You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩নং সেক্টরের ও ‘এস’ ফোর্সের যুদ্ধ বিবরণ সাক্ষাৎকারঃ মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ ——–১৯৭১

 

রায়পুরার নিকটবর্তী বেলাবো অপারেশন-১৪ই জুলাই

পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখনো রায়পুরা, নরসিংদী, কাপাসিয়া, মনহরদী, কুলিয়াচর, কটিয়াদী এলাকায় ১৪ই জুলাই পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। কারণ আমাদের নিয়মিত বাহিনী দ্বারা গঠিত এই ক্যাম্পগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। তাদের এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পাকবাহিনী লঞ্চের সাহায্যে বেলাবো অভিমুখে অগ্রসর হয়। বেলাবোতে আমার যে দল ছিল তার নেতৃত্ব করছিল সুবেদার বাশার। সে বেলাবোর নিকটবর্তী এলাকা টোকের কাছে তার লোকজন দ্বারা এক অ্যামবুশ এর তৈরি করে। দুর্ভাগ্যবশত সুবেদার বাশারের এ অ্যামবুশের খবর পাকবাহিনী নিশ্চয়ই কোন বিশ্বাসঘাতকের সহযোগিতায় জানতে পারে। তাই পাকিস্তানী সৈনিকরা যে মটর লঞ্চে করে আসছিল, তার মধ্যে থেকে কিছুসংখ্যক পাকসৈনিক সর্বাগ্রে নৌকা করে আসে এবং নৌকার বেশ কিছু পিছনেই আসছিল একখানা খালি লঞ্চ। যেহেতু সুবেদার বাশার এবং তার সাথীরা বসেছিল লঞ্চের অপেক্ষায়, নৌকা করে যেসব পাকসেনা সর্বপ্রথম অগ্রসর হয়েছিল তা তারা টের পায়নি। এবং যেইমাত্র খালি লঞ্চ তাদের সামনে আসে তারা সে লঞ্চের উপর গোলাগুলি করে। তাদের এ গোলাগুলির সাথে সাথে পাকবাহিনীর অগ্রগামী এবং পেছন থেকে অগ্রসরমান সৈনিকরা এ দলটিকে চারিদিকে ঘিরে ফেলে। আমাদের সাহসী সৈনিকগণ শত্রুর হাতে অস্ত্র সমর্পণ না করে বীরবিক্রমে লড়তে থাকে। এ লড়াই কয়েক ঘন্টা অব্যাহত থাকে। অবশেষে কিছুসংখ্যক সৈনিক পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। যারা এ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন, ১। সুবেদার আবুল বাশার,২। সিপাহী আব্দুল বারী, ৩।সিপাহী নুরুল ওহাব, ৪। সিপাহী সোহরাব হোসেন, ৫। সিপাহী মমতাজ উদ্দীন. ৬। সিপাহী আব্দুল হক, ৭। সিপাহী আব্দুস সালাম।

সুবেদার বাশারের মৃতদেহ হলদী ক্ষেতের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়,দেখা যায় তার পেটের ক্ষতস্থানটি তাঁর নিজের শার্ট দিয়ে বাঁধা। এলএমজি মৃতদেহের পাশেই ছিল। মূল্যবান কাগজপত্র মৃত্যুর আগে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে তিনি পাশে ফেলে রাখেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সুবেদার বাশার এবং তাঁর সঙ্গীদের অবদান ভুলবার নয়। বেলাবোর জনগণ এখনো তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!