩ সালের পাবলিক হেলথ ইন্জিনিয়ারিং এর সাথে নোয়াখালীতে তারা টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু করেন। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সংস্থা ঐ এলাকায় ২০০ গৃহ নির্মাণে সাহায্য করে। স্বাধীনতার পর নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা এবং ফরিদপুরে দুই হাজার বাড়ী নির্মাণ করে প্রাথমিক ভাবে। এর পর পরই নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং ফরিদপুর জেলায় কৃষি ক্ষেত্রে কাজ শুরু করে। ১৯৭৪ এর বন্যার পর ঢাকার টঙ্গী, নোয়াখালীর ফেনী, কুমিল্লা এবং ফরিদপুরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রজেক্ট পরিচালনা করে৷ ১৯৭৫ ‘এ কুমিল্লায় ১০০ টি গৃহ নির্মিত হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মিশন ব্যয় করেছে ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২২ জন পূর্ণবয়স্ক কৃষি সংস্থার কাজ করছেন। এর মধ্যে দুই জন বিদেশী।

সোয়ালজ ইন ডেনমার্ক

প্রায় চার বছর আগে সোয়ালজ ইন ডেনমার্ক বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা শুরু করে। সংস্থার প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বগুড়া জেলার সদরে এবং শেরপুরে দুটি প্রজেক্ট স্থাপনের স্থান হিসাবে মনোনীত করেন। এরপরে ভলেন্টিয়াররা আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আসবার আগে ডেনমার্কে এরা তিন মাসের প্রস্তুতি কোর্স এবং বাংলাদেশে এসে আরো তিন মাসের বাংলা শিক্ষা কোর্স এ যোগ দেন। এর মাঝে কিছু দিন ভারতে সোয়ালজের অনুরূপ প্রজেক্টে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও গ্রহন করেন এরা। সেচ্ছাসেবিকা প্রেথে লাউরিত সেনের পরিচালনায় বগুড়ায় সমাজ কল্যাণ বিভাগের কেয়ার এন্ড প্রটেকশন সেন্টারে এদের প্রথম প্রজেক্ট আরম্ভ হয় ১৯৭৩ সনের জুলাই মাসে। এ সময় এই সেন্টারে ৬৭ জন বিধবা এবং ২১০ জন বাচ্চা ছিল। যুদ্ধে দুস্থ্য এ সব মহিলা ও শিশুদের সেন্টারে থাকবার সর্বমোট মেয়াদ ছিল দু বছর। প্রজেক্ট শুরু হবার সময়ই এদের থাকবার এক বছর অতিক্রান্ত ছিল। এই সব দুস্থ মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রথম পাটের হস্তশিল্পের কাজ শেখানো শুরু করা হয়। এর পরে তাঁত বুনবারও ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী দু মাসের মধ্যে সেন্টারে অবস্থানরত ৩ থেকে ৬ বছরের মোট ৭৫ জন বাচ্চার জন্য ৪ জন শিক্ষকের একটি নার্সারী স্কুল খোলা হয়। আগে এরা কাজের সময় আমাদের বিরক্ত করতো। বয়স্কা মহিলাদেরও শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা হয়। এ শিক্ষার মধ্যে সাধারণ শিক্ষা ছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেন্টারে কর্মরত প্রতিটি মহিলার আয় করা অর্থ তাদের ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক তহবিলে জমা করা হয়। এ সব একাউন্টে মহিলাদের নামে যে পরিমাণ অর্থ জমা হবে, ঠিক সম পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ সোয়ালজ তাদের একাউন্টে জমা দেয়। গত শীতে তাদের আত্মীয় এবং সোয়ালো মিলে এ সমস্ত দুস্থনারীদের জন্য ২৮ টি নতুন বাড়ী নির্মাণ করে এবং ৩১ টি বাড়ী মেরামত করে। বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আসা এ সব দুস্থ মহিলাদের প্রথম আট জন গত বছরের এপ্রিলে সেন্টার দেখে যান। অবশ্যম্ভাবী গত ডিসেম্বর মাসে সেন্টার থানা মহিলার সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ তে। ঘরে ফিরে যাওয়া মহিলাদের জন্য সোয়ালজ “ফ্লুইং আপ প্রোগ্রাম ” তৈরী করেছে। সেন্টার থেকে ফিরে যাওয়া মহিলারা তাদের নতুন বাগীতে কিচেন গার্ডেন করে এবং পাটের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখনো সোয়ালজ সোস্যাল ওয়ার্কার এবং হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্টরা তাদের দেখ শোনা করে আসছে। ফ্লুইং আপ প্রোগ্রাম আগামী দুই বছর চলা উচিৎ বলে সোয়ালজ মনে করে। এর মধ্যে মহিলারা গ্রাম সমবায় গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। সেন্টারে উৎপাদিত পাটের পাঁটের হস্ত শিল্পের আধাআধি রপ্তনী এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। তাঁতের কাপড় সম্পূর্ণটায় স্থানীয় ভাবে বিক্রি করা হয়। হেল্প টু সেলফ হেলপ সোয়ালজের এই প্রোগ্রাম মূল লক্ষ্য।

সোয়ালজের অপর প্রজেক্ট বগুড়া শহর থেকে বারো মাইল দূরে শেরপুরে। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে এদের এই প্রজেক্টের ক্লিনিক চালু হয়। এদের মেডিক্যাল প্রজেক্টে প্রতিষেধকের উপরে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। এদের একটা আন্ডারফাইভ ক্লিনিক আছে। ১৫ টি বিভিন্ন গ্রামে এরা ঘুরে ঘুরে পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, কিচেন গার্ডেন, এবং ম্যানিটেশনের কাজ করেন। ছয় মাসের ট্রেনিং প্রাপ্ত ১৪ জন হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট এখন এই প্রজেক্টে কাজ করছেন। এখানে ১ জন কো- অর্ডিনেটর, ১ জন সহকারী ডাক্তার এবং ৩ জন নার্স হিসাবে ৫ জন বিদেশী কাজ করছেন। একজন নরওয়ের ছাড়া আর সবাই ড্যানিস। ১৯৭৫ সালে সোয়ালজের দুটো প্রজেক্টের সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৩ শ হাজার টাকা। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য প্রজেক্টে ৩০০ হাজার টাকা এবং পুনর্বাসন প্রজেক্টে ২০০ হাজার টাকা ব্যয় করবার পরিকল্পনা আছে।

