You dont have javascript enabled! Please enable it! সাক্ষাৎকারঃ সিপাই আফতাব হোসেন | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

সাক্ষাৎকারঃ সিপাই আফতাব হোসেন*

১৯৭১ সালের মে মাসেই আমরা ময়মনসিংহের বাজিতপুর থানা আক্রমণ করি। পাক দালালদের অনেক ঘরবাড়ি ও দালাল খতম করি। বাঙ্গালি পুলিশরা পাকসেনাদের সহযোগিতা করতো। মুসা নামে এক কুখ্যাত দালাল পাকসেনাদের মেয়ে সরবরাহ করত এবং কারফিউ দিয়ে হিন্দু-মুসলমান সবার বাড়িতে থানার বাঙ্গালী পুলিশদের নিয়ে লুটতরাজ চালাত। রাত ১১টায় আমরা থানাতে হামলা চালাই। পুলিশরা পালিয়ে যায়। মুসাসহ অনেক দালালকে হত্যা করা হয়। এখান থেকে ১৯টা রাইফেল উদ্ধার করি। ৭টি সিভিল গানসহ প্রচুর এম্যুনিশন উদ্ধার করি। আমাদের গেরিলা দলে লোক বৃদ্ধি পেতে থাকে। ছত্রভঙ্গ অনেক ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও ছাত্র আমাদের সাথে যোগ দিতে থাকে।

১৯৭১ সালের মে মাসে ভৈরব থানা এলাকা থেকে আমরা একটা ৩ ইঞ্চি মর্টার, ২টা চীনা হালকা মেশিনগান এম্যুনিশন্সহ হালকা মেশিনগানের এম্যুনিশন ভরা ৪৮টি ম্যাগজিন উদ্ধার করি। এক ডাকাত সর্দারের বাড়ি থেকে ঢাকার বেলাবো (রায়পুরা থানার) আবদুল হাজি সাহেব আমাকে খবর দেন যে, ঐ ডাকাতের বাড়িতে উপরোল্লিখিত অস্ত্রশস্ত্র আছে।

জুন মাসে আমরা কুমিল্লা জেলার নবীনগর থানার এক দালালের বাড়িতে হামলা চালাই। উক্ত কুখ্যাত দালাল (চেয়ারম্যান পেরা মিয়া) পাকসেনাদের মেয়ে সরবরাহ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করতো। মুক্তিযোদ্ধাদের পাকসেনাদের কাছে ধরিয়ে দিত। সে ঢাকার চরসিন্দুরের এক মুক্তিযোদ্ধাকে (ছাত্র) পাকসেনাদের কাছে ধরিয়ে দেয়। এবং পাকসেনারা ঐ ছাত্র কে হত্যা করে। কুখ্যাত দালাল পালিয়ে যায়। তার স্ত্রী ছেলেমেয়ে বাড়িতে পাহারারত সবাইকে হত্যা করা হয়। (পেরা মিয়া বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষনায় মুক্তি পায়)।

জুলাই মাসে আমরা ঢাকা জেলার মনোহরদী থানা এলাকার রামপুর গ্রামে পাক বাহিনীর লঞ্চ ও গানবোটের উপর হামলা চালাই। এই আক্রমণে অনেক খান সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানীরা এখানে হেলিকপ্টারের সাহায্যে লাশ নিয়ে যায়। এরপর থেকে পাকসেনারা আর কোনদিন লঞ্চ গানবোট নিয়ে আসে নাই।
উক্ত জুলাই মাসে আমরা ঢাকা জেলার কাপাসিয়া থানার নদীর মধ্যে পাক দালালদের লঞ্চ ও বালির নৌকার উপর আক্রমণ চালাই। দালালরা হাজার হাজার মণ বালি নিয়ে পাক সেনাদের দোতলা তিতলা বাঙ্কার পাকা করে দিত বালি সিমেন্টের সাহায্যে। আক্রমণে নৌকা লঞ্চগুলো নদীতে ডুবে যায়। দালালদের খতম করা হয়।

এদিকে মেজর শফিউল্লাহ (৩নং সেক্টর কমান্ডার) ও ক্যাপ্টেন নূরুজ্জামান শত শত ছাত্রকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের অধীনে পাঠাতে থাকেন। তখন আমরা ময়মনসিংহের দক্ষিণাঞ্চলে। ঢাকা-ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ এলাকা মিলিয়ে গঠিত ৩ নং সেক্টরের অধীনে একটি সাবসেক্টর গঠন করি এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেই।

*২৪-৭-১৯৭৪ তারিখে গৃহীত সাক্ষাৎকারটি বাংলা একাডেমির দলিলপত্র থেকে সংকলিত।