You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | ভারতের প্রতি মার্কিন মনোভাবের সমালোচনাঃ মিঃ হেলসটস্কির বিবৃতি | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারতের প্রতি মার্কিন মনোভাবের সমালোচনাঃ মিঃ হেলসটস্কির বিবৃতি প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ই ১৩০৪০ প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী অতিরিক্ত সংযুক্তি ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর যুদ্ধ সংকেত বিবৃতি
প্রতিনিধি সভা, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
মিঃ হেলসটস্কি। মাননীয় স্পিকার, ২৫ বছরের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় বারের মত যুদ্ধের অবতারণা ঘটেছে। আমাদের সকলকে অবশ্যই এই মর্মান্তিক অবস্থার নিন্দা করা উচিৎ; একটি বড় ধরনের যুদ্ধ ছাড়াই দক্ষিণ এশিয়ায় অধিকতর রক্তপাত ও ধ্বংসের যথেষ্ট ভোগান্তি ইতোমধ্যে ঘটেছে।
যাই হোক, আমার হতাশা যে আমেরিকা শান্তি প্রতিষ্ঠার সামর্থ্যে ব্যর্থ হয়েছে, ভারত সরকারের প্রতি স্বরাষ্ট্র বিভাগের হিংসাপরায়ণ আচরণে আমি হতভম্ব হয়েছি। গেল সপ্তাহে সংস্থা কর্তৃক ইস্যুকৃত বিবৃতিগুলো আমাদের বিশ্বাস করায় যে ভারত বিনা উস্কানিমূলক আক্রমণের দোষে দুষ্ট।
স্বরাষ্ট্র বিভাগের আচরণ অদূরদর্শী ও ব্যপকভাবে পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে ঝুঁকে রাখে, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটি’ই হওয়ার কথা। বস্তুত এটি’ই প্রতীয়মান করে যে, শত্রুভাবাপন্নের বাহুল্যতার সকল দায় ভার সম্পূর্ণভাবে ভারতের উপর বর্তায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে চলমান টানাপড়েনের শুরু হয়েছিল গত মার্চে পাকিস্তানী স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর পৈশাচিক আক্রমণের মাধ্যমে। জনপ্রিয়ভাবে নির্বাচিত আওয়ামীলীগকে দাবিয়ে রাখতে চেয়ে, ২৫ মার্চ, পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের বিরুদ্ধে এক গনহত্যার যুদ্ধের অবতারণা করে যা ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে ভারতে স্থানান্তর করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উন্নত রাষ্ট্রগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সম্পদ এই অঞ্চলের উদ্বাস্তুদের সহায়তায় প্রদান করেছে। তা সত্ত্বেও, ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুবরণ ভারতীয় অর্থনীতি ও কলকাতার আশেপাশের অঞ্চল অসহনীয় করে তুলেছে।
মিসেস গান্ধী মাস কয়েক ধরেই বিশ্বকে হুশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন যে ভারত তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার এই হুমকি সহ্য করবে না। পাকিস্তানী গৃহ যুদ্ধের কেবল একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান, উদ্বাস্তুদের ভারত থেকে সরাতে সক্ষম হলে, তার সম্পদের উপর অসহনীয় চাপ কমিয়ে ভারতীয় চরমপন্থা বন্ধ করতে পাড়ে।
জবাবে, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানী সরকারের প্রতি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থা পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা কোন দৃঢ় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করি নি যা বাংলাদেশের ভোগান্তির শেষ করে ও ভারতীয় অর্থনীতির উপর চাপ কমায়। তাহলে কেন স্বরাষ্ট্র বিভাগ আঘাত ও কষ্ট পায় যে ভারত তার শেষ মুহূর্তের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে? সকলে সহজেই দেখতে পায় যে প্রশাসন ইয়াহিয়া খানের বাহিনীর প্রতি ঝুঁকে আছে এবং পরস্পরবিরোধী মনোভাব পূর্ব পাকিস্তানে গনহত্যার তাণ্ডব চালনার দিকে ধাবিত করেছে। স্বরাষ্ট্র বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরদ্ধার করতে পাড়বে না যতক্ষণ না এটি বাংলাদেশের রক্তপাতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের সাথে সৌহার্দ্যের সমাপ্তি না করে এবং একটি শক্তিশালী ও নৈতিক সঠিক অবস্থান না নেয়।
মাননীয় স্পিকার। প্রধানমন্ত্রী গান্ধী গত সপ্তাহে তার সংসদে এই ইস্যুর রূপরেখা ও চলমান যুদ্ধের কারণগুলো ভারত যেভাবে দেখে তা দিয়েছিলেন। পর্যালোচনায় আমরা, দক্ষিণ এশিয়ান টানাপড়েনে স্বরাষ্ট্র বিভাগের নৈতিকভাবে ক্ষুব্ধ বিবৃতিতে আমরা ভাল ভাবেই মিসেস গান্ধীর বাকপটু বক্তব্য মনে রাখব।