শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ এশিয়ায় অনুসৃত মার্কিন নীতিঃ সিনেটর কেনেডির ভাষণ | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ডিসেম্বর ১১,১৯৭১ কংগ্রেসের রেকর্ড- সিনেট
দক্ষিণ এশিয়ায় অনুসৃত মার্কিন নীতি
Page: 437
মিঃ কেনেডি। মিঃ প্রেসিডেন্ট, একটি দুঃখজনক জ্ঞানহীন যুদ্ধ – একটি অযাচিত ও জ্ঞানহীন যুদ্ধ আজ দক্ষিণ এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন বা কার জন্যে এই যুদ্ধ আর এর জন্য কেই ই বা দায়ী এই নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত অনেক লেখালেখি হয়েছে।
গত ৩ দিন যাবত হোয়াট হাউস ও স্টেট ডিপার্ট্মেন্ট এর অনেক উচ্চ পদস্থ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা দক্ষীন এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের প্রশাসনিক পদক্ষেপ ব্যখ্যা করেন, যদিও অধিকাংশ আমেরিকানদের সেইটা বোধগম্য হয় নি।
এইসকল পক্ষে –বিপক্ষের ব্যখ্যা ও দলিলের বাইরের বিবৃতি দেওয়ার পরেও ৮ মাস ধরে পশ্চিম বাংলা তে চলা সমস্যার প্রতি দেশের প্রশাসনিক নীতি অস্পষ্টই থেকে যায় ।
এই ৮ মাস ধরে পশ্চিম বাংলাতে চলা রক্তক্ষয়ী সমস্যার পরেও আমাদের সরকার পাকিস্থান কে পররাষ্ট্র নীতি তে অনেক ছাড় দিয়েছে, এই নিষ্ক্রিয়তা না থাকলে হয়ত পশ্চিম পাকিস্থানি সামরিক বাহিনী দ্বারা পুর্ব বাংলার সাধারন জনগনের উপর অত্যাচার ও গণহত্যা কমানো যেতো। আমেরিকার সামরিক বাহিনী হতে পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর জন্যে পাঠানো অস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠানো বন্ধ করা গেলে এই বিশাল গণহত্যা রোধ করা সম্ভভ ছিলো। কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই এ বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষন করা হয়নি, আর যার মাধ্যমেই বোঝা যায় যে আমরা সমস্যাগুলোর গভীরতা বুঝে উঠতে পারি নি।
এই বিষয় নিয়ে অজ্ঞাতনাম হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাগণ ব্যস্ত ছিলেন, তাঁরা যুদ্ধের সমস্যা সমাধানারে জন্যে এটাকে “ সময়ের বিপরীতে দৌড় “ বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্ত মিঃ প্রিসেডেন্ট, এইটা আমাদের দ্বায়িত তাদের কে প্রশ্ন করা যে কখন এবং কি ভাবে এই “ সময়ের বিপরীতে দৌড়’’ আরম্ভ হবে।
এইটা কি জুলাইয়ের মাঝামাঝি আরম্ভ হয়েছিলো ? অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান অবস্থা শুরুর চাইতে বেশী ভালো নয়, এবং জুলাই ৭- ১৪ তারিখের ভিতরে আমাদের সরকারের এ বিষয়ে প্রভাবিত করার সুযোগ ছিলো।
আমাদের অবগতির জন্য জানার দরকার যে, তখন পশ্চিম বাংলাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী দ্বারা হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষকে গণহত্যা ও আওয়ামী লীগ দলের সদস্য হত্যা চলছিলো। দৈনিক প্রায় ৪৫ হাজার করে মোট ৭০ লাখের উপরে উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করে যুদ্ধের
ভয়াভহতা থেকে বাচার জন্য। তাদের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবর রহমান তখনো কারাগারে। পশ্চিম পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খান শেখ মুজিব কে দেশদ্রহিতার মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেন এবং পরিসস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিষ্ক্রিয় সরকার গঠন করে, ভিবিন্ন শহরের সামরিক শাসন আরো জোরদার করেন।
