You dont have javascript enabled! Please enable it!

Daturmura Theatre
(দাতুরমুড়া থিয়েটার)

১। দাতুরমুড়া – এটা বাংলাদেশ ও আগরতলা বর্ডার থেকে ১ মাইল দূরে। এটা কসবা পুলিশ স্টেশনের একটি গ্রামের নাম।। স্থানীয় ভাষায় কোন উঁচু জায়গার চারপাশে যদি নিচু এলাকা বা পানি বেষ্টিত থাকে তাহলে তাকে মুড়া বলা হয়। যে মুড়া সম্পর্কে বলছি সেই নামেই গ্রামটির নাম দাতুরমুড়া। ৯ মাস ধরেই এই এলাকাটি এবং তাঁর আশেপাশে পাকসেনাদের থেকে মুক্ত ছিল – এবং তাই মুক্তিযোদ্ধাদের থেকেও। এখানে মিলিটারি গুরুত্তপূর্ণ নয়। এখান দিয়ে কোন যোগাযোগ পথ ও চলে যায়নি। পাকসেনা ও তাদের দোসরদের ভয়ে গোপীনাথপুর, মানিয়ান্দ, নেমতাবাদ সদ্য আরও অনেক গ্রামের মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। যুদ্ধের সময় এই জায়গাটি বাঙ্গালীদের জন্য বেহেস্ত বলা যায়।

২। লন্ডন থেকে মিসেস মেরির নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ রীপোর্টার গ্রুপ সেক্টর কমান্ডার খালেদ মশাররফ কে অনুরধ করেন বাংলাদেশের ভেতরে কোথাও শুটিং এর থিয়েটার এর আয়োজন করার জন্য। প্রজেক্ট এর উদ্যেশ্য ছিল মুক্তিবাহিনীর কর্মকান্ড নিয়ে। সেই অনুযায়ী ২ নং সেক্টরের কমান্ডার সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর মুহাম্মাদ আইনুদ্দিণ কে মুক্তি বাহিনীর একটি বেস তৈরি করতে বলেন – এমন একটি জায়গায় যেটিতে শত্রু আক্রমণের সম্ভবনা নেই এবং যেখানে বিদেশী রীপোর্টাররা নিরাপদ। সুদূর লন্ডন থেকে আসা রীপোর্টারের দলটি আমাদের কার্যক্রমের ছবি তোলার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। কিন্তু সংগত কারণেই আমরা উৎসাহ দেখাচ্ছিলাম না। আমরা চাইনি একজন বেসামরিক রীপোর্টার – যে দেশের সম্পদ – শুধু তাঁর পেশাগত দক্ষতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিক। আমাদের যুদ্ধের কারণ ছিল। এটা জাতীয় পর্যায়ের। আমরা বাঙ্গালীরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মাত্রুভুমিকে স্বাধীন করতে না পারব – ততোক্ষণ আমরা বিনা বাঁধায় থাকার জন্য নিজেদের একটি ভূখণ্ড পাবনা – এবং স্বাধীন বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন নাগরিক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারবনা। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় কারণ ছাড়াও বিশেষ কারণ ছিল। সত্যি বলতে আমি আমার ইস্ত্রি ও দুই কন্যা – যারা আমার জীবনের সব – তাদের কাছে যেতে চাইছিলাম। তারা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এর ইস্পাহানী স্কুলে পাকসেনাদের কাছে বন্দী আছে। আমাকে এ দেশ থেকে দখলদার বাহিনীকে তাড়িয়ে আমার পরিবারকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু রিপোর্টারদের জন্য হয়তো এটি তাদের পেশাগত অথবা শখ – যাই হোক না কেন তারা হয়ত এর জন্য অনেক টাকাপয়সা পাবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জীবন নিয়ে খেলতে পারি কিন্তু তাদের জন্য এটাসঠিক হবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। কিন্তু মিসেস মেরী, তাঁর ক্যামেরা ম্যান এবং রেকর্ডার কে মনে হল তারা ঝুঁকি নিয়ে হলেও যাবেন। আমি যতোই জীবনের ঝুঁকির কথা বলি তারা ততই তাদের শুটিং এর কথা বলছিল।