আই ভি এস

ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার সার্ভিস বাংলাদেশে কৃষি, গ্রাম্য স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কাজ করছে। শুরুতে এই সংস্থা কুমিল্লায় একটা প্রজেক্ট হাতে নেয়। এখন আই ভি এসের প্রজেক্ট আছে সিলেট এবং দিনাজপুরে। তা ছাড়াও ঢাকার বাইরে কয়েকটি প্রাইভেট এবং সরকারী সংস্থায় আই ভি এস সেচ্ছাসেবকও সরবরাহ করে থাকে। সিলেট এবং দিনাজপুরের প্রজেক্টে আই ভি এস ধান হয় না এমন জমিতে এবং খরার সময় উৎপাদিত হয় এমন শস্য যেমন গম, সরগম, সয়াবিন, শীতের সবজি চাষের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রজেক্টের আওতায় আছে সিলেটের সদর মহকুমা এবং দিনাজপুরের কোতোয়ালী থানা। সিলেটে প্রায় ১ হাজার কৃষক এই প্রজেক্টের আওতায় উৎপাদনে ব্যপৃত আছে। গ্রাম্য স্বাস্থ্য রক্ষা এবং পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে খুব সাম্প্রতিক কালে আই ভি এস স্বাস্থ্য প্রকল্পও শুরু হয়েছে।

১৯৭৩ সালের জানুয়ারীতে আই ভি এস বাংলাদেশে প্রথম কাজ শুরু করে। এখন ১৫ জন বিদেশী ভলেন্টিয়ার, ১৬ জন স্থানীয় কর্মচারী আই ভি এসের জন্য কাজ করছেন। প্রশাসনিক খরচা থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে আই ভি এস বাংলাদেশে প্রতি বছর ব্যয় করে সাত লক্ষ টাকা।

সুইডিস ফ্রি চার্চ এইড

১৯৭৪ সালে সুইডিস ফ্রি চার্চ এইড বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা শুরু করে। সংস্থার প্রথম প্রজেক্ট স্কুলগৃহ নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় ময়মনসিংহ জেলায় ৫ টি জুনিয়র হাই স্কুল, ৩০ টি প্রাথমিক স্কুল এবং ১ টি পি টি আই এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ‘৭৫-৭৭ সালে অনুরূপ আরো ৪০ টি স্কুল ময়মনসিংহ জেলায় নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। খৃস্টিয়ান হেলথ ফেয়ার প্রজেক্টের সাতটি হাসপাতালে এবং আটটি ডিসপেনসারিতে ‘সিডার’ অনুদান আসছে এই ফ্রি চার্চ এইডের মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই ৭ মিলিয়ন সুইডিশ ব্রাউন এখানে ব্যয় হয়েছে। এই প্রজেক্টে খরচ হবে সর্বমোট ১১ মিলিয়ন ক্রাউনস অবশিষ্ট ৩৫% ব্যয় ফ্রি চার্চ এইড বহন করছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অতিরিক্ত আরো ৪০ টি শয্যা সংযোজনে এই সংস্থা সাহায্য প্রদান করেছে। এই প্রজেক্টের জন্য সিডা দিয়েছে ৩৪০.০০০ সুইডিস ক্রোনা। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৯০.০০০ ক্রোনা। বাকী ৫০,০০০ হাজার ক্রোনা এই সংস্থা নিজে বহন করবে।

১৯৭৪ এর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেয়া এই সংস্থার জরুরী সহায়তার মধ্যে আছে – বিতরণকৃত ৫০০.০০০ ক্রোনা মূল্যের গম। রাস্তা ও ব্রীজ মেরামত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে ৯১,৫০০ সুইডিস ক্রোনা ব্যয়ে বিধবা এবং শিশুদের জন্য ১০০ টি গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ১,২১২,৫৫৫ সুইডিস ক্রোনা। বাকী সম্পূর্ণটা আনে সুইডিস ফ্রি চার্চ এইড থেকে সরাসরি। নির্মিত স্কুল গুলোর সাথে ময়মনসিংহের ৬৪ পরিবার সংশ্লিষ্ট মাছ ধরা সমবায় স্থাপন করেছে এই এইড। ৮ টি বড় নৌকা এবং ৮ টি বড় জাল তারা তৈরী করেছে। এ জন্য সুতা ব্যয় হয় ৭০০০ টাকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ট্রেনিং কোর্সের সাথে এই সংস্থা জড়িত আছে।

ব্রাদার্স টু অল ম্যান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাম শরনার্থী শিবিরে বাঙালী দের জন্য তারা তৎপরতা প্রথম শুরু করে। স্বাধীনতার পর পি জি হাসপাতালের ঢাকা ব্লাড ব্যাংক স্থাপনে সাহায্য করে। ১৯৭৩ সাল থেকে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে রুরাল মেডিক্যাল হসপিটাল স্থাপন এবং পরিচালনায় ব্যপৃত হয়। ‘৭৪ সাল থেকে সারিয়াকান্দি মেডিক্যাল প্রজেক্ট নির্মাণ এবং একই থানায় বিভিন্ন গ্রাম্য ডিসপেনসারী পরিচালনা শুরু করে। ১৯৭৩ সালের শেষ দিক থেকে নারবী ইউনিয়নে কমপ্রিহেনসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট শুরু করে। এই প্রজেক্টের আওতায় আছে হর্টিকালচার, কৃষি, জলসেচ, শিক্ষা, মৎস, পোলট্রি, গবাদি, মহিলাদের হস্তশিল্প, প্রতিষেধক এবং নিরাময়ক মেডিক্যাল প্রোগ্রামস।