সাময়িক এই বিশাল উদ্বাস্তু ও শরনার্থীদের পুনর্বাসন করতে ভারত সরকার হিমসিম খাচ্ছে । চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নূন্যতম বাসস্থান, খাবার ও ঔষধের অভাবে সাধারণ বর্ষার বৃষ্টিতেই অসংখ্য লোক মারা যাচ্ছে। এই শরনার্থীদের জন্য ভারত দেশী ও বিদেশী সব ধরনের সাহায্য নেওয়া সত্ত্বেও এই ধরনের ধকল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারন যুদ্ধের ভয়াভহতা এর চাইতে শরনার্থী শিবিরের অবস্থা ভালো থাকায় অনাবরত শরনার্থী প্রবেশ করছিলো।
এই ভয়াভহ অবস্থার ভিতরেই, জুলাই মাসে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্থান সফরে যান হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি ভারত ও পাকিস্থানের প্রতিনিধিদেরকে এ বিষয়ে নেতাদের সাথে বৈঠক করতে বলেন । আমেরিকানরা দক্ষিণ এশিয়ার চলমান সহিংসতা নিয়ে চিন্তিত এবং সরকারের উপর মহল ও এই বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত, দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধ নিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে কংগ্রেসের অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি, যেইটা আমাদের ২৮ জুনের শরনার্থী বিষয়ক সাবকমিটির মিটিং এ পরিষ্কার করে তুলে ধরা হয় , যেইখানে আমি সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করি ।
যখন মিঃ কিসিঞ্জার সবার আগোচরে কয়েকদিনের জন্য ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খান ও গোপনে জেলে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন, আমাদের সকলের আশা ছিলো যে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার এই সমস্যার মূল সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।
কিন্তু এখন আমরা যা জানতে পারলাম যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মূল সমস্যা সমাধান বা আলোচনা নিয়ে মটেই ভ্রক্ষেপ করেননি বরং তিনি চায়নার প্রতি এমেরিকার নীতি বা পলিসি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র দের মতে সত্যিই যদি আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা বা “ সময়ের বিপরীতে দৌড়’’ নিয়ে ভাবতাম , তাহলে গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম কোথায় ছিলো ?অবশ্যই গত ৪ মাসের পুরানো পশ্চিম বাংলার সমস্যার শান্তিপুর্নসমাধান নিয়ে ভাবা হয় নি । বরং তিনি দক্ষিণ এশিয়ার উদ্বাস্তু সমস্যার শান্তিপুর্ণ সমাধান নিয়ে ভ্রক্ষেপ না করে এটিকে এড়িয়ে যান।
মিঃ প্রেসিডেন্ট,আমি গত ৩ দিন আগে চায়নার চার ভাগের এক ভাগ জনগনের সাথে পুনরায় সম্পর্ক প্রতিস্থাপনের জন্য এই ব্যবস্থাপনাকে সাধুবাদ জানাই । কিন্তু একই সময়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গনতন্ত্রের দেশ ভারতের, ৬ ভাগের ১ ভাগ জনগনের সমস্যা আমলে না নিয়ে স্বল্পকালীন
ভুল মতামত বা কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকেবিচ্ছিন্ন করে ফেলি । চায়নাকে নতুন ভাবে প্রাধান্য দিয়ে, আমরা আমাদের ২৫ বছরের ভারতের সাথে ফলপ্রসূ সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত ভুলে যাচ্ছি ।
সত্যি বলতে দক্ষিণ এশিয়ায় গত ৮ মাস ধরে চলা সহিংসতা বন্ধে আমাদের সরকার ক্রমাগত গুরুত্বে অবহেলা করে গেছে । এমনি শুরুর দিকে যখন ২৫ মার্চ কালো রাতে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় ,আমাদের সরকারের কাছে গোপন খবর থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এইটা এড়িয়ে যায়। তাঁরা এটাকে জরুরী ভিত্তিত্বে দেখলেও, গনমাধ্যম সেই হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে আভাস পেত, কিন্তু সেইটা এই সরকার এড়িয়ে যায়।
