You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে সমরসম্ভার প্রেরণ বন্ধে সিনেটর কেনেডীর সন্তোষ ও চারদফা কর্মসূচী প্রদান সিনেটের কার্যবিবরণী ৮ নভেম্বর ১৯৭১

এস ১৭৮২১ ৮ নভেম্বর, ১৯৭১
কংগ্রেসনাল রেকর্ড-সিনেট
পাকিস্তানে সমরসম্ভার প্রেরণ বন্ধ
মিঃ কেনেডী – মিঃ প্রেসিডেন্ট, সকালে পাকিস্তানে সমরাস্ত্রের চালান বন্ধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের যে খবর এসেছে, কিছুক্ষণ আগে স্টেট ডিপার্টমেন্ট (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আমাকে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। আমি বুঝতে পারছি এই নির্দেশের ফলে ৩,৬০০,০০০ ডলারের চালান বন্ধ হয়ে যাবে, একই সাথে আরো প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্ভাব্য বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ২৫ মার্চের পর মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ও পাকিস্তান দুতাবাসের মধ্যে সম্পাদিত ২৪ টি “প্রস্তাব ও সমঝোতা চুক্তি” অনুযায়ী হবার কথা ছিল। তবে এই নির্দেশে ইতোমধ্যে কাস্টমস ছাড়পত্র পাওয়া এবং নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় থাকা ১৬০,০০০ ডলার সমমূল্যের সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি এও জেনেছি যে মার্চের শেষভাগ থেকে পাকিস্তানে পাঠানো সমরাস্ত্রের নথিভুক্ত মূল্য প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের জাতীয় নীতিতে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আর কোন কিছুই পাকিস্তানে অব্যাহত মার্কিন সামরিক চালানের চেয়ে প্রকটভাবে পাকিস্তানের সামরিক শাসনপদ্ধতির প্রতি আমাদের ব্যাপক সমর্থনকে ফুটিয়ে তোলেনা, আর দক্ষিণ এশিয়া সঙ্কটে উদ্দেশ্য সাধনের নামে চলমান আমাদের নীতির দৈন্যতা পূর্ব বাংলায় চলমান অব্যাহত আগ্রাসন এবং ভারতমুখী শরণার্থীর স্রোতের চেয়ে নগ্নভাবে আর কোণ কিছুতেই ফুটে ওঠেনা।
কিন্তু, এমনকি এই শেষ মুহুর্তে নেয়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই এবং আমি আশা করি এটি দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে আমাদের নীতিকে নতুন পথে ধাবিত করবে। এছাড়াও আমাদের দেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। তার কিছু আমার গত সপ্তাহের রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে। রিপোর্টটি সাম্প্রতিক সময়ে আমার ভারতে শরণার্থী শিবির ভ্রমণ এবং শরণার্থী বিষয়ক উপকমিটি, আমি যার চেয়ারম্যান, তাতে শোনা বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
এই অনেক কিছুর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক রেডক্রস মিশনের প্রতিনিধিদের সাথে অতি সত্ত্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের সরকারী তরফ থেকে সহায়তা প্রদান করা। এ ধরনের সাক্ষাত পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলায় মিশনের ঘোষিত কার্যাবলীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। শেখ মুজিব এবং সাথে সাথে কারাগারে অন্তরীণ আরো অনেক মানুষের কল্যাণ ও ভবিতব্যের ব্যাপারে ইতিবাচক তথ্য এই অঞ্চলে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে। শেখ মুজিবের একমাত্র অপরাধ হল সামরিক শাসনের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করা, যার ফলাফল পরবর্তীতে তারা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। শেখ মুজিবের একমাত্র অপরাধ হল সামরিক শাসনের অধীনে একটি অবাধ নির্বাচনে জয়লাভ করা, যে নির্বাচনের রায় মানতে সেই সামরিক শাসকেরা পরে অস্বীকৃতি জানায়। ইসলামাবাদের বর্তমান সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বের যে ভাবমূর্তি, তাতে তার প্রতি ন্যায়বিচার এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইসলামাবাদ এবং এর বিরোধী বাঙ্গালী প্রতিপক্ষের মধ্যে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা উৎসাহিতকরণ এবং সম্পন্ন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্যদের সহায়তায় আমাদের সরকারের উচিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটির আলোচনায় পূর্ব বাংলার বেদনাদায়ক ঘটনা আলোচ্যসূচিতে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধির এই বিতর্কে অংশ নেয়া উচিত এবং সাধারন পরিষদকে পূর্ব বাংলার বেদনাদায়ক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে একটি প্রস্তাবনা প্রদানের জন্য সক্রিয়ভাবে সহায়তা করা উচিত, যেখানে সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষকে একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগুনোর আহবান থাকবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদারহস্তে এই লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশুর ত্রাণকার্যে সহায়তা করার আহবান জানানো হবে।
একইসাথে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের শান্তির প্রতি সৃষ্ট হুমকী এবং তার ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদ্ধতি হাতে নেবার জন্য এর মহাসচিবের উদ্যোগের প্রতিও আমাদের সমর্থন জানানো উচিত। ২০ জুলাই তারিখে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনায় মহাসচিব এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই বলেঃ
শান্তিরক্ষায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং পারস্পরিক সমঝোতা আনয়নে বিভিন্ন দক্ষতার কারণে আমাদের অনতিবিলম্বে ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া মানবিক বিপর্যয় থামাতে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি ঠেকাতে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে, করা উচিত।
অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। এখন, অন্যান্যদের সহায়তায়, আমাদের সরকারের উচিত অতি সত্ত্বর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করা। এই প্রস্তাবে তিন মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মোটেই শান্তির সুবাতাস বইছে না।
তৃতীয়ত, পূর্ব বাংলা এবং দক্ষিণ এশিয়ার অব্যাহত অবনতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ বোঝাতে মাননীয় প্রেসিডেন্টের অতি সত্ত্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য লোকেদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এবং বিগত দিনগুলোতে পাকিস্তানকে করা বিভিন্ন কুটনৈতিক ও বস্তুগত সহায়তার ফলে আমাদের হাতে রয়েছে এক অনন্য সম্ভাবনা, যার দ্বারা আমরা ইসলামাবাদ ও এর বিরোধী বাঙ্গালী পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য প্রয়োজনীয় আচরণকে উৎসাহিত করায় নেতৃত্ব দিতে পারি, যা এই বিক্ষুব্ধ এলাকায় শান্তি আনয়নে সহায়তা করবে।
সবশেষে, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যাতে ভারতের শরণার্থী এবং পূর্ব বাংলার দুর্ভিক্ষের ঝুকিতে থাকা জনগণের সহায়তার পিছনে আমরা যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পারি।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ এশিয়া আজ এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যা এক বৃহত্তর মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। আমি বহু মার্কিন জনগণের দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে বলছি, এই অঞ্চলের আজকের পরিস্থিতির পিছনে এ অঞ্চলের প্রতি আমাদের সরকারের নীতির বিশেষ ভূমিকা আছে, কেননা আমাদের বিগত দিনগুলোর নীতি পাকিস্তানের একগুয়েমীকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং তাতে ভারত এবং পূর্ব বাংলার জনগণ হতাশ হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের আজকের ঘোষণাই দায়মুক্তি নয়, বরং আরো অনেক পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের সাথে বেমানান ও দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থহানিকর ধ্বংসাত্নক বৈদেশিক নীতির পথ থেকে সরে আসার পথে এগিয়ে যেতে হবে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!