বামের সারিয়াকান্দি হাসপাতাল বাংলাদেশ সরকারের থানা হেলপ সেন্টার প্রতিষ্ঠা পরিকল্পনার একটি বিশেষ অংশ। ৭০ শয্যার এই হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর, ল্যাব, টিবি বিভাগ আছে। তা ছাড়া ৪ টি ইউনিয়নে হাসপাতালের আউটডোর সাব-সেন্টার আছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী দেখা হয়। প্রতিষেধক এবং পরিবার পরিকল্পনার উপরে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় সেখানে। বামের সেচ্ছাসেবকরা সারিয়াকান্দি এবং নাববী পুরোদস্তুর গ্রামের মানুষের মতো জীবনযাত্রা নির্বাহ করে থাকে।

বাম হাসপাতালের জন্য প্রতি মাসে ব্যয় করে ৪০ হাজার টাকা এবং নারী প্রজেক্টে ৩০ হাজার টাকা।

কুসো

স্বনির্ভর বাংলাদেশ এর ক্ষেত্রে বেসরকারী কার্যক্রমগুলোকে কুসো অর্থাৎ কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিসেস ওভারসিজ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের শেষের দিকে কুসো প্রথম বাংলাদেশে আসে। প্রথম দিকে কুসো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কানাডিয়ান সেচ্ছাসেবক সরবরাহ করছে। এই মুহূর্তে এখানে দুজন কানাডিয়ান সেচ্ছাসেবক আছেন। এদের একজন আগামী এক মাসের মধ্যে এবং অন্য জন দু মাস পরে কানাডা ফিরে যাবেন। কুসো’র সেচ্ছাসেবকরা সাধারণত স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাত নিয়ে কাজ করছেন। কুমিল্লার কোতোয়ালি সমবায় সমিতিতে কুসো’র সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন৷ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কুসোর একজন ফিজিও থেরাপিস্ট সেচ্ছ্সেবিকা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এ মাসে কানাডা ফিরে যাবেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৮ জন কানাডিয়ান সেচ্ছাসেবক কুসোর মাধ্যমে এ দেশে আসেন। এই সংগঠন এখন আর কানাডা থেকে নতুন সেচ্ছাসেবক আনবে না বলে স্থির করেছে। তারা এখন থেকে উন্নয়ন ক্ষেত্রে কর্মরত স্থানীয় সংস্থাগুলোকে সাহায্য করবে। তাদের মতে, দেশের উন্নয়নে দেশীয়রা ভালো কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া তারা এদের বেবীর সমস্যাকে কানাডিয়ান আমদানী করে বাড়িয়ে তুলতে ইচ্ছুক নন। কুসো সম্প্রতি কিছু বাঙালীকে কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু পালন, ড্রাইল্যান্ড ফার্ম। মৃত্তিকা পরীক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ওরা ট্রেনিং নিয়ে গ্রামে ফিরে গিয়ে প্রজেক্ট শুরু করবে। কুসো এদের সামান্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে। পরে এস প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজন হলে কুসোর খরচে কিছু জানিয়ে বিশেষজ্ঞ যেমন ডাক্তার, কৃষিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার সরবরাহ করা হবে।

ইউসেপ

আন্ডার প্রিভিলাইজড চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (ইউসেপ) ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে ঢাকার রাস্তার ছেলেদের জন্য প্রথম স্কুল স্থাপন করে। ইউসেপের প্রজেক্টে পাঁচটি স্কুলে এখন প্রায় ৬০০ ছেলে পড়াশোনা করছে। এরা সবাই শিশু শ্রমিক। সব ক’টি স্কুলই নগরীর মধ্যে কিংবা আশেপাশে। ইউসেপের সমাজ কর্মীদের সহায়তা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব সোসাল অয়েল এবং রিসার্চের ছাত্ররা। তারা ইউসেপের প্রজেক্টগুলোকে ফিল্ড ট্রেনিং এ ব্যবহার করে। শিশু শ্রমিকরা সারাদিনে মাত্র দুই ঘন্টা এ স্কুলে থাকে। অন্য সময় তারা তাদের পেশাগত কাজ করে। মাত্র ৫০ পয়সায় ইউসেপের ছেলেরা ইউসেপ থেকে তাদের খাবার কিনতে পারে। দেড় টাকার বিনিময়ে ৯৩ জন ছেলে ইউসেপের থাকা খাওয়ার সুবিধা ভোগ করে। ৩০ পয়সা দিয়ে ছেলেরা৷ ইউসেপের ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট করতে পারে।

রংপুর – দিনাজপুর রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস

ভারতের কুচবিহারের শরনার্থী শিবিরে লুথারেন চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ত্রাণ তৎপরতার সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পর এই সব শরনার্থীদের পুনর্বাসিত করবার জন্য আর, ডি, আর, এম এই নামে লুথারেন চার্চ বাংলাদেশে তাদের তৎপরতা শুরু করে। লুথারেনের দুনিয়া চেরা তৎপরতার মধ্যে বাংলাদেশের টাই সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট। এর বার্ষিক বাজেট হচ্ছে ৩ মিলিয়ন ডলার। সংস্থার অতীত তৎপরতার মধ্যে আছে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ এবং মেরামত, ব্রীজ, রাস্তা মেরামত, স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। এখন ত্রাণ তৎপরতা থেকে আর ডি আর এম দ্রুত উন্নয়ন তৎপরতায় বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে সুইচ ওভার করছে। বর্তমান প্রজেক্ট গুলোর মধ্যে আছে কৃষি, নির্মাণ, মেডিক্যাল, ক্ষুদ্র শিল্প, প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রস্তুতি, উন্নয়ন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং জীবিকা প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়। রেশম চাষের উন্নয়নের জন্য তারা চেষ্টা করছে। মাছ ধরার জাল বুনবার কারখানা বসিয়েছে চিলমারী আর কুড়িগ্রামে। এ ছাড়া আছে মেয়েদের হাতের কাজের কেন্দ্র। সংস্থা ৪০০ ডলার গরু কিনতে দিয়েছে সরকারকে। তা ছাড়া চাষের জন্য দিয়েছে ১৬ টি ট্রাক্টরের একটি বহর। কৃষি ক্ষেত্রে যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে তাতে পাঁচ বছরে খরচ হবে ৩৫ মিলিয়ন টাকা। সংস্থা একটি কৃষি ওয়ার্কশপও পরিচালনা করে। সরকারকে যে ৫০ টি ওকেশনাল স্কুল স্থাপন করবেন তার একটি নির্মাণের দায়িত্ব এই সংগঠন নিয়েছে৷ ১৯৭৭ সালে এটিকে সরকারের হাতে তুলে দেয়া হবে মেশিনপত্র, আসবাব পত্র সহ। মালদা মুসলমানদের ঠাকুরগাঁও পুনর্বাসন করেছে আর ডি আর এম। থানা হেলথ কমপ্লেক্স হিসাবে লালমনিরহাটে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছে এই সংস্থা। তাদের স্থাপিত বেশ কিছু ক্লিনিক ইতিমধ্যে সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম এ সদর মহকুমার কিছু অংশ এবং দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ এবং সদর থানা এর আওতার মধ্যে। সব মিলিয়ে এই এলাকার ৮ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে ৫ মিলিয়ন মানুষ এই সব প্রজেক্টের সুবিধা ভোগ করেন। শুধু মাত্র কৃষি ক্ষেত্রে জড়িত আছেন ৩ মিলিয়ন মানুষ।