এই শুরুর দিকের সহিংসতা ও আমাদের সরকারের নিষ্ক্রিয়তা দেখে আমার দুশ্চিন্তা হয় যেইটা ১ এপ্রিল এর সিনেটে পেশ করা হয়। আমি ৬ এপ্রিলে রাজ্য প্রধান রজারের কাছে চিঠির মাধ্যমে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরি । আমার চিঠির অংশবিশেষ
পুর্ব পাকিস্তান থেকে আসা খবরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারনে মানুষের নির্মমতা ফুটে উঠছে । অবিচারে ছেলে,মেয়ে গণহত্যার বিষটি আমি গভীর ভাবে সিনেটের সামনে তুলে ধরা হয় । সর্বশেষ পাওয়া তথ্যই আমার দুঃস্বপ্নকে তুলে ধরে।
সত্যি বলতে , পুর্বপাকিস্তানের এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পরেও আমাদের সরকারের দেশের ভিতরে ও প্রকাশ্যে নিশ্চুপ থাকা টা আমাকে অনেক মানসিক ভাবে চাপে ফেলেছে।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমেরিকার দেওয়া অস্ত্র দিয়েই যখন পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে সাধারণ জনগনকে হত্যা করা হচ্চিলো তখন আমাদের সরকারের এইটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া উচিৎ ছিলো । বিশেষকরে, কিভাবে এই সহিংসতা বন্ধ করা যায় এ নিয়ে আমাদের পরোক্ষ বা প্রত্যাক্ষ ভাবে যা করার দরকার সেইটা করা উচিৎ ছিলো । আমাদের প্রত্যক্ষ ভাবে এই যুদ্ধে খতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন কাজে সহযোগিতা করা উচিৎ ছিলো । এই বেপারে আমাদের সরকারের কার্যক্রম থাকলে আমি ও অন্যান্য এমেরিকানরা স্বস্তি বোধ করতো ।
সেইসাথে, আমাদের সরকার পূর্ব বাংলার খাদ্য সঙ্কট,নারীদের সমস্যা ও যুদ্ধে আমাদের অস্ত্রের ব্যবহার এইগুলো নিয়ে চিন্তা করে নি । এই বিষয়গুলো ,মিঃ প্রেসিডেন্ট নভেম্বরের ১ তারিখে , শরনার্থী বিষয়ক সাবকমিটির রিপোর্টে পরষ্কার তুলে ধরা আছে ।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, গত ৮ মাস ধরে চলা গতহত্যা ও সাধারন মানুষের উপরে চলা অত্যাচার দেখেও আমাদের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা গন এটাকে নিশ্চুপ থেকে এড়িয়ে যান আর এখন এত দিন পরে তাঁরা এটাকে সময়ের বিপরীতে যাত্রা বলছে শান্তি রক্ষার জন্যে । কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই টা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছে যা কিনা বাস্তবায়নের জন্য খুবি হাস্যকর ।
এক নাম না জানা রাষ্ট্রীয় বিভাগের উৎস হতে পাওয়া,কথাগুলর কারনে,আমেরিকান কর্মকর্তারা সপ্তাহিক ছুটি জুড়ে ভারতীয়দের নিন্দা করেছিল,- ‘ভারত পূর্ব পাকিস্তানে খুব দ্রুত সরাতে চেয়েছিল রাজনৈতিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার জন্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করছিল’। একটি প্রধান সঙ্কটের মধ্যে খাদ্য পাঠাতে হয়েছে দীর্ঘ ৮ মাস -যেখানে শরণার্থী শিবিরে শিশুদের মধ্যে ৪,৩০০ প্রতিদিন হারে মারা যাচ্ছে, এবং অসংখ্য হাজারের ও বেশি খাদ্য ও আশ্রয়হারা। যদি আমেরিকাকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫,০০০ এর উপরে সীমান্ত পার হওয়া এই রকম বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেয়া লাগত, তাহলে, হয়ত আমরাও দ্রুত সেটা থেকে সরে যেতাম।
যদিও সশস্ত্র বাহিনীর অবলম্বন আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কখনই ফলপ্রসূ না, অবশ্যই, মার্জনীয়, আমরা একেবারে নিরাশ হতে পারিনা যে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি উপেক্ষিত হয়েছে ঐ দিক থেকে যেখানে পাকিস্তান ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এখন লড়াইয়ে জড়িত যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ২৫ শে মার্চ রাতের আক্রমণের থেকেই শুরু । কিন্তু এখন এই অর্পিত “দোষ”, যা এই প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে ,শুধুমাত্র পাল্টা-শোধই নয়, অসততাও বটে ।
