You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল মোস্তফা কামাল

প্রশ্ন: আপনি ভারতে গিয়েছিলেন কবে?
উত্তর: আমি মে মাসের ১৫ তারিখে ভারত গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে লে: মালেক গিয়েছিলেন। আমাদের দু’জনকে নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে গাইড ছিল।

প্রশ্ন: আপনারা বরিশাল থেকে ঢাকা এলেন এবং কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া যায় সেই আন্ডারস্ট্যান্ডিং- এ আপনারা ঢাকা থেকে আগরতলা গেলে মে মাসে। সেখান থেকে আপনারা কোথায় গেলেন?
উত্তর: আগরতলা একটা বড় জায়গা। আগরতলার একটা জায়গার নাম সোনামুড়া। সোনামুড়া বর্ডার এলাকা। সেখানে ২নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল। আমরা প্রথমে যাই এবং গিয়ে রিপোর্ট করি। আমার পরিচয় দেয়ার ফর্মালিটি যা করার সেগুলো হলো। খালেদ মোশারফ ২নং সেক্টরের চার্জে ছিলেন। তাকে মাঝে মাঝে নানা জায়গায় নানা সাবসেক্টরে যেতে হতো। সেদিনও তিনি গিয়েছিলেন, ফলে তার সাথে তখন দেখা হয়নি; কিছুদিন পরে দেখা হয়েছিল। তখন ছিলেন ক্যাপ্টেন হায়দার সাহেব- পরে লে: কর্নেল হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তখনকার বলা চলে সেকেন্ড ইন কমান্ড সেক্টর তিনি ছিলেন ট্রেনিং সেন্টারের ইনচার্জ। ২নং সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ট্রেনিং দেয়া হতো ছাত্রদের এবং যারা আর্মি পারসন না তাদের। গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হতো এবং তাদের অস্ত্র দিয়ে ভেতরে পাঠানো হতো। এই ট্রেনিং সেক্টরটা প্রথমে সোনামুড়ায় ছিল, পরে নানা দিক বিবেচনা করে মে মাসের শেষ সপ্তাহে সোনামুড়া থেকে মেলাঘরে স্থানান্তরিত করা হলো।

প্রশ্ন: আচ্ছা আমি তো মেলাঘরে ট্রেনিংটা সেন্টারে গিয়েছিলাম, কোন বিশেষ অস্ত্রের উপর দেয়া হতো নাকি সাধারণভাবে নানা অস্ত্রের উপর দেয়া হতো?
উত্তর: প্রথমে সময় কম থাকায় তাড়াতাড়ি ১৫/১৬ দিনের মধ্যে একটা রাইফেল ট্রেনিং দেয়া হতো। তারপর কিভাবে গ্রেনেড ছুড়তে হয়, কিভাবে প্রিকশন নিতে হয় এবং যারা ব্রীজ ধ্বংস করবে অর্থাৎ কিভাবে ব্রীজ ডিমোলিশন করতে হবে- এসব ট্রেনিং দেয়া হতো। প্রথম দিকে খুব তাড়াতাড়ি ট্রেনিং দিয়ে ভিতরে পাঠানো হতো।

প্রশ্ন: আপনি এখানে কয় মাস ছিলেন?
উত্তর: আমি ২/৩ মাস ছিলাম। এরপর আমাকে সেক্টর থেকে আগরতলায় বিগ্রেড হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়।