***

দেশী সাহায্য সংস্থা

বিদেশী ত্রাণ ও সাহায্য সংস্থার পাশাপাশি কয়েকটি দেশী ত্রাণ ও সাহায্য সংস্থাও নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ, ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ, ক্রিশ্চান অরগানাইজেশান ফর রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন, বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি, বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিসেস কোর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এগুলো দেশী প্রতিষ্ঠান হলেও এদের অর্থ প্রাপ্তি ঘটে বিদেশী বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে। এখানে কয়েকটি দেশী সংস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হলো।

ক্রিশ্চান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তার জন্য ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস (জেনেভা) বাংলাদেশে ইকুমেনিক্যাল রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস গঠন করেন। সেই সময় ১৩০ লক্ষ মার্কিন ডলারের একটি কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। ৯৬ টি প্রজেক্ট ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ৭ টি প্রজেক্টের কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ হেলথ প্রজেক্ট, মহেশখালী মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প, মৎস্য সমবায় মার্কেটিং উন্নয়ন প্রকল্প, তাঁত প্রকল্প, জোকারপাড়া (রাজশাহী) কৃষি প্রকল্প, হাউজিং প্রকল্প এবং সি সি ডি বি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প।

সংগঠনের সব প্রকল্পের জন্য অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস। পশ্চিম জার্মানীর একটি চার্চ সংস্থাও আর্থিক সাহায্যে দিচ্ছেন। সি সি ডি বি বছরে গড়ে ২ কোটি টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রায়) খরচ করে থাকে।

বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি

১৯৭১ সালের মাঝামাঝি লন্ডনে গঠিত হয়েছিল ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে একটি সাহায্য সংস্থা। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংস্থা নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার পর নাম হয় বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি। এর সব চেয়ে বড় প্রকল্প হল সিলেটের শলেনা প্রকল্প। এখানে সংস্থা ১৯৭১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ী ঘর পুননির্মাণ (৩৯০০ ইউনিট) করেছে, ১৬৯ টি মাছ ধরা নৌকা তৈরী করেছে এবং জেলে সমবায়কে ৪৫০০ পাউন্ড নাইলন টোয়াইন দিয়েছে। এছাড়া ৪ টি মেডিক্যাল সেন্টারও এর অন্তর্ভুক্ত।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। জামালপুরে নারী উন্নয়ন কর্মসূচীও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি প্রকল্পও এর রয়েছে।

আরবান রিসেটলমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্প সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছে৷ সংস্থা তাদের সব প্রকল্পের প্রথমে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নেন। অনুমোদিত হওয়ার পর ই কাজ শুরু হয়।

সংস্থার সমস্ত খরচ বহন করে অক্সফাম (বৃটেন), অক্সফাম (কানাডা)। ইউনিসেফও বিভিন্ন সময় সাহায্য করে থাকে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় সংস্থার একটি প্রকল্পের জন্য ইউনিসেফ ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য দিয়েছিল৷ সংস্থা বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকে।

বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং এসোসিয়েশন

১৯৫৩ সালে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে এই সমিতি গঠন করা হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ডাঃ হুমায়রা সাইদ, ডাঃ রিফাতউল্লাহ, ডাঃ জোহরা বেগম, কাজী এ, এম, কবরী, ডাঃ মোঃ ইব্রাহীম, মিসেস হুমায়ারা ওবায়দুল্লাহ, ডাঃ জসিমউদদীন ও ডাঃ মোঃ ফামিমুদ্দীন। সমিতি বর্তমানে (বিনামূল্যে) বন্ধাকরণের অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা করে, বিভিন্ন জন্মনিরোধক দ্রব্য বিতরণ করে (নামমাত্র মূল্যে) এবং পরিবার পরিকল্পনার পক্ষে জনমত গড়ে তোলে লিফলেট, বুকলেট এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সম্প্রতি পাপেট শোকেও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সমিতির সব খরচ বহন করে লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ল্যান্ড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যও সমিতি পেয়ে থাকে। ১৯৭৫ সালে সমিতি ১৯ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা পেয়েছে এবং খরচ করেছে ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা৷

বাংলাদেশ ভলেন্টিয়ার সার্ভিসেস কোর

১৯৭১ সালের মাঝামাঝি এই সংস্থা গঠিত হয়। প্রথমে সাহায্য সংগঠন হিসেবেই কাজ করেছে। তখন ‘ওয়ার এন্ড ওয়ান্ট’ সব খরচ বহন করতো৷ ১৯৭২ সালে কৃষি প্রকল্প, বাড়ী নির্মাণ, বয়স্ক শিক্ষা প্রভৃতি কাজ করেছে সংস্থা। বর্তমানে সেচ্ছাসেবক সংস্থা এবং তাদের বিভিন্ন সেবামূলক কাজে সেচ্ছাসেবক পাঠানোর কাজ করছে সংস্থা। সংস্থার সঙ্গে এখন মূলত যোগাযোগ হচ্ছে কনসার্নের সঙ্গে। কনসার্নের বিভিন্ন প্রকল্পে সংস্থা সেচ্ছাসেবী প্রেরণ করে থাকে। মূলত সেবামূলক চেতনা গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই সেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেন। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় কিংবা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রেজাল্ট বের হওয়ার আগে পর্যন্ত সময়কে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহার করছেন। সংস্থা ইতিমধ্যে ৪৩ জন সেচ্ছাসেবক ‘কনসার্নের’ বিভিন্ন প্রজেক্টে প্রেরণ করেছে। বর্তমানে ‘কনসার্ন’ এবং ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’ এর সাহায্যে এটি চলছে।