এই ধারনা বিবৃত হয় এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র দ্বারা যে কিনা বিভিন্ন রকম ভ্রান্ত ধারনা জানায়, মিঃ প্রেসিডেন্ট, সেইসাথে নির্দিষ্ট তথ্যকে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল/মিথ্যা বর্ণনা উপস্থাপিত হয়। উদাহরন সরূপ, বিবৃতিতে ছিল যে “ নীতিগতভাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে, এবং , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রদত্ত ভারতকে “যুদ্ধ এড়ানোর জন্য এবং আলোচনার মাধ্যমে সন্ধি স্থাপন করার একটি পরিকল্পনা তে, পাকিস্তান সরকার এর সম্মতি ছিল ।
বেশ, সকল তথ্য এখন বেরিয়ে আসছে, এবং তারা নথিতে দেখায় যে ঘটনাচিত্র তুলনামুলক অনেক বেশী জটিল ছিল বিধায় মুখপাত্ররদের আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে, এবং এতাও বিশ্বাস করতে হবে যে আলোচনার জন্য তথাকথিত পরিকল্পনা বাস্তবিকের চেয়ে কিছু কম ছিল। বস্তুত,মাঠ পরজায়ের অফিসিয়াল রিপোর্ট থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, অনেক যোগ্যতা ছাড়াই, উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সঙ্গে একটি অঙ্গীকার করাতে আলোচনার দায়িত্বগ্রহণ করাতে , কোন সময়েই রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সম্মতি ছিল না। আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে বলা যায়, পূর্ববাংলার সংকট কালের মুক্তি অথবা অন্তরআত্মা ব্যক্তি-শেখ মুজিব এর সাথে সরাসরি কোন সন্ধি স্থাপনে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান কোন সময়ই সম্মত ছিল না ।
আরো কষ্টদায়ক যে এখনো,মিঃ প্রেসিডেন্ট, এই সপ্তাহে ওহিও থেকে বিশিষ্ট সিনিয়র সিনেটর দ্বারাপাকিস্তানি একরোখা কাজের প্রমাণপত্র উপস্থাপিত হয়, সম্প্রতি যিনি কিনা ভারত ও পাকিস্তান উভয় দর্শন করে আগত ব্যক্তি। তার দর্শনের উপর রিপোর্টিং, সেনেটর SAXBE রাজ্যের, এবং আমি তাঁকে উদ্ধৃত করছিঃ
আমি প্রস্তাব রাখসি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি যে তিনি একমত আছেন অন্তত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন সঙ্গে। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি এই কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং তাঁকে আন্তরিকও মনে হয়েছিল। কিন্তু ১০ ঘন্টা পরের কথা, পাকিস্তানি প্লেন ভারতের ভিতরে ছয় সামরিক এয়ার ফিল্ড বোমাবর্ষণ করেছিল, এবং এর মাধ্যমে, পালাক্রমে, ভারত দ্বারা একটি ভূমি আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে।
ইয়াহিয়া খান আমাকে মিথ্যা বলেছিল। আমার সাথে কথা চলাকালীন সময়ে সে বোমা মিশন পরিকল্পনায় ছিল।আমি বিশ্বাস করি গলাগুলির যুদ্ধ প্রতিহত করা যেত এবং ভারতকে একটি আক্রমণ শুরু করা থেকে বিরত রাখা যেত , যদি পাকিস্তান স্বায়ত্তশাসনকে মঞ্জুর করত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি।
সমভাবে ধকলছিল, মিঃ প্রেসিডেন্ট, কর্মকর্তাদের ক্ষেত্র থেকে পাওয়া গতকালকের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয় যে মোটামুটি আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বানের মাধ্যমে ভারতকে নির্দেশ দিয়েছিল নতুন দিল্লির মধ্যে সতর্কবানী পৌঁছে দিতে যে আমেরিকান সূত্র পূর্বাভাস দিচ্ছে পাকিস্তান পাশ্চাত্য উত্তেজনা বাড়তে বরাবরই পরিকল্পনারত রয়েছে