৩। সেক্টর কমান্ডারের কথা অনুযায়ী আমি একটি অস্থায়ী গেরিলা বেইজ তই করি। সেখানে নিম্নোক্ত ব্যাবস্থা ছিল –
ক) সেখানে কিছু রানার আয়োজন থাকবে যাতে মানুষ বুঝতে পারে গেরিলারা নিজেদের রান্না তৈরি করে।
খ) পাকিস্তানের অর্ডিনান্স ফ্যাক্টরি মার্ক চিনহিত কিছু গোলাবারুদের বাক্স থাকতে হবে – যেটা দেখিয়ে বলা হবে যে মুক্তিবাহিনীরা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছ থেকে এগুলো ছিনিয়ে এনেছে।
গ) কিছু অপ্রস্তুত এলোমেলো বিছানা যেখানে এইমাত্র অপারেশন শেষ করে এসে মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমাচ্ছে
ঘ) স্থানীয় প্রতিরক্ষা হিসেবে বেইজের চারপাশে কিছু ট্রেঞ্চ
ঙ) গাছের উপড়ে ১/২ জন মানুষ যারা ওয়াচম্যান হিসাবে কাজ করছে। এই প্রস্তুতির জন্য আমাকে ১ দিন ও ১ রাত সময় দেয়া হল। দিনের বেলায় আমি আমার সফরসঙ্গীদের নিয়ে এলাকাটি রেকু করি এবং দাতুরমুরা কে থিয়েটার হিসাবে নির্বাচন করি।

৪। আয়োজন- আমি সেই গ্রামে ৩” মর্টার সহ ১৫০ জনের একটি কোম্পানি পাঠাই । এক প্লাটুন (তিন প্লাটুন ও হেডকোয়ার্টার কোম্পানি দিয়ে একটি কোম্পানি হয়) ও কোম্পানি হেডকোয়ার্টার রা বেইজ তৈরি করে। বেইজের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন সুবেদার (বর্তমাএ সুবেদার মেজর) তাহের উদ্দিন শেখ। মর্টার দিয়ে আমি সুবেদার (বর্তমানে সুবেদার মেজর) শামসুল হক কে পাঠাই। একটি প্লাটুনকে দাতুরমুরার পশ্চিমে রামপুরে (ছোট) এম্বুশ করতে পাঠাই। আরেকটি প্লাটুনকে দাতুর মুড়ার উত্তরে পাঠাই। জগন্নাথপুরেও আরেকটি এম্বুশ পার্টি পাঠাই। সকল আয়োজন রাতে সঠিকভাবে নির্দিস্ট করা হয়। সকল আয়োজন শেষে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সেক্টর কমান্ডার ও রিপোর্টারদের সেখানে নিয়ে যাবার কথা ছিল এবং আমি সেই অনুযায়ী তাদের নিয়ে যাই।