ক্রিশ্চান অরগানাইজেশান ফর রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন (কোর)

১৯৭০ সালে সাইক্লোনের পর পরই কোর গঠিত হয়। প্রথমে মূলত রিলিফ সংগঠন হিসেবে চট্টগ্রামে এর জন্ম। ১৯৭১ সালে এটি জাতীয় সংগঠনে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বরের পর বেশ কিছু রিলিফ কাজ করেছেন কোর। এর মধ্যে জ্বালিয়ে দেয়া ঘর-বাড়ী নির্মাণ, জরুরী সাহায্য যেমন কাপড়, খাদ্য, চিকিৎসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু রিলিফের কোন সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে না তাই কোর বিভিন্ন উন্নয়ন মুখী কর্মসূচী গ্রহন করে। বর্তমানে এদের অনেক কর্মসূচী পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে কার্যকর প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি প্রকল্প, টিউবওয়েল প্রকল্প, রিসার্চ প্রোগ্রাম, শীতকালীন সবজী প্রকল্প, খাদ্য মজুদ প্রকল্প, সমবায় চাল ব্যাংক প্রকল্প, কৃষি ওয়ার্কসপ, ডেমনস্ট্রেশন ফার্মিং, দুটি মৎস্য প্রকল্প (কালিদহ – চট্টগ্রাম এবং বানিয়ারচক – খুলনা), পাট হস্তশিল্প প্রকল্প, জলছত্র (টাঙ্গাইল) প্যারামেডিক্যাল প্রকল্প ইত্যাদি।

সংগঠনের অর্থ প্রাপ্তি ঘটে ক্যারিটাস ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠন ক্যারিটাস ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে কোবকে অর্থ দিয়ে থাকেন।

১৯৭৪ – ৭৫ বছরে কোর রিলিফ ও উন্নয়নমূলক কাজে মোট ৬ শত ২৯ ডলার ব্যয় করেছে।

***

সংস্থার অধিকর্তা পরিচিতি

বি ই ফারনান্ডো

বি, ই, ফারনান্ডো। ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ভিশন। শ্রীলংকার অধিবাসী। বয়স ৫৬ বছর। বিবাহিত। ৫ সন্তানের জনক। প্রথম পুত্রের বয়স ৩০ এবং সর্ব কনিষ্ঠ কন্যার বয়স আঠারো। ১৯৭৪ এর সেপ্টেম্বরে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। পেশায় তিনি শ্রীলঙ্কার কমিশনার অব ইনকামট্যাক্স ছিলেন। চাকরির অবসরে তখন থেকেই সমাজ সেবা করতেন। ৫৫ বৎসর বয়সে রিটায়ার করবার পরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অফার গ্রহন করে বাংলাদেশে এসেছেন। সব মিলিয়ে দুই বৎসরের মতো এ দেশে থাকবেন।

এল এ্যালান চেইলী

এল, এ্যালান চেইলী, টেরে ডেস হোমস (ডেনমার্ক) এর বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্ন্টেটিভ। ইউসেপ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তার ভাষায়ঃ ইউসেপ আমার আবিষ্কার। এটিই পৃথিবীর একমাত্র একজন মানুষ পরিচালিত সাহায্য সংস্থা। ১৯৭২ এ স্বাধীনতার পর প্রথম তিনি বাংলাদেশে আসেন। থাকবার কথা ছিল এক বৎসর কিন্তু এখনো আছেন। বাংলাদেশে আসবার আগে আমেরিকান একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীতে কাজ করতেন। বিদেশে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন।

কেনইচি ইতো

কেনইচি ইতো। জাপান ওভারসিজ কর্পোরেশন ভলেন্টিয়ার্স এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ। বয়স ৩৭ বৎসর। বিবাহিতা। দুই সন্তানের জনক। প্রথম পুত্রের আড়াই বৎসর, কনিষ্ঠা কন্যার বয়স এক বৎসর। ১৯৬৫ সাল থেকে এই সংস্থায় আছেন। ইতিপূর্বে একটি তেল কোম্পানীতে কাজ করতেন। বিশ্বের ৩০ টি দেশে গেছেন। প্রেসিডেন্ট নাসেরের প্রতি তার বিশেষ এক আকর্ষণ ছিল। এই আকর্ষণে তিনি ১৩ টি আরব দেশে ঘুরে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট নাসেরের সাথে দেখা করেছেন। মুসলিম কালচারের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ আছে। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন এক কৃষি সার্ভিসের সাথে।

কিথ স্যান্ডারস

কিথ স্যান্ডারস৷ সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন এবং কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর। বয়স ৩০ অবিবাহিত। ছয় মাস হলো বাংলাদেশে আছেন। এখানে আসবার আগে লাওসে ছিলেন। সেভ দি চিলড্রেন ফেডারেশন এর সঙ্গে আছেন সাত মাস হলো। এর আগে কাজ করেছেন ইউ এস এইডে। বাংলাদেশে আরো ৩ বৎসর থাকবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

জেমস গিলগেরিচ

জেমস গিলগেরিচ। ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার সার্ভিস এর ডাইরেক্টর। ডাক নাম জিম। বয়স ৩০. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় জন্ম। ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম বাংলাদেশে আসেন৷ এ বছরের জুলাই মাসে তার কনট্রাক্ট শেষ হবার কথা থাকলেও আরো কিছু দিন তিনি এ দেশে থাকবেন। এ দেশে আসবার আগে দেশে গ্রাজুয়েট স্কুলে ইকোনোমিক্সে এম এ পড়ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে আবার উচ্চ শিক্ষা নেবেন৷ অতঃপর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কস এ যোগ দেবেন৷ জিম অবিবাহিত। অবসরে ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবের বাস্কেট বল টীমে খেলে থাকেন।

