You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের সারাংশ

শিক্ষা কমিশনের পূর্ণাঙ্গ খসড়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত ২৪শে অক্টোবর, ১৯৭৫। ২৯৪ পৃষ্ঠায় এই রিপোর্টে অষ্টমশ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে বৃত্তিমূলক তথা কর্মমুখী শিক্ষা প্রচলন, ১৯৮০ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষতা দূরীকরণ এবং বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পূর্নগঠনের জন্যে অনেকগুলি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সব পদক্ষেপ সম্পর্কে এখন জনগণের মতামত নেয়া হবে। বিষয়টি জনস্বার্থের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা এই রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করছি। আমরা আশা করবো আমাদের পাঠকবৃন্দ আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারী ‘৭৬-এর মধ্যে তারে মতামত আমাদের দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। পরবর্তীকালে আমরা সে সব মতামত প্রকাশ করব।
-সম্পাদক, বিচিত্রা
শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণের ও ভবিষ্যৎ সমাজ নির্মাণের হাতিয়ার। দেশের সকল শ্রেণীর জনগণের জীবনে নানা গুরুত্বপর্ণ প্রয়োজনের উপলদ্ধি জাগানো, নানাবিধ সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের বাঞ্চিত নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির প্রেরণা সঞ্চার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব ও লক্ষ্য। তদুপরি শিক্ষার সর্বস্তরে জাতীয় মূলনীতি চতষ্টয়ের সার্থক প্রতিফলন সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মূলনীতির সঙ্গে আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় নীতিমালা চতষ্টয়ের যোগ সাধন করে বাংলাদেশের শিক্ষা লক্ষ্য ও উদ্দেশাবলী নির্ধারণ করা যায়ঃ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব মানবতা ও বিশ্ব নাগরিকতা নৈতিক মূল্যবোধ সামাজিক রপান্তরের হাতিয়ার রুপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী. অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনকলে শিক্ষা কায়িক শ্রমের মর্যাদাদান নেতৃত্ব এ সংগঠনের গুণাবলী সৃজনশীলতা ও গবেষণা এবং সামাজিক অগ্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষা।
চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠন।
১। শিক্ষা কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠনের স্থান অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার সর্বস্তরে শিক্ষার পরিবেশ পাঠ্যক্রম পাঠ্যপুস্তক শিক্ষাদান পদ্ধতি, খেলাধুলার ব্যবস্থা ইত্যাদি এরূপ হওয়া প্রয়োজন যেন শিক্ষার্থীর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব সুষ্ঠ ভাবে বিকশিত হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সত্যবাদিতা, সাধ্যতা, ন্যায়বোধ, নিরপেক্ষতা, কর্তব্যজ্ঞান সুশৃঙ্খল আচরণ এবং দেশসেবাকে আত্মস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার মনোবৃত্তি —এ সমস্ত গুণ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে।
২। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সুস্পষ্টবোধ শিক্ষার্থীর চিত্তে জাগ্রত করে তাকে সুনাগরিকরুপে গড়ে তোলাই হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম লক্ষ্য। বিশেষ করে সাহিত্য, ইতিহাস পৌরনীতি ও অর্থনীতির পাঠ্যসূচীতে এ ধরনের বিষয়বস্তু অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীর মনে ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও সাধারণ সততাবোধ সৃষ্টি করতে হবে। এ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা নিজেরা সমিতি ও ক্লাব গঠন করে এগুলো পরিচালনা করবে যেন শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ পায়।
৩। শিক্ষার্থীকে সমাজ- সচেতন করে তোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্থী যাতে সমাজের ধারা, মানুষের জন্য সমাজ যে সমস্ত সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করে সেগুলি এবং সমাজ শাসনের পদ্ধতি বুঝতে পারে তার জন্য বিদ্যালয়ের কর্মসূচীতে প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে তার ভিতর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা সহযোগিতা, সমবায় ভিত্তিক প্রচেষ্টা এবং নেতৃত্বের চেতনাবোধ জাগ্রত করতে হবে।
৪। শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে খেলা ধুলার ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতাকে জাগ্রত ও শক্তিশালী করতে হবে।
৫। চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু সুষ্ঠ ভাবে পরিচালিত না হলে বিদ্যালয়ই এ ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারবে না। কোন বিদ্যালয় এই লক্ষ্য কতখানি অর্জন করবে, তা নির্ভর করবে সে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার উপর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হবে।
৬। আমাদের শিক্ষিত সমাজের একটি বড় ক্রুটি হচ্ছে কায়িক শ্রমের প্রতি উপেক্ষা ও অবজ্ঞার মনোভাব। অনতিবিলম্বে আমাদের শিক্ষাক্রমে এমন বিষয়াদি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীর মনে কায়িক শ্রমের প্রতি মর্যাদা এবং প্রশংসাবোধ জাগ্রত হয়। এজন্য সকল শিক্ষার্থীকে নিয়মিত কায়িক শ্রমের কাজে আগাতে হবে।
৭। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থাই যে শিক্ষার্থীর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব বিকশিত করতে পারে তা নয়। বাড়ি পরিবার এবং বৃহত্তর সামাজিক পরিবেশই শেষ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা পালন করে থাকে। তাই পিতামাতা বা অভিভাবক অভিভাবিকার শিক্ষার এবং ভূমিকার গুরুত্বে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তদোপরি দেশের সকল দায়িত্বশীল নাগরিককে এ ব্যাপারে যথাযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে।
৮। শিক্ষার্থীর চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠনের কাজে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তাই এ মহৎ কাজে শিক্ষকের পূর্ণ দায়িত্ববোধ জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন।
কর্ম অভিজ্ঞতা সারাংশ
১। আমাদের দেশে পুথি সর্বস্ব ও কর্ম অভিজ্ঞতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকার ফলশ্রুতিরপে শিক্ষিত সমাজের মধ্যে বিকৃত মূল্যবোধের দরুন শ্রমবিমুখ মনোভাব বিদ্যমান। শিক্ষিত লোকেরা এবং সাধারণভাবে কায়িক শ্রমে নিযুক্ত নন এমন ব্যক্তিরা সামান্য কায়িক শ্রমের জন্য অপরের উপর নির্ভরশীল, কর্ম অভিজ্ঞতা শিক্ষার একটি বড় হাতিয়ার এবং এর সাহায্যে মননশীল কাজ ও হাতের কাজের মধ্যে বর্তমানে যে অনভিপ্রেত দস্তর সামাজিক বিভেদ বিরাজ করছে তাও দূর করা সম্ভব। তাই শৈশবকাল, থেকেই যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে শিখে সে বিষয়ে জাতিকে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাস এমনভাবে করা দরকার যাতে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত সুষ্ঠ, কর্মভিত্তিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে শ্রমের প্রতি শুধু মর্যাদাবোধই জাগ্রত হবে না বরং তারা জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সমাজ সেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার প্রেরণাও লাভ করবে। (৩.১. -৩.৬)
২। শিক্ষার্থীদের জন্য কায়িক কর্মের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের উপর অর্পণ করতে হবে। (৩. ৭)
৩। কম-অভিজ্ঞতাকে যথার্থ ভাবে বাস্তবায়িত করতে হলে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবেঃ (ক) একটি ব্যাপক কর্মসূচীর মাধমে শিক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে কর্ম-অভিজ্ঞতার ক্রম সম্প্রসারণ, (খ) প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা, তথা মাল-মসলা সাজ সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি (গ) শিক্ষক প্রশিক্ষণ। (৩,৮}
৪। শ্রমের প্রতি নতুন গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির জন্য শিক্ষাঙ্গনের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রচেষ্টা চালাতে হবে যাতে শ্রম সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলির নিরসন হয়।
শিক্ষার মাধ্যম ও শিক্ষায় বিদেশী ভাষার স্থান সারাংশ
১। জাতীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করলে তা শিক্ষার্থীদের সহজবোধ্য হয় এবং এতে তাদের সহজাত বৃদ্ধি, মৌলিক চিন্তাশক্তি ও কল্পনা শক্তির বিকাশ সাধন সহজতর হয়। অধিকন্তু, জাতীয় ভাষার রচিত গ্রন্থাদি শ্রেণীকক্ষের বাইরেও জনগণের মধ্যে জ্ঞান প্রসারে সহায়তা করে। শিক্ষা পদ্ধতিতে ভাষায় গুরত্ব খুব বেশী এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞানের বিস্তার, সংস্কৃতির প্রসার এবং জাতীয় ঐক্যবোধের সৃষ্টি। অতএব আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনাকে সার্থক করে তুলতে হলে অবিলম্বে সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম রূপে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হবে। (৪,১)
২। বাংলা ভাষা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসাবে চালু থাকবে। সরকারী অর্থায়ন কাল্যে উচ্চশিক্ষার বই-পুস্তক বিশেষ করে বিজ্ঞান, কারিগরি, প্রকৌশল ও বৃত্তিশিক্ষা বিষয়ের বই-পুস্তক বাংলায় প্রণয়ন ও অনুবাদের কাজে অবিলম্বে হাত দিতে হবে। বাংলাভাষা শিক্ষাদান পদ্ধতির উন্নয়নও আবশ্যক। (৪.২-৪.৫)
৩। বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে প্রবর্তনের পরও আমাদের শিক্ষার্থীদের পক্ষে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজী শিখবার প্রয়োজন থাকবে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নাই। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একটি উন্নত আধুনিক বিদেশী ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত উত্তমরূপে শিখতে হবে। ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের বাস্তব পরিবেশ যা তাতে ইংরেজী দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে অব্যাহত থাকবে। (৪,৬-৪,৮)
৪। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনার্স বা তার পরবর্তী শ্রেণীতে বিভিন্ন বিভাগ স্ব স্ব প্রয়োজনানুসারে বিভিন্ন ভাষা শেখাবার ব্যবস্থা করবে। (৪,৯-৪,১০)
৫৷ আমাদের কুটনীতিবিদদের শিক্ষার জন্য, উচ্চতর গবেষণা ইত্যাদির জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিদেশী ভাষা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অনতিবিলম্বে একটি আধুনিক ভাষা ইনষ্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। (৪,১১)৷
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হার
যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা তার শিক্ষক- শিক্ষার্থীর হারের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হার বিজ্ঞানসম্মত নয়। শিক্ষক শিক্ষাথীর হার প্রয়োজনীয় মাত্রায় না বাড়ালে শিক্ষা উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। প্রথম জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে দেশের সমস্ত শিক্ষায়তনেই শিক্ষক শিক্ষার্থীর হার যথাসম্ভব উন্নীত করতে হবে যাতে পরবর্তী পরিকল্পনাকালে বাঞ্ছনীয় হারে উত্তরণের পথ সহজ হয়।