৫। এটা ছিল সেপ্টেম্বর মাস।আমি তারিখ মনে করতে পারছিলাম না। কিন্তু এটা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ছিল। আমি মাধবপুরের কাছাকাছি একটি ঘাটে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি ঘাটের নিকট এগিয়ে গেলাম কিন্তু আমি কোন মেয়েকে দেখছিলাম না। তাদের নৌকা ঘাটের কাছাকাছি আসলে আমি একজন মহিলাকে দেখতে পাই কিন্তু তিনি ইউরোপীয় পোষাকে ছিলেন না। তিনি তাঁর পোশাক দিয়ে আমাকে বিস্মিত করেন। তিনি একটি হাফ শার্ট, একটি খাকি ট্রাউজারের সঙ্গে একটি জঙ্গল বুট পরিহিত ছিলেন। পোশাক দেখে মনে হল তার মতো একজন মহিলা একটি সৈনিকের মত কাজ করতে পারেন ।আমার সেক্টর কমান্ডার তাকে পরিচিত করিয়ে দিতেই তিনি হ্যান্ড সেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং তার মুখে একটা হাসি দিয়ে বললেন ‘’হ্যালো কমান্ডার, আপনি ক্যামন আছেন? ‘’ আমি বললাম “ভাল, ধন্যবাদ”। তারপর আমি তার দলের অন্য দুই সদস্য সঙ্গে করমর্দন করলাম। তারা একটি স্ট্যান্ড, একটি স্টিল ক্যামেরা এবং একটি টেপ রেকর্ডার সাথে একটি মুভি ক্যামেরা বহন করছিল। মুভি ক্যামেরাটি অনেক ভারি ছিল। আমি এইসব ভারী লোড নিজেদেরই বহন করতে দেখলাম। আমরা এই যন্ত্র বহন করতে তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা প্রতিবারই ফিরিয়ে দিচ্ছিল আর বলছিল “আপনাকে ধন্যবাদ”।

৬। বেস থেকে ঘাট অবধি আসতে আসতে তিনি সেক্টর কমান্ডারের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলেন। একসময়ে তিনি আমার দিকে ঘুরে আমাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। সত্যি বলতে, আমি তখন একটু ভয় পেয়ে গেলাম – অন্য কোন কারণে না – তার প্রশ্নের জন্য। আমরা বেসে পৌঁছানোর আগেই এক মুক্তিযোদ্ধা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সম্ভাব্য শত্রু এনকাউন্টার সম্পর্কে আমাদের অবহিত করল। তাকে সুবেদার (এখন সুবেদার মেজর) তাহের উদ্দিন শেখ শত্রুদের একটি কোম্পানী জগন্নাথপুর গ্রামে পূর্ব দিক থেকে আসছে এই তথ্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। এটি আর শুটিং থিয়েটার থাকল না। আমরা বেস থেকে প্রায় ১০০ গজ ছিলাম। আমরা 3 ইঞ্চি মর্টারের ফায়ারিং শুনতে পেলাম। কমান্ডার আমাকে একটি হাসি দিলেন এবং বললেন “শামসু ইন একশন”। কমান্ডার মিসেস মেরীকে জিজ্ঞেস করলেন “এনকাউন্টার শুরু হয়েছে । আপনি কি এখনও আপনাকে সামনে নিয়ে যেতে জোর করবেন?” মিসেস মেরী বললেন “ওহ! অবশ্যই কর্নেল। ‘’ এই কথা বলতে না বলতেই দুই / তিনটি আর্টিলারি শেল আমাদের পাশে পড়ে। আমি দেখি টেপ রেকর্ডারে রেকর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম “ম্যাডাম, আপনি কি জানেন কে গুলি চালাচ্ছে? মিসেস মেরী বললেন “আমি স্পষ্টভাবে জানি পাকিস্তান আর্টিলারি । কারণ আপনার কোন আর্টিলারি নেই।

৭. শত্রুর স্বাভাবিক রেটে গুলি চালাতে শুরু করে। আমরা তড়িঘড়ি করে বেস পৌঁছলাম এবং মাটির দেয়ালের একটি বাড়ির ভিতরে লুকালাম। যাইহোক সেটা ছিল আমার থাকার ঘর – সেখানে একটি কম্বল, একটি বিছানার চাদর এবং একটি রাবার বালিশ ছিল। এটি মূলত একটি হিন্দু বাড়ি। এর এক পাশে কার্তিকের মুর্তি ছিল। একটি হাসের মূর্তিও ছিল । আর্টিলারি গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকল। আমি তাদের (সাংবাদিকদের) খালি নিরাপদে সরে যেতে দেবার ব্যাপারে ভাবছিলাম এমন সময় এক সিপাহি এসে জানাল যে শত্রুদের এক টি কোম্পানী আমাদের দ্বারা আটকা পড়েছে। আমি সে যা জানে তাঁর সবটা বলতে বলি। সিপাহী জানাল শত্রুরা একটি দেশী নৌকায় আমাদের অবস্থান থেকে আধ মাইল দূরে এবং আমাদের প্লাটুনের অস্ত্র সীমার বাইরে একটি খাল পারাপার হচ্ছিল। মর্টার পর্যবেক্ষকরা আক্রমণের এই সুযোগ মিস করতে চাইল না। শত্রুরা নৌকায় থাকায় মর্টার ফায়ারিং তেমন কাজ করতে পারছিলনা। কিন্তু বিশৃঙ্খলার বাইরে নয়টি নৌকার একটি ডুবে গেছিল এবং আমরা ভেবেছিলাম সব আরোহী মারা গেছে ।