ডালাস এম ডাইপন্ড

ডালাস এম ডাইপন্ড। ডিরেক্টর, কেয়ার ইন বাংলাদেশ। ৪০ বৎসর বয়স, বিবাহিত। এক পুত্রের জনক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। ১৯৬১ সাল থেকে কেয়ারের সঙ্গে আছেন৷ তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিষয় অর্থনীতি। দেড় বৎসর হলো বাংলাদেশে এসেছেন। আরো দেড় বৎসর থাকবেন।

স্যান পিয়ার কেবরন

স্যান পিয়ার কেবরন। ডাইরেক্টর, ব্রাদারস টু অল ম্যান। বয়স ২৮। অবিবাহিত। ফ্রান্সের অধিবাসী। ১৯৭৩ এর মে মাস থেকে এই সংস্থার সঙ্গে আছেন। সেনাবাহিনীতে ছিলেন, শিক্ষকতা করেছেন। আইন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির অধিকারী৷ বাংলাদেশে আছেন আর দুই তিন মাস। তার পর ছুটিতে যাবেন৷ ছুটি শেষে আবার এই সংগঠনের সাথে দুই তিন বৎসর আফ্রিকায় কিংবা অন্য কোন দেশে কাজ করবেন। উন্নয়ন কাজে স্থায়ীভাবে জড়িত থাকবার ইচ্ছে আছে।

পল ই মায়ারস

মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির বাংলাদেশ ডাইরেক্টর। বয়স ৩৬ বৎসর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। বিবাহিত। দুই পুত্রের জনক। একজনের বয়স পাঁচ বৎসর, অন্যটির দুই বৎসর৷ গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে আছেন বাংলাদেশে। এর আগে এম, সি, সির সদর দফতরে কাজ করেছেন, তারও আগে সুইজারল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক স্টাডি প্রোগ্রামস এ কাজ করেছেন। এম সি সি তে কাজ করেছেন আট বৎসর ধরে। পল এর পড়াশোনার বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি৷ আড়াই বৎসর তার বাংলাদেশে থাকবার কথা৷

পল এর বক্তব্যঃ বাংলাদেশে দারুণ ভালো লাগে। এ দেশের মানুষের বন্ধুত্ব, সহযোগিতা মনে রাখার মতো। এ দেশে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। আমার বিশ্বাস একদিন এ দেশের মানুষ এই সম্পদ ব্যবহারে সক্ষম হবেন। তাদেরকে শুধু জানিয়ে দিতে হবে এ সম্পদ ব্যবহারের পন্থা৷ তাদের দিতে হবে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা।

মোসলেম এ খান

মোসলেম এ খান। টেরে ডেস হোমস (নেদারল্যান্ডের) বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি। ইনিই একমাত্র বাঙালী যিনি এ দেশে কর্মরত একটি বিদেশী সংস্থার স্থানীয় প্রধান। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এ সংস্থার সঙ্গে আছেন। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে তিনি বর্তমান পদ অলংকরণ করেন। ইতিপূর্বে প্রোগ্রাম অফিসার ছিলেন। করাচীতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনে চাকরী করেছেন। রাজশাহী এবং করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সাবজেক্ট ইকনোমিক্স। তিন সন্তানের পিতা। ১৯২৭ সালে জন্ম।

ওরলা জ্যাকবসেন

সোয়ালজ ইন ডেনমার্ক, বাংলাদেশের কো অর্ডিনেটর ছিলেন ওরলা জ্যাকবসেন। সম্প্রতি সংস্থার ডেনমার্কের কার্যালয়ে দায়িত্ব নিয়ে কোপেনহেগেনে ফিরে গেছেন। পেশায় ওরলা সমাজকর্মী। বিবাহিত। বিয়ে করেছেন একজন বাঙালী তরুণীকে। নাম প্রতিমা দাস। প্রতিমা পেশায় নার্স। প্রতিমা নিজের পায়ের পোলিওর চিকিৎসার জন্য আরো কিছু বাঙালী পঙ্গু শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ডেনমার্ক যান। ওরলা হাসপাতালে এসব শিশুর দেখাশোনা করলেন। সাথে প্রেমে পড়লেন প্রতিমার। বিয়ে করে তারা দুজনেই সোয়ালজ ইন ডেনমার্ক এর সেচ্ছাসেবক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। এখনো তাদের কোন সন্তান নেই।

কোল পি ডজ

অক্সফামের বাংলাদেশ ডাইরেক্টর। ৩০ বৎসর বয়স। ১৮ মাস হলো বাংলাদেশে আছেন৷ দক্ষিণ ইন্ডিয়ায় ৩ বৎসর শান্তিবাহিনীর সঙ্গে, এক বৎসর গেস্ট গভর্নমেন্টের সঙ্গে, দুই বৎসর নাইজেরিয়ায় কাজ করেছেন। এক বছর অক্সফামের ডিরেক্টর ছিলেন আমেরিকার। জন্ম আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। বিবাহিত। তিনটি বাচ্চা আছে। তিন জনই পালিত। দুই জনের বয়স তিন বৎসর। একজনের বয়স এক বৎসর। এদের একজন বাঙালী, একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান। জজ এ্যানথ্রোলজিতে মাস্টার ডিগ্রীর অধিকারী।

রোলান্ড ইনেরাপ্ট

রোলান্ড ইনেরাপ্ট। সুইডিস ফ্রি চার্চ এইডের রিজিওনাল ডাইরেক্টর। ৪৬ বৎসর বয়স। বিবাহিত। স্ত্রী কাজ করেন খৃষ্টিয়ান হেলথ কেয়ার প্রজেক্টে। এক পুত্র ও এক কন্যার জনক। ছয় মাস হল বাংলাদেশে আছেন। এ বৎসরের সেপ্টেম্বর – অক্টোবর পর্যন্ত থাকবেন এখানে। বাংলাদেশে আসবার আগে ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস অর্গানাইজেশনে কাজ করতেন। তার আগে আফ্রিকার টেকনিক্যাল কলেজে টেকনিক্যাল শিক্ষক ছিলেন।