৮। ইন্টারমিডিয়েট উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সটি একটি বিশেষ স্তর বলে গণ্য হতে পারে না, কেননা এর একদিকে মাধ্যমিক স্তর, অন্যদিকে ডিগ্রী স্তর এবং এ দুটির মধ্যস্থিত। উপরোক্ত কোর্সটি কোন স্তরের সঙ্গে সত্যিকারভাবে সংশ্লিষ্ট নয়। ইন্টারমিডিয়েট স্তরের বিলোপ সাধন করে এর একটি বছর মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে এবং অন্য বছরটি ডিগ্রী স্তরের সঙ্গে সংযোজিত করলে অধিক বিষয়ে বাঞ্ছিত কুৎপত্তি লাভ সম্ভবপর হবে, কেননা প্রথম ডিগ্রী কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের চেয়ে কম হওয়া সমীচীন নয়, অন্য পক্ষে নবম-দশম শ্রেণীর সঙ্গে একটি অতিরিক্ত বছর যোগ করলে সুসমন্বিত বহুমখী পাঠক্রম চালু করার পক্ষে সহায়ক হবে। অবশ্য আমাদের বর্তমান অবস্থায় এ বাস্তবায়নের পক্ষে বহু অসুবিধা অতিক্রম করতে হবে, যেমন উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে এমএ এমএসসি, পাশ শিক্ষক নিয়োগ পাঠাগার, গবেষণাগার ইত্যাদির সমাক উন্নয়ন, নতুন শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, স্কুল-কলেজের আর্থিক অসংগতি দূরীকরণ ইত্যাদি। সবকিছু বিবেচনা করে শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তনের ব্যাপারে প্রস্তাব হচ্ছেঃ
(ক) একাদশ শ্রেণী মাধ্যমিক স্কুল সম্পর্কে প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনাকালে দেশের কিছু সংখ্যক শিক্ষায়তনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলুক। পরীক্ষার ফল সন্তােষজনক প্রমাণিত হলে দ্বিতীয় জাতীয় পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার ক্রম রূপায়নের কার্যক্রম স্থির করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ডিগ্রী কোর্সের মেয়াদ হবে তিন বছর এবং মাষ্টার ডিগ্রী কোর্সের মেয়াদ হবে দুইবছর।
(খ) আগামী পাঁচ বছর শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার মান বিশেষভাবে উন্নীত হলে দশ বছর স্কুল শিক্ষার পর প্রথম ডিগ্রী কোর্সে ভর্তির বিষয়ও বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিন বছরের পাস ডিগ্রী কোর্স এবং চার বছরের অনার্স ডিগ্রী কোসের প্রবর্তন করতে হবে। আর মাস্টার ডিগ্রী কোর্স হবে পাস ডিগ্রীধারীদের বেলায় দু বছর এবং অনার্স ডিগ্রীধারীদের বেলায় এক বছর। (৮ ১২-৮ ১৩) বৃত্তিমূলক শিক্ষা
১। বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা বৃত্তির যোগ্যতা অর্জন করে এবং দক্ষ কর্মী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষ সাধন ব্যতীত কোন জাতি কৃষি, শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য উৎপাদন ও কারিগরি ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে পারে না। বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তার লাভের দ্বারা জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। বৃত্তিমূলক শিক্ষা বৃত্তিমূলকভাবে অল্প সময় সাপেক্ষে এবং সে জন্য অল্পকালের ভেতরেই এর ফল লাভ করা যায়।
২। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সমাপনান্তে যাতে অধিক সংখ্যক শিক্ষাথী কর্মজীবনে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপযুক্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা, মাধ্যমিক শিক্ষার একটি ধারা হিসাবে প্রবর্তন করতে হবে। মাধ্যমিক স্কুল, বৃত্তিমূলক স্কুল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদিতে বিভিন্ন কারিগরি শিল্প, কৃষি ব্যবসাবাণিজ্য শিক্ষকতা, ললিতকলা নার্সিং প্যারামেডিক্যাল ইত্যাদি বিষয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জাম এবং বহু সংখ্যক পুস্তক ও দক্ষ শিক্ষক সরবরাহের প্রয়োজন হবে। এ জন্য দেশে যন্ত্রপাতি তৈরীর ব্যবস্থা করতে হবে, পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশনের কাজ হাতে নিতে হবে এবং অবিলম্বে শিক্ষক-প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করতে হবে।
৪। কারিগরি শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য দেশের সমস্ত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা বিভাগের আওতাধীনে আনতে হবে।
৫। বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রম থেকে উত্তীর্ণ মেধাবী প্রার্থীদিগকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। ৬। ‘শিখ ও উপার্জন কর’ ব্যবস্থা সম্বলিত বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রবর্তন করে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানার সাথে সংযুক্ত থাকলে অধিকতর ফলপ্রসু হবে।
৭। সান্ধ্যকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে স্কুল পরিত্যাগকারী এবং বয়স্কদের স্থানাপযোগী বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান করে এদেরকে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে।
৮। বৃত্তিমূলক শিক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীদের সমাপনান্তে তাদের কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। আইন প্রণয়ন করে দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে শিক্ষানবিসী কার্যব্রমের প্রবর্তন এবং শিল্প কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন কারিগরি সংস্থার দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সমবায় ভিত্তিতে ছোট ছোট কারখানা/খামার ইত্যাদি গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে তাদের কর্মসংদ্যান সমস্যার আংশিক সমাধান করা যেতে পারে।
ডিপ্লোমা স্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ্যা
১। ডিপ্লোমা স্তরের কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল এমন এক শ্রেণীর দক্ষ জনশক্তি তৈরী করা যাঁরা কারিগরি ক্ষেত্রে নিজ হাতে দক্ষতার সাথে কাজ করার যোগ্যতার অধিকারী হবেন, শিল্প পদ্ধতি এবং কারিগরি বিষয়ের মৌলিক নিয়মাবলী সম্বন্ধে পুরোপুরি অবহিত থাকবেন এবং নিজেদের কারিগরি দক্ষতার দ্বারা শ্রমিকদের কাজের কার্যকরী তদারক ও পরিচালনা করে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নত মানের দ্রব্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন। তাঁরা গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজ, পরিকল্পনা নির্মাণ পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ারদের সহকারী এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের পর অনেক ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও কাজ করতে সক্ষম হবেন।
২। উপরোক্ত মানের কারিগরি জনশক্তি তৈরী করার জন্য ডিপ্লোমা কোর্সগুলিতে ভর্তির জন্য শুধু বিজ্ঞান গ্রুপ বা বৃত্তিমুখী গ্রুপে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে।
৩। ডিপ্লোমা স্তরের কারিগরি শিক্ষা অধিকতর ফলপ্রসু করার জন্য শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবভিত্তিক করতে হবে। ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সাজ-সরঞ্জাম এবং কাঁচা- মালের অভাব দূর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শিল্প কারখানা এবং কারিগরি সংস্থায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।।
৪। পলিটেকনিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ডিগ্রী ইঞ্জিনিয়ার এবং বি-এড (টেকনোলজি) ডিগ্রীপ্রাত শিক্ষকদের সংখ্যা অন্ততঃ ৫০% করতে হবে। তদুপরি শিক্ষকদের শিক্ষণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং উৎকর্ষ সাধন করতে হবে এবং শিল্প কারখানায় তাঁদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উচ্চতর কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে। অন্ততঃ এক বছরের বাস্তব কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন না হলে কোন ব্যক্তিকে শিক্ষকতায় নিয়োগ করা উচিত নয়।
৫। কারিগরি শিক্ষা ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে বইয়ের অভাব দূর এবং বাংলা ভাষায় বই প্রকাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। ডিপ্লোমা প্রাপ্তদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। সমবায় ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট কারখানা ও খামার গড়ে তুলতে তাদের উৎসাহিত এবং প্রয়োজনবোধে ঋণ হিসাবে অর্থ সরবরাহ করতে হবে। দেশের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।
৭। সরকারী চাকরিতে কারিগরি ডিপ্লোমা প্রাপ্তদের পদোন্নতির সুযোগ প্রসারিত করতে হবে।
৮। কৃষির উন্নতির জন্য ডিপ্লোমা স্তরের কৃষি কারিগরি কোর্স চালু করা প্রয়োজন।
৯। মেধাবী টেকনিশিয়ানদের ডিগ্রী স্তরের প্রকৌশল শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। এদের জন্য খণ্ডকালীন কোর্সেরও ব্যবস্থা থাকা উচিত।
মাদ্রাসা শিক্ষা ও টোল শিক্ষা
১। মাদ্রাসা শিক্ষার আমূল সংস্কার ও যুগোপযোগী পুনর্গঠন প্রয়োজন। দেশের অন্যান্য সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় মাদ্রাসাগুলিতে একই প্রাথমিক শিক্ষাক্রম প্রবর্তিত হবে এবং সর্বস্তরে বাংলাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা আবশ্যিক পাঠ্য বিষয় হিসাবে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় ভাষা যেমন ইংরেজী, আরবী ইত্যাদি পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। তবে যারা ইংরেজী দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে পড়বে না তারা সপ্তম শ্রেণী থেকে অতিরিক্ত বিষয় হিসাবে ইংরেজী পড়বে।
২। মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসাবে ধর্মশিক্ষা পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। এই স্তরের সাধারণ কোর্সে ও ধর্মশিক্ষা একটি ঐচ্ছিক বিষয়রূপে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। আট বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষার পর মাদ্রাসার ছাত্ররা তিন বছর মেয়াদী বৃত্তিমূলক ধর্মশিক্ষা কোর্স পড়তে পারবে। এ কোর্সের নবম ও দশম শ্রেণীতে তাদেরকে বাংলা, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইংরেজী এ চারটি আবশ্যিক পাঠ্য বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে। এ শিক্ষার পরবর্তী স্তর বিন্যাস হবে তিন বছরের ডিগ্রী কোর্স এবং দুবছরের পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স। ৩। প্রস্তাবিত আট শ্রেণীর প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সঙ্গে সংহতি রেখে হিন্দু ও বৌদ্ধ দোল শিক্ষার সংস্কার করতে হবে। জোলসমূহের আদ্য কোর্স সপ্তম শ্রেণী থেকে শুরু না করে নবম শ্রেণী থেকে শুরু করতে হবে এবং তার মেয়াদ হবে তিন বছর। এ কোর্সের নবম ও দশম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা অন্যান্যদের মতোই ধর্ম শিক্ষার সঙ্গে আবশ্যিক চারটি পাঠ্য বিষয়, বাংলা গণিত সাধারণ বিজ্ঞান ও ইংরেজী পাঠ করবে। পরবর্তী কোর্সগুলিতে পরিসর হবে ক্রমান্বয়ে তিন বছর এবং দুবছর।
প্রাথমিক শিক্ষা।
১। দেশের জনগণকে জাতীয় কর্মে ও উন্নয়নে গঠনমূলক ভূমিকায় অংশ গ্রহণের জন্য শিক্ষিত করে তুলতে হলে একটি সার্বজনীন শিক্ষা পদ্ধতির আবশ্যক। এই বাধ্যতামূলক শিক্ষা এমন পর্যায়ের হওয়া দরকার যাতে শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে স্বাধীন নাগরিকের সুযোগ সুবিধার সদ্ব্যবহার ও তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়। আমাদের বর্তমান পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাইমারী শিক্ষা দায়িত্বশীল নাগরিক ও উন্নত ব্যক্তি গঠনের জন্য যথোপযুক্ত নয়। তদুপরি পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও তত্ত সম্পর্কে বালক-বালিকার মনে ধারণা ও বোধশক্তি জাগ্রত করার এবং অর্থকরী বিদ্যার প্রাথমিক বিষয়গুলি তাদের শিক্ষা দেবার মত সময় পাওয়া যায় না। আট বছরের কম মেয়াদী স্কুল শিক্ষায় এসব উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব নয়। সুনাগরিকত্ব অর্জনের জন্য এই আট বছরের শিক্ষা অত্যাবশ্যক। দুনিয়ার জ্ঞান বিজ্ঞান যে প্রসার হচ্ছে তাতে শিক্ষায়তনে কমপক্ষে আট বছর মেয়াদের একটি জীবন্ত ও বাস্তব পরিবেশ ভিত্তিক সুপরিকল্পিত শিক্ষাক্রম চালু না করতে পারলে সে শিক্ষাকে দেশের অগ্রগতি ও সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়াররুপে কাজে লাগানো যাবে না। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে আট হতে বার বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষার মেয়াদ চালু রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে- (ক) প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষারুপে পরিগণিত করে তাকে সার্বজনীন করতে হবে।
(খ) প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত যে অবৈতনিক শিক্ষা চালু রয়েছে তা ১৯৮০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রবতর্ন করতে হবে।