৮. মিসেস মেরী সোজা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন এবং সিপাহিকে বললেন তাকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে। আমরা সবাই তাকে বোঝালাম যে ফায়ারিং এখনো চলছে। ইতি মধ্যে শত্রুরা দাতুর মুড়া ঠেকলে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ গজ দূরত্বে একটি মুড়ায় পৌঁছেছে। আমি মিসেস মেরী ও তাঁর লোকদের একটি কাঁঠাল গাছের আড়ালে যেতে বলি। আমি মাথা নিচু করে এক সৈন্য থেকে অন্য সৈন্যের কাছে যেয়ে তাদের উৎসাহিত করছিলাম ও শত্রুদের জানার চেষ্টা করছিলাম। আমি দেখলাম মিসেস মেরী সর্বক্ষন আমাকে ফলো করছেন আর তাকে ফলো করছে তাঁর লোকজন(ফটোগ্রাফার এবং রেকর্ডার) । যে মুহূর্তে শত্রুরা আমাদের সনাক্ত করল সেই মুহুর্তে তারা আমাদের উপর আর্টিলারি আক্রমণ করে। সেসময় মুড়া থেকে মেশিনগানের গুলি আসতে লাগল আমাদের দিকে। শত্রু দেখা মাত্র আমাদের সৈন্যরা রাইফেল ও মেশিনগান দিয়ে তাদের উদ্যেশ্যে গুলি করতে থাকল যদিও সেগুলো ছিল রেঞ্জের বাইরে। তাই আমি তাদের গুলি করতে নিষেধ করি যেহেতু শত্রুরা রেঞ্জের বাইরে ছিল । কিন্তু তারা এতোটাই উজ্জীবিত ছিল যে যখনই শত্রুরা মেশিনগান চালাচ্ছিল তখনি আমাদের বাহিনী রাইফেল দিয়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করে আমি আমাদের গুলি করা থামাই।

৯. সেবাহিনীকে যখন জিজ্ঞেস করতাম তারা শত্রুদের কি করেছে তখন তারা সব সময় ই একটু বাড়িয়ে বলত। আমি যদি সংখ্যাটা নির্দিস্ট করে বলতে চাই তবে বলা যায় তারা যতজন এসেছিল সেটা আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিসম্পন্ন ছিল। গোলাগুলির পড় শত্রু বধের পরিমাণের উপর নির্ভর করে আমরা এই অনুমান করতাম। শত্রু যখন অবস্থান নিয়ে তখন গোলাগুলির শব্দ শুনে এটা করা যেতে পারে।

যাইহোক, মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর যুদ্ধের রেকর্ড সংগ্রহ করার জন্য এটি যথেষ্ট উপযুক্ত ছিল। সকল সময় কমান্ডার এবং আমি চিন্তায় ছিলাম হয়ত বা একটি শেলের স্প্লিনটারে এই ডেডিকেটেড প্রফেশনাল লোকগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারত। স্রস্টা তাদের রক্ষা করেছেন । যুদ্ধের প্রথমে যদিও তারা বুঝিয়েছেন যে তারা যুদ্ধ পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত কিন্তু পরে দেখেছি তারা বেসামরিক নাগরিক দের মতই করেছেন ।