থর্ড ডল

আংকেল এরিক্স চিলড্রেন হেলপ এর প্রজেক্ট ডাইরেক্টর। ২৮ বৎসর বয়স। বিবাহিত। দুই সন্তানের জনক। ৩ বৎসর ধরে বাংলাদেশে আছেন। থাকবেন আরো এক বৎসর। সুইডিস ফ্রি মিশনে কাজ করতেন। সংস্থার ডেপুটেশনে বর্তমানে আংকেল এরিক্স চিলড্রেন হেলপ এ কাজ করছেন। সুইডেনের অধিবাসী।

জান লিলজা

জান লিলজা। রাড্ডা বারনেনের চীফ অব প্রজেক্ট। বয়স ৩৯ বৎসর। তিন বৎসরের এক কন্যার পিতা। বিয়ে করেছেন থাই মেয়েকে৷ জাতিসংঘের সাথে মিশনে ১৯৬০ সালে শান্তি রক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন কঙ্গো, সাইপ্রাস আর লাইবেরিয়ার মাইন কোম্পানীতে। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সঙ্গে গেছেন বায়ফ্রার যুদ্ধে। ১৯৭১ সালে ইউনিসেফের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম আসেন। ১৯৭৩ এর জুলাই মাস থেকে রাড্ডা বারনেনের সঙ্গে কাজ করছেন। এ বৎসরের জুলাই মাস পর্যন্ত অথবা আরো এক বৎসর থাকবেন এখানে।

উইনবার টি থমাস

এসোসিয়েশন অফ ভলেন্টারী এজেন্সীস ইন বাংলাদেশ এর ডাইরেক্টর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরফানসাসে জন্ম ১৯০৬ সালে। জাপানের কীয়োটার সেসিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ফুজেন ইয়ামানকা ছিলেন তার স্ত্রী৷ বর্তমানে লে কাস্তরিতা। দুই পুত্র। বড়টি কেনেথ সীগের (৩০) নিউইয়র্কের পিপলস থিয়েটারের ডাইরেক্টর। ছোটটি রবার্ট ক্যাম্পবেল (২৬) চিত্রকর। ডঃ থমাসের ডিগ্রী আছে রাজনীতি, আইন, শিক্ষা এবং দর্শনের উপর। তার থিসিসের বিষয় ছিল দূর প্রাচ্যের ইতিহাস। কাজ করছেন ১৯৩৩ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত জাপানের কিয়োটোতে। বস্তীতে ছাত্রদের সাথে সমাজকর্মের জন্য সেখানে ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেন। ১৯৪৭ থেকে ৪৯ পর্যন্ত কাজ করেন সাংহাই এ৷ সেখানে কাজ করেন তিনি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির পক্ষে। জাকার্তায় খৃষ্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৭২ সালের প্রথম ছয় মাস ভিয়েতনামে ছিলেন। তারপর ঢাকায় আসেন তিনি ১৯৭২ এর আগস্ট মাসে৷ এখানে তিনি ১৯৭৫ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার সার্ভিসে (আই ভি এস) র প্রতিষ্ঠানে ডাইরেক্টর এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ এর জুলাই মাসের শুরুতে তিনি এ্যাভাবের ডাইরেক্টর এর পদে যোগ দেন। থমাস চীনা ও জাপানী সহ দশটির বেশী ভাষা জানেন।

থমাসের বক্তব্যঃ দীর্ঘ সময় এশিয়ায় থেকে এখন স্বদেশে নিজেকে পরবাসী মনে হয়। বাংলাদেশে পারলে মরণ পর্যন্ত থেকে যাবো। ৬৯ বৎসর বয়স্ক থমাসকে এ দেশের সাধারণ মানুষ মুগ্ধ করেছে। ১৯৫০ সালে তিনি এলাহাবাদ থেকে ঢাকা এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বক্তৃতা করেছিলেন।

মেজর ইডা ডেন হারটগ

চিকিৎসা কর্মী। বাংলাদেশ স্যালভেসন আর্মির কমান্ডিং অফিসার। স্বাধীনতার প্রায় সাথে সাথেই বাংলাদেশে আসেন৷ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে তার সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহন করেন। জন্ম হল্যান্ডে। বয়স ৫২। সংস্থার প্যারিসস্থ ট্রেনিং কলেজে ট্রেনিং গ্রহন করেছেন। বাংলাদেশে কাজের অবসরে তিনি একটি সাংবাদিকতার কোর্স গ্রহন করেছেন। ২৭ বৎসর ধরে স্যালভেসন আর্মির সঙ্গে আছেন। বাংলাদেশে আসার আগে কঙ্গোতে মেডিক্যাল টিমের সাথে কাজ করেছেন। কিছুদিন ভিয়েতনামে কাজ করেছেন। বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড এবং ভারতে সামান্য সময় ছিলেন। অবিবাহিতা।

মহিলা মেজর হারটগের বক্তব্যঃ বিয়ে করলে আমি আজকে আমার এই কাজ করতে পারতাম না। খালি পেটে ধর্ম আসে না৷ আমি মানুষের জন্য কাজ করে ধর্ম বিশ্বাসকে প্রমাণ করবো। ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকলে আমি কোন কাজ করতে পারতাম না। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখেছি। আর কখনো কোথাও তা দেখবার সুযোগ আমার হয়নি। ঢাকার বাইরের গ্রামীণ জীবন আমার পছন্দ। আর নৌকা।
এ দেশের মেয়েরা এখনো তাদের প্রাপ্য আসন পায়নি। মেয়েদের সামনে যেতে দিতে হবে, বিশেষ করে সরকারী কেন্দ্রে। মেয়েরা সামনে এলে দেশে পরিবর্তন আসবে।