যদি ভারত সীমান্তের বাংলার গেরিলারা, মুক্তিবাহিনী দল, পূর্ববাংলায় পূর্ব সীমান্তেতাদের কার্যক্রমকে তীব্রতর করে তোলে। ভারতীয় নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল এমন একটি উদ্দীপনাময় সহিংসতার ব্যাপারে, এমনকি এটি পাকিস্তান দ্বারা প্রারব্ধ যে,“ইন্দো-আমেরিকান সম্পর্কের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।” সেখানে একটু পরামর্শ ছিল যেমন একটি উন্নয়ন যামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। শান্তি বা সরাসরি আলোচনার জন্য শেখ মুজিবকে সাথে নিয়ে জনশ্রুতি দিয়ে কোন পরিকল্পনই তাদের ছিল না- শুধু সতর্ক করে দেয়া হচ্ছিল ভারত যদি বাংলার গেরিলাদের সমর্থনকে হ্রাস না করে তখন যুদ্ধ হবেঅনিবার্য, অথবা একারনেই হয়ত আমেরিকান কর্মকর্তাহতে ২ মাস পূর্বে- অক্টোবরে কোনো অর্থপূর্ণ বিকল্পপন্থা ভারতকে দেয়া হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট,যেহেতু আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব অবিশ্বাস্যভাবে নীরব রয়েছে গত ৮ মাসেসময় ধরে, মানুষের বঞ্চনা ও সহিংসতার ভূত যা দক্ষিণ এশিয়াকে গ্রাস করছে। এটা এখন সংকটের পরবর্তী পর্যায়,কিন্তু সুযোগ এখনও বিদ্যমান, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরজন্যশান্তি ওমুক্তির দিকেএকটি ইতিবাচক অবদান রাখবে।
আমরা নিজেরাই এই সংকট সমাধান করতে পারবো না,এবং কোন উপায়েই আমাদের সরাসরি জড়িত হওয়া আনুচিত। কিন্তু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ইতিপূর্বেই “জড়িত”- আমাদের বন্দুক এবংসরঞ্জামও জড়িত,আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তা, এবং আমাদের কূটনীতি জড়িত, – তাই এটা কোন প্রশ্নই রাখেনা যে আমাদের জড়িত হওয়া উচিত কি না, কিন্তু কিভাবে আমাদের জড়িত হওয়া উচিত, আমাদেরউচিতআমাদের বর্তমান সম্পৃক্ততাকে ব্যবহার করা।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেআমাদের সরকারকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন:
আমি আশা করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আছে তার প্রজ্ঞা ও সুবিশাল মর্যাদা। যা ব্যবহৃতহবে পূর্ব বাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানখুঁজে পেতে। আমার পক্ষ থেকে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমাদের জনগণের উত্তেজনা প্রশমন করতে। তাসত্বেও, সত্য বলতে আমরা যেই অবস্থায় ছিলাম,আমি যদি সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি না করতাম তাহলে অবস্থা আরো সোচনীয় হত।
মি: প্রেসিডেন্ট, এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্যের প্রতি আমাদের দৃড় আস্থা রাখতে হবে যেটা পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে এবংএকই সাথে ভারত-পাকিস্থান সম্পর্কও ইসলামাবাদ বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ এর সাথে তাদের নেতা মুজিবের সাথে সমস্যাস মাধানে ভূমিকা রাখবে।
ভারত-পাকিস্তান আলোচনার উদ্দেশ্য হবে ১৯৬৫ সালের পশ্চিম সীমান্তযুদ্ধবিরতিপুনরুদ্ধার করা, যখনইসলামাবাদ- বাঙ্গালিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ববাংলার ভবিষ্যৎ অবস্থানির্ধারণ করবে।
এই ক্ষেত্রেরঅর্থ হবেযুদ্ধের ধারাবাহিকতা এবং এমনকি এর চেয়েও দুঃখজনক ঘটনা। তাই আমি আবারো বলছি যেসহিংসতার উৎস বিবেচনা করে আমাদের সরকার তার নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু করতে হবে, শুধুমাত্র এর প্রকাশেই নয়- এবং পূর্ববাংলায় রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা…..