প্রশ্ন: হেডকোয়ার্টারে কাজ কি ছিল?
উত্তর: যেহেতু বাংলাদেশ ফোর্সের হেডকোয়ার্টার ছিল কলকাতায় সেহেতু ইনসাইডে অর্থাৎ ইস্টার্ন সাইডে আমাদের ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার সাব হেডকোয়ার্টার হিসেবে কাজ করেছে- কলকাতাকে জেনারেল হেডকোয়ার্টার ধরলে এদিকের অর্থাৎ ইস্টার্ন সাইডের কো-অর্ডিনেশন করার জন্য যে সাব হেডকোয়ার্টার ছিল সেটার অবস্থান ছিল আগরতলায়। সেখানে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লে: কর্নেল রব সাহেব। তিনি তখন সিলেটের এমপি ছিলেন। তিনি ছিলেন, মেজর আফতাব চৌধুরী ছিলেন, স্কোয়াড্রন লিডার শামসুল হক ছিলেন যিনি এখন ডাইরেক্টর জেনারেল, মিলিটারি সার্ভিসেস। তারপর একজন সিভিলিয়ান ডাক্তার ডা: আলী। ২নং সেক্টর থেকে আমাকে বলা হলো সেখানে যেতে হবে, তাই যেতে হয়েছিল। সেখানে জুলাই এর শেষের দিকে কিংবা আগস্টের প্রথম দিকে গিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: ওখানে আপনার দায়িত্ব কি ছিল ?
উত্তর: যেহেতু বিডিএফ (বাংলাদেশ ফোর্সেস)-এর প্রধান কার্যালয় ছিল কলাকাতাতে এবং ইষ্টার্ন সাব হেডকোয়ার্টার ছিল আগরতলায় এই দুটোর মধ্যে কো-অর্ডিনেশনের জন্য। যেমন কোন অপারেশন প্ল্যান পাঠানো হলে সেটা কার্যকরী করা, বিভিন্ন সাব সেক্টরে প্ল্যান ম্যাসেজ ফরমে পৌঁছে দেয়া, যে অপারেশন তারা করছে, পরবর্তীতে তারা কি অপারেশন করবে সেগুলোর প্ল্যান তৈরি এবং সেটার প্রসেসিং ইত্যাদি করা হতো আমাদের ইষ্টার্ন সাব- হেডকোয়ার্টারে। সাব- হেডকোয়ার্টার আবার পরবর্তীতে এ সমস্ত ম্যাসেজ, প্ল্যান প্রোগ্রাম পৌঁছে দিতো বাংলাদেশ ফোর্সের প্রধান কার্যালয় কলকাতাতে।

প্রশ্ন: আপনারা কি ধরনের যুদ্ধ করছিলেন?
উত্তর: প্রথম দিকে গেরিলা যুদ্ধ, পরে দিকে অর্থাৎ একদম শেষের দিকে নিয়মিত যুদ্ধ- যাকে বলে সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল।

প্রশ্ন: আপনি ওখানে কতদিন ছিলেন?
উত্তর: ওখানে বেশ কিছুদিন ছিলাম। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমি আবার মেলাঘরে চলে আসি।

প্রশ্ন: মেলাঘরে কিসের জন্য পাঠানো হয় আপনাকে ?
উত্তর: তখন অলরেডী যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ট্রেনিং- এর কাজ প্রায় শেষ। হয়তো তখন হেডকোয়ার্টার থেকে সেক্টরে বেশি প্রয়োজন ছিল সেজন্য সেক্টরে পাঠানো হয় আমাকে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য। কেননা, তখন পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল, যাকে বলে কনভেনশনাল ওয়ার।

প্রশ্ন: আচ্ছা, ইন্ডিনিয়ান আর্মিদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল? যেমন- কোন কোন ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান আর্মিরা প্ল্যান- প্রোগ্রাম করেছিল, যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর্মিদের মধ্যে মতান্তর ঘটেছে। আপনাদের সাথে এমন কিছু কি হয়েছিল?
উত্তর: দেখুন, কনভেনশনাল ওয়ারের আগে সবটাই বাংলাদেশ আর্মি প্ল্যান- প্রোগ্রাম করেছিল। বাংলাদেশ ফোর্সের যে হেড অফিস ছিল সেখানকার নিদের্শনাবলী চূড়ান্ত । তবে ইন্ডিয়ান আর্মি নানান দিক থেকে সার্পোট দিয়ে, যেমন আর্মস অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: আপনাকে আরেকটা প্রশ্ন রাখি। আপনি মে মাসে এত তাড়াতাড়ি ইন্ডিয়ায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়েছিলেন কেন? কেননা, আমরা জানি তখন পুরো বাংলাদেশে যুদ্ধ চলছে। তখনও খোলাখুলি কোথাও বাংলাদেশ ফল করেনি, আপনি আগেই যেতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর: তখন খণ্ড খণ্ড গেরিলা যুদ্ধ হয়েছিল। অলরেডি তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। তখন আমরা ভাবলাম একটা কিছু করতে হলে নিয়মিত বাহিনীর পক্ষে দেশের ভেতর থেকে করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় পক্ষের সাহায্য দরকার। সেই দ্বিতীয় পক্ষ যে ইন্ডিয়া তা আমরা ধরে নিয়েছিলাম এবং বেতার ও অন্যানো লোকের মারফত জানতে পেরেছিলাম। সেজন্যই ইন্ডিয়ায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করি।

*প্রকল্প কর্তৃক ৮-১০-৭৯ তারিখে কুমিল্লা সেনানিবাসে গৃহীত সাক্ষাৎকার।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!