(গ) উপরিউক্ত প্রস্তাব সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, পাঠ্য-পুস্তক শিক্ষার অন্যান্য উপকরণও শিক্ষাঙ্গনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হবে।
২। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কারণে পাঁচ থেকে তের বছর বয়স্ক অধিকাংশ বালক বালিকাকেই পরিবারের আর্থিক উপার্জনের কিছু দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয় বলে তাদের অনেকের পক্ষে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় না। এদের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হলে তাদের জন্য প্রয়োজনবোধে নৈশ স্কুলে শিক্ষার আয়োজন করতে হবে। (৭ ৬)।
৩। বালিকাদের অধিক সংখ্যায় স্কুলের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রাথমিক স্তরে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজন বোধে পৃথক বালিকা স্কুল স্থাপন করতে হবে।
৪। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার উদ্দেশ্য বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ছাড়াও পাঠ্যসূচী ও স্কুলের পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে ।
৫। দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব পরিবেশ সমাজের চাহিদা, ছাত্রদের মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতা এবং অভিরুচির সাথে সংগতি রক্ষা করে প্রাথমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের ব্যাপক পুনর্বিন্যাস করা দরকার। প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পযর্ন্ত সর্বত্র শিক্ষা পদ্ধতি কর্মমুখী হবে এবং পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের চাইতে হাতে -কলমে শিক্ষাদান ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সমগ্র দেশে সরকারী ব্যয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান সম্মত একই মৌলিক পাঠ্যসূচী ভিত্তিক এক এবং অভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। একই মৌলিক কাঠামোর মধ্যে সমাজ জীবনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গৌণ বিভিন্নতার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৬। প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন সর্বাধিক। এ জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক।
৭। গতিশীল ও বাস্তবানুগ পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে যথার্থ পাঠ্যপুস্তক রচনার প্রশ্নটি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।
৮। প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, অনুসন্ধান ও গবেষণা কার্যের জন্য এবং দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়াসকে সুসমন্বিত করার উদ্দেশ্যে একটি প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী এবং একটি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করা দরকার।
কাজী সেক আহমদ এক
মাধ্যমিক শিক্ষা
১। মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষাকাঠামোর দ্বিতীয় স্তর। মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যাবলী হল প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে প্রাপ্ত মৌলিক শিক্ষাকে সম্প্রসারিত ও সুসংহত করা সুসমন্বিত ও কল্যাণধর্মী জীবন যাপনের জন্য সচেতন, কর্তব্যবোধে উদ্ধুদ্ধ সৎ ও প্রগতিশীল জীবন দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রয়াসে কর্ম কৌশল জনশক্তি সরবরাহ করা এবং মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরকে তাদের মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার উপযোগী করে গড়ে তোলা। (৮.১-৮.২)
২। নবম থেকে একাদশ/ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা হবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা। নবম থেকে একা দশ/দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাক্রমের যোগসূত্রে বজায় রাখা ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় সমতা নিশ্চিত করার জন্য একই শিক্ষায়তনে এই তিন/চারটি শ্রেণীর শিক্ষাদানে ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্তরকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্তর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এই স্তরের সমস্ত শ্রেণীর শিক্ষা কার্যক্রমের যোগসূত্র ও সমন্বয় প্রয়োজন। এই স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়সের প্রেক্ষিতে একই শিক্ষা পরিবেশে শিক্ষাদানের সুযোগ সৃষ্টি শিক্ষা মনোবিজ্ঞান সম্মত। এসব কারণে ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষকে ডিগ্রী কোর্স প্রবর্তন না করে নবম ও দশম শ্রেণী খোলার নির্দেশ দিতে হবে।
৩। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ, জীবনযাত্রা স্থানীয় অর্থনীতির কর্মধারা ও কর্ম জীবনে প্রবেশের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির সুষ্ঠু প্রতিফলন মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচীতে প্রয়োজন।
৪। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য প্রান্তিক শিক্ষা এবং স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি পর্ব হিসাবে বিবেচিত হবে। এ উদ্দেশ্যে নবম শ্রেণী হতে শিক্ষা মূলতঃ দ্বিধাবিভক্ত হবে বৃত্তি মূলক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা। বৃত্তিমূলক শিক্ষা মোটামটি তিন বছর মেয়াদী (নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণী) হবে। সাধারণ শিক্ষা চার বছর মেয়াদী (নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী) থাকবে। উভয় ধারার শিক্ষাক্রমে কয়েকটি বিষয় আবশ্যিক পঠনীয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এসব আবশ্যিক বিষয় ছাড়াও শিক্ষার্থীরা স্বনির্বাচিত ধারায় বৃত্তিমূলক বিষয়ে অথবা সাধারণ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে, অামাদের লক্ষ্য হবে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শতকরা বিশভাগকে প্রস্তাবিত বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসা। পরবতী পরিকল্পনাকালে এ হারকে অন্ততঃ শতকরা পঞ্চাশ ভাগে উন্নীত করতে হবে।
৫। বৃত্তিমূলক শিক্ষা মুখ্যতঃ প্রান্তিক শিক্ষা। সেজন্য নবম ও দশম শ্রেণীতে বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভের পরও একাদশ শ্রেণীতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের চাহিদা এবং কর্ম প্রদান সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনানুযায়ী নির্ণীত হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রাপ্ত সকলের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা দুরূহ কাজ। এদের অনেকেই নিজের উদ্যোগে স্বনির্ভর হয়ে কর্ম সংস্থাপন করে নেবে। এজন্য সহজ শর্তে মূলধন প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের কর্ম-কুশলতাকে কাজে লাগাবার জন্য আঞ্চলিক ভিত্তিতে প্রয়োজন মত সমবায় সংস্থা গঠন করতে।
৬। বৃত্তিমূখীন শিক্ষার প্রসার ও তাকে জনপ্রিয় করার জন্য ভারতের কয়েকস্থানে ‘শিখ ও উপার্জন কর’ প্রকল্পের মত আমাদের দেশেও অনুরুপ একটি প্রকল্প চালু করা উচিত হবে।
৭। দেশের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিবেশের চাহিদা অনুযায়ী এক বা একাধিক বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের জন্য সরকারী ও স্থানীয় উদ্যোগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষণ
১। জাতীয় জীবনে উপযুক্ত শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত উৎকর্ষ শিক্ষকের সুষ্ঠু পেশাগত শিক্ষার উপর নির্ভরশীল। বস্তুত শিক্ষার ক্ষেত্রে গৃহ, উপকরণ ও অন্যান্য ব্যাপারে নিয়োজিত সম্পদ অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায় যদি শিক্ষকের মান উন্নয়নের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়। দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নকল্পে সুসংবদ্ধ ব্যবস্থা অবলম্বন প্রয়োজন। উন্নত রাষ্ট্রসমহে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য। শিক্ষক-শিক্ষণের যে সকল আধুনিক নীতি ও পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে সেগুলিকে প্রয়োজনমত প্রয়োগ করে আমাদের দেশের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
২। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ১৯৭৬ সাল হতে ১৯৮৩ সালের মধ্যে সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলকরূপে চালু করার জন্য যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের প্রয়োজন তাঁদের স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিম্মােক্ত পন্থা অবলম্বন করতে হবেঃ
(ক) ৪৭টি পিটিআই—এতে দুই মাস মেয়াদী স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে হবে। প্রতি পিটিআই বছরে পাঁচ বার (প্রতিবারে ৮৫ জন শিক্ষকের জন্য) এ কোর্সের আয়োজন করবে। এভাবে ৪৭টি পিটিআই-এ প্রায় এক লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে।
(খ) গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের জন্য অনুরূপ প্রশিক্ষণ কোর্স দেশে কলেজ অব এডুকেশন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং শিক্ষাসম্প্রসারণ কেন্দ্রে চালু করতে হবে। দেশের ছয়টি কলেজ অব এডুকেশন ছয়টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও একটি শিক্ষা-সম্প্রসারণ কেন্দ্রে পাঁচ বছর প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে।
(গ) দেশের রিফ্রেসার কোর্স ট্রেনিং সেন্টারসমূহে এবং যে সকল নির্বাচিত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষণ কোর্স চালু করা হবে সে সব প্রতিষ্ঠানেও জরুরীভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্স প্রবর্তন করা যেতে পারে।
৩। কিছুসংখ্যক নির্বাচিত মাধ্যমিক স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষকশিক্ষণ. (নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণী) কোর্স চালু করতে হবে। এর ফলে অধিক সংখ্যক মহিলা শিক্ষকতাকে পেশারূপে গ্রহণ করার সযোগ পাবেন।
৪। প্রস্তাবিত নতুন পাঠক্রম প্রবর্তনের জন্য বহু সংখ্যক শিক্ষকের জরুরীভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এ প্রশিক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপর ন্যস্ত থাকবে।
৫। মাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমূলক বিষয়সমূহের শিক্ষক তৈরীর জন্য দেশের সকল পেশাগত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রে বর্তমান বৃত্তিমূলক শিক্ষক প্রশিক্ষণের যে কোর্স চালু রয়েছে, সেগুলিকে ডিগ্রী পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
৬। ঢাকাস্থ টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজটিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে কলেজের নিজস্ব ভবন, ওয়ার্কশপ প্রভৃতির ব্যবস্থাসহ পাঠ ক্রমের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
৭। বর্তমান ঢাকা শারীরিক শিক্ষা কলেজকে প্রয়োজনানুযায়ী সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারিত করতে হবে। এবং মেয়েদের জন্য পৃথক গৃহ নির্মাণ করা বাঞ্ছণীয়। রাজশাহীতে নির্মীয়মাণ শরীর শিক্ষা কলেজের কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে দেশের অন্যত্র অনুরুপ আরও দুটি কলেজ স্থাপন করতে হবে।
৮। শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গুলির বর্তমান পাঠক্রমের সংস্কার করে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে।
৯। বিপুল সংখ্যক শিক্ষকদের নিয়মিত পেশাগত শিক্ষালাভের সুযোগ দেয়ার জন্য যথাশীঘ্র সম্ভব নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ক) শুধু মহিলাদের জন্য কয়েকটি পিটিআই স্থাপন করতে হবে এবং অন্যান্য পিটিআইগুলিতে তাদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করতে হবে। (খ) যেহেতু ঢাকা শহরে কোন পিটিআই নাই সেহেতু এখানে একটি পিটিআই স্থাপন করা প্রয়োজন। .