১০. এমনকি এই ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ও আমি শুনিনি যে জগন্নাথপুর থেকে আমার সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা। আমি তাদের সম্বন্ধে চিন্তিত ছিলাম। সেই প্লাটুন ভেবেছিল যে তারা শত্রু দের ফাঁদে পড়ছে। সুতরাং তারা শত্রু অ্যামবুশ এড়াতে গোপীনাথপুর ও উত্তর মিনারকোটে একটি দীর্ঘ বাঁক তৈরি করে। সুবেদার (এখন সুবেদার মেজর) শামসুল হক ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে প্রায় ৩০ টি বোমা নিক্ষেপ করেন। এবং আসলে শত্রুরা খাল পারের পড় ঐ অবস্থানে নেমেছে। শত্রুর দিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিটে খবর পাই শত্রুরা দাতুরমুরায় তাদের সৈন্যদের মুক্ত করার জন্য আরও কিছু সৈন্য পাঠিয়েছে। এই সময়ে সাংবাদিকরা তাদের কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছেন এবং তারা খুশি হয়েছিলেন। আমি আমার কোম্পানীকে সরিয়ে নিতে বললাম।

১১. এই এলাকাটি স্থানীয় এবং বাইরের লোকে পরিপূর্ণ ছিল। যে মুহূর্তে কামান এবং 3 ইঞ্চি মর্টার এবং ছোট অস্ত্র থেকে গুলি বিনিময় হচ্ছিল সেই সময়ে সাধারণ লোকজন আগরতলার দিলে পালাতে শুরু করেন। সেটি খুব চয়ংকর দৃশ্য ছিল। আমি খুব খারাপ অনুভব করছিলাম কিন্তু কিছু করার ছিল না। আমি একটি টেকসই শান্তির জন্য সাময়িক অসুবিধার বিষয়টি মেনে নিলাম। আমি দেখলাম ক্যামেরা ম্যানরা খাদ্য, রন্ধন সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ভারতে পলায়নরত দের ছবি তুলছিল। এমনকি গরু ও কুকুরও ভারতের মুখে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দেখা গেল নারীরাও তাদের মাথায় ভারী বোঝা বহন করে বুকে পর্যন্ত গভীর জলের ভিতর দিয়ে হেঁটে জীবন নিয়ে পালাচ্ছিল।

১২। এই যুদ্ধ শুটিং এর জন্য আমরা অনেক কষ্ট ভোগ করি। মৃত্যুর ঝুঁকি প্রসারিত করি। কিন্তু সাংবাদিকরা টতাতেও সন্তুষ্ট ছিল না। তারা মুক্তিবাহিনীর টহল চলছে বা একটি অতর্কিত অ্যামবুশের আরো কিছু শুটিং চালতে চাইছিলেন। কমান্ডার সহ আমরা সকলে এটা দেখলাম। লেডি পরিচালক একটি টহল নেতৃত্ব দেবার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল (এখন কর্নেল) খালেদ মোশাররফ (সেক্টর কমান্ডার) কে তাঁর মুভমেন্ট সংশোধন করে দিচ্ছিলেন। বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবার জন্য অনুরধ করেন। আসলে এত কিছুর পড় তার অনুরধ করার দরকার ছিলোনা। বরং আমি আমার কমান্ডারকে উপেক্ষা করে তাদের যেতে অনুরধ করছিলাম। এমন ধৈর্য দেখানোর জন্য কমান্ডারকে ধন্যবাদ। মিসেস মেরী তার প্রফেশনাল হাসি দিয়ে হ্যান্ড সেকের জন্য আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন ‘ ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন। আপনার জন্য শুভ কামনা। আশা করি আপনি শীঘ্রই আপনার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।‘ মাধবপুর ঘাটে তিনি আমার কমান্ডারের সাথে আমাদের ছেড়ে যান।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!