You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | পাকিস্তানের জন্য মার্কিন যুদ্ধ জাহাজঃ সিনেট স্টিভেনশন-এর বিবৃতি | সিনেটের কার্যবিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের জন্য মার্কিন যুদ্ধ জাহাজঃ সিনেট স্টিভেনশন-এর বিবৃতি সিনেটের কার্যবিবরণী ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এস ২১৬২৯
কংগ্রেশনাল রেকর্ড- সিনেট
পাকিস্তানের জন্য ইউএস নৌ জাহাজ
জনাব স্টিভেনশন। প্রেসিডেন্ট মহোদয়, ভারত এবং পাকিস্তান বিষয়ে নিরপেক্ষতার নাম করে আমাদের প্রশাসন ভিনদেশের ভুখন্ড থেকে মিলিটারী বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়ে যুদ্ধ বিরতি আহবান করেছে।
এক পক্ষের চাইতে অন্য পক্ষকে বেশী অনুগ্রহ করার এ এক অদ্ভুত নিরপেক্ষতা। পশ্চিম পাকিস্তানীদের গণহত্যার আরো এক নতুন ধাক্কার শিকার বাঙ্গালীরা আমাদের নীতিকে নিরপেক্ষতা হিসেবে দেখবে না। যদি একটি নতুন জাতির জন্ম নিরোধ করা হয় তবে যারা যুদ্ধ করেছে এবং সেই জাতি সৃষ্টির জন্য রক্ত দিয়েছে তারা কোনভাবেই নিরপেক্ষতা হিসেবে মানবে না। যে নীতি আত্মস্থির করতে বাধা দেয় এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশকে বৈরী করে সে নীতি চরম ভুল।
নানা পন্থায় পাকিস্তানকে সমর্থন করে কিভাবে আমরা এ পর্যন্ত নিরপেক্ষ ছিলাম তা অন্যেরা দেখিয়েছেন।
আমাদের ভাব দেখানো নিরপেক্ষতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যখন ইউএস নৌবাহিনীর দুটি রণতরী বর্তমানে পাকিস্তান নেভীর পক্ষে নিয়োজিত আছে। এদের মধ্যে যেটি আক্রমণ ডুবোজাহাজ তা প্রয়োজনীয় কংগ্রেশনাল আইনি অনুমোদন ব্যাতিরেকেই ঋণচুক্তির মাধ্যমে কেনা হয়েছে।
রণতরীগুলোর একটি হল ডায়াব্লো, যার দৈর্ঘ্য ৩১১ ফুট, ১০ টর্পেডো টিউব বিশিষ্ট ২৪০০ টন আক্রমণ সাবমেরিন। অন্যটি মিশন সান্তা ক্লারা, দৈর্ঘ্য ৫৩০ফুট, ১৬,৬৫০ টন ক্ষমতা এবং ১৬০ জন ক্রু বিশিষ্ট। পাকিস্তানীরা এদের নতুনভাবে নামকরণ করেছে যথাক্রমে দ্য গাজী এবং দ্য ঢাকা।
ইউএস সরকারের জাহাজ-লোন কর্মসূচীর আওতায় পাকিস্তানকে এই জাহাজগুলো প্রদান করা হয়েছে, এই কর্মসূচীতে ৩৭টি দেশের কাছে ইউএস নেভীর ২৯৫টি জাহাজ ধার দেওয়া আছে।
পাকিস্তানের বেলায়, পাকিস্তানকে মিলিটারি সহায়তা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চাইনিজ এবং সোভিয়েত প্রভাব খর্ব করার কথিত প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নিলেও এসব জাহাজের ঋণ কিভাবে যথার্থ হল তা বোঝা মুশকিল। প্রকৃত সত্য হল যে এসব জাহাজ এমন একটি দেশকে দেয়া হল যেটির চীন কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কোনো সাধারণ নাব্য জলসীমাই নেই, যা আছে ভারতের সাথে। ফলাফল হল দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব কমল না বরং বিপরীত হল। কেবল ভারতের সাথে সংঘর্ষের জন্য পাকিস্তানকে জাহাজ, ট্যাংক এবং অন্যান্য মিলিটারী সরঞ্জাম সরবরাহ করে আমরা ভারতে সোভিয়েত প্রভাবই বৃদ্ধি করছি এবং এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছি যাতে উপমহাদেশে পরাশক্তিগুলো পরোক্ষভাবে অস্ত্রের মহড়া দিতে পারে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি চূড়ান্ত বিচারে ভারত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষগুলোই এর মূল্য দিচ্ছে।
পাকিস্তানকে ধার দেওয়া জাহাজের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে গোটা জাহাজঋণ প্রকল্পেই এক মারাত্মক ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্র মালিকানাধীন জাহাজ অন্য রাষ্ট্রকে ধার দেওয়া হয় এবং তা পরবর্তীতে সামরিক সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয় তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অপরাধের দায় অনেক বেশী বর্তায় যা একেবারে বিক্রয় বা অনুদান দিলে হয় না।
ঋণ প্রোগ্রামের ভারসাম্যমূলক সুবিধা এই যে আমরা আমাদের জাহাজ পরবর্তীতে ফেরত পাই। বাস্তবে, যদিও এ সুবিধা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। যখন গ্রহীতা দেশটি মেরামত এবং যন্ত্র সংযোজনে জাহাজটির পেছনে ব্যয় করে ফেলে তখন জাহাজটি ফেরত দেবার জন্য আমরা আর জোর করতে পারিনা। এমনকি অনেকসময় ধারের আইনি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আমরা জাহাজ চাইতে পারিনা যেমনটা চিলি, পেরু এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে।
এমন ঋণ, যা আদৌ কোন ঋণই নয়, এর মাধ্যমে আমাদের কোনো লাভই হয় না অথচ অনেক বড় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। আইনি মেয়াদ শেষ হবার পরও জাহাজ রেখে দেবার অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অন্যান্য আইনি বাধ্যবাধকতা না মানার জন্য উৎসাহিত করি। নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু মালিকানা ধরে রেখে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির ঝুঁকিতে থাকছি। ইকুয়েডর যখন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া জাহাজ দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ফিশিং বোট পাকড়াও করে অথবা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য পাকিস্তানকে জাহাজ দেওয়া হয় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থই নেই।
এ সমস্ত কারণে জাহাজ ঋণ প্রোগ্রাম শীঘ্রই বন্ধ করে দেওয়া যায় কিনা তা গভীর বিবেচনা করে দেখা উচিত।