(গ) পিটিআইগুলির সর্ববিধ সুযোগ-সুবিধা এরূপভাবে বর্ধিত করতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলির প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণ সম্ভব হয়। (ঘ) অনতিবিলম্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষা বিভাগ চালু করে কালক্রমে একে একষ্টি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরিণত করতে হবে। টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলির এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুযোগ-সুবিধা বর্ধিত করা প্রয়োজন।
(ঙ) শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গুলির জন্য পাঠ্যপুস্তক বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে হবে। এদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ওয়ার্কশপসহ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ১০। দেশের যে পাঁচটি জুনিয়র ট্রেনিং কলেজকে কলেজ অব এডুকেশনে রূপান্তরিত করে তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রী শিক্ষক-শিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে তাদের নানা সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলির দশ মাস স্থায়ী বর্তমান কোর্সটি অত্যন্ত অপর্যাপ্ত বিধায়-এর স্থলে ক্রমে ক্রমে তিন বছর মেয়াদী শিক্ষক-শিক্ষণ কোর্স চালু করা উচিত।
১১। কর্মরত প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত প্রস্তাবিত প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির উপরই ন্যস্ত থাকবে। এ ছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পিটিআইগুলিও এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।
১২। কর্মরত মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমান বাংলাদেশ শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের আরও উন্নয়ন এবং এর কার্যক্রমের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। রাজশাহী বিভাগে একটি নতুন শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে বর্তমান কেন্দ্রের দুটি উপ-কেন্দ্র স্থাপন করা আবশ্যক। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলিকেও এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদেব সেমিস্টারের ভিত্তিতে ডিগ্রী অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট অগ্রিম ভাতা রাহা খরচ ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে কর্মরত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে জনপ্রিয় করা উচিত।
১৩। বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত বিবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা ও সংযোগ সাধনের জন্য একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
১৪। পেশাগত শিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের শিক্ষণের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এ শিক্ষণের জন্য খন্ডকালীন ও চিঠিপত্রের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যায়। এসবের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক পিটিআই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কলেজ অব এডুকেশন শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন।
১৫। শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং গবেষণা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য একটি জাতীয় শিক্ষা গবেষণা কাউন্সিল স্থাপন করা প্রয়োজন।
১৬। প্রাইমারী স্তরে শিক্ষক শিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য নিম্ন লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিতঃ
(ক) প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টি টিউটগুলিকে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত এবং এদের পাঠক্রমের পরিবর্তন করা। (খ) ইনস্টিটিউটগুলির শ্রেণীকক্ষ গ্রন্থাগার পরীক্ষার্থী প্রভৃতির উন্নয়ন সাধন।
(গ) শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনে থাকার ব্যবস্থা করা ও মহিলা শিক্ষাথীদের জন্য হোষ্টেল নির্মাণ করা।
(ঘ) শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থাসহ অধিক সংখ্যক বৃত্তির বন্দোবস্ত করা।
(ঙ) বর্তমান একবছর মেয়াদী পিটিআই কোর্সকে দুই বছরে উন্নীত করা।
(চ) উপযুক্ত শিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য তিন বছর প্রাইমারী স্কুলে চাকুরীর পর বিএড কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেয়া। ১৭। বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগলিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবাঞ্ছিত অনুপাতের হার বিদ্যমান। অনপাত অধ্যক্ষ ও উপ অধ্যক্ষ ছাড়া ১ঃ ১৫ হওয়া উচিত।
১৮। শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নত করা এবং ডিগ্রী পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রফেসরের পদসহ অধিক সংখ্যক সিনিয়র এডুকেশন সার্ভিসের পদ সৃষ্টি করা দরকার।
১৯। শুধুমাত্র উচ্চতর শিক্ষক। শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগলিকে ন্যূনতম তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে এমএড কোর্সে এবং পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ডক্টরেট কোর্সে ভর্তি করা যেতে পারে।
২০। দেশের চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বর্তমান কার্যক্রমসমূহের পুর্নবিন্যাস করা প্রয়োজন।
২১। শিক্ষক-শিক্ষণ বিষয়ে – বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্বতন্ত্র বিভাগ খুলে ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তন করা উচিত।
২২। প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক শিক্ষাসম্প্রসারণ কর্মসূচীর মাধ্যমে নিকটস্থ ফুলগলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত।
২৩। শিক্ষক-শিক্ষণ কর্মসূচীর সম্প্রসারণে রেডিও ও টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়।
২৪। শিক্ষক-শিক্ষণ কর্মসূচীকে প্রগতিশীল রাখার জন্য প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্র সমিতি গড়ে তোলা প্রয়োজন।
২৫। শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্ম সূচী বাস্তবমুখী করার জন্যে বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক এবং পরিদর্শক বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত পদ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
২৬। শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে বর্তমান শিক্ষাদান পদ্ধতির মান উন্নয়নকল্পে শিক্ষকদের শিক্ষাথীদের সম্পর্কে সঞ্চয় রেকর্ড রাখা এবং ব্যবহারিক পাঠদানের রীতি নীতির পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
২৭। পেশাগত উন্নতির জন্য সকল শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত।
২৮। মাধ্যমিক স্তর হতেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
২৯। প্রাক-প্রাথমিক স্তরের পরিদর্শক ও বাধাগ্রস্তদের জন্য শিক্ষক তৈরীর দায়িত্ব শিক্ষা ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে নিতে হবে কয়েকটি নির্দিষ্ট পিটিআই এ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিকা তৈরীর জন্য এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু করা দরকার ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
৩০। বিভিন্ন শিক্ষামূলক সংঘ গঠন ও বিশেষ বিশেষ ‘দিবস’ ও ‘সপ্তাহ’ পালনের মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে যাতে বিদ্যালয়ের সার্থক সংযোগ সাধিত হয় সে সম্পর্কে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা অর্জনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
৩১। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষণের গুরত্ব অত্যধিক। হেতু এ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা উচিত।
৩২। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শিক্ষক শিক্ষনের যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ দেবার জন্য একটি জাতীয় শিক্ষণ উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করা উচিত। ১। আধুনিক সমাজের অগ্রগতি উচ্চশিক্ষার প্রকৃতি ও মানের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। কারণ উচ্চশিক্ষার ভূমিকা হচ্ছেঃ (ক) বিভিন্ন উচ্চতর কাজের জন্য সনিপুণ জ্ঞানদক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি তৈরী করা (খ) এমন শিক্ষিত গোষ্ঠী সৃষ্টি করে যাদের কর্মানুরাগ, জ্ঞানাস্পৃহা চিন্তার স্বাধীনতা, ন্যায়বোধ ও মানবিক মূল্যবোধ সম্যক বিকশিত হয়েছে, (গ) গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মোচন করা এবং (ঘ) সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর বিশ্লেষণ ও সমাধানের পন্থা নির্দেশ করা।
২। আমাদের উচ্চশিক্ষা আজ এক বিরাট সংকটের সম্মুখীন। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার বর্তমান পদ্ধতি নানা দিক দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ সমাজের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগসূত্র বিহীন এ শিক্ষা সমাজের চাহিদা মিটাতে অক্ষম। অামাদের দেশে উচচশিক্ষা সরকারী চাকরিলাভের ছাড়পত্র মাত্র। কাজেই চাকরির সংস্থান হবার বা সম্ভাবনা ফুরাবার সঙ্গে সঙ্গে এ শিক্ষার কার্যকারিতাও নিঃশেষিত হয়ে যায়। অবশিষ্ট থাকে শুধু বেকারত্বের অভিশাপ। যে সমাজে প্রায় আশিজন নিরক্ষর সে সমাজে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত বেকারের অস্তিত্ব গোটা শিক্ষাব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা প্রভূত বিস্তার লাভ করেছে। প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা না করেই নতুন নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং চালু কলেজগুলির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত এরূপ সম্প্রসারণকটের ফল হয়েছে শিক্ষার উন্নত মান অর্জনের পরিবর্তে শিক্ষার মানের গুরুতর অবনতি।