জেমস এফ ম্যাকনলে

বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট মিশনের চেয়ারম্যান। পদাধিকার বলে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান। বয়স ৪৬ বৎসর। বাংলাদেশে আছেন ১৯৫৮ সাল থেকে। প্রথম এক বৎসর ছিলেন ঢাকায়। অতঃপর তিন বৎসর ছিলেন কুমিল্লায়। এর পরে থেকেছেন ফরিদপুর, ফেনী এবং ঢাকায়। সুদীর্ঘ সময় ধরে তিনি বাইবেল শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তিনি সর্বমোট সাত বারে সাত বৎসর মিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইগভিয়ল কেন্টাকীতে জন্ম। বিবাহিত। পাঁচ সন্তানের জনক। প্রথম কন্যার বয়স ১৭, জন্ম আমেরিকায়। দ্বিতীয় কন্যার বয়স ১৬, জন্ম পাকিস্তানে। তৃতীয় পুত্রের বয়স ১১, জন্ম পাকিস্তানে, চতুর্থ পুত্রের বয়স ৯, ফিলিপাইনে এবং সর্বকনিষ্ঠ কন্যার বয়স ২, জন্ম বাংলাদেশে।

রবার্ট এল সিজেস্কী

পপুলেশন সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল এর ডাইরেক্টর। ৪৪ বৎসর বয়স। তার পিতামহরা পোল্যান্ড থেকে আমেরিকায় আসেন৷ সিজেস্কী বিবাহিত। স্ত্রী ভারতীয় বংশদ্ভূত। দুই সন্তানের পিতা। দেড় বৎসর হল বাংলাদেশে আছেন। দক্ষিণ আমেরিকা, ফিলিপাইন, ভারত, হংকং, থাইল্যান্ড, মেক্সিকোতে ছিলেন। পেশাগত দিক থেকে তার মার্কেটিং, সোসিওলজিতে ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। এর আগে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে কাজ করতেন। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে তার ডিগ্রী আছে।

এ্যান্ডু জেনকিনসন

অক্সফামের সহকারী ফিল্ড ডাইরেক্টর। ২৪ বৎসর বয়স। ঢাকায় আছেন গত ছয় মাস থেকে। লন্ডনের নিকটবর্তী এমিক্স এর অধিবাসী। বাংলাদেশে আসবার আগে বিশ্বিবদ্যালয়ে সোসাল স্টাডিজে পড়াশুনা করতেন। এ সময় ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড ফাস্ট’ নামক রাজনৈতিক ছাত্র সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জড়িত ছিলেন নিউ ইন্টারন্যাশনালিস্ট পত্রিকার সাথে। ছাত্র অবস্থায় বেডফোর্ডের বাঙালীদের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ের এ্যাকশন কমিটির সাথেও কাজ করেছেন। অপারেশন ও মেগার জন্য সে সময় তহবিল সংগ্রহ করেছেন। বিবাহিত। স্ত্রী ভারতের মাদ্রাজে শিক্ষকতা করেন।

গ্রেগ এন জে স্যামসন

স্যালভেসন আর্মির বাংলাদেশের ডাইরেক্টর। হল্যান্ডের অধিবাসী। ১৯৭৪ সালের জুন মাস থেকে বাংলাদেশে আছেন। মূলতঃ তিনি ব্যবসায়িক সংস্থার অনুবাদক পেশায় নিয়োজিত। সাময়িক ভাবে স্যালভেসন আমি তে কাজ করছেন। ১৯৭৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন। বয়স জানাতে অনিচ্ছুক। বিবাহিত কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পর্যায়ে পড়ে। তার বক্তব্যঃ বাংলাদেশের মানুষ আকর্ষণীয়। জনগণের সহমর্মিতা আমার ভালো লাগে।

রেমোন্ড করনায়ার

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিসেস ওভারসিজ এর বাংলাদেশের ডাইরেক্টর। বয়স ৪৪ বৎসর। এখানো অবিবাহিত। বিভিন্ন দফায় সব মিলিয়ে দশ বৎসর হল বাংলাদেশে আছেন। ইতিপূর্বে অক্সফাম এর কর্মী হিসেবে এখানে এসেছিলেন। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিসেস ওভারসিজ এ আছেন ৩ বৎসর হলো। কানাডার অধিবাসী। পেশায় শিক্ষক। বাংলাদেশ ভালো লাগে বলেই তিনি এত দিন এ দেশে থাকতে পেরেছেন। বিশেষ করে বাঙালীদের পছন্দ করেন। এদেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় বলেই মনে করেন তিনি। তবে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে কিছু করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন না। তার মতে বাঙালীদের নিজেদের সব কিছু করতে হবে।

ফ্রেডরিক এয়েনগাস ফিনুকেন

কনসার্নের বাংলাদেশ ডাইরেক্টর। ৪৩ বৎসর বয়স। একজন ক্যাথলিক প্রিস্ট। স্বাভাবিক ভাবেই অবিবাহিত। ঢাকায় আছেন ১৯৭২ সাল থেকে। নাইজেরিয়া ও আয়ারল্যান্ডে শিক্ষকতা করেছেন। পশ্চিম আফ্রিকার গ্যাবনে রিফিউজি দের সাথে কাজ করেছেন। নাইজেরিয়ায় সোসাল ওয়ার্কও করেছেন। ১১ বৎসর আফ্রিকায় কাটিয়ে এসেছেন। পেশাগত দিক থেকে সোসাল ওয়ার্কার। আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী। বাংলাদেশ তার ভাল লাগে। বাঙালীরা অলস – এমন কথায় তার বিশ্বাস নেই। বাংলাদেশ বিমানের আভ্যন্তরীণ ভাড়া খুব সস্তা বলে তিনি মনে করেন।

মেজোর ট্রেডর জি, পিকার্ড

সেভ দি চিলড্রেন ফান্ড (ইউকে) এর বাংলাদেশ কো অর্ডিনেটর। ৫৬ বৎসর বয়স, বিবাহিত।

পিকার্ড একজন অবসর প্রাপ্ত সামরিক অফিসার। ২০ বৎসর ছিলেন গুর্খা বিগ্রেডে। এ সময় ভারত, বার্মা, মালয়, জাভা, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপাল ঘুরেছেন। ঢাকায় এসেছেন জর্দান খেকে।

***[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1976.02.13-bichitra.pdf” title=”1976.02.13 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!