শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর হ্যারিসের প্রস্তাব ও বিবৃতি | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ |
এস১৭৬৫৬ নভেম্বর ৫, ১৯৭১
কংগ্রেশনালরেকর্ড- সিনেট
সিনেট প্রস্তাবনা ১৯০: নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরী অধিবেশন অনুমোদনের নিমিত্তে একটি রেজ্যুলেশানের জমাদান।
(পররাষ্ট্র সম্পর্ক সংক্রান্ত কমিটির সাথে সম্বন্ধযুক্ত)
মিঃ ম্যানসফিল্ডঃ জনাব প্রেসিডেন্ট, ওকলাহামার সিনিয়র সিনেটর জনাব হ্যারিসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি উনার পক্ষে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করছি এবং সেটা উনার বিবৃতির সাথে একত্রে মুদ্রিত হবে কিনা সে বিষয়ে সর্বসম্মত মতৈক্যের আহবান করছি।
প্রস্তাবনাটি নিম্নরুপঃ
সিনেট প্রস্তাবনা ১৯০
যেহেতু বিগত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিন এশিয়া থেকে আসা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের (রিপোর্ট) ভিত্তিতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে যে কোন সময় খুবই খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে; এবং
যেহেতু জনবসতিপুর্ন এই দুই দেশের মধ্যে যে কোন রকম সংঘর্ষ বিশ্ব শান্তির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে এবং এতে বাইরের শক্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে; এবং
যেহেতু গনপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবাই দক্ষিন এশিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে; এবং
যেহেতু অতীতে জাতিসংঘে গনচীনের অনুপস্থিতি দক্ষিন এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিভাব বজায় রাখতে ইচ্ছুক সকল পক্ষের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তভাবে মতবিনিময় কষ্টসাধ্য করেছে; এবং
যেহেতু গনচীন এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের আসন গ্রহন করতে প্রস্তুত আছে; এবং
যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদে প্রত্যক্ষ কিমবা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত পক্ষগুলোর আশু মতবিনিময় দক্ষিণ এশিয়ার এই ভিতীকর সংঘর্ষপুর্ন অবস্থা এড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। সুতরাং, সেটাই হোক।
সিনেট মনে করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতিসংঘে তার প্রতিনিধিদলকে “দক্ষিন এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি” শিরোনামে একটি বিষয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার আলোচ্য সুচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের উচিত হবে নিরাপত্তা পরিষদে দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা আহবান করা।
জনাব হ্যারিসের বিবৃতিটি নিম্নরুপঃ
মিঃ হ্যারিসঃ জনাব প্রেসিডেন্ট, গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে দিয়ে গোটা পৃথিবী বর্তমানে একটি নতুন কুটনৌতিক যুগে প্রবেশ করছে। বিশাল জনসংখ্যা আর ভৌগলিক আয়তনের কারনে বরাবরই গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের অন্যান্য জাতির নিতীনির্ধারনী বিষয়াদিতে গভীর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এতদিন পর্যন্ত এ বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ভাবে ছিল, এটা কোন আন্তর্জাতিক সংকটের মুহূর্তে অন্যদের সাথে মুক্ত এবং অবাধ মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে বিজড়িত হয়নি।
বরাবর রাজনৈতিক নিস্পত্তিতে বিলম্বই ছিল এর পরিনাম। এটা কোরিয়ার ক্ষেত্রে সত্য ছিল। এটা ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও সত্যি হয়েছে। আর আজ এটা বিশেষভাবে দক্ষিন এশিয়ার ক্ষেত্রেও সত্য।
দ্বিতীর বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চলমান দ্বন্দ্ব বিশ্ব শান্তির জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। এটা শুধুমাত্র বিশাল জনসংখ্যার দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ না হয়ে সম্ভবত একটি ধর্ম যুদ্ধতে পরিনত হতে পারে যাতে কিনা অগনিত মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটবে। এমনকি সেখানে গোটা বিষয়টার সাথে সম্পর্কিত বাইরের শক্তিগুলো, বিশেষত চায়না, সোভিয়েত রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলো জড়িয়ে যাবার মত মারাত্বক বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে গোটা বিশ্ব একটি মারাত্বক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে যে যুদ্ধ্বে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই জড়িত থাকবে, দ্বিতীর বিশ্বযদ্ধের মানদন্ডে যা কিনা হবে এক মহা বিপর্যয়।
একেবারে শুরু থেকেই আমরা জেনে আসছি যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি রাজনৈতিক মীমাংসা/নিস্পত্তি খুবই দুরহ/কষ্টসাধ্য হবে। কারনটি স্পষ্ট। শুধুমাত্র ভবিষ্যত দোদুল্যমান নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর দুটি বৃহৎ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবে টিকে থাকার বিষয়টি। কিন্তু, যে কোন পরিস্থিতিতে, যেটা সরাসরি জড়িত রাষ্ট্রগুলোর জন্য দুরহ, গনপ্রজাতন্ত্রী চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে অসম্ভব করেছে। অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে এবং এক পক্ষের প্রতি তাদের সমর্থনের মাধ্যমে এবং একইসাথে একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারের পরষ্পরের মধ্যে মতবিনিময়ে ব্যার্থতার কারনে তারা একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রকে সুগম না করে বিলম্বিত করেছে।
আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বশান্তির জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরুপ এই অবস্থার সমাধানের জন্য আমাদের কোন রাজনৈতিক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করা আর সমিচীন নয়। সরাসরি জড়িত রাষ্ট্রদুটি, ভারত ও পাকিস্তান, এবং পরোক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য বৃহত শক্তিসমূহকে অবশ্যই সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি মঞ্চই আছে যেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, সেটা হচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘকে একটি অবলম্বনহীন আদলতে পরিনত করার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনেক অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকেরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী হয়ত আক্ষরিক অর্থেই একেবারে খাদের প্রান্তে অবস্থান করছে। সুতরাং এখন আমাদের পৃথিবীর একমাত্র আলোচনার ক্ষেত্র, যেটা কিনা সকল আগ্রহী পক্ষগুলোকে তাদের প্রতিপত্তি কিম্বা অবস্থান খর্ব না করে একত্রে আনতে পারে, সেটাকে উপেক্ষা করার সময় নয়।
অতএব, আজ আমি এমন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট মনে করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতিসংঘে তার প্রতিনিধিদলকে “দক্ষিন এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি” শিরোনামে একটি বিষয় নিরাপত্তা পরিষদের সভার আলোচ্য সুচিতে আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা। এবং একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের উচিত হবে নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি জরুরী সভা আহবান করা।
আমি এই রেজ্যুলেশানের পক্ষে সমর্থন প্রত্যাশা করি যাতে বিশ্ব এই বিপদ অনুধাবন করে এটার মুখোমুখি হয় এবং এটাকে অপসারনের বা পরিহার করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহনের এই অনন্য কূটনৌতিক সুযোগ উপেক্ষা করা উচিত হবে না এবং আমি যেটা মনে করি তা হচ্ছে আমরা সবাই জাতিসংঘে গনপ্রজাতন্ত্রী চীনের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করতে পারি।