৩। বর্তমানে সারাদেশে প্রথম ডিগ্রী (আন্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ে) শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ পচিশ হজার। এর মধ্যে বিজ্ঞানে প্রায় পয়ত্রিশ হাজার, বাণিজ্যে প্রায় ত্রিশ হাজার এবং অবশিষ্ট কলা বিভাগে শিক্ষারত। অথচ সমাজ ও জাতীয় জীবনের চাহিদার সঙ্গে এটা মোটেই সমঞ্জস নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে এরূপ আত্মঘাতী অবস্থা যে কোনো সমাজের পক্ষে অপরিসীম দুশ্চিন্তার কারণ হতে বাধ্য। শুধু বিভিন্ন বিষয়ে সংখ্যা সমতার দিক দিয়ে নয়, বরং মান ও গুণগত উৎকর্ষের দিক দিয়েও বর্তমান উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা জাতির জন্য এক ভীষণ উদ্বেগের কারণ।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তুলনায় তাদের অনুমোদিত কলেজগুলিতে শিক্ষার্থীদের ভিড় অধিক। অথচ মানদন্ডের দিক থেকে এ কলেজ গুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার বর্তমান পদ্ধতি নানাদিক দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ।এই পদ্ধতিতে জ্ঞানলাভের অন্যান্য উপায় বাদ দিয়ে মুখস্থ বিদ্যার উপর জোর দেয়া হয়। শিক্ষার্থীর গুণগত উৎকর্ষ বিচারের ক্ষেত্রে শুধু, পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করা হয়। উচ্চশিক্ষাস্তর ( অস্পষ্ট ) লাভবান হতে পারে এমন মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় সাধারণভাবে শিক্ষায় উচ্চমান বজায় রাখা সম্ভবপর হয় না। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহে খুব কম সংখ্যক শিক্ষক গবেষণা কর্মে রত থাকেন বলে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষাদানের কাজ সম্পর্কিত হয় না। এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুপযোগী, শিক্ষা উপকরণের অভাব এবং শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কের অসন্তোষজনক অবস্থা আদর্শ উচ্চ শিক্ষার পথে (অস্পষ্ট ) । ফলে, আমাদের উচ্চশিক্ষার মান শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ৪। উপরোক্ত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে একথা প্রতীয়মান হয় যে আমাদের উচ্চশিক্ষার আমলে পুনর্বিন্যাস অত্যবশ্যক। তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৫। বর্তমানে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সামাজিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন হওয়ার ফলে উচ্চ শিক্ষার মনের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক সার্টিফিকেট প্রাপ্ত বেকারের দল অনন্যোপায় হয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অহেতুক ভিড় জমাচ্ছে, অধিকন্তু তাদের অধিকাংশই কলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত পৃথিবীর বিত্তশালী উন্নত দেশগুলোতেও এরুপ নজীর মেলা ভার। অন্যদিকে সাম্প্রতিককালে বহু, নিচুমানের কলেজের প্রতিষ্ঠা ও পুরাতন কলেজগুলিতে শিক্ষার্থীর প্রচণ্ড ভিড়ের ফলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে মানের এত অবনতি ঘটেছে। উচচশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও তার অপচয় রোধের জন্য অনুমোদিত কলেজ সমূহের অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা সমবায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড এবং কলেজ সমূহের প্রতিনিধি সমবায়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি অবিলম্বে গঠন করা প্রয়েজন। ৬। জাতির ভাগ্য ও জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে উচ্চশিক্ষা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রয়োজনীয় শিক্ষিত জন সম্পদের চাহিদার প্রেক্ষিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিত করতে হবে। আমাদের উচ্চ প্রতিষ্ঠানগুলির দেশের বাস্তব সমস্যা বলীর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা উচিত হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের, মৌলিক নীতি ও মৌলিক গবেষণার প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশের বাস্তব সমস্যাবলীর প্রতি অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ৭। আমাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের কোন কোন বিষয়ের সিলেবাস সমূহ অনেক বছর যাবৎ অপরিবর্তিত রয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলো যুগের অনুপযোগী। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কারিকুলাম ও সিলেবাস যাতে দীর্ঘ সময়ের হাল অপরিবর্তিত না থাকে সে বিষয় নিশ্চয়তা বিধান করা অতীব প্রয়োজন। বিশেষ করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে নতুন নতুন শুনের আলোকে সর্বদা তাদের কারিকুলাম ও সিলেবাস সমূহ প্রয়োজন বিশেষ করে দেখতে হবে। ৮। যেহেতু শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জাতির অন্যতম লক্ষ্য সেহেতু, সমাজের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, উৎপাদন কাজে অংশ গ্রহণের ক্ষমতা এবং ভর্তি পরীক্ষায় তার ফলাফল হবে ভর্তির যোগ্যতার মাপকাঠি ৯। ডিগ্রী কলেজগুলিতে প্রথম ডিগ্রী পর্যায়ে পাস কোর্স ও অনার্স কোর্সের ব্যবস্থা থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রথম ডিগ্রি পর্যায় কোর্স, অনার্স কোর্স চালু থাকবে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের পরীক্ষামূলক একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উচচশিক্ষার জন্য কয়েকটি নির্বাচিত কলেজে তিন বছর মেয়াদী প্রথম ডিগ্রীর জন্য উচচমানের কোর্সের ববস্থা করা প্রয়োজন হবে। ১০। বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ ও ফলপ্রসূ বিজ্ঞান শিক্ষা ও সম্ভব নয়। আবার বিচ্ছিন্ন কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষা যাতে এক শ্রেণীর শিক্ষিত অংশকে যান্ত্রিক করে তুলতে না পারে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সমন্নয় ঘটানো যাতে সম্ভব হয় সে – উদ্দেশ্যে মানবিক ও বিজ্ঞান বিষয় সমূহে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের প্রয়োজন আছে। তদুপরি উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ব্যয় কোচের দিকে লক্ষ্য রেখে বর্তমানে বিশেষ এ পেশাভিত্তিক একমুখী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে সসমন্বিত পাঠক্রমের মাধ্যম কতিপয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ও অনার্স ও পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সে চালু; করা বাঞ্ছনীয়। এ সব কারণে প্রত্যেক সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে । কৃষি, কারিগরি ও চিকিৎসা বিষয়ক ফ্যাকাল্টি থাকা প্রয়োজন। – অনুরূপভাবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা ও অঙ্কশাস্ত্র এবং – কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা, । মৃত্তিকা রসায়ন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট – বিষয়ে অনার্স ও পোস্ট গ্রাজুএশন চালু করা বাঞ্ছনীয়। ১১। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণ গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য কয়েক হাজার গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে শিক্ষাপ্রাপ্ত ডিগ্রীধারীর প্রয়োজন হবে। এর চাহিদা মেটানোর জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা অকিঞ্চিৎকর। কেবলমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি-উত্তর প্রশিক্ষণের একটি ডিপ্লোমা এবং একটি মাস্টার ডিগ্রি কোর্স রয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণ গুহাগার চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের সকল সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী উত্তর ডিপ্লোমা ও মাস্টার ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তন করা প্রয়োজন। ১২। পূর্ণকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে খণ্ডকালীন শিক্ষার্থী ও শিক্ষায়তন বহির্ভাগ শিক্ষা উন্মুখ ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে হবে। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। খন্ডকালীন উচচ শিক্ষার প্রসারের জন্য রাজ্যের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ প্রকল্প চালু করার প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। (১৩ ২৫)। ১৩। সাধারণ বা বহিঃপরীক্ষার পরিপূরক হিসাবে নিয়মিত অন্তঃ পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা এবং সে অতঃপরীক্ষার গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। (১৩ ২৬–১৩ ২৭)। ১৪। গবেষণার মাধ্যমে শুধু, বিজ্ঞানের পরিধিই বর্ধিত হয় না বরং শিক্ষাদান কাজে দক্ষতা জন্মে। প্রধানত গবেষণার মাধ্যমেই শিক্ষকমণ্ডলী তাদের মানসিক সজীবতা বজায় রাখতে সক্ষম হন।তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে – ডিগ্রী কলেজ গুলিতেও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণার কাজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একযোগে অংশ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মৌলিক গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মৌলিক গবেষণার গুরুত্ব অক্ষম রেখে গবেষণার ও বিষয়বস্তু যথা সম্ভব দেশের প্রয়োজন এর ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য একই বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। যদিও ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধীত প্রত্যেক বিষয় ও নেম-এর উপর গবেষণা কাম পরিচালিত হৰে তথাপি প্রয়োজনবোধে বিশেষ কোন ক্ষেত্র বা বিষয়ের উপর অধিকতর গুরুত্ব – আরোপ করা যেতে পারে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রদের গবেষণা কার্যে নিয়োগের উদ্দেশ্যে যথেষ্ট সংখ্যক উচ্চমূল্যের গবেষণা ফেলোশীপের ব্যবস্থা করতে হবে। (১৩ ২৮—১৩ ৩২)। ১৫। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি ও পরিপূরক হিসাবে নিয়মিত অতঃ গবেষণাগার থাকা অত্যাবশ্যক। (১৩ ৩৩)। ১৬। প্রত্যেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকা প্রয়োজন। (১৩ ৩৪৮। ১৭। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ নিজেদের সমস্যা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে তাদের অনুমোদিত কলেজ গুলোর সমস্যা ও শিক্ষার মানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মনে যোগ দেয়ার সময় ও সুযোগের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে কলেজ গুলোতে শিক্ষার মানের দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং ছাত্রদের মধ্যে আজ যে অসন্তুষ্টি বিরাজমান ইহা তার একটি বিশেষ কারণ। বর্তমানে দেশের কলেজের এবং তাদের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেন। এ সব কারণে ; বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে পরিপূর্ণভাবে আবাসিক শিক্ষায় (অস্পষ্ট ) রূপান্তরিত করে কলেজগুলির অনুমোদন দান, তত্তাবধান, পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, পরীক্ষা পরিচালনা, ডিগ্রী প্রদান ইত্যাদির জন্য দেশের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের প্রত্যেকটিতে একটি করে চারটি অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অতীব প্রয়োজন। শিক্ষা দানকারী আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য সকল শিক্ষায়তনকে প্রস্তাবিত অনুমোদনকারী বিশ্ব বিদ্যালয়সমূহের আওতায় নিয়ে আসা অত্যাবশ্যক। (১৩ ৩৫-১৩ ৫১)। ১৮। খুলনা বিভাগে বাংলাদেশের জনসংখার এক পঞ্চমাংশের অধিবাস, এখানে ভবিষ্যতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রয়োজন। (১৩ ৫২)। ১৯। প্রস্তাবিত অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ স্থাপনের দশ বছর পরে এদের আওতাধীন কলেজ গুলোর কার্যাবলী পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এ কলেজগুলির মধ্যে উচচ মানের কয়েকটি কলেজকে বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজে পরিণত করা যায় কিনা সে ক্ষেত্রেও ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সমূহ সরাসরি ডিগ্রি প্রদান করবে না। এরা ছাত্র ছাত্রী ভর্তির নিজস্ব নিয়ম-কানুন তৈরী করবে। নিজস্ব পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করবে এবং নিজেরা পরীক্ষা পরিচালনা করবে। আর অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সাধারণভাবে এ সবের তত্তাবধান করবে ও ডিগ্রী প্রদান করবে। (১৩ ৫৩-১৩ ৫৬) ২০। সুষ্ঠ শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ নাই, এমন কোন নতুন কলেজকে অনুমোদন দান করা উচিত হবে না প্রয়োজন হলে স্বীকৃতিদান স্থগিত রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় কলেজগুলির স্বীকৃতি বাতিল করা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা বোর্ড সমূহের এখতিয়ার ভুক্ত থাকবে। (১৩ ৫৭)। ২১। প্রত্যেক কলেজে নিদিটি অঙ্কের সংরক্ষিত তহবিল থাকা দরকার। শিক্ষকদের মধ্যে নিরাপত্তার ভাব জাগিয়ে তােলার উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন খাতে আয়ের ব্যাংক এই বিল এবং পর্যাপ্ত সাধারণ তহবিল রক্ষার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। (১৩ ৫৮- ১৩ ৫৯)। ৪ ২২। শুধু কলেজের আয়তন বা ছয় সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সরকারী সাহায্য প্রদান করা উচিত নয়। সাহায্যদানের পূর্বকালে কলেজ কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচী শিক্ষকদের যোগ্যতা, শিক্ষার মান এবং ফলে যে সুনাম বিবেচনা করা প্রয়োজন। অর্থ সাহায্য তিন বছর বা উচিত যাতে কলেজ গুলো তদনুসারে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারী কলেজসমূহের পরিচালনা ব্যবস্থা সুদৃঢ় হওয়া উচিত। (১৩ ৬০- ১৩ ৬২)। ডিগ্রী স্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ্যা সারাংশ। ১। ডিগ্রী স্তরের কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য হচেছ উচচ শিক্ষিত বৈজ্ঞানিক, দষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন এবং বাস্তবধর্মী এমন এক শ্রেণীর নেতৃস্থানীয় কর্মী তৈরী করা যারা তাদের গভীর পেশাগত জ্ঞানের সাহায্যে বৈজ্ঞানিক সত্ৰসমই । মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে সক্ষম, যারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহার, দেশে বিভিন্ন প্রকার কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি উৎপন্ন কাঁচামাল ও শ্রম শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার, শিল্প কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার সমাধান এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম। (১৪১)। ২। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকৌশলী শিক্ষার পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য বিধান একান্ত প্রয়োজন। দেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রকৌশল শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা নির্ধারিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। (১৪ ৪ —ক)। ৩ প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা কোর্সগুলিকে অধিকতর ফলপ্রসূ করার জন্য পাঠ্যক্রমের অবিচেছদ্য অঙ্গ হিসাবে শিল্প কারখানা এবং কারিগরি সংস্থাসমূহে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। (১৪ ৪-গ)। ৪। দেশের সম্পদ উন্নয়ন বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার সমাধান এবং উচ্চমানের প্রকৌশলী তৈরির জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সের প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। প্রকৌশল শিক্ষায় সংখ্যার চেয়ে মানের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। (১৪*৪- ৫। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন শাস্ত্রের অনার্স ও পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু করা বাঞ্ছনীয়। (১৪ ৪-ট)। ৬। দেশের সব বৃহৎ শিল্প, বস্ত্র শিল্প ও পাট শিল্পের জন্য উপযুক্ত প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরির উদ্দেশ্যে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ডিগ্রী কোর্স সমূহ চালু করা প্রয়োজন। মান উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে কলেজগুলোকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। (১৪ : ৪-৫)। ৭। প্রকৌশল কলেজ গুলো এবং কারিগরি শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজের ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার মান উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে কলেজগুলিকে স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। (১৪ : ৪-৬) ৮। দেশের শিল্প কারখানা সমূহের কারিগরি সমস্যা সমাধানকল্পে প্রকৌশল শিক্ষকদের উপদেষ্টা প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিলে দেশের বিশেষজ্ঞ দের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। (১৪ : ৪ঘ) ৯। দেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্তরের কারিগরি শিক্ষার মূল্যায়ন এবং চাহিদা সম্বন্ধে সরকারকে পরামর্শ দানের উদ্দেশ্যে একটি কারিগরি শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা প্রয়োজন। (১৪ * ৮) ১০। কর্মরত প্রকৌশলীদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। (১৪৯) বিজ্ঞান শিক্ষা . ১। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। বিজ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি অধিকতর সমৃদ্ধি লাভ করছে। বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হচেছ সমাজের সামগ্রিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা। এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানের সঙ্গে জীবনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। সমাজের কল্যাণে বিজ্ঞানের সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে এরুপ যোগসূত্র স্থাপন হতে পারে। বিজ্ঞানের শিক্ষা এমন খাতে প্রবাহিত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা মনের, কল্যাণকর দিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষার সব স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষা উক্ত উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হবে। (১৫১-১৫২)। ২। প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান সিলেবাসে প্রতি পাঠ্য ফযিবিদ্যা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও সৃষ্টি বিজ্ঞানের ওপর জোর দিতে হবে এবং পঞ্চম শ্রেণীতে জীব বিজ্ঞানের সূচনা করতে হবে। (১৫৩)। ৩। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সমন্বিত কোর্স থাকবে এবং জীব বিজ্ঞান পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন প্রাধান্য লাভ করবে। (১৫’৪)। ৪। বিজ্ঞান শিক্ষাকে সাথর্ক করে তোলার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম, চার্ট মডেল ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। এ স্তরের পাঠ্যপুস্তক হবে সহজ ভাষায় লিখিত এবং আকর্ষনীয় চিত্রে সমৃদ্ধ। (১৫৫) । ৫। মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন বিদ্যা আবশ্যিক হিসেবে পড়বে। কলা ও বণিজ্য বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে সাধারণ বিজ্ঞান আবশ্যিক বিষয়রুপে পড়তে হবে। (১৫৬-১৫৭। ৬। মাধ্যমিক ও তনুরধ বিজ্ঞান সিলেবাসকে বিশেষভাবে উন্নীত করতে হবে যাতে অল্পকালের মধ্যে পৃথিবীর সব উন্নত দেশের মানের সমকক্ষ করা যায়। (১৫৯) ৭। বিজ্ঞান শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন শিক্ষাপ্রণালী প্রবর্তন করে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সহজতর ও উন্নততর করতে হবে। (১৫’১০)। ৮। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্কুল কলেজের বই-পুস্তক সাজ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফলে অনেক শিক্ষায়তনে বিজ্ঞান শিক্ষার উপকরণ বলতে কিছুই নই। জরুরী ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও বিজ্ঞানের বই সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। (১৫’১১) ৯। যে সব কলেজে বিজ্ঞান অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স খােলা হয়েছে সেগুলোকে উপযুক্ত শিক্ষক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ দ্বারা সম্বন্ধ করতে হবে। (১৫’১২)। • ১০। বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে শিক্ষকগণ যাতে তাল রেখে চলতে পারেন তার জন্য উপযুক্ত সঞ্জীবনী’ (রিফ্রেশ ) কোর্স স্বল্প মেয়াদী কোর্সের ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। (১৫’১৫) ১। আমাদের দেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে কৃষির প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। কৃষির উন্নতির জন্য বহু কুশলী এবং উচ্চ শিক্ষিত কৃষিবিদ তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে কৃষি শিক্ষাকে শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে এর বিস্তার সাধন করতে হবে। (১৬১)। ২। শিক্ষার প্রথম পত্র থেকেই পঠিতব্য বিষয়াদির মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে কবির গুরুত্ব সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে হবে। সমাজের দৃষ্টিতে কৃষিকার্যের প্রতি যে অবহেলা ও অবজ্ঞার মনোভাব বিদ্যমান দূরীকরণের জন্য সকল শিক্ষার্থীকে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যে অংশগ্রহণ করতে হবে। (১৬৫) ৩। মাধ্যমিক স্তরে কৃষি শিক্ষার বিস্তার সাধন করতে হবে। নবম দশম ও একাদশ শ্রেণিতে বাওফলক কৃষি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। (১৬৬), ৪। গ্রাম অঞ্চলের যেসব ছাত্র লেখাপড়া শেষ না করেই স্কুল পরিত্যাগ করে চলে যায় তাদের হতে কলমে কৃষিকার্য সম্বন্ধে শিক্ষা দান করায় ব্যবস্থা করতে হবে। (১৬৭)।৫। কৃষি কলাকুশলী তৈরি করার জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কৃষি শিক্ষায় ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট কোর্স চালু করতে হবে। (১৬৮) ৬। ডিগ্রী ও ডিগ্রী-উত্তর পরে কৃষি শিক্ষার বিস্তার ও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে প্রতি প্রশাসনিক বিভাগে একটি করে কৃষি কলেজ খুলতে হবে। রাজশাহী বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত কলেজটি দিনাজপুরে স্থাপিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই কলেজকে যাতে ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি এর বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা যায় তার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত কৃষি কলেজগুলিতে এসব অঞ্চলের উপযোগী কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেক সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ খুলতে হবে এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের সম্প্রসারণ করতে হবে। কৃষি গবেষণার উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে! । (১৬১০ ও ১৬১১)। । ৭। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা প্রাণিবিদ্যা মৃত্তিকা রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু করা বাঞ্ছনীয়। (১৬ : ১৩)। ৮। প্রাথমিক মাধ্যমিক এবং ডিপ্লোমা ও ডিগ্রী পর্যায়ের কৃষি শিক্ষকের শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। (১৬ •১৪) ৯। কৃষি শিক্ষার বিস্তার এবং উৎকর্ষ সাধনের জন্য কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন। (১৫:১৫) চিকিৎসা শিক্ষা ১। গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজন পূরণে আমাদের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা অক্ষম। বর্তমান ব্যবস্থায় হাসপাতাল কেন্দ্রিক নিরাময়মূলক চিকিৎসা শিক্ষার উপর অত্যধিক জোর দেওয়া হয়েছে অথচ সে তুলনায় প্রতিরোধ মূলক শিক্ষা এবং কমিউনিটি মেডিসিন এবং তৎ সম্পর্কিত সামাজিক সমস্যাবলির সমাধান শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপিত হয় না। বর্তমানে দেশে চিকিৎসক সেবক-সেবিকা চিকিৎসা কৌশল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা। রয়েছে। দেশের প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসা শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞের সংখ্যাও অপ্রতুল। তাই ব্যাপক জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনে বর্তমান চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিধি ও মানের পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমান চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজন পরিপুরণে সাক্ষী করার উদ্দেশ্যে নিরাময়ম চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা শিক্ষা এবং কমিউনিটি মেডিসিনের উপর যথাযোগ্য গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সমাজ পরিবেশে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের জন্য গ্রামীণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এ প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ মূলক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করবে। (১৭:১-১৭ : ১০)। ২। বর্তমান কোর্স ও শিক্ষা কার্যক্রম পাঠ্যপুস্তকের উপর বেশী নির্ভরশীল, দেশের প্রকৃত সাস্থ্য সমস্যাদির সঙ্গে সম্পর্ক তত নয়।। কোর্স ও শিক্ষা কার্যক্রম এমন হওয়া উচিত যেন দেশের প্রকৃত স্বাস্থ্য সমস্যা ও বিশেষ রোগসমূহ তার অন্তর্ভুক্ত থাকে। (১৭:১৩) ৩। বর্তমান যুগ অাচরণ বিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তুত একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে মানবদেহ, মন তার পারস্পরিক সম্বন্ধ সম্পর্কে তার জ্ঞানের উপর। কাজেই শিক্ষার্থীদের মনোবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের যথােপযুক্ত জ্ঞানদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (১৭:১৭)। ৪। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রোগ প্রতিরোধ সে লক্ষ্যের দিকে খেয়াল রেখে প্রতিরোধমূলক ও কমিউনিটি মেডিসিনকে চিকিৎসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও কার্যক্রমে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (১৭ ১৮)। ৫। জনস্বাস্থ্য পরিচালনা জনসংখ্যা পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান এসব বিষয়গুলোকে পাঠ্যক্রমের অাওতাভুক্ত করা উচিত। তাত্তিক শিক্ষা যথাসম্ভব সীমিত করে বাস্তবমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও হাতে কলমে কাজে অংশ গ্রহণের উপর জোর দিতে হবে। (১৭:১৯)।৬। দেশের চাহিদা মেটানোই চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষাদানের মূল উদ্দেশ্য। কাজেই দেশে যে সমস্ত রোগ বেশী দেখা দেয় সে সব রোগ সম্পর্কে বিশেষভাবে শিক্ষা দেওয়া দরকার। সামাজিক পরিবেশে মেডিসিন শিক্ষালাভের জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু দিন গ্রাম্য চিকিৎসা কেন্দ্রের বহির্বিভাগে কাজ শেখার ব্যবস্থা রাখা অপরিহার্য। মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সজাগ রাখা ও সে সম্বন্ধে তাদের শিক্ষাদানের জন্য প্রতিটি চিকিৎসা কলেজ হাসপাতালে মানসিক ব্যাধি বহির্বিভাগ ও হাসপাতালে রেখে মানসিক রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা উচিত। (১৭:২৪ ) ৭। সার্জারি শিক্ষা দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলির উপর ভিত্তি করে করতে হবে। এ জন্য সার্জারি চিকিৎসার উপযোগী রোগীদের নিয়ে প্রত্যক্ষ শিক্ষা এবং অস্ত্রোপচার সম্পর্কিত সার্জারির উপর আরও গুরত্ব দিতে হবে। সার্জারি চিকিৎসার প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য সার্জারি চিকিৎসকদের সাহায্য করার মাধ্যমে অস্ত্রোপচারসমূহে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। (১৭ : ২৫)। ৮। স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যার শিক্ষাদান দু’বছরব্যাপী হওয়া উচিত। এ বিষয়ে শিক্ষাদান যথাসম্ভব মৌলিক বিষয়সমূহ, মেডিসিন ও সার্জারি শিক্ষাদানের সঙ্গে সমন্বিত হওয়া উচিত। হাতে-কলমে প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানের উপরও অধিকতর জোর দেওয়া উচিত। (১৭২৭)। ১। চিকিৎসা শিক্ষা এরূপ হওয়া উচিত যাতে গ্রামের ব্যাপক জনসমাজ তার সফল পেতে পারে। এ জন্য গ্রামের চিকিৎসা সমস্যাদি সম্পকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকালের একটি নির্দিষ্ট সময় শিক্ষকের তত্তাবধানে গ্রাম্য চিকিৎসা কেন্দ্রে কাজ করা উচিত। (১৭২৮) ১০। লিখিত পরীক্ষা নূন্যতম মাত্রায় থাকবে এবং তা অবজেকটিভ ও সমস্যা সমাধান ধরনের হতে হবে। মৌখিক, প্রাকটিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে সব পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সমভাবে করার জন্য মৌখিক পরীক্ষার জন্য পূর্বনির্ধারিত প্রশ্নমালা থাকা উচিত। (১৭ : ২৯)। ১১। নব্য ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসক দের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার (ইন্টার্নিশীপ) ক্ষেত্রে ছয় মাস কাল কোন বিশেষ বিষয়ে এবং বাকী ছয় মাস বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। (১৭৩০)।১২। মেডিকেল কলেজ গুলোকে পরিচালনা ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং এরা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্টিটিউয়েন্ট কলেজ হিসেবে পরিগণিত হবে। এসব কলেজের সাথে পথিক হাসপাতাল থাকবে। চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধী্নে আনতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলি পরস্পরের মধ্যে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসচী প্রশাসনিক ইতাদি ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মত বিনিময়ের ও পারস্পরিক সমঝোতা সৃষ্টির জন্য একটি আন্ত মেডিক্যাল কলেজ বোড গঠন করা উচিত। (১৭’ ৩০-১৭’৩১) ১৩। বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক সৃষ্টির প্রয়োজনে পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসা শিক্ষা সম্প্রসারিত করতে হবে। জাতীয়ভিত্তিক চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সুবিধার জন্য রাজধানীতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যান্য মেডিক্যাল শিক্ষায়তন হাসপাতাল, গ্রন্থাগার এবং নানাবিধ গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জ্ঞানের আদান-প্রদান পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার জন্য অপরিহার্য। (১৭ : ৩২) ১৪। চিকিৎসকদের সহায়তা করার জন্য চিকিৎসক সহকারী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বার বছরব্যাপী শিক্ষার পর এ উদ্দেশ্যে জেলা হাসপাতালগলিতে দু’বছরের চিকিৎসা কোর্স চাল, করা যায়। এ কোর্সে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিকের উপর জোর থাকবে। (১৭ : ৩৩)। ১৫। দেশে দন্ত চিকিৎসকদের অভাব রয়েছে। সে জন্য আরো দত্ত চিকিৎসা কলেজ স্থাপনসহ দন্ত চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। (১৭ : ৩৪)। ১৬। সেবা কর্মে নিয়োজিত কর্মীদের প্রতিটি স্তরের কাজ ও ভূমিকা মধ্যে পৃথক বিভাগ থাকা উচিত। সেবক-সেবিকাদের, চাকরি ব্যবস্থা ও শিক্ষায় সেবাকর্মীদেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। যোগ্য সেবাকর্মীদের শিক্ষাদান ত্বরান্বিত করা উচিত। (১৭:৩৫) ১৭। প্যারামেডিক্যাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। (১৭৩৬) ১৮। হোমিওপ্যাথি ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রণালীর মূল্যায়নের জন্য বিশেষ কমিটি গঠিত হওয়া উচিত। (১৭:৩৭) বাণিজ্য শিক্ষা সারাংশ। ১। আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে বাণিজ্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পকারখানা পরিচালনার জ্ঞান ও যোগ্যতা বাণিজ্য শিক্ষার মাধ্যমে _ অর্জন করা সম্ভব। বিভিন্ন স্তরের ই অফিস সহকারী, তত্ত্বাবধায়ক এবং উচ্চ পর্যায়ের কার্যনির্বাহক গণ তৈরীর জন্য বাণিজ্য শিক্ষার বিস্তার এবং উৎকর্ষ সাধন অত্যাবশ্যক। (১৮, ১১৮:২) ২। মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক বাণিজ্য শিক্ষার বিষ্ঠার সাধন করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় টাইপ মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। (১৮৬ -ক)। ৩। অফিস, আদালত ব্যাংক, শিল্প কারখানা প্রভৃতিতে শিক্ষাথীদের ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। (১৮৬-খ) s। পলিটেকনিকের সঙ্গে সংযুক্ত কমাশিয়াল ইনস্টিটিউগলিকে স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট গুলিতে বীমা, ব্যাংকিং বাণিজ্যিক পদ্ধতি এবং সেলসম্যানশিপেও ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা প্রয়োজন। কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য সাধ্যকালীন কোর্স চাল, কয়া ব্যরো থাকা বাঞ্ছনীয়। (১৮:১১) ৫। দক্ষ শিক্ষকের অভাব দূর করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থা চাল, করতে হবে। শিক্ষকদের রিফ্রেসার কোর্স দেওয়ার জন্য গ্রীষ্মকালীন বাণিজ্য শিক্ষা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। (১৮ ৬-য, ১৮:১২)। ৬। বৃত্তিমূলক বাণিজ্য শিক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা ফাতে সরকারী ও বেসরকারী অফিস, এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সমূহে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চাকরি পেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মাবলীর সংশোধন করা প্রয়ো জন। (১৮৬-ছ). ৭। যেখানে সম্ভব মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্য শিক্ষার ব্যবস্থা। করা উচিত। (৯৮৬-জ)। ৮। ডিগ্রী ও ডিগ্রি উত্তর পর্যায়ে বাণিজ্য শিক্ষাক্রম অধিকতর বাস্তব ভিত্তিক করার জন্য, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। (১৮৮)। ৯। উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য শিক্ষকদের শিল্প-কারখানা এবং ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা রূপে কাজ করার সুযোগ দিলে তাদের শিক্ষাদান কার্য বাস্তবভিত্তিক হবে এবং শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান-শি নের সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য ফ্যাকাল্টিতে এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো, থাকা বাঞ্ছনীয়। (১৮:১১, ১৮১৩) ১০। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য ২ অনুষদ, বাণিজ্য শিক্ষা ও গবেষণার উপর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের + ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট’ পেশার গত প্রশিক্ষণের ওপর অধিকতর জোর দেবে। (১৮:১৪)। ১১। বাণিজ্য শিক্ষা পদ্ধতি এ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির উপযোগী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে’। (১৮:১৫)। আইন শিক্ষা। – ১। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন শিক্ষার ধারা সম্বন্ধে জনসাধারণ এবং আইনজীবী সকলেই অনেক সমালোচনা করেছেন। গত কয়েক ” বছরে আইন শিক্ষার মানের যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে আইন শিক্ষা দেবার জন্য যে ব্যবস্থা প্রচলিত তা প্রধানত আইন শিক্ষার অবনতির কারণ। এসব আইন কলেজের অনেক গুলিতে উপযুক্ত পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাব। আইন কলেজ গুলিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ছাত্র সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আইন কলেজগুলিতে গবেষণার কোন ব্যবস্থা নাই। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আইন ফ্যাকালটিগুলিতে গবেষণার কাজ হচ্ছে না। বিচার বিভাগ এবং আইন ব্যবসায়ের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ গুলি অাইন তৈরি করছে কিন্তু আইনে্র গল্পের সমৃদ্ধ করার জন্য যে বিদ্যাবত্তা প্রয়োজন তা ” সৃষ্টির কোন প্রয়াস নাই। আইন ও বিচার পদ্ধতির সংস্কার, উন্নতি ও বিকাশের জনা যে শিক্ষার প্রয়োজন তার ব্যবস্থা নেই। কলেজগুলিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে আইন শিক্ষার শিক্ষাগত ও গবেষণা মুখী দিকএবং ব্যবহারিক ও প্রয়োগমুখী দিক, কোন দিকে সন্তোষজনকভাবে পূরণ হচ্ছে না। (১৯:১-১৯৪) ২। আইন শিক্ষা যদিও মাস্টার ডিগ্রীর মত একটি ডিগ্রী-উত্তর কোর্সে তবে মাস্টার ডিগ্রী কোর্সের মত মেধা পরীক্ষা করে আইন কোর্সে ভর্তি করা হয় না বলে নিম্নমানের শিক্ষার্থীরাও আইন শিক্ষার সয়ে নেয়। এসব নিম্নমানের শক্ষাথীদের অনেকে পরবতী পর্যায়ে পায় জন্য নীতিবহিভত পন্থা অবলম্বন করে এবং আইন শিক্ষার মানের অবনতি ঘটায়। বর্তমান ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনমোদিত আইন কলেজগুলিতে আইন শিক্ষার যে ব্যবস্থা চালু, রয়েছে তা অধ্যয়নকালের দিক দিয়ে বিভিন্ন রকমের এবং তাদের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচীও ঠিক এক নয়। (১৯:৪-১৯৫)। ৩। উপরের বিষয়গলি বিবেচনা করে অইন শিক্ষাকে এর যথাযোগ্য মর্যাদায় উন্নত করার জন্য কতকগলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কোন অনুমোদিত বিশববিদ্যালয়ের যে কোন বিভাগের প্রথম ডিগ্রীর পর আইন কলেজগুলিতে এলএলবি কোর্সের মেয়াদ বর্তমান দু’বছরের হলে তিন বছর হওয়া আবশ্যক। আইন কলেজগলিতে এলএলবি কোস দু’ভাগে বিভক্ত হবে। প্রথম অংশের মেয়াদ দুই ও দ্বিতীয় অংশের মেয়াদ এক বছরে হবে এবং প্রতি অংশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা গ্রহণ করবেন। প্রথম দুই বছর আইনের ইতিহাস, মৌলিক বিষয়সমূহ এবং সূত্র পাঠে ব্যয়িত হবে। তৃতীয় বর্ষে দলিল প্রণয়ন, সওয়াল-জওয়াব আজিম-সাবিদা, মামলা পরিচালনা বিধি ইত্যাদির ব্যবহারিক বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। যারা শুধু জ্ঞান আহরণের জন্যই আইন পড়তে চান, তাদের কোর্সের প্রথমাংশ সমাপ্তির পর একাডেমিক বা শিক্ষাগত ডিগ্রি দানের প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ বিবেচনা করতে পারেন। তবে যারা আইনকে বৃত্তিরপে গ্রহণ করতে চান, তাদের কোর্সের দ্বিতীয় অংশ অবশ্যই সমাপ্ত করতে হবে এবং এ অংশের পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদের ডিপ্লোমা-ইন-এডভোকেটশীপ প্রদান করা হবে। এই কেস সমাপ্তির পর। আইন ব্যবসায়ে যোগদান করা যাবে। অবশ্য আইন ব্যবসায় প্রবেশ লাভের যোগ্যতা সুপ্রিম কোর্ট/বর কাউন্সিল নির্ধারণ করবেন। (১৯৬–১৯৮)। ৪। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আইন শিক্ষার যে ব্যবস্থা রয়েছে তার অধ্যয়নকাল একই হওয়া উচিত এবং আইন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষাক্রম ও পাঠামচীর মধ্যে সামঞ্জস্য থাক! আয়োজন। বর্তমানে দেশে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য তিন বছরের যে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে তার অধ্যয়নকাল চার বছর করতে হবে। এর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি (অনাস কোসের অধ্যয়নকালে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর করা উচিত। রাজশাহী। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের বি জর। অনার্স কোর্সের নাম বদলিয়ে তাকে চার বছরের এলএলবি (অনার্স)কোর্স নামে চাল করতে হবে। এই চার বছরের এলএলবি (অনাস) কোসের সঙ্গে বর্তমান এম, জরের এক বছর অধ্যয়নকালে যুক্ত হবে অর্থাৎ এম জর নামে পথক কোন ডিগ্রীর ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজন হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম ডিগ্রি অধ্যয়ন কাল এক বছরের স্থলে দু’বছরের করা উচিত। এ১ ঢাকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএম ডিগ্রি অধ্যয়নকালে এলএলবি (অনার্স) ডিগ্রির পর দু’বছর হবে। এ দু’বছরের এলএলএম ডিগ্রি অধ্যয় নের জন্য দেশের বিভিন্ন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি প্রাপ্ত শিক্ষাথীরাও উপযুক্ত বিবেচিত হবেন। দু’বছরের মাস্টার ডিগ্রী কোস দু’ভাগে বিভক্ত হবে। প্রথম অংশ হবে কোর্স কার্যক্রম এবং দ্বিতীয় অংশ হবে কোর্স কার্যক্রম অব। থিসিস কার্যক্রম। যারা প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় অংশেই কোর্স কার্যক্রমে যোগদান করে পরীক্ষায়। উত্তীর্ণ হবেন তাদের ও এলএলএম ডি গ্র। প্রদান করা হবে। যারা প্রথম। অংশে কোস কার্যক্রম ও দ্বিতীয় অংশে থিসিস কার্যক্রম-এ যোগদান । করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন তাদের এমফিল ডিগ্রী প্রদান করা হবে। (১৯৯-১৯:১৩) ৫। আইন ও বিচার পদ্ধতি সংস্কার, উন্নতি ও বিকাশ আইন। শস্যকে সমৃদ্ধ এবং সমাজের নতুন। নতুন প্রয়োজনের সঙ্গে আইন শিক্ষা ও তার ব্যবহারিক অনুশীলনের সামঞ্জস্য বিধানের জন্য আইন গবেষণা প্রয়োজন। (১৯:১৪) ৬। যেসব আইন কলেজ প্রকৃতই পান্ডিত্য ও সুস্থ, শিক্ষার কেন্দ্র সাধ; সেগুলোকেই অনুমোদন দান করা উচিত। কলেজের অনুমোদনের ব্যাপারে শিক্ষক, কলেজ গহ ও স্থান লাইব্রেরী অন্যান্য সুবিধা এবং টিউনার ও প্রাকটিক্যাল কার্য সম্পর্কে অন্যান্য সাধারণ কলেজের ক্ষেত্রে আরোপিত শর্তাদি প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং এগুলো কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে। ৭। আইন কলেজের শিক্ষকগণ শধ, পণকালীন ও নিয়মিত শিক্ষক বা শধ; খণ্ডকালীন শিক্ষক হবেন। বরং উভয় শ্রেণীর মিশ্রণে শিক্ষক মডেল। গঠিত হবে। (১৯১৬) ৮। একই সঙ্গে সততার সঙ্গে ছাত্র বাছাই এবং শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। আইনের শিক্ষক নিয়োগকালে তাদের প্রকাশিত গবেষণা কম এবং গবেষণা পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে তাদের যোগ্যতা বিচার করে দেখতে হবে। (১৯:১৭) ৯। আইন শিক্ষার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে উপষক্ত শিক্ষা প্রতি ঠান স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। যোগ্য আইন শিক্ষা কলেজগুলিকে অন্যান্য বেসরকারী সাধারণ কলেজের ন্যায় অনতিবিলম্বে সরকারী সাহায্য মঞ্জুর করা প্রয়োজন। (১৯:১৯)। ১০। আইন কলেজসমূহের প্রশাসন, পরিচালনা ও উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য দায়িত্বশীল ও কর্মঠ গভর্নিং বডি গঠন করা দরকার। (১৯২০) -১৯২১)। ১১। এ ছাড়াও নিম্নলিখিরা সত্ব কার্যকরী করা দরকার (ক) ব্যবহারিক বা প্রয়োগমুখী আইন শিক্ষাদানের নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ বর কউসিলকে গ্রহণ করতে হবে। এবং যতদিন উক্ত কাউন্সিল তা না নিতে পারবেন ততদিন পর্যন্ত সে দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ পালন করতে হবে।। – (খ) বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পর দশক, আইন বিভাগের প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট আইনজীবী বা আইনবিদ নিয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত আইন কলেজ গুলির ব্যবস্থাপনা ‘দারক করবেন এবং যে সকল কলেজ তিন বছরের মধ্যে ব্যবস্থাপনার নিয়ম পদ্ধতি সম্পূর্ণ বক্তবয়ত করতে পারবে না সে সকল কলেজের অনুমোদন উক্ত তিন বছর সময়সীমা শেষে আর বর্ধিত হবে না।। (গ) প্রথম ডিগ্রী পর্যায়ে আইনকে একটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। (ঘ) বর্তমানে দু বছর মেয়াদী এল এলবি ডিগ্রীপ্রাপ্ত বা আইনে তিন বছর মেয়াদী অনার্স বা অনুরূপ ডিগ্রীপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েট আইন ব্যবসায় যোগ দিতে হলে এক বছর মেয়াদী একটি ব্যবহারিক (প্রফেশনাল) ) কোর্স পাস করতে হবে। (১৯২২) ললিতকলা শিক্ষা সারাংশ ১। দেশের সামগ্রিক শিক্ষা প্রকল্পে ললিতকলা শিক্ষাদান ব্যবস্থা প্রধানত দুটি উদ্দেশ্য সাধন করে। প্রথমত ললিতকলা শিল্প একটি জাতিকে অধিকতর সংস্কৃতিবান জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে, দ্বিতীয়তঃ দেশের মানুষের ভেতর সৌন্দর্য বোধ জাগ্রত ও বর্ধিত করার মাধ্যমে তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, সাধন করে। মানষ তার স্বকীয় জয় রেখেও ব্যবহারিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একক এবং সমবেতভাবে সামাজিক উন্নতি ও , অগ্রগতির সাহায্য করতে পর। ‘ই আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ললিতকলা শিক্ষার স্থান কি তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ২। সুন্দরবোধ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষের সকল মৌলিক চাহিদার মধ্যে সৌন্দর্য বোধ বিকাশের চাহিদাও অন্যতম। মানুষের মনে সুন্দরের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ বিরাজমান। তাকে অবহেলিত না রেখে পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য একটি সংস্থা, সাবলীল ও উপযুক্ত পরিবেশ ও সঠিক কার্যক্রম গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। ললিতকলা শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশের অর্থাৎ সুন্দর প্রাকৃতিক আবেষ্টনী, সামঞ্জস গহ পরিকল্পনা, পরিকল্পিত পচেপাদ্যান, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জাদুঘর, চিত্রশালা সঙ্গীত পাঠাগার সযত্নে রক্ষিত সৌন্দর্য কোণ ইত্যাদির গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক কার্য ক্রম বলতে বিজ্ঞানসম্মত পাঠ্যসূচি প্রদর্শন শিক্ষকমন্ডলী, উপযুক্ত শিক্ষাপোকরণ ইত্যাদির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ বঝায়। (২০ ৪- ২০ : ৫) ৩। পাঠ্যসূচি প্রধানতঃ নিম্ন লিখিতভাবে বিভক্ত করে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে পড়ার। ব্যবস্থা করা যেতে পারে ? ১। সঙ্গীত (গীত ও বাদ্য) ২। নৃত্যকলা ৩। অভিনয় (আবৃত্তি সহ) ৪। চিত্রাংকন (নকশা অংকন ৫। কার শিল্প বা হাতের কাজ। ৬। ভাস্কর্য। পাঠ্যসূচি প্রণয়নের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে দেশের ঐতিহ্যের, বিশেষ করে পল্লী ত অঞ্চলের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে মৌলিক যোগাযোগ রক্ষিত হয়। শিক্ষালাভের সঙ্গে ন যাতে জীবিকা অর্জনের পথ সুগম হয় তার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। – (২০ • ৭- ২০ : ৮৮ ৪। সুপারিশসহ (ক) বিশেষ বিশেষ ললিত কলা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথা, সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকলা শিক্ষা প্রতি ষ্ঠানে প্রত্যেকটি বিষয়ে ডিগ্রি ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট পর্যায়েও শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকবে। (খ) বিশ্ব বিদ্যালয়সমূহে ললিতকলা অনুষদ খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। (গ) দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক মহাবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে ও (ঘ) সকল প্রকার শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ললিতকলা শিক্ষার ব্যবস্থা, থাকতে হবে, শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রে ললিতকলার সঞ্জীবনী কোর্স চালু করতে হবে । (ঙ) জাতীয় চিত্রশালা শিল্পকলা জাদুঘর, সঙ্গীত পাঠাগার রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি জেলা শহরে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের চিত্রশালা, জাদুঘর, সঙ্গীত পাঠাগার ও রঙ্গমঞ্চ স্থাপন করতে (চ) ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী এবং সঙ্গীত ও নাট্য গোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে । (ছ) অবিলম্বে একটি জাতীয় ললিতকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে দেশের ঐতিহ্যবাহী সুকুমার কলা সম্পর্কে গবেষণা এবং তার প্রসারের জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, (জ) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব মূলক চিত্র, ভাস্কর্য ও কারু শিল্পের নিদর্শন সমূহের আনয়ন এবং আমাদের দেশের অনুরূপ শিল্পকর্ম বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গীত নৃত্য ও নাট্য শিল্পী সমন্বয়ে গঠিত সাংস্কৃতিক দল বিদেশে প্রেরণ এবং বিদেশ থেকে অনুরুপ দল আনয়ন করা উচিত, (ঝ) নিয়মিত শিক্ষাকোষ এর বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য সান্ধ্য ও খন্ডকালীন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে। (ঞ) চাকরির অর্থনৈতিক মান ও তাদের সামজিক মর্যাদা যথেষ্ট এ পরিমাণে উন্নত করতে হবে, ৪ (ট) মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1976.01.09-bichitra.pdf” title=”1976.01.09 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!